দেবীগঞ্জ শালডাংগা ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ

 

মোঃ এনামুল হক, পঞ্চগড় প্রতিনিধি:
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার শালডাংগা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা অমর চক্রবর্তীর ঘুষ বাণিজ্য, সেবাগ্রহীতাদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ, সেবাপ্রদানে অনিহাসহ বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর অভিযোগের প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানে নামে “দৈনিক সবুজ বাংলাদেশ”।

অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা যায় ভূমি অফিসের কর্মকর্তা অমর চক্রবর্তী সেবা নিতে আসা ব্যক্তিদের সাথে তুই-তোকারি, তোর কাজ হবে না, তেল খরচ কি তোর বাপ দিবে, কাগজ পত্র দেখার কোন টাইম নাই, মুই যা করিম তাই’ ইত্যাদি চিল্লাচিল্লি করছেন। বেশ কিছুক্ষণ সময় নিয়ে দেখা যায় যারা ঘুষ দিচ্ছে তাদের কথা শুনছেন যারা ঘুষ দিচ্ছেন না তাদের বলছেন আজকে মাথা ঠিক নাই। পরে আইসেন তবে কাজ অনুযায়ী ১টি কিংবা একাধিক নোট গুজে দিলেই ঠান্ডা মাথায় কথা বলছেন উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা অমর চক্রবর্তী। এর মধ্যে একজন বাক প্রতিবন্ধী সেবা নিতে আসলে গোপন ক্যামেরায় ভিডিও ধারন শুরু করে সবুজ বাংলাদেশ পত্রিকার প্রতিনিধির ধারন কৃত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় উক্ত বাক প্রতিবন্ধীকে ছন্দের সুরে অতি আনন্দের সহিত জানায় তার পক্ষে রিপোর্ট তৈরি করেছেন, এর মধ্যে কৌশলে বলেন সবকিছু তোর পক্ষে আছে এলা তাড়াতাড়ি টাকা দে, যদি টাকা না দিস তাহলে সবকিছু তোর বিপক্ষে চলে যাবে, দে টাকা দে, তুই যদি এলা টাকা না দিস তাহলে তোর প্রতিপক্ষের নিকট টাকা নিয়ে তোর বিপক্ষে রিপোর্ট দিয়ে দিবো। প্রতিবন্ধী ভুক্তভোগী বলেন আমার কাগজপত্র সব ঠিক আছে, জমি আমার দখলে আছে, তবুও কেন টাকা দিতে হবে। এই কথা শুনে অমর চক্রবর্তী বলেন, তুই কিভাবে ভাল থাকিস আমি দেখে নিবো। প্রতিবন্ধী ভয়ে আতংকিত অবস্থায় জিজ্ঞেস করেন কত টাকা দিতে হবে। কর্মকর্তা বলেন, আপাতত ১০ হাজার দে। আরেক সেবা গ্রহীতা নারীকে সেবা দেওয়ার জন্য খরচাপাতি চাইলে ভুক্তভোগী নারী বলেন, সেইদিন তো টাকা দিলাম আজকে আরো দিতে হবে। অমর চক্রবর্তী বলেন, তোমাদের পক্ষে যে রিপোর্ট দিবো তোমাদের তো চ্যাও ব্যাও আমি কিছুই দেখি না, পয়সা-কড়ি দিবেন না রিপোর্ট উল্টা পাশে করে দিম।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, অমর চক্রবর্তীর এমন আচরণ নতুন কিছু নয়, এলাকাবাসী জানায় ভূমি অফিসে কথা বলতে গেলেও টাকা দিতে হয়, টাকা ছাড়া কাজ তো দুরের কথা কথাই বলেন না ভূমি কর্মকর্তা অমর চক্রবর্তী। উক্ত এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে আদালতে চলমান মামলার বিষয়ে রিপোর্ট প্রদানের বিষয়ে টাকার বিনিময়ে একপক্ষের দলীল অন্য পক্ষকে দিয়ে বলেন, মুই যে তোমাক দিছু তোমরা ঘুণাক্ষরেও কাউকে বলেন না, দেও এলা টাকা দেও, টাকা দিয়ে বাড়ি যাও।

ঘুষ বাণিজ্যে এবং অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়ে অমর চক্রবর্তীর মন্তব্য জানতে একাধিক বার যোগাযোগ করেও তার মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এবিষয়ে জানতে দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শরীফুল আলম বলেন, যেহেতু বিষয়টি লিখিত আকারে অভিযোগ পাইনি, তাই আমি মৌখিক ভাবে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি।

৪৪০ স্বাস্থ্যকেন্দ্র শুধুই কাগুজে অঙ্গীকার নেই কোনো সেবা

৪৪০ স্বাস্থ্যকেন্দ্র শুধুই কাগুজে অঙ্গীকার নেই কোনো সেবা

রংপুর সংবাদদাতা:

রংপুর বিভাগের আট জেলার ৪৪০টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে সব ধরনের ওষুধ সরবরাহ। একই সঙ্গে জনবল সংকট চরমে ওঠায় কার্যত অচল হয়ে পড়েছে তৃণমূলের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম। স্থানীয়ভাবে পরিচিত ‘ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলো এক সময় ছিল প্রাথমিক চিকিৎসা ও মাতৃসেবা প্রদানের অন্যতম ভরসা। কিন্তু এখন সেইসব কেন্দ্রে নেই ওষুধ, নেই চিকিৎসক, নেই সেবিকা। ইকরচালী ইউনিয়ন ও আলমপুর ইউনিয়ন দুই জায়গার দৃশ্যই এক, শুধুমাত্র ‘জননী প্রকল্প’ আওতায় সীমিত প্রসূতি সেবা ছাড়া নেই কোনো চিকিৎসা কার্যক্রম। প্রসূতিদের জন্য থাকা সেই সেবাটুকুও অনেক কেন্দ্রে এখন বন্ধ।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হলে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী আরও বেশি প্রভাবিত হবে। বাড়বে মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর ঝুঁকি, কমবে জন্মনিয়ন্ত্রণের কার্যকারিতা। তাদের মতে, প্রায় অচল হয়ে যাওয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো সচল করা এখন সময়ের দাবি। ওষুধ সরবরাহ ও জনবল নিয়োগ দ্রুত নিশ্চিত না হলে, সরকার ঘোষিত ‘সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা’ শুধুই কাগুজে অঙ্গীকার হয়েই থেকে যাবে।

রংপুর বিভাগের পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী প্রথম থেকে নবম গ্রেড পর্যন্ত মোট ২০৫টি পদের মধ্যে ১১৪টি শূন্য। একাদশ থেকে ষোড়শ গ্রেডে ১৯৭০টি পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে ৬১৮টি। ১৭ থেকে ২০তম গ্রেডে ৪০৩৬টি পদের মধ্যে ১৩৮৫টি শূন্য। সব মিলিয়ে বিভাগজুড়ে ৫০ শতাংশেরও বেশি পদ শূন্য পড়ে রয়েছে। চিকিৎসা ও পরিবার পরিকল্পনার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতের এ ধরনের জনবল সংকট চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলেছে তৃণমূলের মানুষকে।

আশপাশের গ্রাম থেকে আসা রোগীরা জানান, এখন শুধুমাত্র ভবনটি দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু ভেতরে নেই ওষুধ, নেই ডাক্তার, নেই সেবা। আগে অন্তত জ্বর-সর্দির ওষুধ মিলত। এখন আর কিছুই পাওয়া যায় না। গাইবান্ধা জেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক তারিকুল ইসলাম জানান, ওষুধের বরাদ্দ না থাকায় সেবা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। রংপুর বিভাগীয় পরিচালক দেওয়ান মোর্শেদ কামাল বলেন, ‘চিঠি চালাচালি চলছে, আমরা আশান্বিত। খুব দ্রুত সংকট কেটে যাবে।’

নব্বইয়ের দশকে প্রতিষ্ঠিত এসব কেন্দ্রের মূল লক্ষ্য ছিল সাধারণ চিকিৎসা, প্রসূতি সেবা, কৈশোরকালীন প্রজনন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার পরিকল্পনাসামগ্রী সরবরাহ। অথচ এখন এসব কেন্দ্রের প্রায় ৮০ শতাংশ কার্যক্রমই বন্ধ রয়েছে।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম