অবহেলিত আনসার বাহিনী

জাহাঙ্গীর আলম শাহীন :

বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপির অঙ্গীভূত আনসার সদস্যদের সাথে বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

বৃহস্পতিবার দূপুর ২টা বেজে ৫০ মিনিট। তথ্য সংগ্রহের কাজে বাইক দিয়ে যাচ্ছিলাম উদ্দেশ্য নারায়ণগঞ্জ। সাইনবোর্ড পার হয়ে ডান দিকে যেতেই তীব্র গরমের যন্ত্রণায় তৃষ্ণা অনুভব করায় ভাবলাম, এখানে বসে হালকা খাবার ও একটু চা খেয়ে তৃষ্ণা নিবারণের চেষ্টা করব। জায়গাটা বেশি পরিচিত না হওয়ায় দোকানদার ও তেমন পরিচিত না। এমনকি দোকানে হালকা খাবার খেতে আসা লোকগুলো ও তেমনি পরিচিত না হওয়ারই কথা । যাইহোক রুটি- কলা খেয়ে, একটু চা নিয়ে মুখে দিচ্ছি। এমন সময় পাশ থেকে গলায় গামছা, শরীর ভেজা একজন বলল, স্যার কেমন আছেন।প্রথমে আমি গুরুত্ব দেয়নি। দ্বিতীয়বার, স্যার কেমন আছেন। পাশে তাকাতেই দেখি আমার পরিচিত একজন আনসার সদস্য( ছদ্মনাম সম্রাট)। ঘর্মাক্ত শরীরে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বললাম ভাই আপনার শরীরের কাপড় তো পুরোটাই ভেজা! আপনি এখানে কি করেন ? প্রথমে বলতে অস্বীকৃতি জানালেও এক পর্যায়ে বলল, স্যার আমি রিক্সা চালাচ্ছি। আমি বললাম আপনার আনসারের চাকরি কি হলো? কথাটা এজন্যই বললাম যে আনসার সদস্য ও আনসার কমান্ডারদের নিয়ে নিউজ করার সুবাদে অনেক আনসার সদস্য এবং কমান্ডার আমাকে মোটামুটি চিনে। সে বলল স্যার, নয় মাস হল চাকরি নাই। বললাম কেন? সে জানালো আমাদের চাকরি সরকারি না এবং সরকার নিয়মিত ও করেন নাই। তাই তিন বছর পার হওয়ার পর ছয় মাসের ছুটি দিয়ে থাকেন বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি কর্তৃপক্ষ। ছয় মাসের ছুটি শেষ হওয়ার পরে একটি এসএমএস এর মাধ্যমে আমরা পুনরায় তিন বছরের জন্য চাকীিতে যোগদান করি। অথচ ১১ মাস চলে আমি কোন এস এম এস এখনো পাই নাই। তাছাড়াও বর্তমান বাজারে আমাদের এই সামান্য বেতনে চাকরিতে থাকা অবস্থায় কোনরকমে সংসার চলে। পাঁচ মাস যাবত এই এলাকাতে আমি রিক্সা চালাচ্ছি।বললাম প্রতিদিন আয় হয় কেমন? সে জানালো গাড়ি ভালো চালাতে পারি না, তাই এক বেলা দুপুর পর্যন্ত গাড়ি চালাই এবং প্রতিদিন ৭/৮০০ টাকা রোজগার হয়।আবেগাল্পুত কন্ঠে বলেন স্যার, রোজগার যাই হোক আমি যে এখন রিকশা চালাচ্ছি এবং এটা যদি পরিবার বা গ্রামের লোক জানে তাহলে আমি কিভাবে মুখ দেখাবো। আমি বললাম যে ভাই, কোন কাজই ছোট নয়। সে আরো বলল স্যার, আমি চার লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে এই সাধারণ আনসার পদে চাকরি নিয়েছি। যার ২ লক্ষ টাকা আমি শ্বশুর বাড়ি থেকে এনেছি। স্যার আবার ট্রেনিং শেষ করে ৮/ ৯ মাস বাড়িতে থেকে তারপর চাকরিতে যোগদান করেছি।তাছাড়াও সরকারি কোন হাসপাতাল, পাসপোর্ট অফিস, বি আর টি অফিস, কাস্টমস অফিস সহ কয়েকটি জায়গাতে পোস্টিং নিতে হলেও সবাইকে ঘুষ দিয়েইি পোস্টিং নিতে হয়। আমি বললাম যে ভাই তোমাদের সরকারি চাকরি না? কিছুক্ষণ মুখ গুমড়া করে দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলে যে না স্যার , আমরা প্রতিদিনের হাজিরা হিসেবে কাজ করি।জানতে চাইলাম প্রতিদিনের হাজিরা বলতে আমাকে কি বোঝাতে চেয়েছেন, বুঝিয়ে বলুন। সে জানালো আমরা প্রতিদিন ৫৩৯ -৫৪৫ টাকা হাজিরাতে কাজ করি সেই সুবাদে যে মাস ৩১ দিন হয় সে মাসে পুরো ১৬ হাজার টাকা বেতন পাই। সে আরো বলল ৩/৪ বছর আগে আমাদের সকল আনসার সদস্যদের নিকট থেকে প্রতিমাসে ৫০০ টাকা করে জমা নিয়েছেন। আমি বললাম কি জন্য জমা নিয়েছেন, সে বলল এককালীন আমাদের কিছু দেবে এই মর্মে টাকাগুলো জমা নিয়েছে।

কয়েকদিন পূর্বে যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজার আড়ৎ এর ভিতর একজন আনসার কমান্ডার এর সাথে সামনা- সামনি হঠাৎ দেখা। আমাকে দেখার পর ভাবে বুঝতে পারলাম আমার সামনে থেকে দ্রুতই সটকে যেতে চাচ্ছে। আমি বিষয়টা বুঝতে পেরে তার সামনে গিয়ে হাত চেপে ধরে বললাম (ছদ্মনাম রাজা সাহেব) আপনি এখানে কাঁচা বাজারের আড়তে কি করেন? প্রথমে কিছু না বললেও প্রশ্নের মুখে একসময় মলিন কন্ঠে নিজেই স্বীকার করল যে ভাই আমি এই আড়তে আমার বন্ধুর কাঁচামাল নিয়ে এসেছি। সে বলল ভাই আমার নিজের কোন টাকা নাই এবং ১৭ মাস যাবত কোন এসএমএস পাইনা। তাই বাড়ি বসে থেকে সংসার চলে না। উপায়ান্তর না পেয়ে বন্ধুর কাঁচামালের গাড়ির সাথে আরও ২ জন লোক নিয়ে যাত্রাবাড়ী আড়তে আসি এবং গাড়ির মাল খালি করে চলে যাই। সপ্তাহে দুইদিন কাজ থাকে এবং খাওয়া খরচ বাদ দিয়ে সে আমাকে চার হাজার টাকা দেন। এটা দিয়েই কোন রকমে সংসার চালাচ্ছি। আপনি তো আনসার কমান্ডার(পিসি)? তাহলে আবার কাঁচামালের ব্যবসা করেন, বিষয়টা কি? দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে (ছদ্মনাম রাজা সাহেব) আমাকে বলল শাহিন ভাই আপনার সাথে দীর্ঘদিনের পরিচয় একজন আনসার কমান্ডার হিসেবে। আর আজকে আমাকে পেলেন যাত্রাবাড়ী কাঁচা বাজার আড়তে।। আর আমার কাছে কোন টাকাও নাই যে,, কোন না কোন ব্যক্তির মাধ্যমে দ্রুত এস এম এস নিয়ে চাকরিতে জোগদান করব। ঠিক এদের মত কয়েক হাজার আনসার সদস্য এবং কমান্ডারদের নিরব কান্না, যেন দেখার কেউ নেই। সারা দেশে প্রায় ৬০ হাজার সাধারণ আনসার সদস্য আছে এবং আনসার কমান্ডার ও আছেন কয়েক হাজার। এদের সকলেরই এস এম এস এর মাধ্যমে ৩ বছর পর পর চাকরিতে নতুন করে যোগদান করতে হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আনসার সদস্য এবং আনসার কমান্ডার(পিসি) বলেন আমাদের তিন বছর পর ৬ মাস ছুটিতে থাকার নিয়ম থাকলেও বাস্তবে কথা কাজের কোন মিল খুজে পাওয়া যায় না। কেননা, আনসার সদস্য এবং আনসার কমান্ডার(পিসি)দের ৬ মাস ছুটিতে থাকার নিয়ম থাকলেও অনেকেই এক বছর, ১৩ মাস ১৫ মাস ২১ মাস পর্যন্ত এসএমএস এর অপেক্ষায় দিন গুনতে গুনতে তাদের জমানো টাকা শেষ করে একপর্যায়ে অন্যের বিকট থেকে ধার করে খেয়ে বসে থাকেন। এস এম এস এর অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন।তিনি আরও বলেন অনেকে ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমেও এসএমএস পেয়ে থাকেন, এমনকি এসএমএস পাওয়ার পরেও প্রত্যেকটা জায়গায় ঘুষ দিয়ে আবার তিন বছরের জন্য চাকরিতে যোগদান করতে হয়।

১৯৪৮ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর যাত্রা শুরু হলেও অনিয়মিত অর্ধেক রেশন ও সামান্য বেতন ছাড়া উন্নয়ের ছোয়া লাগেনি এই সাধারণ আনসার শিবিরে।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপির অতিরিক্ত মহাপরিচালক
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ নাজিম উদ্দিন (বিএএম) এর সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি ফোন না ধরার কারণে।

২০২৫ সালের মধ্যেই নির্বাচন দিতে হবে : নায়েবে আমীর

স্টাফ রিপোর্টার: 

সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ২০২৫ সালের মধ্যেই দিতে হবে বলে দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।

আজ শনিবার কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত যুব সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘সম্ভব’, যদি তারা আংশিক সংস্কার করেন। আমরা মনে করি, তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যেই প্রয়োজনীয় সংস্কার করা সম্ভব। এরপর এ বছরের শেষ দিকে নির্বাচন আয়োজন করবেন- এটিই জাতির প্রত্যাশা ও জামায়াতে ইসলামীর দাবি।”

তিনি বলেন, ‘ইতিহাস বলে ফ্যাসিজম একবার বিদায় হলে আর ফিরে আসে না। এ দেশেও সেটি হবে না। ফলে বিভ্রান্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই।’

আওয়ামী লীগের নৃসংশতার বর্ণনা দিয়ে নায়েবে আমীর বলেন, ‘শুধু বিএনপি জামায়াত নয়, আওয়ামী লীগ তাদের দলের লোকদেরও খুন ও নির্যাতন করেছে। আমার এলাকায় নিজেদের ৮ কর্মীকে হত্যা করেছে তারা। তবে আমরা কোনো হত্যার রাজনীতি করব না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বলা হয়, নারীর অধিকার থাকবে কি না? পরিবারের নারীরা চাকরি করতে পারবে কি না?’

‘আমার স্ত্রী একজন প্রফেসর। আমার মেয়ে একজন ডাক্তার, তিনিও চাকরি করেন। আমার দ্বিতীয় মেয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। আমার ছোট মেয়ে আর্কিটেক্ট (স্থপতি), তিনিও চাকরি করেন। আমরা ক্ষমতায় এলে যদি নারীদের চাকরি করতে না দেই, তাহলে আমার পরিবারেই তো চাকরি থাকছে না। এগুলো জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে একটি অপপ্রচার মাত্র।’

 

সবা:স:জু- ৪৬৩/২৪

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম