১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । বিকাল ৫:১৫ ।। গভঃ রেজিঃ নং- ডিএ-৬৩৪৬ ।।
স্টাফ রিপোর্টার॥
দৈনিক সমকালের শাহজাদপুর প্রতিনিধি আব্দুল হাকিম শিমুল হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত দুই আসামি সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। পত্রিকার কার্ড সংগ্রহ করলেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সামনের সারি দখল করেন তাঁরা। স্থানীয় সুপরিচিত সাংবাদিকরাও এখন তাঁদের ভয়ে তটস্থ।
চার্জশিটভুক্ত আসামি কেএম নাছির উদ্দিন ঢাকা থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক মাতৃজগত’ ও ‘দৈনিক বাংলাদেশ ক্রাইম সংবাদ’ পত্রিকার ‘সিনিয়র ক্রাইম রিপোর্টার’। হত্যা মামলায় চার নম্বর চার্জশিটভুক্ত আসামি তিনি। ‘বাংলাদেশ জাতির পিতা ফাউন্ডেশন’ নামে এক প্রতিষ্ঠানের ঢাকা মহানগর উত্তরের সহসভাপতি তিনি।
শাহজাদপুরের ছয়আনীপাড়ার বাসিন্দা নাছির উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হিসেবেও পরিচয় দেন। তবে শিমুল হত্যাকাণ্ডের পর মামলার প্রধান আসামি সাবেক মেয়র হালিমুল হক মিরুর মতো তিনিও উপজেলা আওয়ামী লীগের পদ থেকে সাময়িক বহিস্কৃত হন। জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিরুও নানা কৌশলে এখন জেলা কমিটির সদস্য।
আসামি সাহান আলী নিজেকে ‘দৈনিক গণমুক্তি’ উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। শাহজাদপুরের যে কোনো সংবাদ-সংশ্নিষ্ট অনুষ্ঠানে নাছির ও সাহান সবার আগে হাজির হন। সহকর্মী খুনের দায়ে অভিযুক্ত ওই দুই আসামির উপস্থিতিতে প্রকৃত সাংবাদিকরা বিব্রত হলেও প্রতিবাদ করতে সাহস পান না। কারণ স্থানীয়ভাবে তাঁরা সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। গলায় আইডি কার্ড ঝুলিয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে ছবি তুলতে তাঁদের জুড়ি মেলা ভার। তাঁরা বর্তমানে শাহজাদপুর প্রেস ক্লাবের সদস্য হতে গোপনে জোরালো তৎপরতা চালাচ্ছেন বলে স্থানীয় সাংবাদিকরা জানান।
২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি শাহজাদপুর আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষের ছবি তুলতে গিয়ে তৎকালীন মেয়র হালিমুল হক মিরুর শটগানের গুলিতে নিহত হন সাংবাদিক শিমুল। মিরুর সহযোগী নাছির উদ্দিন তাঁকে লক্ষ্য করে বোমা হামলা; সাহানসহ দেশি অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেন। এ ঘটনায় মিরুসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৪০-৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন শিমুলের স্ত্রী নুরুন্নাহার বেগম। হত্যার দু’মাস পর মিরু, নাছির, সাহান আলীসহ ৩৮ জনের নামে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ।
সাংবাদিক খুনে অভিযুক্ত হওয়ার তিন দিন পর ঢাকায় গ্রেপ্তার হন মিরু। এর পর জেলা আওয়ামী লীগ তাঁকে সাময়িক বহিস্কার করে। জেলার সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। মিরু সম্প্রতি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হন। দুই অভিযুক্ত খুনির সাংবাদিকের বেশ ধারণ সম্পর্কে শাহজাদপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি বিমল কুমার কুণ্ডু বলেন, ‘বললে ছেলের ফাঁসি হয়; না বললে বাবা শূলে চড়ে- আমাদের অবস্থা এখন তেমনই।’
শিমুলের স্ত্রী নুরুন্নাহার বলেন, ‘গত ছয় বছর থেকে নানা কূটকৌশলে বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত করেছে মিরুসহ অন্য আসামিরা। মিরু জামিনে বের হওয়ায় এমনিতেই সবসময় আমরা আতঙ্কে থাকি। তার ওপর মিরু সরকারি দলের সদস্যপদ ফেরত পেলে বা আসামিরা সাংবাদিক হলে আর প্রভাব খাটাবে, যাতে আমি স্বামী হত্যার বিচার না পাই।’
শাহজাদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক এমপি চয়ন ইসলাম বলেন, সাংবাদিক শিমুল হত্যা মামলার আসামি হওয়ার পর নাছিরকে দল থেকে সাময়িক বহিস্কারের তথ্য জানা ছিল না।
জাতির পিতা ফাউন্ডেশনের সভাপতি এবং দৈনিক মাতৃজগত ও বাংলাদেশ ক্রাইম সংবাদ পত্রিকার সম্পাদক খান সেলিম রহমান বলেন, শিমুল হত্যার চার্জশিটে নাছিরের অভিযুক্ত হওয়ার বিষয়টি তাঁর জানা নেই। তা ছাড়া স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সুপারিশের কারণে তাঁকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। গণমুক্তি পত্রিকার সম্পাদক শাহাদত হোসেন শাহীন বলেন, এ বিষয়ে দ্রুত খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তবে নাছির দাবি করেন, তিনি অভিযুক্ত নন। ছয় বছরে সাংবাদিক শিমুল হত্যার চার্জই গঠন হয়নি। মিরুর স্ত্রীর দুটিসহ ৪টি মামলা বিচারাধীন। তাঁর সাময়িক বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার হওয়ায় আওয়ামী লীগের সদস্য হয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি বা লেখালেখি করলে এ প্রতিনিধির বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেন তিনি।
Leave a Reply