বিআইডব্লিউটিএ ভবনে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারি আবুলের হাতে সাংবাদিক নির্যাতিত!

স্টাফ রিপোর্টারঃ

অনিয়ম-দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) প্রধান কার্যালয়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এক সিনিয়র সাংবাদিক। ওই প্রতিষ্ঠানের তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী আবুল হোসেনের নেতৃত্বে তারিকুল আলম খান নামের এই সিনিয়র সাংবাদিককে বেধড়ক মারপিট করা হয় সরকারি প্রতিষ্ঠানটির মধ্যেই। যদিও বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেননি। তবে বিচার চেয়ে ওই সাংবাদিক গত বৃহস্পতিবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে মামলা করেছেন। মামলা নং ১৫,সিআর মামলা নং ৪৫৪/২০২৩। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবিতে) পাঠিয়েছেন।
এদিকে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ। তারা অনতি বিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার ও বিভাগীয় শাস্তির দাবী তুলেছেন। অন্যথায় সাংবাদিক সমাজ বিআইডব্লিউটিএর বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন ও প্রতিষ্ঠানটির সমস্ত প্রকার সংবাদ পরিবেশন বর্জন করবেন।
মামলার এজাহারে সিনিয়র সাংবাদিক তারিকুল আলম খান অভিযোগ করেন, তিনি দৈনিক মুক্ত খবর পত্রিকার সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার। পেশাগত কাজে গত ১৯ মার্চ তিনি বিআইডব্লিটিএর প্রধান কার্যালয়ে যান। একজন কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে সেখানে অপেক্ষায় ছিলেন। ওই সময় ওই কর্মকর্তার রুমে থেকে বের হয়ে প্রতিষ্ঠানটির হিসাব বিভাগের তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী ও সিবিএ সভাপতি আবুল হোসেন তাকে দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, “তুই আমার বিরুদ্ধে রিপোর্ট করেছিস, তোকে আমি মেরেই ফেলবো“। এ কথা বলে তাকে শারিরীকভাবে আঘাত করেন। আবুল হোসেনের নেতৃত্বে কয়েকজন মিলে তাকে (সাংবাদিক তারিকুল আলম) লোহার রড, লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আহতও করেন। এ সময় আশেপাশে থাকা লোকজন (মামলার সাক্ষীগন) তাকে রক্ষা করেন।
মামলায় তিনি আরো অভিযোগ করেন, সিবিএ সভাপতি আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুরের ঘটনায় একটি মামলা রয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ও অভিযোগ রয়েছে। ২০১৭ সালে আবুল হোসেন বিআইডব্লিউটিএতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুর করেন। গত ১৩ মার্চ এ নিয়ে সাংবাদিক তারিকুল আলম খান দৈনিক মুক্তখবর পত্রিকায় “বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুর করেও গ্রেপ্তার হয়নি আবুল হোসেন“ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করেন। ওই সংবাদে ক্ষুদ্ধ হয়ে তার ওপর হামলা করা হয়েছে।
মামলায় অভিযোগ করা হয় যে, আসামি আবুল হোসেন তার পকেট থেকে ৩ হাজার টাকাও ছিনিয়ে নেন এবং তাকে গুম ও খুন করার হুমকি দেন। পরে তিনি সেখান থেকে রক্ষা পেয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করান। মামলার বিষয়ে সাংবাদিক আলম বলেন, আসামি আবুল হোসেন একজন দূর্ধষ প্রকৃতির লোক। আকর্¯ি§ক তার ওপর হামলা করেন। তিনি গতকাল মামলা করেছেন। এ বিষয়ে তিনি সুবিচার আশা করছেন। তিনি সাংবাদিক নেতাদেরও বিষয়টি অবহিত করেছেন। গত কয়েকদিন অসু¯’ থাকায় তিনি বিষয়টি নিয়ে কোথাও অভিযোগ করতে পারেন নি।
আবুল হোসেন বিআইডব্লিটিএর অর্থ বিভাগের উ”চমান সহকারীর পদে কমর্রত আছেন। গত কয়েক বছর ধরে তিনি বিআইডব্লিউটিএ’র সিবিএ সভাপতি পদে আছেন। বিআইডব্লিউটিএতে শ্রমিক কর্মচারীদের সংগঠন সিবিএ থাকলেও আবুল হোসেনের নেতৃত্বে আরেকটি সিবিএ সংগঠন তৈরি করা হয় অবৈধপথে। সম্প্রতি আদালত আবুল হোসেনের তৈরি করা সিবিএ সংগঠনটিকে অবৈধ ঘোষণা করে রায়ও দিয়েছেন। তবুও ওই সিবিএ সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে বিআইডব্লিউটিএ কর্মচারীদের বদলি বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ রয়েছে আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে। আবুল হোসেনের সিন্ডিকেট বিআইডব্লিউটিএতে অসীম আধিপত্য বিস্তার করেছে। তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ, কর্মচারীদের মারপিট, মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো, অনিয়ম দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনও আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে প্রাপ্ত অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানে করছে। কর্মচারী হয়েও আবুল হোসেন বিআইডব্লিটিএর গাড়ি ব্যবহার করছেন। অথচ কোন কর্মচারীর সরকারি গাড়ি ব্যবহার করার সুযোগ নেই। অর্থ বিভাগের উ”চমান সহকারির পদে থেকে বেতন ভাতাসহ যাবতীয় সুবিধা নিলেও আবুল হোসেন দাপ্তরিক কোন কাজ করেন না। প্রতিদিন তিনি এক ফ্লোর থেকে অন্য ফ্লোরে আড্ডা ও কর্মচারীদের বদলি (পছন্দের লোকদের বদলি) করার তদবিরে ব্যস্ত থাকেন। প্রতিষ্ঠানটির অসাধু কর্মকর্তার সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারি আবুল হোসেন গত কয়েক বছরে বিআইডব্লিটিএ নিয়ন্ত্রণে রেখে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ গড়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসেন বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকদের গায়ে হাত দেয়া রীতিমতো ফৌজদারী অপরাধ। কোন সরকারি অফিসে সরকারের কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের দ্বারা সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা স্বাধীন সাংবাদিকতার অন্তরায়। ভুক্তভোগী সাংবাদিক আমাদের কাছে লিখিতভাবে বা মৌখিকভাবে ঘটনা জানালে আমরা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবো। আমরা বিষয়টি খোঁজ খবর নি”িছ। তবে এ বিষয়ে অবগত করা হলেও বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কোন বিভাগীয় ব্যব¯’া না নেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাংবাদিক মহল।
বিষয়টি নিয়ে দৈনিক মুক্তখবর পত্রিকার চীফ রিপোর্টার নূর আলম প্রিন্স নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোস্তফা কামালের সাথে কথা বললে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যব¯’া নিতে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান।

সিনিয়র স্বরাষ্ট্র সচিবকে হাইকোর্টে তলব

স্টাফ রিপোর্টার:

হাইকোর্টের নির্দেশে সিনিয়র স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গনিকে তলব করা হয়েছে, কারণ তিনি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নির্দেশিকায় প্রধান বিচারপতি ও বিচার বিভাগকে হেয় ও অসম্মান করেছেন। আগামী ১৮ মার্চ তাকে সশরীরে হাজির হতে বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

এছাড়া, গত ২ মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নির্দেশিকার কার্যক্রম তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে এবং একটি রুল জারি করা হয়েছে। আদালত মন্তব্য করেছেন যে, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নির্দেশিকায় সুপ্রিম কোর্টকে হেয় করা হয়েছে, যা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান। আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির গত ২ মার্চ এই নির্দেশিকা আদালতের নজরে আনেন। এতে, বিচার বিভাগে সম্মান বজায় রাখার জন্য আরও সতর্কতার প্রয়োজনীয়তা উঠে এসেছে।

তিনি আদালতে বলেন, এই নির্দেশিকায় প্রধান বিচারপতিসহ সব বিচারপতিদের আন্ডারলাইন করা হয়েছে। এই নির্দেশিকায় প্রধান বিচারপতিকে স্বরাষ্ট্র সচিব, রেঞ্জ ডিআইজির সম মর্যাদায় নিচে আসা হয়েছে। অথচ রাষ্ট্রীয় পদ মর্যাদাক্রমে প্রধান বিচারপতির স্থান অনেক উপরে। শুনানি শেষে আদালত সুয়োমোটা রুলসহ আদেশ প্রদান করেন।

এর আগে ২৭ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের পদমর্যাদাক্রম আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ শুনানিতে সময় নেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। এদিন শুনানির দিন ধার্য ছিল।

ওইদিন তার পক্ষের আইনজীবী ২ সপ্তাহের সময় চেয়ে আবেদন করেন। পরে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ৫ বিচারপতির আপিল বেঞ্চে শুনানির কথা থাকলেও সময় আবেদনের কারণে তা আর হয়নি। এদিকে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেলরাও তাদের পদমর্যাদা বাড়াতে আবেদন করেছিলেন যার শুনানিও একই সঙ্গে এদিন হয়।

আদালতে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের রিভিউ আবেদনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার নিহাদ কবির। আর মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন। আর রিভিউ আবেদনে পক্ষভুক্ত হওয়া ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলদের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী আহসানুল করিম ও ব্যারিস্টার এম. আবদুল কাইয়ূম।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী, ১৯৮৬ সালে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরি করে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর ওই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর তা জারি করা হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে তা সংশোধন করা হয়। তবে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরির ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদ, সাংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত ও সংজ্ঞায়িত পদগুলো প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিচের ক্রমিকে রাখা হয়েছে বলে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক মহাসচিব মো. আতাউর রহমান ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৬ সালে হাইকোর্টে রিটটি করেন।

২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট ৮ দফা নির্দেশনাসহ ১৯৮৬ সালের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স (সংশোধিত) অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ২০১১ সালে আপিল করা হয়।

সেই আপিলের শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি রায় দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এ রায়ে হাইকোর্টের দেওয়া ৮ দফা নির্দেশনার কিছুটা সংশোধন করে তিন দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়। সেগুলো হলো-

১. যেহেতু সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ আইন, তাই বিরোধপূর্ণ প্রিসিডেন্সে সাংবিধানিক পদধারীরা অগ্রাধিকার পাবেন।

২. জুডিশিয়াল সার্ভিসের সদস্য হিসেবে জেলা জজ ও সমপদমর্যাদাসম্পন্নরা সরকারের সচিবদের সঙ্গে ১৬ নম্বরে অবস্থান করবেন।

৩. জেলা জজদের পরেই অতিরিক্ত সচিবরা ১৭ নম্বর ক্রমিকে থাকবেন।

 

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম