শাহজাদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ আলী ঘুষের টাকায় সম্পদের পাহাড়

 

মোঃ ইব্রাহিম হোসেন:

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ আলী মেনেজ ঘুষে!শাহজাদপুর উপজেলার ডাঃ মোহাম্মদ আলীকে ঘুষ দিয়ে মেনেজ করেই স্বাস্থ্যকর্মীরা অনিয়ম অব্যবস্থাপনায় চলছে সকল স্বাস্থ্য ও উপ- স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সেবা।

শাহজাদপুর উপজেলায় স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র,শাহজাদপুর পৌর এলাকার শক্তিপুর ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু হাসপাতাল ও কমিউনিটি ক্লিনিক গুলোসহ উপজেলার প্রায় স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বেহাল অবস্থা।

উপজেলায় ১৩ টি ইউনিয়নে ১৪ টি উপ- স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে তবে এ গুলো দীর্ঘদিনের অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়া। তবুও নিয়ম শৃঙ্খলা ফেরাতে কোন রকম আগ্রহ নেই ডাঃ মোহাম্মদ আলীর কারন সব কর্মর্কতাদের থেকে নিয়মিত ভাবে করছেন ঘুষ বানিজ্য।

এতে করে স্বাস্থ্যকর্মীরা মানছে না কোন সময়সূচি, তোয়াক্কা করছে না সরকারি কোন নিয়ম কানুন এমন অনিয়ম অব্যবস্থাপনায় অসুস্থ পথে শাহজাদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য সেবা ! এ যেনো দেখার কেউ নেই!

শাহজাদপুর উপজেলায় ১৩ টি ইউনিয়নে ১৪ টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে, এর মধ্যে বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে চিকিৎসক রয়েছে।
তবে ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলোর চিকিৎসকদের স্বপ্নেও যেনো দেখা মেলে না। উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে স্বাস্থ্য সেবা না পেয়ে শারমিন আক্তার (৬৮) নামের এক মহিলা রোগী কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমি গরীব মানুষ আমি এখানে ডাক্তারদের কাছে আসলে তাঁরা আমাকে চিকিৎসা দিবে তো দূরের কথা তাদের কে তো পাওয়াই যায় না। আর যদিও কোন কোন দিন পাওয়া যায় তখন তাদের ব্যক্তিগত কাজেই শেষ হয় না, মোবাইল নিয়ে গান শুনতে থাকে,আবার টেলিবিলের উপর পা দিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে রোগীদের সাথে কথা বলে এছাড়াও ঔষধের কথা বললে থাকলেও বলে নাই আপনি বাজার থেকে কিনে খাবেন। এছাড়াও উপ- স্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলোর দায়িত্বরত চিকিৎসকরা কোন নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা করছে না এতে সেবা নিতে আশা রোগীদের পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে।

সরজমিনে,উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বেশ কয়েকটি উপ- স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, অফিসিয়াল নিয়ম অনুযায়ী যদিও সকাল ৮.০০ থেকে দুপুর ২.৩০ টা পর্যন্ত স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে।
তবে চোখে পরেনি এমন কোন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের যেখানে সকাল ১০/১১ টার আগে মেইন গেটের তালা খোলা হয়েছে!এসব স্বাস্থ্য কেন্দ্রের নিয়ম শৃঙ্খলা দেখলে একজন সুস্থ মানুষ ও অসুস্থ হয়ে যাবে!

দেখা যায়,যদিও ১০/১১ টায় স্বাস্থ্য কেন্দ্র খোলা হয় তবে চিকিৎসকের দেখা মিলে ১২/১ টায়!

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়,গালা ইউনিয়নের ভেড়াখোলা খাজা আব্দুল হাই ( সূর্য মিয়া) ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে র স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রের দুপুর ১২ বাজেও মেইন গেটে তালা তালাবদ্ধ। তবে গেইটে থেকে দেখা যায়, ঘুমিয়ে আছেন স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। এসময় উপস্থিত স্থানীয় কয়েকজন মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়,
এমন পরিস্থিতি প্রতিদিনই এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সেবাকর্মীরা কোন নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা করে না,নিজেদের ইচ্ছে মত স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র সেবা দিয়ে থাকে!

এ বিষয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সেবা কর্মীদের সাথে কথা হলে তাঁরা বলেন, এখানে নিয়মিত কোন ডাক্তার না এর জন্য দূর দূরান্ত থেকে পায়ে হেঁটে আশা রোগীরা চিকিৎসা পাচ্ছে না। এছাড়াও এখানে ঠিক মত ওষুধ না থাকায় রোগীরা ঔষধ ও পাচ্ছে না। অন্য দিকে দেখা যায়, অফিসের সময় থাকা শর্তেও স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মেইন গেটে তালা তালাবদ্ধ করে সকল কার্যক্রম বন্ধ করা হয়। বিষয় বিষয়ে সেবা কেন্দ্র দায়িত্বরত এক চিকিৎসকের কাছে জানতে চাইলে,নাম প্রকাশ না করা শর্তে,সবুজ বাংলাদেশ কে বলেন, আমরা অন্যায় করছি,সরকারি কোন নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা করছি না। প্রতিবেদকের কাছে চিকিৎসক নিজেই তাদের অন্যায়ের কথা শিকার করেন। নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক চিকিৎসক বলেন,অফিস করলেও যা আর না করলেও কোন জবাবদিহিতা দিতে হয় না।
তিনি আরো বলেন, কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ হাজিরা খাতায় ৪/৫ একদিনে স্বাক্ষর একদিনেই করে। কারন এ সকল স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারিদের প্রতি মাসেই নিজেরা এসব অনিয়ম কে কাগজে কলমে নিয়মের মধ্যে রাখতে কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ আলীকে দিয়ে থাকে ঘুষ!এর জন্য যেমনে মন চায়,তেমনে অফিস করা যায়।
এছাড়াও বিক্রি করে দেওয়া হয় সকল প্রকার ঔষধ!
এইভাবে নিঃশব্দে দরবেশ এর বেশে ডাঃ মোহাম্মদ আলী ঘুষ বানিজ্য করে গড়েছেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়!

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক বিশ্বস্ত সূত্র জানায়,উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ আলী কাছে ঘুষ বানিজ্যে সব ডাক্তারদের অনিয়ম-দুর্নীতি মেনেজ হয়! এর শুধু মাত্র কাগজে-কলমে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করে। বাস্তবে তারা এসব উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রায় সময়ই অনুপস্থিত থাকে সেবা কর্মীরা। তবুও কোন অফিসিয়ালি সমস্যা হয় না এইসব স্বাস্থ্য সেবা কর্মীদের কারন ডাঃ মোহাম্মদ আলী ঘুষ বানিজ্যে মেনেজ হয়ে যায়।

এ বছরের গত ২১ অক্টোবরে উপজেলার কায়েমপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা ডাঃ নাজমা খাতুনের বিরুদ্ধে সবুজ বাংলাদেশ পত্রিকায় “স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এখন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা ডাঃ নাজমার গরুর খামার” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। তবে এ বিষয়ে ডাঃ নাজমা খাতুনের বিরুদ্ধে কোন অফিসিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। শুধু মাত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ডাঃ নাজমা খাতুনের গরুর খামার টি সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেয় ডাঃ মোহাম্মদ আলী।

এই বিষয়ে স্বাস্থ্য পরিদর্শিকা ডাঃ নাজমা খাতুনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমার কোন অপরাধ নাই কারণ আমি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী স্যারকে মেনেজ করেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভিতরে খামারটি করেছিলাম। তবে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে ডাঃ নাজমা খাতুন বলেন,ডাঃ মোহাম্মদ আলী স্যার হঠাৎ করেই আমার গরুর খামার টি সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেয়। এমন পরিস্থিতির মধ্যে আমাকে গরু গুলো রাখার জন্য অন্য একটি জায়গা ব্যবস্থা করার সময় ও দেওয়া হয়নি। তবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভিতরে খামার করার সময় আমি তার অনুমতি নিয়েই করেছিলাম এছাড়া আমি বেশ কিছু টাকাও তাকে দিয়েছিলাম এবং প্রতি মাসেই স্যার খরচ দিয়েছি তারপর ও আমার গরুর খামার সরিয়ে নিয়েছি। এখন কি তাকে দেওয়া টাকা আমি ফেরৎ পাবো? তবে ডাঃ নাজমা খাতুন খামার থেকে গরু সরিয়ে নিলেও খামার ঠিকই রয়ে গেছে এছাড়াও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভিতরে খড়ের ঠিকাও রয়ে গেছে। এত অনিয়ম ও ঘুষ দেওয়ার তথ্য প্রমানসহ সংবাদ প্রকাশ হলেও ডাঃ নাজমা খাতুন বহাল তবিয়তে!কারণ আবার নতুন করে ডাঃ মোহাম্মদ আলীর ঘুষ বানিজ্য!

উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ঘুরে আশেপাশের স্থানীয় কিছু সচেতন মহলের ব্যক্তিবর্গের সাথে সবুজ বাংলাদেশের কথা হলে তারা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ইউনিয়নের উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের মাসে ১০/১২ দিন দেখা যায় তবুও ১/২ ঘন্টার জন্য এমন অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলেও কোন লাভ হয়নি কারন এরা সবাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মেনেজ করেই এসব অনিয়ম ও দুর্নীতি করে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় সঠিক চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হাজারো দরিদ্র অসহায় রোগী।এছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকে অর্থ ব্যয় ও অসুস্থ শরিলের একটু চিকিৎসার আশায় কষ্ট করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসেও চিকিৎসকদের সেবা পাচ্ছে না। গ্রাম-গঞ্জের সহজ সরল রোগাক্রান্ত মানুষ ঠিক মত পাচ্ছে না ঔষধ ও এভাবেই প্রতিনিয়ত চিকিৎসার নামে চরম হয়রানির শিকার হচ্ছে।
অন্য দিকে ঔষধ বিক্রিসহ ঘুষ বানিজ্য করে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ আলী।

এই বিষয়ে কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ আলীর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি সবুজ বাংলাদেশ বলেন, আমাদের উপজেলায় পর্যাপ্ত পরিমাণ জনবল না থাকায় এমন পরিস্থিতি তৈরী হচ্ছে। ঘুষ বানিজ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছুটা অনিয়ম- দুর্নীতি সরকারি সকল সেক্টরই হয়ে থাকে তবে অন্য অন্য উপজেলার চেয়ে আমার উপজেলা অনেকটাই ভালো আছে। এছাড়া ও তিনি প্রতিবেদক কে বলেন, বর্তমান পুলিশের আইজিপি আমার বন্ধু, অমুক আর্মির মেজর আমার বন্ধু এভাবেই বিভিন্ন সরকারি বড় বড় কর্মকর্তাদের পরিচয় দিতে থাকেন। এছাড়াও তিনি প্রতিবেদক কে বলেন আপনি ঢাকায় এসে আপনার সাথে বসে মিট করে নিবো, এসব বিষয়ে লেখালেখি করে আমাকে বিতর্কিত করবেন না। চাকরির মেয়াদ আর মাত্র ১ বছর আছে।
তাই অনুরোধ করছি লেখালেখির দরকার নাই আমি আপনাকে যা করার করবো। এত অনিয়ম ও দুর্নীতি করেও ডাঃ মোহাম্মদ আলী বহাল তবিয়তে!

এই বিষয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার সাথে কথা বলার জন্য একাধিকবার মুঠোফোনে কল করলে তিনি রিসিভ করেননি।

বগুড়ায় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বাড়ছে কিশোর অপরাধ

বগুড়ায় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বাড়ছে কিশোর অপরাধ

জেলা প্রতিনিধি:

শিক্ষা, সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে সমৃদ্ধ শান্তির নগরী বগুড়া হঠাৎ যেন হারিয়ে ফেলতে শুরু করেছে তার চিরচেনা রূপ। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় জেলায় এখন সক্রিয় একাধিক কিশোর গ্যাং আর সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র। গেলো কয়েক বছরের তুলনায় বগুড়ায় বেড়েছে তুচ্ছ ঘটনায় হত্যাকাণ্ড, বিভিন্ন দল আর সংঘঠনের ব্যানারে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, সাইবার বুলিং থেকে শুরু করে সব ধরনের অপরাধ।

সম্প্রতি জেলায় সবচেয়ে আলোচিত হয়েছে রিক্সাচালক শাকিল হত্যাকাণ্ড। স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা জিতুর সঙ্গে মেয়ের বিয়েতে রাজি না হওয়ায় গত ১৪ জুন তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ঘটনার পর পরই জিতুসহ তার আরও দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তবে প্রশ্ন এই জিতু ও তার বাহিনী কি একদিনে গড়ে উঠেছে? গ্রেপ্তারের পর একে একে জিতুবাহিনীর নানা অপকর্ম সামনে আসলেও তার আগে তাকে থামাতে পারেনি কেউ বরং প্রতি সরকারের আমলেই রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ছিলো এই সন্ত্রাসী ও তার বাহিনী। নিহত শাকিলের পরিবারের অভিযোগ, ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হলেও এখনো ১৪ জনই ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। পলাতক আসামিরা প্রতিনিয়ত প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন তাদের। অন্যদিকে পরিবারের উপার্জনক্ষম একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন তারা। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়নি তেমন কেউ।

জেলা পুলিশের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৪ সাল থেকে ২০২৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত দেড় বছরে বগুড়ায় প্রায় ১১৬টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। যার মাঝে ২৪ এর জুলাই ও আগস্টে ৩০টি হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হলেও আগস্ট পরবর্তী সেপ্টেম্বর থেকে এ বছরের জুন পর্যন্ত গেলো ১০ মাসে এ জেলায় হত্যাকান্ড সংগঠিত হয়েছে আরো ৫২টি। এর আগে ২০২৩ সালে বগুড়ায় ৮৭টি আর ২০২২ সালে জেলায় হত্যাকাণ্ড হয়েছিলো ৮৯টি।

হত্যাকাণ্ড ছাড়াও এই সময়ে চোখে পরে একাধিক চাকু মারামারির ঘটনা, সাইবার অপরাধের বৃদ্ধি, কিশোর গ্যাং এর অপতৎপরতাসহ অন্যান্য অপরাধের চিত্রও। ৫ আগস্ট পরবর্তী জেলাজুড়ে সক্রিয় হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ার একাধিক ফেইক এ্যাকাউন্ট ও ফেসবুক পেইজ যেগুলোর অধিকাংশ থেকেই একদিকে যেমন ছড়ানো হচ্ছে গুজব অন্যদিকে অনেকে শুরু করেছেন ভার্চুয়াল চাঁদাবাজি। ভুক্তভোগীরা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেও পাচ্ছেন না কোন প্রতিকার কারণ জেলায় পুলিশের সাইবার ইউনিট থাকলেও তা না থাকার মতই অকার্যকর। সম্প্রতি আরো আলোচিত ছিলো এপ্রিলে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় দুই সাংবাদিক ও দুই পুলিশ কর্মকর্তার আহত হওয়ার ঘটনাও। তবে প্রতিটি ঘটনায় গ্রেপ্তার হয় অপরাধীরা। জেলা জুড়ে রয়েছে সেনাবাহিনীর একাধিক ক্যাম্প। তাহলে এই অপরাধপ্রবণতার কারণ কি হতে পারে জানতে চাইলে জেলার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দরা রাজনৈতিক অনুপ্রবেশ, অভ্যন্তরীন দ্বন্দ্ব, সচেতনতার অভাব, অপরাধের সুষ্ঠু বিচার না হওয়া, আধিপত্য ও মাদকের বিস্তার এবং প্রশাসনের কাজ করার পূর্ণ স্বাধীনতা ও মনোবল না থাকার বিষয়ে আলোকপাত করেন।

এ প্রসঙ্গে বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা বলেন, অপরাধীরা কোন দলের বা মতের তা বিবেচ্য নয় তাদের জন্য প্রয়োজন কঠোর আইনের প্রয়োগ। ৫ আগস্ট পরবর্তী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নতুন করে কাজ শুরু করেছেন তবে তাদের মনোবল বৃদ্ধিতে সকলকেই ভূমিকা রাখতে হবে। বগুড়াবাসি চাকু মারামারির ঘটনায় অত্যন্ত বিব্রত যা প্রতিরোধে তিনি পুলিশের গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধির বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেন। বাদশা বলেন, এই শহর আমাদের সকলের তাই এই শহরকে সুন্দর রাখার দায়িত্ব আমাদেরকেই নিতে হবে।

অন্যদিকে অপরাধ প্রবণতার হার বৃদ্ধির পেছনে রাজনৈতিক অনুপ্রবেশের ঘটনাকে দায়ী করছেন শহর জামায়াতে ইসলামীর আমীর অধ্যক্ষ আবিদুর রহমান সোহেল। তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট এর দোষরেরা নিজেদের ভোল পাল্টিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে অনুপ্রবেশ করে বিশৃঙ্খলা তৈরীর চেষ্টা করে যাচ্ছেন যাদের শক্ত হাতে রুখতে হবে। এছাড়াও সচেতন হতে হবে অভিভাবকদের। তাদের সন্তান কোথায় যাচ্ছে, কার সাথে মিশছে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সুন্দর ও নিরাপদ বগুড়া গড়তে তারা নিজেরাও সাংগঠনিকভাবে কাজ করছেন বলেও জানান সোহেল।

এছাড়াও এ প্রসঙ্গে বৈষম বিরোধী ছাত্র আন্দোলন বগুড়া জেলা শাখার সদস্য সচিব সাকিব খান বলেন, অপরাধের সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত না হওয়ার কারণে অপরাধীরা জামিনে বের হয়ে এসে আবারো অপরাধের পুনরাবৃত্তি করেন। ফ্যাসিস্টরা যে কাজগুলো করতো তারা পালিয়ে যাওয়ার পর সেই জায়গাগুলো দখল করেছে অন্য রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দরা। আসলে দেশের স্বার্থ কেউ বিবেচনা না করে বেশিরভাগ মানুষ তাদের ব্যক্তি স্বার্থ নিয়ে পড়ে আছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় পুলিশের কিছুই করার থাকেনা। তারপরেও পুলিশসহ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আভিযানিক দলকে আরো কার্যকরী ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান এই ছাত্র নেতা।

অপরাধীদের জামিনের হার সম্পর্কে জানতে চাইলে বগুড়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর এ্যাড. আব্দুল বাসেদ জানান, প্রাথমিক প্রমাণাদিতে যদি হত্যাকাণ্ডে কারো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় এমন কোনো অপরাধীর বগুড়ার আদালতে জামিন হয় না। এছাড়াও চাকুসহ কেউ গ্রেপ্তার হলে দুই মাসের আগে তার জামিন নয়। জেলার সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে তারা মাসিক সভায় প্রতিনিয়ত সমন্বয়ের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তারপরেও তিনি জেলা পুলিশ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থে দলমত নির্বিশেষে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী ব্যক্তি ও গোষ্ঠীদেরকে কঠোর হাতে দমনের আহ্বান জানান।

সার্বিক বিষয় নিয়ে পুলিশের ভূমিকা জানতে চাইলে বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা জানান, দেড় বছরে বগুড়ায় সংগঠিত ১১৬ টি হত্যাকাণ্ডের মাঝে জুলাই ও আগস্ট মাসেই সংগঠিত হয়েছে ৩০টি। এছাড়াও আগস্ট পরবর্তী অপরাধ প্রবণতা কিছুটা বাড়লেও তা বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বিগত যেকোনো সময়ের থেকে বর্তমানে বগুড়া জেলা পুলিশ অত্যন্ত সুসংগঠিত। প্রতিটি ঘটনার তদন্তের মাধ্যমে মূল অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। অপরাধ করে কেউ ছাড় পেয়েছে এমন কোন ঘটনার নজির বগুড়ায় নেই। এছাড়াও শহরজুড়ে বিভিন্ন পয়েন্টে বাড়ানো হয়েছে পুলিশের টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি। জেলা গোয়েন্দা পুলিশের বিশেষ অভিযানে সম্প্রতি গ্রেপ্তার করা হয়েছে চিহ্নিত সব মাদক ব্যবসায়ী, সন্ত্রাসী ও প্রতারকদেরও। যে অভিযান এখনো চলমান রয়েছে। তিনি বলেন, সকলের আন্তরিক সহযোগিতা পেলে অবশ্যই বগুড়া গড়ে উঠবে নিরাপদ নগরী হিসেবে।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম