ক্যানসার প্রতিরোধ করে কালো আঙুর

স্টাফ রিপোর্টার: দেশি ফল না হলেও বেশ সহজলভ্য আঙুর। উপকারী এফলের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ, যা আপনার শরীরকে ভালো রাখতে কাজ করবে। নিয়মিত পরিমাণ মতো আঙুর খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। কালো আঙুর ফলের জগতে প্রকৃতির অমূল্য রত্ন, যা মিষ্টি এবং শক্তিশালী স্বাদে মোহিত করার পাশাপাশি প্রচুর পুষ্টিকর উপকারিতাও নিয়ে আসে।

কালো আঙুরের উচ্চ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণাবলি আমাদের শরীরের জন্য নানা উপকারিতা নিয়ে আসে। এই আঙুর নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকাটা অনেকটাই সহজ হবে। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক কালো আঙুরের ৫ উপকারিতা-

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

অসুস্থতা এড়াতে চাইলে কালো আঙুর নিয়মিত রাখতে হবে খাবারের তালিকায়। ভিটামিন সি এবং রেসভেরাট্রল, কোয়ারসেটিন এবং অ্যান্থোসায়ানিন জাতীয় উদ্ভিদ উপাদান এই সুস্বাদু ফলে প্রচুর রয়েছে। রোগ সৃষ্টিকারী ফ্রি র‍্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং প্রদাহ কমাতে শরীর এই সমস্ত মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে ব্যবহার করে।

ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে

কালো আঙুর পুষ্টিকর এবং কম ক্যালোরিযুক্ত হওয়ায় ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। এক কাপ আঙুরে প্রায় ১২৪ ক্যালোরি থাকে। ক্যালোরি কম থাকায় ওজন কমানো সহজ হয়। আঙুরে ফাইবার থাকে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। ফাইবার হলো এক ধরণের কার্বোহাইড্রেট যা খাবারকে অতিরিক্ত পুষ্টি দেয় এবং দীর্ঘ সময় পেট ভরিয়ে রাখে।

হৃদপিণ্ডকে শক্তিশালী করে

কালো আঙুর হৃদরোগের জন্য বিশেষভাবে উপকারী হতে পারে কারণ এর ফ্ল্যাভোনয়েড রয়েছে। কালো আঙুর আমাদের প্লেটলেট, কোলেস্টেরল, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস (অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফ্রি র‍্যাডিক্যালের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা), রক্তনালীর (ভাস্কুলার) স্বাস্থ্য, রক্তে লিপিড এবং রক্তচাপের যত্ন নেয়। এ কারণে আঙুর হৃদরোগ দূরে রাখে এমন খাবারের মধ্যে অন্যতম।

দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে

কালো আঙুরে ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট জিএক্সানথিন এবং লুটিনও রয়েছে। বাস্তবে এই উদ্ভিদ অণুগুলো ক্যারোটিনয়েড রঞ্জক, যা চোখের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য পরিচিত। যেহেতু লুটিন এবং জিএক্সানথিন হলো একমাত্র দুটি ক্যারোটিনয়েড যা রেটিনায় সত্যিকার অর্থে জমা হয়, তাই এটি চোখের স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। এটি চোখের রোগের সঙ্গে লড়াই করতে সাহায্য করে, যার মধ্যে ছানি এবং ম্যাকুলার ডিজেনারেশন রয়েছে।

ক্যানসার প্রতিরোধ করতে পারে 

কালো আঙুরের মধ্যে রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েড এবং রেসভেরাট্রল। কিছু গবেষণা অনুসারে, এই দুটিরই ক্যানসার প্রতিরোধী প্রভাব থাকতে পারে। এই পদার্থগুলো অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করতে পারে, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কিত। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফ্রি র‍্যাডিকেল বা অস্থির পরমাণুর মধ্যে ভারসাম্যহীনতার কারণে কোষের ক্ষতি হয়, যা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস নামে পরিচিত।

রামগড় পাহাড়ের প্রান্তে এক সম্ভাবনাময় জনপদ

মোঃমাসুদ রানা,খাগড়াছড়ি জেলা প্রতিনিধিঃ

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে, খাগড়াছড়ি জেলার দক্ষিণে অবস্থিত একটি ছোট্ট উপজেলা রামগড়। এখানকার প্রকৃতি পাহাড়ি, অথচ সমতলের ছোঁয়াও আছে। সীমান্তবর্তী এই জনপদের একদিকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, অন্যদিকে বাংলাদেশের ফেনী জেলা। পাহাড় আর সীমান্ত ঘেরা এই জনপদের পরিচয় যেন বহুমাত্রিক ভৌগোলিক, ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনার এক অনবদ্য মিশেল।
রামগড় উপজেলা গঠিত হয় ১৯৮৩ সালে, কিন্তু তার ইতিহাস অনেক পুরনো। এখানকার ভূপ্রকৃতি ও জনজীবন প্রাচীনকাল থেকেই ভিন্নধর্মী। পাহাড়ি জনগোষ্ঠী চাকমা, ত্রিপুরা, মারমা সমতলের বাঙালি বসতি মিলে রামগড়ে তৈরি হয়েছে এক বিচিত্র সামাজিক বিন্যাস। ফেনী নদী রামগড়কে বিভক্ত করে রেখেছে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড ও ত্রিপুরার সঙ্গে, আর সেই নদীর বুকেই এখন গড়ে উঠছে এক আন্তর্জাতিক স্থলবন্দর।

রামগড়ের জনসংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার, এখানকার অধিকাংশ মানুষ কৃষিজীবী। পাহাড়ি জমিতে আনারস, আদা, হলুদ আর জুম চাষ হয় বছরের বড় একটি সময়জুড়ে। অন্যদিকে সমতলের মানুষ ধান চাষ আর হাট বাজার ভিত্তিক ব্যবসা-বাণিজ্যে নিয়োজিত। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে, এত সম্ভাবনার পরও রামগড়ের অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ দুর্বল। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে ঘাটতি, সড়ক যোগাযোগের সমস্যা এবং সীমান্তবর্তী ঝুঁকি—সব মিলিয়ে রামগড় এক ধরনের উন্নয়ন বঞ্চনার চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রামগড়ের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য তার সীমান্ত ঘেঁষা চরিত্র। এখান থেকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাবরুম শহর মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে। দুই দেশের মধ্যে একসময় ছিল মানুষের যাতায়াত, পারস্পরিক বাজার, আত্মীয়তার সম্পর্ক। এখন সীমান্তের কাঁটাতার সবকিছু আলাদা করে দিয়েছে। তবুও এখান থেকে স্থলবন্দর গড়ে ওঠার সম্ভাবনা অনেক দূর এগিয়েছে। ২০১৭ সালে রামগড়-সাবরুম স্থলবন্দরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। এটি পুরোপুরি কার্যকর হলে দুই দেশের মধ্যে একটি নতুন বাণিজ্যিক দ্বার খুলে যাবে।

রামগড় শুধু সীমান্ত নয়, এটি এক ধরনের সংস্কৃতি ও সম্প্রীতির কেন্দ্র। এখানকার পাহাড়ি-বাঙালি সহাবস্থান অনেকটা অনন্য। যদিও অতীতে কিছু সহিংস ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু বর্তমানে সামাজিক সম্পর্ক স্বাভাবিক এবং শান্তিপূর্ণ। ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ‘গরিয়া পূজা’ হোক বা বাঙালি মুসলমানদের ঈদ, কিংবা মারমাদের ‘ওয়াগেইন উৎসব’—সবই রামগড়ে মিলেমিশে উদযাপিত হয়।

তবে রামগড়ের সবচেয়ে বড় অভাব হলো অবকাঠামো ও সেবাব্যবস্থার উন্নয়ন। বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য, পানীয়জল এবং শিক্ষার অভাবে মানুষ প্রতিনিয়ত কষ্ট করছে। সীমান্তবর্তী এলাকার বিশেষ চাহিদা থাকলেও জাতীয় নীতিমালায় সেগুলো বারবার উপেক্ষিত। ফলে রামগড়ের মানুষ প্রতীক্ষায় থাকে—কখন উন্নয়নের ছোঁয়া তাদের পাহাড়ি জনপদে এসে পৌঁছাবে।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম