তারিখ লোড হচ্ছে...

নবীনগরে পানিতে ডুবে এক যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যু

 

বিপ্লব নিয়োগী তন্ময়,
নবীনগর,ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগর উপজেলার জিনদপুর গ্রামে পুকুরের পানিতে ডুবে মো. আদনান(১৫) নামে এক এসএসসি পরিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে।

সে পাশ্ববর্তী মুরাদনগর উপজেলার টনকি ইউনিয়নের থোল্লা গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে।

বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) নবীনগর উপজেলার জিনদপুর ইউনিয়নের জিনদপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

আদনানে’র মা জিনদপুর ইউনিয়ন স্কুল এন্ড কলেজে’র শিক্ষিকা হওয়ার সুবাধে জিনদপুর গ্রামের এক বাড়িতে ভাড়া থাকতেন তারা।

আদনান জিনদপুর ইউনিয়ন স্কুল এন্ড কলেজে থেকে এ বছর এসএসসি পরিক্ষা দিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আদনান এবং তার ছোট ভাই বাড়ির পাসের একটি পুকুর পাড়ে ফুটবল খেলছিলেন। খেলার এক পর্যায়ে ফুটবল পুকুরের মাঝে চলে যায়। পুকুরের মাঝ থেকে ফুটবল আনতে গেলে অতিরিক্ত ঠান্ডা পানিতে সে আকষ্মিক তলিয়ে যায়।

আদনানের ছোট ভাই পুকুরের পানিতে নেমেও তাকে উদ্ধার করতে পারেনি। পরে স্থানীয়রা অনেক খোঁজাখুজি শেষে মাছ ধরার জাল দিয়ে তাকে উদ্ধার করেন।

নবীনগর থানা’র এস আই মনির হোসেন দৈনিক সবুজ বাংলাদেশ কে জানান,পুকুরের পানি অতিরিক্ত ঠান্ডা হওয়ার কারনে ছেলেটি বল নিয়ে আর পুকুর থেকে উঠে আসতে পারেনি।
লাশটি তার পরিবারের লোকজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

কুমিল্লায় প্রতিবন্ধীদের সাথে কৌশলগত সংলাপ আয়োজিত

কুমিল্লা প্রতিনিধি:

অলাভজনক ও অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ডিজঅ্যাবেলড ডেভেলপমেন্ট ট্রাস্ট (বিডিডিটি) এর উদ্যোগে কুমিল্লায় প্রতিবন্ধীদের সাথে এক কৌশলগত সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১০ আগস্ট) সকালে কুমিল্লা নগরীর হাউজিং স্টেট এলাকায় এনজিও ফোরাম ফর পাবলিক হেলথ, চট্টগ্রাম ডিভিশনের কার্যালয়ে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে একটি বিশেষ প্রকল্পের অংশ হিসেবে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সরকারি সেবায় কী ধরনের সুবিধা পাচ্ছেন, কোথায় ঘাটতি রয়েছে এবং কিভাবে সেবার মানোন্নয়ন করা যায়, সে বিষয়ে খোলামেলা মতামত তুলে ধরেন।

বিডিডিটি ২০০৯ সাল থেকে প্রতিবন্ধীদের অধিকার ও জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে আসছে। আলোচনায় কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন এলাকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা অংশ নেন। কেউ কলেজে অধ্যয়নরত, কেউ চাকরি খুঁজছেন, আবার কেউ ক্ষুদ্র ব্যবসার সাথে যুক্ত।

মতবিনিময় সভাটি সঞ্চালনা করেন বিডিডিটি’র প্রোগ্রাম অফিসার সাবরিনা তাসনিম। সভায় উপস্থিত ছিলেন বিডিডিটির প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা ট্রাস্টি (সিইও) মনিরুজ্জামান খান এবং প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর শবনম ফেরদৌসী।

অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর শবনম ফেরদৌসী দেশের ৩২টি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেন।

এসময়, মুক্ত আলোচনায় বিডিডিটি’র প্রজেক্ট সহকারী তাসমিয়া জাহান ইকরা অংশগ্রহণকারীদের কাছে বিভিন্ন প্রশ্ন রাখেন। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী খালেকুজ্জামান বলেন, প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের কথা অনেকেই জানে না। আমরা সেবা নিতে গেলে জানা না থাকায় সমস্যার কথা বলি, তখন তারা বলে ওই ধরণের থেরাপি নেই। আবার এসব কেন্দ্র শহর থেকে দূরে হওয়ায় সেখানে যেতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়। বিশেষ করে বিশ্বরোড অতিক্রম করা আমাদের জন্য জীবন ঝুঁকির বিষয়। নগদ বা বিকাশে টাকা পাঠানোর সময়ও বিভিন্ন কৌশলে আমাদের ভাতা হাতিয়ে নেয় হ্যাকাররা। তারা সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচয়ে কল দিয়ে ওটিপি নাম্বার নিয়ে টাকা নিয়ে যায়।

হ্যাকারদের প্রতারণা নিয়ে খালেকুজ্জামান আরও বলেন, যদি এ বিষয়ে সঠিক তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তাহলে অন্তত ৬০ ভাগ প্রতিবন্ধী প্রতারণা থেকে রক্ষা পাবে।

এসময়, অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী শারীরিক প্রতিবন্ধী তানীম হোসেন বলেন, রাস্তা পারাপারের সময় আমাদের অনেক কটু কথা শুনতে হয়। মানুষ অনেকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ভেবে টাকা দিতে চায়, অথচ সাহায্য করা যায় অন্যভাবে, যেমন রাস্তা পারাপারে সহায়তা করে। সরকার থেকে দেওয়া আমাদের মাসিক ভাতা ৮৫০ টাকা, যা দিয়ে কোনোভাবে চলা যায় না। স্টুডেন্ট ভাতা আলাদা করে দেওয়া হয় না, এতে পড়াশোনায় সমস্যায় পড়তে হয়।

আরেক শারীরিক প্রতিবন্ধী ইমন হোসেন বলেন, শহরের ভেতরে চলাচলে অনেক বাধা রয়েছে। রাস্তার পাশে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখার কারণে আমাদের হেঁটে চলা কঠিন হয়ে যায়।

এসময় মুক্ত আলোচনায় উঠে আসে, সরকার সেবাকেন্দ্রগুলোর প্রচার যথাযথভাবে করে না। শতকরা প্রায় ৪০ ভাগ প্রতিবন্ধী জানেই না যে দেশে এসব সেবাকেন্দ্র রয়েছে। এ প্রসঙ্গে পিপলু ভৌমিক নামে উপস্থিত এক শারীরিক প্রতিবন্ধী বলেন, প্রতিবন্ধীদের অনেক সময় ঘরবন্দী থাকতে হয়। অনেকেই গ্রামাঞ্চলে থাকে। তাই এসব কেন্দ্র সম্পর্কে জানার সুযোগ পায় না। একই প্রসঙ্গে দুর্জয় ধর বলেন, রেডিও বা টেলিভিশনের মাধ্যমে প্রচার করলে, অথবা মোবাইলে এসএমএস ও কলের মাধ্যমে জানালে আরও বেশি প্রতিবন্ধী উপকৃত হতো।

আলোচনায় উপস্থিত নারী প্রতিবন্ধীরা বলেন, ফিজিওথেরাপির ক্ষেত্রে পুরুষ চিকিৎসকের পরিবর্তে নারী চিকিৎসক থাকা জরুরি। তাদের মতে, যে সমস্যা পুরুষ চিকিৎসক সমাধান করতে পারবেন, সেটি তারা করবেন। কিন্তু যেগুলোতে নারীর প্রয়োজন, সেখানে নারী চিকিৎসক থাকা আবশ্যক। আমরা চাই সেবাকেন্দ্রে নারী কনসালটেন্ট নিয়োগ দেওয়া হোক।

এসময় সেবাকেন্দ্রগুলোর প্রসঙ্গ টেনে শারীরিক প্রতিবন্ধী দুর্জয় ধর আরও বলেন, আমরা শুধু ১১টি সেবার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে চাই না। প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি বিনোদন পার্ক থাকা দরকার, যেখানে স্ক্রিন রিডার সাপোর্ট ও ব্রেন রিডার সাপোর্ট থাকবে। এতে আমাদের মন প্রফুল্ল থাকবে।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী খালেকুজ্জামান আরো বলেন, সেবাকেন্দ্রে অভিজ্ঞ সেবাদাতার অভাব রয়েছে। অনেক সময় অনভিজ্ঞ লোক দায়িত্বে থাকে। এ অবস্থা পরিবর্তন করা দরকার। তিনি আরও যোগ করেন, প্রতিবন্ধীদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ জরুরি। বিশেষ করে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে আমরা উপকৃত হবো। প্রত্যেক জেলায় একটি করে কম্পিউটার প্রশিক্ষণকেন্দ্র থাকা প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, সরকার থেকে দেওয়া অনেক সুবিধা একেক জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। কিন্তু আমরা চাই সব সুবিধা একই সেবাকেন্দ্রে একত্রে দেওয়া হোক। সমাজসেবা অধিদপ্তরের বিভিন্ন সেবা যদি এক জায়গায় আনা যায়, তাহলে আমাদের জন্য অনেক সহজ হবে।

সবশেষে, আলোচনা সভায় অংশগ্রহণকারী শারীরিক প্রতিবন্ধীরা সর্বসম্মতিক্রমে বলেন, সেবাকেন্দ্রগুলোর প্রচার, সেবার মানোন্নয়ন, নারী চিকিৎসকের উপস্থিতি, কর্মসংস্থানের সুযোগ এবং প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ নিশ্চিত হলে প্রতিবন্ধীরা আরও আত্মনির্ভরশীল হতে পারবেন।

মুক্ত আলোচনা শেষে বিডিডিটির অবস্থান সম্পর্কে বিডিডিটির সিইও মনিরুজ্জামান খান বলেন, আমরা ২০০৯ সালে নিবন্ধিত হই। তখন থেকে এ পর্যন্ত ৪০ টিরও বেশি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। আমাদের টার্গেট প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা যেন সমাজে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, আমরা ৩২টি সেবা কেন্দ্র পরিদর্শন করেছি। দেখেছি কি ঘাটতি আছে, কি প্রয়োজন, সেবাদাতাদের সক্ষমতা কতটুকু। এরপর ৮টি বিভাগে ফলোআপ করছি।

তিনি বলেন, সমাজসেবা অধিদপ্তর, যুব উন্নয়ন, মহিলা অধিদপ্তর, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের অধীনে ই-লার্নিং বিভিন্ন প্রশিক্ষণ সেবাগুলো দিচ্ছে। তবে, সেখানে যদি স্ক্রিন রিডিং সমস্যা থাকে তাহলে আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা বিনামূল্যে সেখানে দিয়ে দিবো। এছাড়াও, আপনারা যে পরামর্শগুলো দিয়েছেন সেগুলো নিয়ে আমরা কাজ করবো। এসব পর্যালোচনা করে সরকার ও দাতা সংস্থার কাছে সুপারিশ পাঠাব। আমরা চাই প্রতিবন্ধীদের সকল সেবা নিশ্চিত হোক।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম