
চট্টগ্রাম সংবাদদাতা:
বাঁশখালীর উত্তর জলদী শহীদ দেলোয়ার হোছাইন দারুল আরকাম মাদ্রাসা, হেফজখানা ও এতিমখানায় একের পর এক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বেতন বন্ধ, এতিম তালিকায় জালিয়াতি, সরকারি বরাদ্দের অর্থ আত্মসাৎ, খাবার সরবরাহে গাফিলতি, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অপকর্ম এবং দায়িত্বশীল নিয়োগে জোরজবরদস্তির মতো ঘটনায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আকতার হোসাইন বাঁশখালী উপজেলা ওলামা লীগের সভাপতি এবং বাঁশখালীর তৎকালীন এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত, তাঁর বিরুদ্ধেই শিক্ষক ও এলাকাবাসী এসব গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন।
অভিযোগ অনুযায়ী, মাদ্রাসার ৮ জন শিক্ষক ও শিক্ষিকাকে কোন কারণ ছাড়াই কয়েক মাস ধরে বেতন প্রদান বন্ধ রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয়, বেতন না দেওয়ার কৌশল অবলম্বন করে তাঁদের মাদ্রাসা থেকে পরিকল্পিতভাবে বঞ্চিত করা হয়েছে। এ সময় শারীরিক ও মানসিকভাবে হুমকি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। বেতন না পাওয়া শিক্ষক-শিক্ষিকারা হলেন নাছিমা আকতার, নাছিমা সোলতানা, জোৎস্না আকতার, আকলিমা সোলতানা লিজা, মহিউদ্দিন সাদ্, মহিউদ্দিন মাহবুব, সায়েদ উদ্দিন চৌধুরী ও জহিরুল ইসলাম।
সরকারি বরাদ্দ রয়েছে ৪০ জন এতিমের জন্য, কিন্তু বাস্তবে তাঁদের মধ্যে মাত্র একজন প্রকৃত এতিম। বাকিদের নাম ইচ্ছাকৃতভাবে ‘এতিম’ হিসেবে দেখানো হয়েছে। এছাড়া বরাদ্দ তালিকায় থাকা ৪০ জনের মধ্যে প্রতিদিন উপস্থিত থাকেন মাত্র ১২ থেকে ১৫ জন ছাত্র-ছাত্রী। বাকিদের নাম সম্পূর্ণ ভুয়া বা ভুলভাবে সংযোজন করা হয়েছে যা সরাসরি প্রতারণা, সরকারি অর্থ আত্মসাৎ এবং দাতাদের সহানুভূতি ব্যবহার করে অবৈধভাবে সুবিধা নেওয়ার শামিল।
সরকারি বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও শিশুদের পর্যাপ্ত খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে না। বরাদ্দ অনুমোদন ও অব্যাহত রাখার জন্য বিভিন্ন জায়গায় ঘুষ দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। এমনকি শিশুদের জন্য নিম্নমানের খাবার সরবরাহ করা বলেও অভিযোগ উঠেছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, এই মাদ্রাসায় দায়িত্বশীল পদে ব্যক্তিদের জোরপূর্বক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পূর্ববর্তী শিক্ষকগণকে এতিম না হয়েও ‘এতিম’ হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার ঘটনায় বহুবার অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া ভুয়া ও বানোয়াট নথি তৈরির জন্য পেশাগত চাপ প্রয়োগের অভিযোগও পাওয়া গেছে।