
সবুজ বাংলাদেশ ডেস্ক:
কক্সবাজার এবং রাঙামাটির বিভিন্ন জেলাগুলোতে পর্যটকদের আনাগোনা। এই স্থানগুলোতে পুরো ডিসেম্বর মাস জুড়েই থাকে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। ১৬ই ডিসেম্বর থেকে তো আপনি আগে থেকে রুম বুকিং না দিলে রুম পাবেন না। আর এটা চলতে থাকে ডিসেম্বরে ২৮ /২৯ তারিখ পর্যন্ত। প্রথমে আলোচনা করব কক্সবাজারে পর্যটকদের নিয়ে।
কক্সবাজার :
বছরের শেষদিকে এসে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বাড়তে শুরু করেছে পর্যটকের ভিড়। দীর্ঘদিন পর পর্যটন নগরী স্বরূপে ফেরায় ফুরফুরে মেজাজে এ খাতের ব্যবসায়ীরা।
মূলত বছর শেষে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বার্ষিক সম্মেলন আয়োজনে বেছে নেয় পর্যটন নগরীকে। এর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হওয়ায় অভিভাবকরা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বেড়াতে এসেছেন কক্সবাজারে। ফলে পর্যটকের ভিড় বাড়ছে সাগর তীরে। একযোগে বিপুল পর্যটকের আনাগোনায় হোটেল-মোটেলসহ প্রায় পাঁচ শতাধিক আবাসিক প্রতিষ্ঠানে রুম খালি নেই। কক্সবাজারের মূল সড়কগুলোতেও ট্রাফিক সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত এমন অবস্থা থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, হোটেল-মোটেল জোনে তারকা মানের হোটেলসহ নানা ক্যাটাগরির পাঁচ শতাধিক হোটেল রয়েছে। এসব আবাসনে দৈনিক এক লাখ ৩০ হাজার পর্যটক থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার হতে গড়ে সোয়া লাখ পর্যটক কক্সবাজারে অবস্থান করছেন। আগামী ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত পর্যটকের এমন উপস্থিতি আশা করা যায়। বিপুলসংখ্যক পর্যটকের নিরাপত্তা, সড়কের যানজট নিয়ন্ত্রণ এবং শৃঙ্খলা রক্ষায় হিমশিম খাচ্ছে টুরিস্ট ও ট্রাফিক পুলিশ।

গত সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) সুগন্ধা পয়েন্ট, ইনানী ও অন্য পয়েন্টে দিনভর ঘুরে দেখা গেছে, শীত উপেক্ষা করে সমুদ্রপাড়ে ভিড় জমাচ্ছেন পর্যটকরা। অনেকেই সাগরের নোনা জলে গা ভিজাচ্ছেন, কেউ কেউ জেট স্কি নিয়ে মিতালি জমাচ্ছেন ঢেউয়ের সাথ, কেউবা বাইকের চক্কর দিচ্ছেন সাগরপাড়ে। উপস্থিত পর্যটকদের নিরাপত্তায় সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন টুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা। আর গোসলে নামারা যেন বিপদে না পড়েন সেই তৎপরতায় লাইফগার্ড কর্মীরা।
কুমিল্লার নাঙ্গলকোট থেকে আসা ফরিদ উদ্দিন (৪৩) বলেন, গত দুই দিন আগে কক্সবাজার এসেছি। সেদিন বিকেলে এবং সোমবার সকাল হতে সৈকতে ভ্রমণপিপাসুদের ভীড় লেগে আছে। যারা অগ্রিম হোটেল বুকিং না দিয়ে এসেছে তারা পরিবার নিয়ে বিপদে পড়েছে। নিয়মের চেয়ে বেশি ভাড়া দিতে চেয়েও অনেকেই রুম ভাড়া পাচ্ছেন না।
নারায়ণগঞ্জের আয়েশা ফারুকী (২৫) বলেন, ছুটির দিনে পর্যটকের সংখ্যা বেশি হওয়ায় হোটেলের রুম ভাড়ায় তেমন ছাড় মেলেনি। রেস্তোরাঁসহ সবখানেই ভিড়।
হোটেল ওশান প্যারাডাইসের ম্যানেজার (ফ্রন্ট অফিস) আবদুল হান্নান বলেন, চলতি সপ্তাহের শুরু থেকে শহরের হোটেল-মোটেল রিসোর্ট ও কটেজে রুমের চাহিদা বেড়েছে। গত আট মাস অনেকটা শূন্য ছিল পর্যটন নগরী। এখন ভীড় বাড়ছে, রুম ভাড়ায় সাধ্যমতো ছাড় দিচ্ছি। তবে, অনেক পর্যটক আমাদের আগাম বুকিং দিয়েই এসেছেন। তাই কেউ এসে হঠাৎ রুম চাইলে দুঃখপ্রকাশ ছাড়া কিছুই করা থাকছে না। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আগাম রুম বুকিং না দিয়ে ভ্রমণে এলে বিপত্তিতে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তারকা হোটেল কক্স-টু ডের সহকারি মহাব্যবস্থাপক আবু তালেব শাহ বলেন, হোটেল কক্ষ খালি যাচ্ছে না। এ অবস্থা আরও সপ্তাহ-দশ দিন থাকবে।
একই অবস্থা লাবনী পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্ট, কলাতলী ছাড়াও মেরিন ড্রাইভের কিনারে গড়ে তোলা হোটেল-কটেজেও রুমভাড়ায় কোন ছাড় দেওয়া কিংবা ওয়াকিং পর্যটকরা রুম পাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার হোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, পর্যটকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত রুমভাড়া কিংবা খাবারের মূল্য আদায়ের অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এসব বিষয় তদারকি করতে প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে রয়েছে।
এদিকে টুরিস্ট পুলিশের (কক্সবাজার) মুখপাত্র সহকারি পুলিশ সুপার আবুল কালাম বলেন, লাখো পর্যটকের নিরাপত্তা নিশ্চিতে টুরিস্ট পুলিশের ৮৫ জন সদস্যকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সবার সতর্কতার কারণে এখন পর্যন্ত কোনো হয়রানি কিংবা দুর্ঘটনার খবর আসেনি।

পর্যটকবাহী কয়েক হাজার যানবাহনের কারণে যানজট সৃষ্টি হয়েছে শহরের কলাতলী ডলফিন মোড়, বাইপাস সড়ক, প্রধান সড়কের বাজারঘাটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অর্ধশতাধিক পুলিশ সদস্য কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও ট্রাফিক পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন চৌধুরী।
সাজেক:
পর্যটন মৌসুমের শুরুতেই রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের পর্যটনকেন্দ্র রুইলুই ভ্যালিতে পর্যটকদের আগমন বেড়েছে। আজ শুক্রবার সব রিসোর্ট-কটেজের কক্ষ আগাম বুকিং হয়ে গেছে। যাঁরা বুকিং না নিয়ে সাজেকে বেড়াতে আসবেন, তাঁরা কক্ষ পাবেন না বলে সাজেক রিসোর্ট-কটেজ মালিক সূত্রে জানা গেছে।

রিসোর্ট-কটেজ মালিক সূত্র জানায়, ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে সাজেকে পর্যটকেরা আসা শুরু করেন। গত এক সপ্তাহ থেকে রিসোর্ট-কটেজের কক্ষগুলো আগাম বুকিং হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস ছুটিতে সব কক্ষ ভাড়া হয়ে যায়। গতকাল বৃহস্পতিবার সব কক্ষ ভাড়া হয়ে যায়। বুকিং না দিয়ে আসলে স্থানীয় লোকজনের বাড়িঘরে, স্টোররুম ও গাড়িতে রাত কাটাতে হবে। অন্যথায় খাগড়াছড়ি ফিরে যেতে হবে। কক্ষ না পেয়ে ইতিমধ্যে অনেক পর্যটক ফিরে গেছেন।
সাজেক হিল ভিউ রিসোর্টের মালিক বলেন, ‘আমার রিসোর্টে ১০টি কক্ষ রয়েছে। তিন দিন আগে সব কক্ষ ভাড়া হয়ে যায়। অনেক পর্যটক মুঠোফোনে কক্ষ বুকিং দেওয়া চেষ্টা করছেন। কিন্তু আমি তাঁদের কক্ষ দিতে পারছি না।’
সাজেক রুইলুই পর্যটনকেন্দ্রের রিসোর্ট-কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি সুপর্ণ দেব বর্মণ বলেন, ‘আজ আমাদের ১১৫টি রিসোর্ট-কটেজে কোনো কক্ষ খালি নেই। এক সপ্তাহ আগে থেকে আগাম বুকিং নেওয়া হচ্ছে। গতকাল জানতে পারলাম কোনো কক্ষ আর খালি নেই। ডিসেম্বর মাসের শুরুতেই পর্যটকদের ভিড় বেড়েছে। গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস ছুটিতে কক্ষ না পেয়ে অনেক মানুষ ফিরে গেছেন।’
পার্বত্য অন্যান্য জেলাগুলোয় পর্যটকের ঢল:
রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতু, বার্গী লেক ভ্যালী, পুলিশের পলওয়েলসহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটকের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। বেড়াতে আসা পর্যটকরা কাপ্তাই হ্রদে নৌ ভ্রমনসহ পর্যটন স্পটগুলোতে সময় কাটিয়েছেন। তবে চট্টগ্রাম বিভাগের বাইরে থেকে আসা পর্যটকের সংখ্যা কিছুটা কম ছিল।
বিজয় দিবসের সরকারী ছুটিতে খাগড়াছড়ির অন্যতম পর্যটন স্পট জেলা পরিষদ পার্ক, রিছাং ঝর্ণা, আলুটিলাসহ দর্শনীয় স্থান গুলোতে পর্যটকদের ব্যপক উপস্থিতি দেখা গেছে। আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র ও রিছাং ঝরনায় শিক্ষার্থীসহ সবার জন্য এদিন বিনামূল্যে প্রবেশের ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন। এছাড়া পার্বত্য জেলা পরিষদের হর্টিকালচার পার্কও উন্মুক্ত ছিল শিশুদের জন্য।
এ বছর পর্যটকরা সরাসরি দীঘিনালা চলে যাওয়ার সুবিধা পাওয়ায়, খাগড়াছড়ি সদরে তাদের রাত্রিযাপনের হার কমেছে। এতে কিছুটা মন্দা তৈরী হয়েছে খাগড়াছড়ি সদরের হোটেল-মোটেল ব্যবসায়।
সো এখনো কিন্তু ডিসেম্বর শেষ হয়নি আপনারা যারা ঘুরতে যেতে চাচ্ছেন। তারা কিন্তু এখনই রুম বুকিং নিয়ে তারপরে হচ্ছে সাজেক রাঙ্গামাটির যে কোন অঞ্চলে কিংবা কক্সবাজারে ঘুরে আসতে পারেন। এছাড়াও দেশের আনাচে কানাচে আরো অনেক অঞ্চল রয়েছে যেখানে পর্যটকদের জন্য খুব সুন্দর ব্যবস্থা রয়েছে। এই ছুটিতে এখনই আপনি আপনার পছন্দের স্থানটি ঘুরে আসুন।
সবা:স:জু- ৪৪৬/২৪