
নিজস্ব প্রতিবেদক:
সাবেক নারী সংসদ সদস্যের গুলশানের বাড়িতে চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তার নেতাদের আচরণ ছিল ঔদ্ধত্যপূর্ণ। ২৬ জুলাই শনিবার সন্ধ্যায় যখন গুলশান থানা পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করতে যায়, তখন পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে বেশ উগ্র আচরণ করছিল তারা। কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের চাকরি খেয়ে দেওয়া এবং গ্রেপ্তারের পর যখন তাদের হ্যান্ডকাফ পরানো হচ্ছিল, তখন সমন্বয়করা থানা জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছিল বলে অভিযোগ করেন বাড়ির দারোয়ান এবং অপারেশনে অংশ নেওয়া একাধিক পুলিশ সদস্য।
গুলশানের সেই বাড়ির দারোয়ান হান্নান বলেন, ‘যখন তাদের আটক করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন সমন্বয়করা পুলিশের চাকরি খেয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছিল।’
গ্রেপ্তার অভিযানে অংশ নেওয়া একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘গ্রেপ্তার করে যখন তাদের হাতে হ্যান্ডকাফ পরানো হচ্ছিল, তখন তাদের আচরণ ছিল বেশ উগ্র। তারা নিজের লোকজন ডেকে থানায় আগুন দেওয়ার হুমকি পর্যন্ত দিচ্ছিল।’ যদিও এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সরাসরি কোনো উত্তর দেননি গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান।
গত ২৬ জুলাই শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তার হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের পাঁচ নেতা। গতকাল তাদের মধ্যে থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক ইব্রাহীম হোসেন মুন্না, সদস্য মো. সাকাদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমানকে (রিয়াদ) ৭ দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত। বাকি একজনের বয়স ১৬ বছর হওয়ায় তাকে শিশুকিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়। তবে গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে থানা-পুলিশের কাছে শনিবার রাত থেকেই গুলশান ও আশপাশের এলাকার অনেকেই ফোন কলে আরও চাঁদাবাজির অভিযোগ দিচ্ছে।
এ বিষয়ে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান বলেন, ‘গ্রেপ্তার সমন্বয়কদের বিরুদ্ধে গুলশান, বাড্ডা, বনানী এলাকায় চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। অনেকেই ফোন দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলছেন। তবে কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তাদের লিখিত অভিযোগ জানাতে বলেছি। অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’
চাঁদাবাজির অভিযোগে শনিবার মধ্যরাতেই শাম্মী আহমেদের স্বামী সিদ্দিক আবু জাফর বাদী হয়ে ছয়জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১২ জনকে আসামি করে গুলশান থানায় মামলা করেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ১৭ জুলাই সকালে মো. আব্দুর রাজ্জাক ওরফে রিয়াদ এবং কাজী গৌরব ওরফে অপু তাকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধমকি দিয়ে বাসায় গিয়ে তার কাছে ৫০ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার দাবি করেন। তিনি ওই টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় তাকে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে গ্রেপ্তার করানোর হুমকি দেন। পরে বাধ্য হয়ে নিজের কাছে থাকা ৫ লাখ টাকা এবং তার ভাইয়ের কাছ থেকে আরও ৫ লাখ টাকা তাদের দুজনকে দেন। শনিবার বিকেলে মো. আব্দুর রাজ্জাক ওরফে রিয়াদের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন বাসায় গিয়ে আরও ৪০ লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি দিলে জাফর থানা পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করে এবং পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে রিয়াদসহ পাঁচ জনকে আটক করে। তবে অপু পালিয়ে যায়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার পরিদর্শক মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘মামলার এজাহারভুক্ত পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’
চাঁদাবাজি করতে গিয়ে আটক আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান রিয়াদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ছাত্র প্রতিনিধি পরিচয়ের একটি নথি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে রিয়াদের এ পরিচয় দিয়ে সংবাদও প্রকাশ হয়। রোববার এসব সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে এমন দাবি সঠিক নয়।