1. md.zihadrana@gmail.com : admin :
  2. dailysobujbangladesh@gmail.com : samiya masud : samiya masud
মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ পালন করছেন না ডিসি! মাগুরায় নানা অজুহাতে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম-দুর্নীতি ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে! - দৈনিক সবুজ বাংলাদেশ

১৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । দুপুর ১:০৯ ।। গভঃ রেজিঃ নং- ডিএ-৬৩৪৬ ।।

মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ পালন করছেন না ডিসি! মাগুরায় নানা অজুহাতে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম-দুর্নীতি ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে!

মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ পালন করছেন না ডিসি! মাগুরায় নানা অজুহাতে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম-দুর্নীতি ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে!

 

মাগুরা থেকে ফিরে রোস্তম মল্লিক

মাগুরায় তোলপাড় সৃষ্টিকারী দুটি আর্থিক দুর্নীতির ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করায় মাগুরা জেলা প্রশাসক ড. আশরাফুল আলমের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে মাগুরাবাসী। নানা অজুহাত দেখিয়ে তিনি এসব দুর্নীতির কোন তদন্ত করছেন না। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশও অকার্যকর করে রেখেছেন। যা সরকারী চাকুরী শৃংক্ষলা বিধির সুস্পষ্ঠ লংঘন। এ বিষয়ে মাগুরার একজন সচেতন নাগরিক প্রধানমন্ত্রী ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে পত্র দিয়েছেন।

ঘটনা-১
মহম্মদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কাফীর বিরুদ্ধে অতিরিক্ত
বিলে লক্ষ-লক্ষ টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগ ধামাচাপা!
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আবু আব্দুল্লাহ হেল কাফীর বিরুদ্ধে আজগুবি বিলে মোটা অঙ্কের টাকা আত্মসাৎসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে গঠিত তদন্ত কমিটি ৬ মাসেও তদন্ত কাজ শেষ করতে পারেনি। কেবলমাত্র অভিযোগকারীদের নোটিশ করে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে ডেকে এনে অভিযুক্ত চেয়ারম্যানের পক্ষে হামকি-ধামকি দিয়েই তদন্ত কর্মকর্তা মাগুরা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ পরিচালক মো: কামরুজ্জামান নিরব হয়ে গেছেন। তার এই রহস্যজনক ভুমিকায় মহম্মদপুর উপজেলাবাসী হতবাক হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে যে, তবে কি সরকারী টাকা আত্মসাৎ এর কোন প্রতিকার চান না এই সরকারী কর্মকর্তা? মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও তিনি কেন তদন্তে উদাসীন তা কারো বোধগম্য নয়।
অভিযোগ অনুসন্ধানে জানাগেছে, মহম্মদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আবু আব্দুল্লাহ হেল কাফী বিগত অর্থ বছরে মহম্মদপুর উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন খাতের অর্থ অতিরিক্ত ও ভুয়া বিল ভাউচারে
আত্মসাৎ করেন। এ বিষয়ে স্থানীয় হাসানুজ্জামান সুমন, উলফাত মোল্যাসহ একাধিক ব্যক্তি স্বাক্ষরিত এক অভিযোগপত্র স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়সহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগ প্রাপ্তির পর তদন্তের জন্য মাগুরা জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেয় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ।
অভিযোগপত্র সূত্রে জানা যায়, উপজেলা পরিষদের অভ্যন্তরে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার নামে প্রায় ১৩ একর জমির ওপর অবস্থিত কয়েক লাখ টাকার পুরোনো গাছ কেটে বিক্রি করে সম্পূর্ণ টাকা আত্মসাৎ করেছেন চেয়ারম্যান আবু আব্দুল্লাহ হেল কাফী। তিনি মহম্মদপুর আদর্শ টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের অধ্যক্ষ হওয়ায় মাসিক বেতন ৩৮ হাজার ৪১১ টাকা এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সম্মানী ভাতা ৪৫ হাজার টাকাসহ অন্যান্য সুবিধা একত্রে ভোগ করছেন।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, চেয়ারম্যান প্রভাব খাটিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০১৯-২০ অর্থবছরে টেন্ডার করা ব্রিজ-কালভার্টের দরপত্রের শিডিউল বিক্রির ১৭ লাখ টাকা তৎকালীন ইউএনও মিজানুর রহমান ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মনিরুল ইসলামের যোগসাজশে ভাগ বাটোয়ারা করে আত্মসাৎ করেন। এ ছাড়া পরিষদ সংলগ্ন হেলিপ্যাডে সবজি চাষ দেখিয়ে ১৪ লাখ টাকা উপজেলা পরিষদের তহবিল থেকে উত্তোলন করেন। একই অর্থবছরে কোটেশনে উপজেলা পরিষদের ৩০ লাখ টাকার বেশি কাজ করার বিধান না থাকলেও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ইউএনওর সঙ্গে যোগসাজশে এক কোটি ১১ লাখ ৬৯ হাজার ২১২ টাকার কাজ টেন্ডার ছাড়াই এক্সপার্ট ইঞ্জিয়ারিং কোম্পানি নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অবৈধভাবে তড়িঘড়ি করে সম্পন্ন করেছেন। বাসাবাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কার কাজ একই কোম্পানি দিয়ে নামমাত্র করিয়ে ২০ লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন। তার নামে মাগুরার বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ২৭ লাখ টাকার চেক জালিয়াতির একটি মামলা বিচারাধীন। দরপত্র আহ্বান না করে তিনি কোটেশনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণ করেছেন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে টিআর, কাবিটা, কাবিখা ও এডিপির প্রকল্প বাস্তবায়নে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। তিনি মহামারি করোনার শুরুতে জনগণের পাশে না থেকে বিনা ছুটিতে চার মাসের বেশি সময় ঢাকায় অবস্থান করেছেন।
২০২০-২১ অর্থবছরে রাসেল নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে কোনো প্রকার কাজকর্ম ছাড়াই মনগড়া বিল-ভাউচার তৈরি করে অপ্রত্যাশিত খাতে পাঁচ লাখ, অফিস সরঞ্জামে তিন লাখ, আসবাবপত্র মেরামতে ৫০ হাজার, পানির পাম্প মেরামতে ৫০ হাজার, বর্জ্য অপসারণে এক লাখ, নবগঙ্গা বাসা মেরামতে ১০ লাখ টাকা তহবিল থেকে তোলা হয়েছে। আবার একই কাজে একাধিক বিল-ভাউচার করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান। এ ছাড়া তিনি স্থানীয় ঠিকাদার কানু তেওয়ারী, চেয়ারম্যানের সিএ জাকির হোসেন, ইউএনওর অফিস সহকারী বিধান সাহাসহ অফিসের পিয়ন ও নৈশপ্রহরীর নামে একাধিক বিল-ভাউচারের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন। যাদের নামে এসব বিল-ভাউচার করা হয় তাদের মোটা অঙ্কের কমিশন দেওয়া হয়েছে। ব্যয়িত বিল-ভাউচার নীরিক্ষা করে জানা যায়, ঠিকাদার কানু তেওয়ারীর মাধ্যমে তহবিল থেকে ২০ লাখ টাকার বেশি উত্তোলন করা হয়েছে।
ঠিকাদার কানু তেওয়ারী বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। উপজেলা চেয়ারম্যানের সিএ জাকির হোসেন ও ইউএনওর অফিস সহকারী বিধান সাহা সব বিষয় অস্বীকার করেন।
কিছু ক্ষেত্রে ভাউচারে বিস্ময়কর বিল করা হয়েছে। যেমন, ম্যুরালের সামনে মই দিয়ে মাটি সমান করতে খরচ দেখানো হয়েছে ১০ হাজার টাকা, তিনটি গাছ কাটতে দেখানো হয়েছে ২৫ হাজার ৭৫০ টাকা, ব্যাডমিন্টন কোর্ট পরিস্কার করতে ১২ হাজার ৩০০ টাকা, কোদাল, দা, সোল ও টেংগি ক্রয় আট হাজার টাকা, একজন অতিথির এক বেলার নাশতা তিন হাজার টাকা, মৎস্য অফিসের অবৈধ কারেন্ট জাল পোড়ানো খরচ ১৫ হাজার ৭০০ টাকা, পানির ট্যাঙ্ক পরিস্কার ১১ হাজার ৫২০ টাকা, লাইব্রেরির মালপত্র স্থানান্তর ৯ হাজার টাকা, ২২টি গাছের গোড়া রং করা দুই লাখ টাকা, ইমরুলের খাবার পাঁচ হাজার ৮০০ টাকা। কিন্তু কে এই ইমরুল তার তথ্য ও পরিচয় পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে দোকানঘর নির্মাণ করে দেওয়ার কথা বলে শতাধিক ব্যবসায়ীর কাছ লাখ লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
এ অভিযোগ প্রাপ্তির পর গত ১২ ডিসেম্বর২০২১ স্বাক্ষরিত একটি পরিপত্রে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব বিষয়টি তদন্তের জন্য মাগুরা জেলা প্রশাসককে নির্দেশনা দেন।
এ বিষয়ে মহম্মদপুর উপজেলা পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যান বেবি নাজনীন (প্যানেল চেয়ারম্যান) এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যানের অনিয়মতান্ত্রিক কাজকর্মে আমি বার বার বাধা দিলেও তিনি কথা শোনেননি।
এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেছেন বলে আমিও শুনেছি। বিষয়টি অবশ্যই উপজেলা পরিষদের জন্য বিব্রতকর। এ ধরনের অর্থ আত্মসাৎমুলক ঘটনা ঘটে থাকলে আমরা তার নিন্দা জানাচ্ছি । বিষয়টির দ্রুত তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি।
১০ মাসেও দেওয়া হয়নি তদন্ত রিপোর্ট
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাগুরা জেলা প্রশাসক ড. আশরাফুল আলম বলেন, তদন্তের জন্য স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে নির্দেশনা পেয়েছি। মাগুরা স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ পরিচালক মো: কামরুজ্জামানকে তদন্ত কর্তকর্তা নিযোগ করা হয়েছে।
মাগুরা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ পরিচালক মো: কামরুজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারী কর্মসুচী বাস্তবায়নের কাজে ব্যাস্ত থাকায় তিনি তদন্ত কাজ শেষ করতে পারেননি।
অভিযুক্ত উপজেলা চেয়ারম্যান আবু আব্দুল্লাহ হেল কাফী বলেন, উপজেলা পরিষদের উন্নয়নে নিয়মনীতি মেনে কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করে বিল উত্তোলন করা হয়েছে। এখানে বিন্দু পরিমাণ দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর উপজেলার সচেতন সমাজের প্রশ্ন, জেলা প্রশাসক ড. আশরাফুল আলম কেন এতো বড় একটা দুর্নীতি ধামাচাপা দিয়ে রেখেছেন সেটাই রহস্যজনক। এ বিষয়ে তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপ কামনা করেছেন।

ঘটনা-২
প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের ৪৪ লাখ টাকা অনুদান
বিতরণে দুর্নীতি ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়েছে!

মাগুরায় করোনায় কর্মহীন ৪৩৮জন শিল্পী কলা কুশলীর জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের সহায়তা ৪৩ লাখ ৮০ হাজার টাকার বিতরণ তালিকায় ব্যাপক দূর্ণীতি, স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। গত ১৭ মার্চ থেকে বিতরণ করা ওই শিল্পীর তালিকা জেলা শিল্পকলা একাডেমীর কালচারাল অফিসার ও একজন সহ-সাধারণ সম্পাদকসহ কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাযোশে গোপনে তৈরী করা হয়েছে। তালিকায় ভারতে অবস্থানরত সেখানকার নাগরিক, মৃত ব্যক্তি, কোটিপতির স্ত্রী এমনকি একই পরিবারের ১৫ জনের নামে ১০ হাজার করে টাকা বেয়ারার চেকের মাধ্যমে তুলে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। যারা কেউই দুঃস্থও নন, শিল্পীও নন। একইভাবে শিল্পকলার সংগীত শিক্ষক অজিত রায়ের বিরুদ্ধে একই পরিবারের ৬জনে নাম দিয়ে ৬০ হাজার টাকা তুলে নেয়া সহ শিল্প সংস্কৃতির সাথে নুন্যতম সংযোগ নেই এমন ব্যক্তিদের নাম দিয়ে লাখ লাখ টাকা তুলে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি জেলা শহরে ২টি ফ্লাট ও ২টি বাড়িসহ অন্তত ৩ কোটি টাকার সম্পত্তির মালিকের স্ত্রীকেও দেয়া হয়েছে করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ শিল্পীর প্রনোদনা। এরফলে অনেক প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থ শিল্পী সহায়তা না পেলেও শিল্পীদের চেকবিতরণ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর কালচারাল অফিসার। এতে সরকারের এ মহতি উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে জেলার শিল্পী সমাজের মধ্যে।
জেলার কয়েকজন সাংস্কৃতিক কর্মী ওই তালিকায় শিল্প সাহিত্যের সঙ্গে নুন্যতম যোগাযোগ না থাকা একাধিক ব্যক্তির নাম দিয়ে টাকা উঠিয়ে নেয়ার অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানা গেছে। ৩৫৫ নং সিরিয়ালের সুধা রানী চক্রবর্তী গত ১২ মার্চ মারা গেছেন। অথচ তার নামের চেকে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। তালিকার ২৭২ নং সিরিয়ালের জেলার শালিখা উপজেলার তালখড়ি গ্রামের আনন্দ চক্রবর্তী শিল্পকলা একাডেমীর সহ- সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ চক্রবর্তীর ভগ্নিপতি ও ২৭৪ নং এর বিথি চক্রবর্তী তার আপন ছোট বোন । গত ৫বছর ধরে এ পরিবারটি স্বপরিবারে ভারতে বসবাস করছেন। সন্তানদের সেখানকার স্কুলে ভর্তি করে লেখাপড়া করাচ্ছেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। তালিকার ২২৯ নং সিরিয়ালে পবিত্র কুমার চক্রবর্তী স্থানীয় একটি কাপড়ের দোকানের সেলসম্যানকে নাট্যশিল্পী হিসেবে দেখানো হলেও তিনি জীবনে কোনদিন স্টেজে উঠেছেন বলে শহরের কেউই জানেন না। তিনি জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সহ-সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ চক্রবর্তীর ভগ্নিপতি। একইভাবে ২৩০নং সিরিয়ালের ইন্দ্রজিৎ চক্রবর্তী বিশ্বজিতের ভাইপো, ২৫৫ সিরিয়ালের বরুন চক্রবর্তী বড়ভাই, ২৫৬ ইতি চক্রবর্তী বিশ্বজিতের ছোটবোন, ২৬৪ প্রনয় চক্রবর্তী ভাগ্নে, ২৬৫ প্রিয়াংকা চক্রবর্তী ভাতিজা বৌ, ২৬৬ গোপাল চক্রবর্তী চাচাতো ভাই, ২৬৭ বন্দনা চক্রবর্তী ভাইয়ের বৌ, ২৬৮ প্রদীপ চক্রবর্তী চাচতো ভাই এর ছেলে, ২৭০ কার্তীক চক্রবর্তী চাচতো ভাই এর ছেলে, ২৭১ সুদীপ্ত চক্রবর্তী ভাতিজা, ২৩৮ নং সিরিয়ালে দুলাল ভট্টাচার্য তার ভগ্নিপতি ও ২৫৭ সিরিয়ালের ছবি রানী ভট্টাচার্য ভাইয়ের স্ত্রী। যাদের কেউই শিল্প সংস্কৃতির সাথে জড়িত নন। এভাবে শিল্পী নাম দিয়ে পরিবারের সদস্যদের দিয়ে লাখ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী ও তার সঙ্গীরা। একইভাবে শিল্পকলা একাডেমীর সংগীত শিক্ষক অজিত রায় শহরের সাতদোহা পাড়া এলাকার একটি পরিবারের ৬ নারীর নাম দিয়ে টাকা উঠিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরা হলেন সন্ধ্যা রানী ঘোষ (৪১৯), প্রিয়া ঘোষ(৪৪), রিয়া ঘোষ (৮৫), ডলি ঘোষ (১০৪), আপন ঘোষ (১০৫) ও লিলি ঘোষ (১৭২)। এদের কারোই শিল্প সংস্কৃতির সাথে কোন যোগাযোগ নেই। অথচ তাদের প্রত্যেকের নামে ১০ হাজার টাকা করে বেয়ারার চেক দিয়ে টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। শহরের কেশব মোড়ের বাসিন্দা বর্তমানে স্বামীর কর্মস্থল ঢাকায় অবস্থানরত ¯গ্ধা পাল নামে এক সাবেক নৃত্য শিল্পী ও তার মায়ের নামে ১০ হাজার করে টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কাস্টমস বিভাগে কর্মরত এক ব্যক্তির স্ত্রী ¯গ্ধা পালের মাগুরা শহরে ২টি ফ্লাট, ১টি বাড়ি ও একটি বিশাল বাগান বাড়ি রয়েছে। যার মূল্যমান কমপক্ষে ৩ কোটি টাকা। স্বজনপ্রীতি করে তাকে ও তার মা জোসনা পালকে ১০ হাজার করে মোট ২০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, সরকারিভাবে যখন করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ শিল্পীদের সহায়তা দেয়ার জন্য নামের তালিকা আহবান করা হয় তখন শিল্পকলা একাডেমীর তৎকালীন সাধারণ সম্পাদকের অসুস্থতার সুযোগে অফিসে না আসার সুযোগ নিয়ে তৎকালীন সহ-সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, অজিত রায় এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের একটি অসাধুচক্র একত্রে বসে বিভিন্ন ব্যক্তির নাম ও আইডি নম্বর সংগ্রহ করে নিজ মনগড়া একটি তালিকা প্রেরণ করে। কিন্তু সেক্ষেত্রে প্রকৃত শিল্পীদের বিষয়টি জানতেই দেয়া হয়নি। অথবা তাদের আবেদন অগ্রাহ্য করা হয়েছে। যার ফলে প্রকৃত শিল্পীরা অনেকেই বঞ্চিত হলেও মুখচেনা বিভিন্ন ব্যক্তির নাম দিয়ে তালিকা প্রেরণ করা হয়। চূড়ান্ত তালিকার প্রায় ৭০ ভাগই অশিল্পী বলে দাবী করেছেন একাধিক সংস্কৃতি সংগঠক। ফলে সরকারের এত বড় একটি মহতি উদ্যোগ ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে।
তালিকা যাচাই করতে গিয়ে দেখা গেছে ২২ নং সিরিয়ালে অচলা মন্ডল নামে এক নারীর নাম তালিকায় থাকলেও সেখানে দেয়া ফোন নম্বরে ফোন দিয়ে ওই নারীর স্থলে সাতক্ষিরা থেকে আব্দুর রহমান নামে এক ব্যক্তি ফোন ধরেন। অন্যদিকে শহরের তাতীপাড়া এলাকার বাসিন্দা শিল্পী কবরী ঘোষের নাম থাকলেও তাকে তিনি কোন টাকা বা চেক পাননি বলে জানিয়েছেন। অথচ ইতিমধ্যে চেক বিতরণ করা হয়ে গেছে মর্মে জানিয়েছেন শিল্পকলা সংশ্লিষ্টরা।
মাগুরার বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী শামসুজ্জামান পান্না, সাহিত্যিক এম এ হাকিম, লোক সাংস্কৃতি সংগঠক এ.টি.এম. আনিসুর রহমান, সাহিত্য সংগঠক এ্যাড. কাজী মিহির, সাহিত্যিক লিটন ঘোষ জয়সহ একাধিক ব্যক্তি ক্ষোভ ও দুঃখের সঙ্গে জানান- শিল্প সংস্কৃতিক সঙ্গে যারা জড়িত তারা সাধারণত উদার মানবিক হবেন, এমনটিই ভাবা হয়ে থাকে। প্রকৃত শিল্পীরা যেখানে করোনার কারণে চরম অর্থ সংকটে অনেকে অনাহারে অর্ধাহারে আছেন। পরিচিত অনেক প্রয়াত শিল্পীদের পরিবার যেখানে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। সেখানে শিল্পীদের জন্য দেয়া সরকারের এত বড় একটি মহতি উদ্যোগের টাকা নয়ছয় করা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। মাগুরা জেলা শিল্পকলা একাডেমীর আড়ালে একটি অসাধু চক্র যেভাবে নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করেছেন তাতে আমরা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত। এরা শিল্প সংস্কৃতির চরম শত্রু। অভিযোগ প্রসঙ্গে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সহ সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিত চক্রবর্তী জানান- আমার পরিবারের সদস্যরা যদি প্রনোদনা পাওয়ার উপযোগি হন তাহলে তারা টাকা পেতেই পারেন। আমি কোন স্বজন প্রীতি বা দুর্নীতি করিনি।
এ প্রসঙ্গে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সাবেক কালচারাল অফিসার মোঃ জসিম উদ্দিন জানান, শিল্পকলা একাডেমী থেকে নামের তালিকা চেয়ে পাঠানোর পর দ্রুত তালিকা পাঠানো হয়েছিলো। ফলে কিছুটা অসামঞ্জস্য থাকতেই পারে। তালিকার সবাইকে টাকা দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। তবে একটি তালিকায় একই পরিবারের ১৫ জনের নাম থাকাটা দুর্ভাগ্যজনক বলেন তিনি। জানতে চাইলে মাগুরা জেলা প্রশাসক ড.আশরাফুল আলম বলেন,কিসের তদন্ত?

এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দিলেও তিনি কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেননি। ফলে মাগুরা জেলার সংস্কৃতি অংগনের শিল্পী ও কলাকুশলীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তাদের প্রশ্ন-প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবীলের টাকা দুর্নীতি করে আত্মসাৎ করা হলেও জেলা প্রশাসক এ ক্ষেত্রে কেন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না সেটাই কারো বোধগম্য নয়।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © 2021
ভাষা পরিবর্তন করুন »