ঔষধ প্রশাসনের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের প্রত্যাক্ষ মদদে ইউনানী, আয়ুর্বেদিক কোম্পানির প্রাণঘাতী ঔষধে বাজার সয়লাব

স্টাফ রিপোর্টার:

রাজধানী সহ সারাদেশের ঔষধের পাইকারী ও খুচরা বাজার দখল করে আছে অন-অনুমোদিত ও ভেজাল ইউনানী – আয়ুর্বেদিক ঔষধ কোম্পানির উৎপাদিত বিতর্কিত সব প্রাণঘাতী ঔষধ, আর এসব প্রাণঘাতী ঔষধ সামগ্রীর উৎপাদন ও বাজারজাত করা হচ্ছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের একশ্রেণির উচ্চাভিলাষী, দুর্নীতিপরায়ণ ও অবৈধ সুবিধাভেগী কর্মকর্তাদের ছত্রছায়ায়, এ অভিযোগ ঔষধ শিল্প সংশ্লিষ্ট একটি নির্ভরযোগ্য সুত্রের।
অভিযোগ উঠেছে রাজধানীর যাত্রাবাড়ি থানা এলাকার শেখদি শনির আখড়ার নবীন ল্যাবরেটরীজ ইউনানী, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এলাকার হিউম্যান ল্যাবরেটরীজ (আয়ু), ট্রাস্ট ল্যাবরেটরীজ ইউনানী ঢাকা, বাংলাদেশ এবং সাভার এলাকার এস-কে ল্যাবরেটরীজ (আয়ু) অবৈধভাবে অন-অনুমোদিত ঔষধ উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। আর এসব অবৈধ কর্মযজ্ঞ চলছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও নথি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ছত্রছায়ায়।

জানা গেছে, নবীন ল্যাবরেটরীজ লিঃ ইউনানী উৎপাদন লাইসেন্স নং ইউ-১৯৯ ঢাকা বাংলাদেশ, । অফিস এর ঠিকানা -৩৩/৩ উত্তর গোলাপবাগ এবং কারখানার ঠিকানা- শনির আখড়া শেখদি, থানা যাত্রাবাড়ী, ঢাকা। উক্ত কোম্পানির মালিক ও ম্যানেজার মিলে মেরী গোল্ড নামক সর্বনাশা সিরাপ খেয়ে ৩ জনের মৃত্যুর ঘটনার রেশ কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই জনস্বাস্থ্য বিরোধী কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ার মতো গুরুতর এক অভিযোগ পাওয়া গেছে, অভিযোগ উঠেছে সর্বনাশা প্রাণঘাতী ঔষধ মেরী গোল্ড আবারও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দেশের ঔষধের বাজার। এছাড়াও উক্ত কোম্পানির উৎপাদিত
নবীন জাফরান (আরক জিরা) ৪৫০মিলি সিরাপ, ওমেক্স (শরবত শায়লান) ৪৫০ মিলি সিরাপ, নিউবিন (নার্ড টনিক) ৪৫০মিলি ভিটামিন সিরাপ, ট্যাবলেট নক পাল (কুরুছ এহেতেলাব) ১০×৫টি ট্যাবলেট ফ্রিস্টার প্যাকেট, ডায়া ডেস্ট (কুরছ জিয়াবিত) ১০×১০ টি ডায়াবেটিস এর ক্যাপসুল , এপিটোজেন (শরবত সেব) ৪৫০ মিলি ভিটামিন সিরাপ, সেপটোপ্লেক্স (শরবত আনার) ৪৫০ মিলি ভিটামিন সিরাপ। লিভারিব (শরবত দিনার) ৫৪০ মিলি সিরাপ, নবীন পুষ্টি ক্যাপ (হাব্বে হায়াতিন মুরাক্কাব) বার্ধক্য প্রতিরোধক উচ্চ ক্ষমতা সমন্বয় পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ক্যাপসুল ৩০টির পট । সাইকোপ্লেক্স (শরবত মডেজ) ১০০ মিলি ভিটামিন সিরাপ এর লেভেল কার্টুনের বাচ্চাদের ছবি দেওয়া আছে যা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ঔষধ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ পরিপন্থী, মুদিন (হব্বে দুদিন) ৪×৫=২০টি ক্যাপসুল ব্লিস্টার প্যাকেট, ক্যালসিমন (কুশতা ঘারে মেহেরা) ৪×৪=২০ টি ক্যাপসুল, লিমনিল ৪৫০ মিলি সিরাপ, নবীন নিম ক্যাপসুল,
শরবত মুছাফ্ফি ৪৫০ মিলি সিরাপ, নবীন চিরতা ক্যাপসুল (৫×১০=৫০) টি ক্যাপসুল, ভেগাজিন কুরুছ (আওজা) (৫×১০=৫০ টি ক্যাপসুল , সবচেয়ে নিরাপদ প্রকৃতির বাত- বেদনা নাশক ক্যাপসুল (ব্লিস্টার প্যাক) এবং নিকোকফ-১০০ মিলি তন্দ্রাচ্ছন্ন মুক্ত কফ সিরাপ উল্লেখযোগ্য। অভিযোগ উঠেছে উল্লেখিত ঔষধ সামগ্রীর উৎপাদন কালে কোন প্রকার গাছ-গাছড়ার ব্যাবহার না করেই বাংলাদেশ জাতীয় ইউনানী ফর্মুলারী অনুসরণ করা হয়নি বরং অবৈধভাবে সম্পুর্ণ কালার, ফ্লেভার ও কেমিক্যাল ব্যাবহার করে ঔষধ সামগ্রীর উৎপাদন ও বাজারজাত করছে নবীন ল্যাবরেটরীজ ইউনানীর মালিক পক্ষ।

হিউম্যান ল্যাবরেটরীজ (আয়ু) উৎপাদন লাইসেন্স নাম্বার – আয়ু-১১৬, ঠিকানা- হজী চান ভিলা, নয়াটোলা,হাসনাবাদ দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা, উক্ত কোম্পানির পূর্বের নাম ও ঠিকানা যথাক্রমে, খান সন্স ফার্মাসিউটিক্যালস (আয়ু), ৭ নং শহীদ লতিফ রোড,গাওয়াইর,দক্ষিণখান, ঢাকা। উক্ত কোম্পানির বর্তমান মালিক পক্ষ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ঔষধ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ অনুযায়ী কোম্পানির মালিকানা, নাম ও স্থান পরিবর্তন না করেই ২০২২ সাল থেকে অদ্যাবধি অবৈধভাবে বিভিন্ন প্রকার আয়ুর্বেদিক ঔষধ সামগ্রীর উৎপাদ ও বাজারজাত অব্যাহত রেখেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ মতে খান সন্স ফার্মাসিউটিক্যালস (আয়ু) এার মালিক প্রিন্সিপাল আব্দুর রব এর আমলে অর্থাৎ ২০/০৬/২০১৬ সালে স্মারক নং-ডিজিডিএ/আয়ু-০৫/৮৫/৯৮৪৮ অনুযায়ী ঔষধের শাস্ত্রীয় নামসহ ১৪ টি ঔষধের চুড়ান্ত মোড়কসামগ্রীর অনুমোদন করেন। উক্ত ১৪ টি ঔষধের শাস্ত্রীয় নাম ও প্যাক সাইজ যথাক্রমে, আমলকী রসায়ন (তরল), ১০০/২০০/৪৫০ মিলি, অশ্বগন্ধারিস্ট (তরল), ১০০/২০০/৪৫০ মিলি,উদ্যম (তরল) ১০০/২০০/৪৫০ মিলি, চন্দ্রনাসব (তরল) ১০০/২০০/৪৫০ মিলি, বলারিস্ট (তরল) ১০০/২০০/৪৫০ মিলি, সারিবাদ্যরিস্ট (তরল) ১০০/২০০/৪৫০ মিলি, বৃহত বাত গজাঙ্কুশ (ক্যাপসুল) ২৫০ মি,গ্রা, বৃহৎ চন্দ্রোদয় মকরধ্বজ (ক্যাপসুল) ২৫০ মি,গ্রা, নিম্বাদি চূর্ণ (ক্যাপসুল) ৫০০ মি,গ্রা, স্পিরুলিনা (ক্যাপসুল) ৪৫০ মি,গ্রা, শ্রী গোপাল তৈল (তৈল) ১০/৩০/৫০/১০০ মিলি, হিমসাগর তৈল (তৈল) ৫০/১০০/২০০ মিলি,নাগবলাদ্য চূর্ণ ( চূর্ণ) ৫০/১০০/২৫০ গ্রাম এবং দশন সংস্কার চূর্ণ (চূর্ণ) ৫০/১০০/২০০ গ্রাম কন্টেইনার। ওই অনুমোদন কপিতে মহাপরিচালকের পক্ষে স্বাক্ষর করেন মো: সালাহউদ্দিন সহকারী পরিচালক (বর্তমান পরিচালক প্রশাসন)। উক্ত অনুমোদন কপির শর্তাবলীর প্রথম লাইনে ই লেখা আছে যে, প্রতিটি ঔষধ ইউনানী শাস্ত্রীয় অনুকরণে তৈয়ারী করিতে হইবে! মজার জিনিস টা হলো কোম্পানি আয়ুর্বেদিক কিন্তু প্রতিটি ঔষধ ইউনানী শাস্ত্রীয় অনুকরণে তৈয়ারী করিত হইবে, শাস্ত্রের পরিপন্থী কোন কিছু করা চলিবে না। মো: সালাহউদ্দিন সহকারী পরিচালক থাকাকালীন এতোটাই জ্ঞ্যান সম্পন্ন বেক্তিতে পরিনত হয়েছেন যে তিনি আজ পরিচালক প্রশাসন এর পদ অলংকৃত করেছেন, এতোবড়ো ভুল না ধরে তিনি স্বাক্ষর করেন কিভাবে? এটা কি তার মহাজ্ঞানীর পরিচয়? এটাতো গেলো ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক প্রশাসন মো: সালাহউদ্দিন এর অদক্ষতা, অযোগ্যতা ও অদূরদর্শীতার পরিচয় এর বিষয়, এবার আসা যাক খান সন্স ফার্মাসিউটিক্যালস (আয়ু) / হিউম্যান ল্যাবরেটরীজ (আয়ু) এর জনস্বাস্থ্য বিরোধী কর্মকান্ডের বিষয়ে উক্ত কোম্পানির বর্তমান মালিক সাইফুল ইসলাম ও ফারুক হোসন, এরা মুলত খান সন্স ফার্মাসিউটিক্যালস (আয়ু) এর নাম, মালিকানা এবং স্থান পরিবর্তন এর সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করেই অবৈধভাবে হিউম্যান ল্যাবরেটরীজ (আয়ু) নামে বিভিন্ন প্রকার আয়ুর্বেদিক ঔষধ সামগ্রীর উৎপাদ ও বাজারজাত করছে। বিশেষকরে হিউম্যান আমলকী প্লাস (আমলকী রসায়ন) ৪৫০ মিলি সিরাপ, এইচ কুলি (চন্দ্রনাসব) ২০০ মিলি সিরাপ, হিউ বাসক (বাসকারিস্ট) ১০০ মিলি কফ সিরাপ সহ নামে বেনামে বাংলাদেশ জাতীয় আয়ুর্বেদিক ফর্মুলারির বাইরে গিয়ে অবৈধভাবে শুধুমাত্র কালার ফ্লেভার ও কেমিক্যাল ব্যাবহার করে বিভিন্ন প্রকার আয়ুর্বেদিক ঔষধ সামগ্রীর উৎপাদ ও বাজারজাত করছে।

ট্রাস্ট ল্যাবরেটরীজ ইউনানী, ঢাকা বাংলাদেশ, হেড অফিস ৭০/ডি,চিড়িয়াখানা রোড চতুর্থ তলা,মিরপুর -১ ঢাকা -১২১৬। উক্ত কোম্পানির মালিক পক্ষ ট্রাস্ট ল্যাবরেটরীজ ইউনানী’র নাম ট্রাস্টকো ল্যাবরেটরীজ ইউনানী নাম ব্যাবহার করে
ট্রাস্ট আমলকি প্লাস (শরবত আমলকি) ৪৫০ মিলি ভিটামিন সিরাপ। মাল্টা প্লাস সি ৪৫০ মিলি ভিটামিন সিরাপ, টি-ভিটা সিরাপ, উচ্চ ক্ষমতা মাল্টিভিটামিন এবং মাল্টিমিনারেল, ৪৫০ মিলি মুল্য ৩৫০ টাকা , ইরোভিট সিরাপ হিমোগ্লোবিন এবং রক্ত বৃদ্ধি করে আয়রন তৈরিতে কার্যকর ৪৫০ মিলি মুল্য ৩৬০ টাকা, বেলজাইম (সরবত বেলগিরি)
হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, ৪৫০ মিলি সিরাপ মুল্য ১৫০ টাকা, ২২৮ মিলি মুল্য ৮০ টাকা,
লিঙ্কস সিরাপ, অ্যান্টি-অ্যালার্গাটিক এবং কফ সিরাপ উইথ এক্সপেক্টোর্যান্ট ১০০ মিলি, মুল্য ৭০ টাকা, লাইভ ট্রাস্ট সিরাপ, জন্ডিস, যকৃতের রোগ এবং কোষ্ঠকাঠিন্য পরিস্কার করে ৪৫০ মিলি মুল্য ১৫০ টাকা ২২৮ মিলি মুল্য ৪০ টাকা, ট্রাস্ট -ফি সিরাপ রক্ত বিশুদ্ধকারী এবং ত্বকের রোগ নিরাময়ে কার্যকরী ৪৫০ মিলি মুল্য ৩৬ টাকা, ভিটা প্লেক্স সিরাপ প্রাকৃতিক শক্তি বর্ধক ও মাল্টিভিটামিন ৪৫০ মিলি মুল্য ৩৮০ টাকা এবং ১০০ মিলি ৪০ টাকা,
ট্রাস্ট বুজুরী সিরাপ, মূত্রবর্ধক,এবং মূত্রনালীর ব্যাধির জন্য কার্যকর ৪৫০ মিলি মুল্য ১৫০ টাকা এবং ২২৮ মিলি মুল্য ৭৫ টাক,
ওসেন সিরাপ অ্যানোরেক্সিয়া, জন্ডিস এবং কার্ডিয়াক দুর্বলতা ও ভিটামিন-সি এর অভাব পুরণ করে, ৪৫০ মিলি মুল্য ৩০০ টাকা, নেক্সাভিট জুনিয়র (বাচ্চাদের জন্য) ক্ষুধা ও পুষ্টি বর্ধক সিরাপ ১০০ মিলি, মুল্য ১০০ টাকা, ইনোয়েড প্লাস অ্যান্টাসিড এবং অ্যান্টি আলসার সিরাপ ২০০ মিলি, মুল্য -১১০ টাকা,
উরেকা সিরাপ অনিয়মিত ঋতুস্রাব এবং জরায়ুজনিত রোগের জন্য ৫৪০ মিলি মুল্য ১৮০ টাকা , ২২৮ মিলি মুল্য ৯০ টাকা ১০০ মিলি মুল্য ৮০ টাকা, লিকোট্রাস্ট (লিকোরিয়া) সিরাপ লিকোরিয়া নিরাময় এবং প্রতিরোধে কার্যকর ১০০ মিলি মুল্য ১৬০ টাকা ৫০ মিলি মুল্য ৬৫ টাকা, টি-জিনসিন যৌন উত্তেজক সিরাপ ৪৫০ মিলি মুল্য ৩০০ টাকা ১০০ মিলি মুল্য ৮৫ টাকা এবং ৫০ মিলি ৭৫ টাকা, ডুরেক্স যৌন শক্তি বর্ধক ১০০ মিলি সিরাপ মুল্য ১০০ টাকা ,
ট্রাস্ট রুচিফিট প্রাকৃতিক মাল্টিভিটামিন এবং মাল্টিমিনারেল, ট্যাবলেট ৩০ টির পট, মুল্য ৩০০ টাকা,
ভি-ট্রাস্ট, ভিটামিন ই এবং ভিটামিন এ টু জেড, ট্যাবলেট ৩০ টির পট মুল্য ৩০০ টাকা,
ট্রাস্ট ক্যাল-ডি, প্রাকৃতিক ক্যালসিয়াম এবং ক্যালসিয়াম কার্বনেট, ট্যাবলেট ৩০ টির পট মুল্য ১৮০ টাকা, হরমো ট্রাস্ট যৌন উত্তেজক, স্ট্যামিনা এবং স্বপ্ন দোষে কার্যকর, ক্যাপসুল ৩০ টির পট মুল্য ৫০০ টাকা, ভিটোগিন যৌন শক্তি বর্ধক ২৫০ এম জি ক্যাপসুল ৩০০ টাকা এবং ৫০০ এম জি ক্যাপসুল ৬০০ টাকা। উল্লেখিত ঔষধ সামগ্রীর উৎপাদ ও বাজারজাত করছে। উক্ত কোম্পানির উৎপাদিত ঔষধের মধ্যে টি-জিনসিন ও ডুরেক্স নামক ১০০ মিলি যৌন উত্তেজক সিরাপ তৈরি করার সময় সিলডেনাফিন সাইট্রেড নামক (ভায়াগ্রার উপাদান) কেমিক্যাল ব্যাবহার করা হয়েছে এবং ভিটামিন ঔষধ সমুহের মধ্যে ডেক্সামিথাসন ও সিপ্রহেপ্টাডিন নামক কেমিক্যাল ব্যাবহার করা হয়েছে। এছাড়াও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে ট্রাস্ট ল্যাবরেটরীজ (ইউনানী) নাম উল্লেখ করা থাকলেও মালিক পক্ষ ইনভয়েসে ট্রাস্টকো ল্যাবরেটরীজ (ইউনানী) নাম দিয়ে রাজধানী সহ সারাদেশে ঔষধ সামগ্রী বাজারজাত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এস,কে ল্যাবরেটরীজ লিঃ আয়ুর্বেদিক ঢাকা বাংলাদেশ লাইসেন্স নং আয়ু-১১৮, এর কারখানা কোন্ডা বাজার সাভার এলাকা হলেও ঔষধ সামগ্রীর লেবেল কার্টনে তা উল্লেখ না করে শুধুমাত্র ঢাকা বাংলাদেশ উল্লেখ করা হয়েছে যা এক ধরনের প্রতারণা। এস-কে ল্যাবরেটরীজ (আয়ু) এর মালিক কাজল কোম্পানি টি সফিকুল ইসলাম এর কাছে বিক্রি করে দিয়েছে, নিয়মানুযায়ী ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর কর্তৃক কোম্পানির মালিকানা ও স্থান পরিবর্তন করতে হবে কিন্তু কোম্পানির মালিক সফিকুল ইসলাম ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের নিয়মকানুন কে তোয়াক্কা না করেই অবৈধভাবে ইচ্ছে মতো নাম ও ইচ্ছে মতো দামে বাংলাদেশ জাতীয় আয়ুর্বেদিক ফর্মুলারির বাইরে গিয়ে শুধুমাত্র কালার, ফ্লেভার ও কেমিক্যাল ব্যাবহার করে ঔষধ সামগ্রীর উৎপাদ ও বাজারজাত করছে বেপরোয়া ভাবে তার এহেন কর্মকান্ড দেখার যেন কেউ ই নেই। এস-কে ল্যাবরেটরীজ (আয়ু) এর বর্তমান মালিক সাইফুল ইসলাম নামে বেনামে অবৈধ ও অন-অনুমোদিত ঔষধের উৎপাদন ও বাজারজাত করছে বেপরোয়া ভাবে। উক্ত কোম্পানির উৎপাদিত ঔষধের মধ্যে এস কে ভিট প্লাস (বলারিস্ট) ৪৫০ মিলি পুষ্টিকারক ও হজমিকারক সিরাপ এর ডি এ আর নং- আয়ু ১১০-এ-২০, ব্যাচ নং ০১ মেয়াদ উত্তীর্ণ তারিখ ২০২৬ পর্যন্ত । গ্যাসোনিড (মুশতাকারিস্ট) ডি এ আর নং-আয়ু- ১১০-এ-০০৩ ব্যাচ নাম্বার- ০১, মেয়াদ ২০২৪ থেকে ২০২৬ পর্যন্ত, মূল্য ১১০ টাকা,২০০মিঃ লিঃ সাদা রঙের সিরাপ যা সম্পূর্ণ কালার ফ্লেভার ও কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি করেছে । এ ছাড়াও এস কে তুলসী (দ্রাক্ষারিষ্ট) ১০০ মিলি কফ সিরাপ এর ডি এ আর নং- আয়ু- ১১০-এ-০৯, ব্যাচ নং – এস কে-০১, মূল্য ৬৫ টাকা । এস-কফ (দ্রাক্ষারীস্ট) ডি এ আর নং আয়ু ১১০-এ-০২১, মূল্য- ৭০ টাকা, ব্যাচ নং এস কে- ০১, কফ নিঃসরক ও ফুসফুস পরিষ্কারক ১০০ মিলি সিরাপ । এছাড়াও উক্ত কোম্পানির উৎপাদিত বিতর্কিত ঔষধ তৈরি করার সময় ভিটামিন ও যৌন উত্তেজক ঔষধ সামগ্রীতে সিলডেনাফিন সাইট্রেড ও ডেক্সামিথাসন গ্রুপের কেমিক্যাল ব্যাবহার করার মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।

নবীন ল্যাবরেটরীজ ইউনানী, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এলাকার হিউম্যান ল্যাবরেটরীজ (আয়ু), ট্রাস্ট ল্যাবরেটরীজ ইউনানী ঢাকা, বাংলাদেশ এবং সাভার এলাকার এস-কে ল্যাবরেটরীজ (আয়ু) এর অবৈধ ও জনস্বাস্থ্য বিরোধী কর্মকান্ডের বিষয়ে জরুরিভাবে ব্যাবস্থা গ্রহণ করা না হলে আবারও সর্বনাশা প্রাণঘাতী ঔষধের মরন ছোবলে প্রানহানীর মতো গুরুতর ঘটনা ঘটার আশংকা প্রকাশ করেছেন সচেতন মহল । এবিষয়ে সচেতন মহল গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রণালয়ের মাননীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী, স্বাস্থ্য সচিবসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন মহলের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

ভারতে শেখ হাসিনার ১০০ দিন কেমন চলছে

সবুজ বাংলাদেশ ডেস্ক:

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এরপর থেকে সেখানেই আছেন তিনি। তবে কীভাবে রয়েছেন, তা অনেকেরই অজানা।

ভারতের রাজধানী দিল্লির কেন্দ্রস্থলকে চক্রাকারে ঘিরে রয়েছে যে ইনার রিং রোড, তার ঠিক ওপরেই চারতলা পেল্লায় বাড়িটা। ডাক বিভাগের রেকর্ড অনুযায়ী ঠিকানা ৫৬ রিং রোড, লাজপত নগর, দিল্লি ১১০০২৪।

শহরের দক্ষিণপ্রান্তে পাঞ্জাবি অধ্যুষিত ওই এলাকায় এই বাড়িটার আলাদা করে কোনো বিশেষত্ব চোখে পড়ার কোনও কারণ নেই! কিন্তু আসলে ক’জনই বা জানেন প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে শেখ হাসিনা যখন প্রথম ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন তার ঠিকানা ছিল রিং রোডের ওপরের এই ভবনটাই?

আসলে তখন ৫৬ রিং রোড ছিল ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের একটি ‘সেফ হাউজ’ বা গোপন অতিথিশালা। শেখ মুজিবুর রহমান আততায়ীদের হাতে নিহত হওয়ার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী যখন তার কন্যাকে সপরিবারে ভারতে আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, দেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো প্রথমে তার থাকার ব্যবস্থা করেছিল এই বাড়িতেই। পরে একাধিকবার হাতবদল হয়ে ওই ভবনটি এখন শহরের একটি ছিমছাম চারতারা হোটেলে রূপ নিয়েছে। নাম ‘হোটেল ডিপ্লোম্যাট রেসিডেন্সি’।

মজার ব্যাপার হলো, লাজপত নগরের ওই এলাকাটি এখন দিল্লির আইভিএফ চিকিৎসার প্রধান হাবে পরিণত; যার সুবাদে বাংলাদেশসহ বিশ্বের নানা দেশ থেকে হাজার হাজার নিঃসন্তান দম্পতি ওখানে আসেন এবং দিনের পর দিন ওখানকার হোটেল ও গেস্ট হাউসগুলোতে থাকেন।

কিন্তু বাংলাদেশের এই মেডিকেল ট্যুরিস্টদের যারা ওই বিশেষ হোটেলটিতে ওঠেন, তাদের হয়তো কারও জানা নেই তাদের দেশের সবচেয়ে বেশি সময় প্রধানমন্ত্রী থাকা শেখ হাসিনাও তার জীবনের চরম সঙ্কটের মুহূর্তে ওই একই ভবনে আশ্রয় পেয়েছিলেন!

লাজপত নগরের ওই ঠিকানায় অবশ্য শেখ হাসিনা বা তার পরিবারকে খুব বেশিদিন থাকতে হয়নি।

শহরের ব্যস্ততম রাস্তার ওপর একজন গুরুত্বপূর্ণ অতিথিকে দীর্ঘ সময় রাখাটা নিরাপদ নয় বিধায় তাদের সরিয়ে নেওয়া হয় দিল্লির কেন্দ্রস্থলে অভিজাত পান্ডারা রোডের একটি সরকারি ফ্ল্যাটে, যার বাইরে ঝোলানো থাকত ভিন্ন নামের নেমপ্লেট। দীর্ঘ প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর সেখানেই ছিলেন তারা।

লাজপত নগরের সেই ভবনে এসে ওঠার ঠিক ৪৯ বছর বাদে বাংলাদেশ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে শেখ হাসিনা যখন আরও একবার ভারতে এসে আশ্রয় নিলেন, তখনও কিন্তু শহরে তার প্রথম ঠিকানায় তিনি থিতু হননি।

আসলে আজ থেকে ঠিক একশো দিন আগে ৫ আগস্টের চরম নাটকীয় পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা যখন ভারতে পা রাখেন, দিল্লির বিশ্বাস ছিল তার এই আসাটা একেবারেই সাময়িক; ইউরোপ বা মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশে যাওয়ার আগে এটা একটা সংক্ষিপ্ত যাত্রাবিরতির বেশি কিছু নয়!

যে কোনো মুহূর্তে তৃতীয় কোনো দেশের উদ্দেশে তিনি রওনা হয়ে যাবেন, এই ধারণা থেকেই প্রথম দুই-চারদিন তাকে ও তার বোন শেখ রেহানাকে রাখা হয়েছিল দিল্লির উপকন্ঠে গাজিয়াবাদের হিন্ডন বিমানঘাঁটির টার্মিনাল বিল্ডিংয়েই, যেটির নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার ভার দেশের বিমান বাহিনীর।

কিন্তু চট করে শেখ হাসিনার তৃতীয় কোনো দেশে পাড়ি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠার পর ভারত সরকার তাকে হিন্ডন থেকে সরিয়ে আনে দিল্লির কোনো গোপন ঠিকানায়। পরে তাকে হয়তো দিল্লির কাছাকাছি অন্য কোনো সুরক্ষিত ডেরাতে সরিয়েও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে ভারত সরকার আজ পর্যন্ত কোনো তথ্যই প্রকাশ করেনি।

কিন্তু ‘লোকেশন’ যাই হোক, ভারতে তার পদার্পণের একশো দিনের মাথায় এসে এই প্রশ্নটা ওঠা খুব স্বাভাবিক যে, এখন শেখ হাসিনাকে কীভাবে ও কী ধরনের নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে? আর সেটার পেছনে কারণটাই বা কী?

পাশাপাশি এই ‘এক্সট্রাঅর্ডিনারি সিচুয়েশন’ বা চরম অস্বাভাবিক একটা পরিস্থিতিতে তিনি স্বাধীনভাবে কতটা কী করতে পারছেন? কিংবা ‘হোস্ট কান্ট্রি’ হিসেবে ভারত কি তাকে কোনো কোনো কাজ না-করারও অনুরোধ জানিয়েছে?

দিল্লিতে একাধিক মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা ও ওয়াকিবহাল মহলের সঙ্গে কথাবার্তা বলে বিবিসি বাংলা এসব প্রশ্নের যে উত্তর পেয়েছে, প্রতিবেদনে থাকছে তারই সারাংশ।

নিরাপত্তা প্রোটোকলটা ঠিক কী রকম?
সরকারি পদমর্যাদা ও নিরাপত্তাগত ঝুঁকি বিবেচনায় ভারতের ভিভিআইপিরা বিভিন্ন ক্যাটাগরির নিরাপত্তা পেয়ে থাকেন। যার মধ্যে ‘জেড প্লাস প্লাস’-কেই সর্বোচ্চ বলে ধরা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তা অবশ্য সম্পূর্ণ আলাদা মানদণ্ডে আয়োজন করা হয়। ‘স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপ’ বা এসপিজি কমান্ডোরা সচরাচর বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় রেখে তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব সামলান।

যে ভিভিআইপিদের নিয়মিত প্রকাশ্যে আসতে হয়, আর যাদের লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকলেও চলে– অবশ্যই তাদের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার আয়োজনও হয় কিছুটা ভিন্ন ধাঁচের।

তাহলে ‘অপ্রত্যাশিত অথচ অতি গুরুত্বপূর্ণ’ অতিথি শেখ হাসিনার জন্য ভারত এখন ঠিক কোন ধরনের নিরাপত্তা প্রোটোকল অনুসরণ করছে? হুবহু এই প্রশ্নটাই করা হয় ভারতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাকে, যিনি গত একশোদিন ধরে ভারতে শেখ হাসিনার প্রতিটি পদক্ষেপের বিষয়ে সম্পূর্ণ অবগত।

ক্ষুদে বার্তায় তিনি ছোট ছোট তিনটি বাক্যে এই প্রশ্নের যে উত্তর দিলেন, তা এমন-

১. ‘বেয়ার মিনিমাম, প্লেইন ক্লোদস, নো প্যারাফারনেলিয়া!’

যার অর্থ হল, যেটুকু নাহলে নয় শেখ হাসিনাকে সেটুকু নিরাপত্তাই দেওয়া হয়েছে। সাদা পোশাকের রক্ষীরাই তার চারপাশে ঘিরে রয়েছেন (জলপাই-রঙা পোশাকের কমান্ডো বা সেনাসদস্যরা নন)। আর গোটা বিষয়টার মধ্যে কোনো আতিশয্যর বালাই রাখা হয়নি! মানে ঢাকঢোল পিটিয়ে বা ঘটা করে তাকে কোনো নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে না। বরং পুরো জিনিসটাকে খুব নিচু তারে বেঁধে রাখা হয়েছে।

২. ‘ইন হার কেস, সিক্রেসি ইজ দ্য সিকিওরিটি!’

সোজা কথায়, তার বেলায় গোপনীয়তাই হল নিরাপত্তা! এটারও অর্থ খুব সহজ– শেখ হাসিনার অবস্থানের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে গোপনীয়তা রক্ষার ওপর। কারণ তিনি কোথায়, কীভাবে আছেন এটা যত গোপন রাখা সম্ভব হবে, ততই তার নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র করা সহজ হবে।

৩. ‘মুভমেন্টস অ্যান্ড ভিজিটস– অ্যাজ লিটল অ্যাজ পসিবল!’

ওই কর্মকর্তা তার তৃতীয় বাক্যে জানাচ্ছেন, শেখ হাসিনাকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে যাওয়া, কিংবা তার সঙ্গে অন্যদের দেখা করানোর ব্যবস্থা– এটাও যতটা সম্ভব এড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে শেখ হাসিনার মুভমেন্টস বা ভিজিটস যে পুরোপুরি বন্ধ নয়, তার কথায় সে ইঙ্গিতও ছিল!

ওই কর্মকর্তার কথা থেকে স্পষ্ট, শেখ হাসিনার জন্য কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকলেও সেটা খুব বিশেষ এক ধরনের আয়োজন– মানে ধরা যেতে পারে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর জন্য যে ধরনের নিরাপত্তা থাকে তার সঙ্গে সেটা মাত্রায় তুলনীয় হলেও আয়োজনে একেবারেই অন্য রকম!

শেখ হাসিনাকে যাতে কোনোভাবেই প্রকাশ্যে না আসতে হয়, এই প্রোটোকলে সেই চেষ্টাও বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। ফলে দিল্লির মর্নিং ওয়াকারদের স্বর্গ লোদি গার্ডেনে তিনি এসে মাঝেমাঝে হাঁটাহাঁটি করে যাচ্ছেন কিংবা ইচ্ছে করলে নিজামুদ্দিন আউলিয়ার দরগায় বৃহস্পতিবারের সন্ধ্যায় কাওয়ালি শুনে আসছেন– এই ধরনের যাবতীয় জল্পনা হেসেই উড়িয়ে দিচ্ছেন ভারতের সংশ্লিষ্ট মহলের কর্মকর্তারা!

সেই সঙ্গে তারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, শেখ হাসিনাকে ভারত আশ্রয় দিয়েছে, এর অর্থ হলো তার সম্পূর্ণ নিরাপত্তা ও সুরক্ষার দায়িত্বও কিন্তু এখন ভারতেরই কাঁধে। সেখানে সামান্য কোনো ভুল হলেও তার দায় ভারতের কাঁধেই আসবে এবং সেটা দিল্লির জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর হবে।

ফলে সেই নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনও আপস করা যাবে না এবং তার জীবনকে সামান্যতম ঝুঁকিতেও ফেলা যাবে না। আর পাশাপাশি পুরো বিষয়টা অত্যন্ত গোপন রাখতে হবে– এগুলো বিবেচনায় নিয়েই সাজানো হয়েছে তার নিরাপত্তা প্রোটোকল!

ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে মেলামেশা?
গত ৫ আগস্ট যখন শেখ হাসিনা দিল্লিতে এসে নামেন, সে দিনই সন্ধ্যায় দিল্লিতে কংগ্রেসের একদা মুখপাত্র শর্মিষ্ঠা মুখার্জি নিজের এক্স হ্যান্ডল থেকে একটি টুইট করেন। তিনি লেখেন, ‘স্টে সেফ অ্যান্ড স্ট্রং, হাসিনা আন্টি। টুমরো ইজ অ্যানাদার ডে, মাই প্রেয়ার্স আর উইথ ইউ!’

শেখ হাসিনাকে ‘আন্টি’ বলে ডাকতে পারেন, দিল্লিতে শর্মিষ্ঠা মুখার্জি ছাড়া এমন আর দ্বিতীয় কেউ আছেন কিনা বলা খুব মুশকিল! সেই প্রিয় আন্টিকে মনোবল শক্ত রাখার কথা বলতে তিনি কিন্তু এক মুহূর্তও দেরি করেননি।

আসলে শর্মিষ্ঠা মুখার্জির আরেকটা পরিচয় হলো, তিনি ভারতের প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কন্যা। খুব ছোটবেলায় শেখ হাসিনার পরিবারের সঙ্গে তার যে নিবিড় ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছিল, তা আজও এতটুকু ম্লান হয়নি বলেই তিনি ওই কথাগুলো সেদিন বলতে পেরেছিলেন।

পঁচাত্তরে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী শেখ হাসিনাকে দিল্লিতে আশ্রয় দেওয়ার পর তাদের ‘স্থানীয় অভিভাবক’ হিসেবে সবকিছু দেখাশুনার ভার ছেড়ে দিয়েছিলেন তার আস্থাভাজন বাঙালি কংগ্রেস নেতা প্রণব মুখার্জির ওপর। হিন্দি ও পাঞ্জাবিভাষীদের শহর দিল্লিতে নির্ভেজাল বাংলায় কথা বলতে পারাটাও তখন শেখ হাসিনা ও তার স্বামী-সন্তানদের জন্য ছিল বিরাট একটা ব্যাপার!

প্রণব মুখার্জির স্ত্রী শুভ্রা মুখার্জির সঙ্গেও নিবিড় পারিবারিক বন্ধন গড়ে উঠেছিল শেখ হাসিনার। আর শেখ হাসিনার মেয়ে পুতুল ও প্রণববাবুর কন্যা শর্মিষ্ঠা ছিল প্রায় সমবয়সী। দুটি বাচ্চা মেয়ে প্রায়ই পান্ডারা রোড থেকে হাঁটাপথের দূরত্বে ইন্ডিয়া গেটের প্রশস্ত লনে খেলতে চলে যেত!

প্রণব মুখার্জি নিজে একবার এই প্রতিবেদককে হাসতে হাসতে গল্পচ্ছলে বলেছিলেন, ‘নিজের ছেলেমেয়েদের কখনও সেভাবে সময় দিতে পারিনি, কিন্তু মিসেস গান্ধীর নির্দেশে আমি শেখ হাসিনার ছেলে-মেয়ে, জয় আর পুতুলকে নিয়ে হরিয়ানার দমদমা লেকে বোটিং পর্যন্ত করিয়েছি!’

ফলে প্রণব মুখার্জির গোটা পরিবারের সঙ্গে শেখ হাসিনার পরিবারের সবার কেন নিবিড় আত্মীয়তার সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছিল, তা বোঝা মোটেই শক্ত নয়।

প্রয়াত পিতাকে নিয়ে শর্মিষ্ঠা মুখার্জি গত বছর ‘প্রণব মাই ফাদার’ নামে যে স্মৃতিচারণাটি লিখেছেন তাতেও তিনি লিখেছেন, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীনও দিল্লিতে হুটহাট প্রণব মুখার্জির কাছে তার ফোন আসত!

প্রণব মুখার্জি হয়তো তখন দেশের অর্থ, প্রতিরক্ষা বা পররাষ্ট্রমন্ত্রী, তিনি শেখ হাসিনাকে মনে করিয়ে দিতেন এভাবে একজন প্রধানমন্ত্রীর অন্য দেশের ক্যাবিনেট মন্ত্রীকে সরাসরি ফোন করাটা ঠিক বিধিসম্মত নয়!

শর্মিষ্ঠা মুখার্জি জানাচ্ছেন, তখনই হাসিনা তার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বলে উঠতেন, ‘আরে রাখেন তো আপনার প্রোটোকল! শোনেন, যে জন্য ফোন করলাম

ওপরের এতগুলো কথা এই জন্যই বলা যে, দিল্লিতেও এমন কেউ কেউ আছেন রাজনীতি বা কূটনীতির ঊর্ধ্বে উঠে শেখ হাসিনা যাদের ‘ফ্যামিলি’ বলে ভরসা করতে পারেন। দিল্লিতে সে সময় বহুদিন থাকার সুবাদে তার নিজস্ব পরিচিতিরও একটা বলয় গড়ে উঠেছিল, যাদের মধ্যে কেউ কেউ এখনও জীবিত বা সক্রিয় আছেন। কিংবা দিল্লিতে আজও আছেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাবেক কর্নেল অশোক তারার মতো কেউ, যিনি একাত্তরের ১৭ ডিসেম্বর সকালে ধানমন্ডিতে পাকিস্তানি সেনাদের পাহারায় থাকা শেখ হাসিনাসহ মুজিব পরিবারের সদস্যদের প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন। আজও অশোক তারা ও তার স্ত্রী, দুজনের সঙ্গেই শেখ হাসিনার দারুণ সুসম্পর্ক!

এমনকি ঢাকাতে কূটনীতিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে গেছেন, এমন অনেক সাবেক ভারতীয় কর্মকর্তার সঙ্গেও ব্যক্তিগত পর্যায়ে শেখ হাসিনার সৌহার্দ আছে।

বিবিসি বাংলা জানতে পেরেছে, গত একশো দিনের ভেতর তার পুরনো পরিচিত এই ঘনিষ্ঠজনদের মধ্যে কেউ কেউ শেখ হাসিনার সঙ্গে সামনাসামনি দেখা করারও সুযোগ পেয়েছেন। তবে এই ধরনের ভিজিটের সংখ্যা হাতেগোনা হতে পারে। ভারত সরকারও সচেতনভাবে তার ক্ষেত্রে এই ধরনের কিছু দেখা-সাক্ষাতের অনুমতি দিয়েছে, যাতে তাদের ভিভিআইপি অতিথি মানসিকভাবেও চাঙ্গা থাকেন!

রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কতটা অবাধ?
গত তিন মাসে শেখ হাসিনার সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কথিত ফোনালাপের বেশ কিছু অডিও ‘ভাইরাল’ হয়েছে – যাতে একপক্ষের কণ্ঠস্বর হুবহু শেখ হাসিনার মতোই শোনাচ্ছে। ভারত যদিও এই সব ‘ফাঁস’ হওয়া অডিও নিয়ে সরকারিভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে একাধিক পদস্থ সূত্র একান্ত আলোচনায় স্বীকার করেছেন এগুলো বাস্তবিকই শেখ হাসিনার কণ্ঠস্বর!

দিল্লির নর্থ ব্লকের একজন কর্মকর্তা আবার বলছেন, ‘আমি জানি না এটা এআই দিয়ে বানানো হয়েছে নাকি শেখ হাসিনার নিজেরই গলা। তবে তার তো পরিচিতদের সঙ্গে কথাবার্তা বলায় কোনো বিধিনিষেধ নেই। এখন কেউ যদি সেই আলাপ রেকর্ড করে লিক করে দেয়, তাতে আমাদের কী করার আছে?’

ভারতে কোনো কোনো পর্যবেক্ষক আবার ধারণা করছেন, শেখ হাসিনা যাতে নিজের দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়ে তাদের মনোবল ধরে রাখতে পারেন– সে জন্য দিল্লিই এসব কথাবার্তা হতে দিচ্ছে এবং পরে সুযোগ বুঝে তা লিকও করে দিচ্ছে, যাতে তা যত বেশি সম্ভব লোকের কাছে পৌঁছতে পারে!

এর আসল কারণটা যাই হোক, বাস্তবতা হলো শেখ হাসিনা ভারতে কোনো গৃহবন্দিও নন বা রাজনৈতিক বন্দিও নন। ফলে দেশে-বিদেশে তার পরিচিতদের সঙ্গে কথাবার্তা বলার সুযোগ তিনি পাচ্ছেন।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘ভারতে যখন কোনো রাজনৈতিক নেতা গৃহবন্দি হন, তার বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে যোগযোগের অধিকারও কার্যত কেড়ে নেওয়া হয়! যেমন ধরুন পাঁচ বছর আগে কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলোপ করার পর ওমর আবদুল্লা বা মেহবুবা মুফতিদের যখন গৃহবন্দি করা হয়, তারা কিন্তু দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেখা করা তো দূরস্থান– মোবাইল বা ইন্টারনেট সংযোগও পাননি!’

সুতরাং শেখ হাসিনা যে ভারতে মোটেই গৃহবন্দি নন– তার প্রমাণ তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিতই কথাবার্তা বলতে পারছেন। দিল্লিতে থাকা মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ বা ভার্জিনিয়াতে থাকা ছেলে সজীব ওয়াজেদের সঙ্গেও তার প্রায় রোজই যোগাযোগ হচ্ছে। নিউজ চ্যানেল, খবরের কাগজ বা ইন্টারনেটেও তার সম্পূর্ণ অ্যাকসেস আছে। তবে ৫ আগস্টের পর থেকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের যে নেতাকর্মীরা পালিয়ে ভারতে চলে এসেছেন তাদের কারও কারও সঙ্গে শেখ হাসিনার যোগাযোগ হলেও তারা কেউই সশরীরে দলনেত্রীর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাননি। আর ভারতের মাটিতে বসে শেখ হাসিনা যাতে এখনই নিজের বয়ানে কোনো প্রকাশ্য রাজনৈতিক বিবৃতি না দেন, সে জন্যও তাকে ভারতের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে বিবিসি জানতে পেরেছে।

আসলে শেখ হাসিনাকে ভারতে আশ্রয় দিয়ে তারপর তার মাধ্যমে ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে উসকানি দিতে চাইছে– এটা যাতে কেউ বলতে না পারে, সে জন্যই দিল্লির এই সতর্ক অবস্থান! আর যেহেতু শেখ হাসিনার নিজস্ব কোনো ভেরিফায়েড ফেসবুক বা এক্স অ্যাকাউন্টও নেই – ফলে এটাও দিল্লির স্বস্তির একটি কারণ যে, সেখানেও তার কোনো পোস্ট আসছে না!

কিন্তু বাংলাদেশে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক পুনর্বাসন কি আদৌ সম্ভব? এই অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়টা নিয়ে দিল্লি কী ভাবছে?

ভারত এ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি কথাও বলছে না সঙ্গত কারণেই। তবে ঢাকায় ভারতের সাবেক হাই কমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, এই কাজটা শুধু কঠিন নয়, খুবই কঠিন! এখনও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে বিক্ষোভ চলছে। তাদের দলীয় সংগঠনও ছত্রভঙ্গ!

তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার বয়স আজকের চেয়ে দশটা বছর কম হলেও ধরে নেওয়া যেত, তিনি দেশে ফিরে দলের হাল ধরবেন। কিন্তু এই মুহূর্তে সেটা প্রায় অসম্ভব বলেই মনে হচ্ছে।

কিছুদিন আগে ফাঁস হওয়া একটি অডিওতে শেখ হাসিনার মতো কণ্ঠস্বরে একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি (বাংলাদেশের) খুব কাছাকাছিই আছি, যাতে চট করে ঢুকে পড়তে পারি!’ গত সপ্তাহে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী হওয়ার পর আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মীও হয়তো ভাবছেন, তাদের নেত্রীর দেশে ফেরা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা! তবে শেখ হাসিনা এই মুহূর্তে যে দেশের আতিথেয়তায় আছেন তারা কিন্তু এখনই অতটা আগ বাড়িয়ে ভাবতে রাজি নয়!

সাউথ ব্লকের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার কথায়, ‘পিচ এখনও প্রতিকূল, বল উল্টাপাল্টা লাফাচ্ছে। এ রকম সময় চালিয়ে খেলতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে! এখন বরং ধৈর্য দেখানোর সময়। ফলে প্রতিপক্ষের লুজ বলের জন্য অপেক্ষা করাটাই শ্রেয়।

রাজনীতির উইকেটে পোড় খাওয়া ব্যাটার শেখ হাসিনাও নিশ্চয় এটা জানেন এবং সেই অনুযায়ী উপযুক্ত সুযোগ এলে তবেই সেটা কাজে লাগাবেন– একশো দিনের মাথায় ভারতও আপাতত এটুকুতেই তাদের ভাবনা সীমিত রাখছে!

সবা:স:জু-১১৩/২৪

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম
জানানো যাচ্ছে অভিযোগ, থানায় বসলেই ভিডিওকলে হাজির এসপি প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে কার্গো ভিলেজের অগ্নিকাণ্ডে অত্যন্ত হতাশাজনক : মির্জা ফখরুল রাজনৈতিক দের মাঝে যে অনৈক্য কুমিরের দেখা মিলল রাজশাহীর পদ্মায় সরকার ও সেনাবাহিনী, গণতন্ত্রে উত্তরণ ও ন্যায়বিচার যেন ব্যাহত না হয় আজ থেকে আমরণ অনশন, প্রত্যাখ্যান শিক্ষকদের শিক্ষার্থীরা রোডম্যাপের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিলেন শাকসু নির্বাচনের জুলাই সনদে স্বাক্ষর করল গণফোরাম অন্যদেরও সই করার আহ্বান কমিশনের সূচক সাড়ে ৩ মাস আগের অবস্থানে লেনদেন ৪ মাসে সর্বনিম্ন আওয়ামীলীগ ফিরলে হাসিনার পা ধরেও মাফ পাবেন না: রাশেদ খান