পুলিশের অভিযানে আটক মেঘনা আলম: পেছনে ভয়ঙ্কর চক্র

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজধানীর উত্তরার হোয়াইট প্যালেস রেস্ট হাউজে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে অভিযানে নামে পুলিশ। হাতেনাতে আটক হন একাধিক নারী। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য, চক্রটির মূল হোতা মেঘনা আলম। যিনি দীর্ঘদিন ধরে ‘মডেল’ পরিচয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় ছিলেন। তবে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে তার পরিচয়ের আড়ালে এক ভয়ঙ্কর বাস্তবতা। অভিযোগ অনুযায়ী, মেঘনা রাজধানীজুড়ে এসকর্ট সার্ভিস চালান, তরুণীদের ভাড়া দেওয়া ও পাচারের সঙ্গে জড়িত। হোটেলকেন্দ্রিক দেহ ব্যবসার পাশাপাশি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে তথাকথিত ‘হানি ট্র্যাপ’ মিশনেও অংশ নিয়েছেন তিনি।

পুলিশ জানিয়েছে, মেঘনার আরও তিন বোন এই চক্রের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। তাঁদের বিস্তৃত নেটওয়ার্কে দেশের বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তি, ভিআইপি এবং রাজনৈতিক সংযোগের প্রমাণ মিলছে। কৌশলে টার্গেটদের ফাঁদে ফেলে ভিডিও ও স্পর্শকাতর তথ্য সংগ্রহ করে, যা পরে ব্ল্যাকমেইল বা বিশেষ উদ্দেশ্য পূরণে ব্যবহার করা হতো। ঘটনার পরপরই কিছু সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার, মানবাধিকারকর্মী এবং তথাকথিত প্রগতিশীল পরিচয়ের ব্যক্তি মেঘনার মুক্তির দাবিতে সরব হন। সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া তাঁদের পোস্ট ঘিরে তৈরি হয়েছে তীব্র বিতর্ক।

জনমনে প্রশ্ন এই মুক্তির দাবিদাররা কি চক্রটিরই সুবিধাভোগী, নাকি তারাও মেঘনার মতো কোনো দেশবিরোধী এজেন্ডার অংশ? ‘সুন্দর মুখ’ থাকলেই কি কেউ আইনের ঊর্ধ্বে থাকতে পারে? কেউ যদি বিদেশি সংস্থার হয়ে দেশের বিরুদ্ধে কাজ করে, তবে কি মানবাধিকার দেখিয়ে তাকে রক্ষা করা যায়?

তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলছে, একজন মেঘনা ধরা পড়েছে মাত্র। তার পেছনে রয়েছে আরও অনেক মুখোশধারী, যারা সমাজে সংস্কৃতি কর্মী, সমাজসেবক কিংবা মানবাধিকারের মুখোশ পরে বিচরণ করছে। তবে মেঘনা আলম ও তার সহযোগীদের শনাক্ত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানা যায়।

ডিপিডিসির ইমরোজের সম্পদের খোঁজে দুদক

স্টাফ রিপোর্টার॥

ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) সহকারী প্রকৌশলী ইমরোজ আলী’- এমন অভিযোগের ভিত্তিতে শিগগিরই তার সম্পদের খোঁজে মাঠে নামছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের এক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

সূত্র বলছে, সহকারী প্রকৌশলী ইমরোজ আলী ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর হিসেবে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। ৫ আগস্টে তার ক্ষমতার উৎস পতিত হলেও তার অনিয়ম থেমে নেই। তার বিরুদ্ধে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসেছে সংস্থাটি। দুর্নীতি খুঁজে বের করতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ডিপিডিসি। গত ১৮ মার্চ ডিপিডিসি’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মহিউল আলমকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির বাকি দুই সদস্য হলেন ম্যানেজার আরমান হোসেন খন্দকার এবং শাহ মোহাম্মদ ওয়াহাব।

ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (এডমিন এন্ড এইচআর)  দপ্তর এ তথ্য নিশ্চিত করেন। কমিটিকে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে (ডিপিডিসি)’র বিতর্কিত সহকারী প্রকৌশলী ইমরোজ আলীর অনিয়ম তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেই তদন্ত প্রতিবেদন আজও আলোর মুখ দেখেনী।

ডিপিডিসি সূত্র বলছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এপিএস সাইফুজ্জামান শেখরের ঘনিষ্ঠ সহোচর হওয়ার সুবাদে ইমরোজের হাতে পুরো ডিপিডিসির নিয়ন্ত্রণ চলে যায়। নড়াইলের বাসিন্দা হওয়ায় শেখরের সঙ্গে তার ছিল সখ্যতা, যা কাজে লাগিয়ে তিনি নির্বাহী প্রকৌশলী ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীদের চাপ প্রয়োগ করে অবৈধ সুবিধা আদায় করতেন। অভিযোগ রয়েছে, গ্রাহকদের ফাইল আটকে রেখে জোরপূর্বক তার কোম্পানি থেকে মালামাল ক্রয় করতে বাধ্য করা হতো। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, ডিপিডিসিতে ইমরোজ আলীর কোম্পানি ছাড়া অন্য কেউ সাব-স্টেশন ব্যবসার সুযোগ পান না। নিম্নমানের হলেও তার কোম্পানির ট্রান্সফরমার ছাড়া কোনো ফাইল অনুমোদিত হয় না। অনিয়ম, দুর্নীতি ও জালিয়াতিতে দক্ষ এই উপ-সহকারী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই আসছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রকৌশলী বলেন, ডিপিডিসিতে মানহীন ট্রান্সফরমারের কারণে বিভিন্ন স্থানে অগ্নিকাণ্ড ঘটছে। দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যাও বাড়ছে। আমরা জেনে-বুঝেও এসব মানহীন ট্রান্সফরমার বিদ্যুতের উচ্চচাপ সংযোগের গ্রাহককে নিতে বাধ্য করতাম। মানহীন এসব ট্রান্সফরমার সরবরাহ করার বিষয়টি তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানান এ প্রকৌশলী।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সহকারী প্রকৌশলী ইমরোজ আলী ডিপিডিসির কর্মী হিসেবে তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠানে পণ্য সরবরাহ করতে পারেন না। এটা আইন পরিপন্থি। এটা ঘোরতর অন্যায় হয়েছে। এটা তিনি করতে পেরেছেন তার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণে এবং দলীয় প্রভাবকে ব্যবহার করে। ডিপিডিসিতে তার পদ এবং রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা দুটির সংমিশ্রণে যে ক্ষমতা তার অপব্যবহার করে তিনি ডিপিডিসিতে তার নিজস্ব কোম্পানির পণ্য সরবরাহ করেছেন। এর মাধ্যমে তার যে বৈধ আয় তার সঙ্গে দৃশ্যত অসামঞ্জস্য সম্পদ অর্জন করেছেন। এটাও বহুমাত্রিক অপরাধের একটি। এর মাধ্যমে তিনি সরাসরি দুর্নীতিতে লিপ্ত ছিলেন। তিনি বলেন, সহকারী প্রকৌশলী ইমরোজ আলী যত অবৈধ সম্পদ অর্জন সেগুলো যথাযথ প্রক্রিয়ায় তদন্ত করে পাশাপাশি তার যে ক্ষমতার অপব্যবহার এসব অপরাধের কারণে তাকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে অপরাধীদের কাছে একটি বার্তা পৌঁছায়। জবাবদিহি না থাকায় এ ধরনের অপরাধ এরা অকপটে করতে পেরেছে; কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আমরা মনে করি এ ধরনের অপরাধের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত হয় তাহলে অন্যদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করবে।

অভিযোগ প্রসঙ্গে সহকারী প্রকৌশলী ইমরোজ আলী’র মুঠোফোনে টানা দুদিন চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এরপর জানতে চেয়ে বিষয়গুলো দিয়ে খুদে বার্তা পাঠালেও তিনি উত্তর দেননি।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম
বিদেশ থেকে যতটুকু স্বর্ণ আমদানি করলে দিতে হবে না ভ্যাট প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎতে যাচ্ছেন বিএনপির মহাসচিব ফকরুল বাংলাদেশে ইতিহাস গড়ল উইন্ডিজ দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন রাজউক ইমারত পরিদর্শক শামীম রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধে কে জিতবে, তা নিয়ে পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তুতি নিচেছ ট্রাম্প নাসার চন্দ্র মিশনে স্পেসএক্স জুলাই যোদ্ধা স্বীকৃতি পেতে নতুন করে দেড় হাজারের বেশি আবেদন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরাতে আপিল শুনানি শুরু প্রধান প্রকৌশলীর আস্থাভাজন ইএম ২ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কায়কোবাদ সম্পদের পাহাড় জানানো যাচ্ছে অভিযোগ, থানায় বসলেই ভিডিওকলে হাজির এসপি