অস্থায়ী কর্মচারিদের স্থায়ী না করে আউটসোর্সিংয়ে নতুন কর্মী নিয়োগের অপচেষ্টা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান বাপেক্সের শত শত অস্থায়ী কর্মচারি

স্টাফ রিপোর্টারঃ

বাপেক্সের অস্থায়ীভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীদের কেউ কেউ ২৫/৩০ বছর ধরে কাজ করছেন। তারা অনেক অভিজ্ঞ এবং স্ব স্ব গ্যাসক্ষেত্রের সব বিষয় সম্পর্কে তাদের জানাশোনা রয়েছে। কিন্তু একটি চক্র অস্থায়ীভাবে নিয়োগপ্রাপ্তদের স্থায়ী নিয়োগ না দিয়ে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কর্মী নিযোগ ও কাজ পরিচালনা করার হীন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন। প্রতিবাদে চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে মানবন্ধন করেছেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বাপেক্স) অস্থায়ী কর্মচারীরা। বুধবার (১৭ মে) বেলা ১১টার দিকে গণভবনের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তারা বাপেক্সে মাস্টার রোল বা অস্থায়ী ভিত্তিতে কাজ করে আসছেন। কিন্তু এতদিনেও স্থায়ীকরণ না হওয়ায় এবার প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এ সময় দ্রত নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর দাবি জানানো হয়। এদিকে মানববন্ধনে উপস্থিত হয়ে দাবি পূরণের আশ্বাস দেন বাপেক্স কর্মকর্তারা। বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে বলে আন্দোলনকারীদের জানান।
বাপেক্সের আওতাধীন এসব অস্থায়ী কর্মচারী সংস্থাটির প্রধান ও আঞ্চলিক ১৪টি গ্যাসফিল্ডে কর্মরত। আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন পাঁচ শতাধিক কর্মচারী। জানিয়েছেন, চাকরি স্থায়ীকরণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ও বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী বরাবর তারা স্মারকলিপি দিয়েছেন। কিন্তু কোনো সাড়া না পেয়ে অনেকটা বাধ্য হয়েই তারা রাজপথে নেমেছেন। দাবি আদায়ে প্রয়োজনে আমরণ অনশনে বসার কথাও জানালেন আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা কর্মচারীরা।
সারা দেশে বাপেক্সের আওতাধীন প্রধান ও আঞ্চলিক ১৪টি কার্যালয়ে পাঁচ শতাধিক কর্মচারীকে স্থায়ী করা হয়নি বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। তারা জানান, সর্বনিম্ন পাঁচ বছর থেকে সর্বোচ্চ ৩০ বছর পর্যন্ত এসব কর্মী অস্থায়ী ভিত্তিতে বাপেক্সের আওতায় কাজ করছেন। দীর্ঘ সময় ধরে যেসব কর্মচারীর চাকরি স্থায়ী হয়নি তাদের জায়গায় সম্প্রতি আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে জনবল নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় বাপেক্স।
বাপেক্সের প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত মেকানিক মো. ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘অস্থায়ীভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীদের কেউ কেউ ৩০ বছর পর্যন্ত কাজ করছেন। তারা অনেক অভিজ্ঞ এবং সংশ্লিষ্ট গ্যাস ক্ষেত্রের সব বিষয় সম্পর্কে অনেক জানাশোনা রয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা একটি চক্র অস্থায়ীভাবে নিয়োগপ্রাপ্তদের স্থায়ী নিয়োগ না দিয়ে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কাজ পরিচালনা করার হীন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। এমনকি অভিজ্ঞ অস্থায়ী কর্মচারীদেরও আউটসোর্সিংয়ে কাজ করানোর কথা বলা হচ্ছে, যা একটি হাস্যকর ব্যাপার।’
বাপেক্সের আওতাধীন স্টোরকিপার বায়েজিদ বলেন, ‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার আশ্বাস দেয়া হলেও চাকরি স্থায়ী হয়নি। চাকরি স্থায়ী হবে ভেবে অন্য কোথাও চাকরি খোঁজেননি তারা। এখন চাকরি স্থায়ী না হলে পরিবার-পরিজন নিয়ে পথে বসতে হবে।’ চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে ছয় দফা দাবি তুলে ধরেন বাপেক্সের এসব কর্মী। সে সময় তারা চাকরি স্থায়ীকরণের পাশাপাশি আউটসোর্সিং ও চাকরি বদলি-বাতিলসহ কর্মক্ষেত্রে শারীরিক ক্ষতি না হওয়া-সংক্রান্ত বেশকিছু দাবি তুলে ধরেন।
উল্লেখ্য, বাপেক্স দীর্ঘদিন ধরে তার আওতাধীন গ্যাসফিল্ড থেকে শুরু করে প্রধান কার্যালয়ে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে বড় জনবল নিয়োগ দিয়ে কাজ করাচ্ছে। দীর্ঘ সময় ধরে এসব কর্মী কাজ করলেও তাদের চাকরি স্থায়ী হয়নি। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অস্থায়ী কর্মীদের ছাঁটাই করে আউটসোর্সিং কোম্পানির মাধ্যমে জনবল নিয়োগের কথা জানায় প্রতিষ্ঠানটি। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। আদালতের নির্দেশনার পর অনেক কর্মচারীর চাকরি স্থায়ী হয়েছে।
আন্দোলনকারীরা বলেন, বাপেক্সে দক্ষ জনবলের প্রয়োজনীয়তা পূরণের লক্ষ্যে ১৪ বার কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হলেও ২০০১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কোনো কর্মী নিয়োগ করা হয়নি। কর্মচারী স্থায়ী করার জন্য বারবার আবেদন করা হলেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাতে সাড়া দেয়নি। এমনকি ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পত্র অনুযায়ী জনবল নিয়োগের সরকারী নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও বাপেক্সের চুক্তিভিত্তিক এমডি মোহাম্মদ আলী, কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ আবুল, উপ মহাব্যবস্থাপক মো. জসিম উদ্দিন হায়দার সকল কর্মচারীদের কনফারেন্স রুমে ডেকে নিয়ে মৌখিক ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে, কোনো অস্থায়ী কর্মচারীকে স্থায়ী নিয়োগ দেওয়া হবে না।
তারা আরও বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে বাপেক্স কর্তৃপক্ষ আমাদের কর্মক্ষেত্রে আসতে নিষেধ করেছে। বর্তমান অস্থায়ী কর্মচারীদের স্থায়ী করার লক্ষ্যে সুপ্রীম কোর্টে ৪৭৫ জনের ৩৪টি মামলা চলমান থাকলেও বাপেক্সের পরিচালনা পর্ষদকে মামলা সংক্রান্ত মিথ্যা তথ্য দেওয়া হয়। টেকনিক্যাল পোস্টগুলোতে আউটসোর্সিং এ নিয়োগ দেওয়ার ফলে কাজের মান ও দক্ষতা দুটোই নষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া এখান থেকে আমরা যে পরিমান মজুরি পাই তা দিয়ে পরিবারসহ জীবনধারণ করা অসম্ভব।
অস্থায়ী কর্মচারীরা বলেন, বাপেক্স সৃষ্টির পর থেকে দেশের জ্বালানির চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে এই প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। স্থায়ী কর্মকর্তা ও কর্মচারী যাদের চাকরির মেয়াদ পূরণের পর অবসর গ্রহণ অথবা কেউ মৃত্যুবরণ করলে তাদের পদগুলো শূন্য হয়।
এ দিকে একাধিক সুত্রে জানাগেছে, প্রভাবশালী একটি মহল আর্থিক সুবিধা হাসিল করার অভিপ্রায়ে অস্থায়ী কর্মচারিদের স্থায়ী করণ কার্যক্রমে বাঁধা দিচ্ছেন। মন্ত্রণালয়ের সচিব কর্মচারিদের চাকরি স্থায়ী করণের আশ^াস দিলেও অসাধু চক্রটি নিযোগ বাণিজ্য করার লক্ষ্যে প্রতিমন্ত্রীর কাঁধে সওয়ার হয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন আন্দোলনকারী বর্মচারিরা। এ বিষয়ে তারা প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

তেলের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে প্রাণ গেল ২ জনের

এবার শ্রীলঙ্কায় জ্বালানি তেলের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। আজ রবিবার দেশটির পুলিশ এ তথ্য জানিয়েছে। পুলিশের মুখপাত্র নালিন থালদুয়া জানান, ওই দুই ব্যক্তিই সত্তরোর্ধ্ব। তারা রাজধানী কলম্বোর দুটি ভিন্ন জায়গায় ডিজেল ও কেরোসিন সংগ্রহের জন্য দীর্ঘসময় লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। এক পর্যায়ে তারা অসুস্থ হয়ে পড়ে যান। পরে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে গুরুতর অর্থনৈতিক সংকটের কবলে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশটিতে বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। জ্বালানি তেলের জন্য নাগরিকদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।

এ ব্যাপারে পুলিশের মুখপাত্র নালিন থালদুয়া বলেন, ‘একজন ছিলেন ৭০ বছর বয়সী থ্রি-হুইলার চালক যিনি ডায়াবেটিক ও হার্টের রোগী ছিলেন এবং দ্বিতীয়জন ৭২ বছর বয়সী ছিলেন, দুজনেই জ্বালানি তেলের জন্য প্রায় চার ঘন্টা ধরে লাইনে অপেক্ষা করেছিলেন।’

আজ শ্রীলঙ্কায় অপরিশোধিত তেলের মজুত ফুরিয়ে যাওয়ার পর দেশটির একমাত্র জ্বালানি শোধনাগারে কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। দাম বৃদ্ধির কারণে স্বল্প আয়ের পরিবার রান্নার জন্য গ্যাসের পরিবর্তে কেরোসিন তেল ব্যবহার করছে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সরবরাহকারী লাফগ্যাস ১২ দশমিক ৫ কেজি সিলিন্ডারের দাম এক হাজার ৩৫৯ রুপি বাড়িয়েছে।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম