পক্ষে নিউজ করতে গণমাধ্যমকে হুমকি দিলো সে এসআই!

রায়হান হোসাইন, চট্টগ্রামঃ- 

আসামির স্ত্রীকে হেনস্তা করার ঘটনার সংবাদ প্রকাশ করায় একুশে পত্রিকাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থানা থেকে প্রত্যাহার হওয়া এসআই মাহবুব মোরশেদ।

বুধবার (২০ এপ্রিল) শুক্রবার একুশে পত্রিকায় ফোন করে এসআই মাহবুব মোরশেদ বলেন, ‘আপনারা তো আমার বিরুদ্ধে লিখেছেন। এখন তো তদন্তে আমার বিরুদ্ধে কোন কিছু প্রমাণ হয়নি। আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ। এখন এই নিউজ করেন।’

 

তখন একুশে পত্রিকার পক্ষ থেকে এসআই মাহবুবকে বলা হয়, ‘আপনি যে নির্দোষ সেই তদন্ত প্রতিবেদনটি পাঠান। আমরা বার্তা বিভাগে পাঠিয়ে দেব। তারা নিউজ করে দেবে।’

 

পরে দেখা গেল, সীতাকুণ্ড সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুল করিমের তৈরি করা সেই তদন্ত প্রতিবেদনে আসামির স্ত্রীকে লাথি দেওয়া, হেনস্থা করার প্রমাণ পাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এসআই মাহবুবের চাওয়া অনুযায়ী বৃহস্পতিবার নিউজটা করতে গিয়ে তদন্তে যা উঠে এসেছে তাই তুলে ধরা পড়লোপ্রতারক হয়। সঙ্গতকারণে নিউজটার শিরোনাম হয় ‘সীতাকুণ্ডে এসআইয়ের বিরুদ্ধে আসামীর স্ত্রীকে হেনস্তার সত্যতা মিলেছে’

 

এই নিউজ প্রকাশের পর তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেন এসআই মাহবুব। একুশে পত্রিকার ফেসবুক পেইজে দেওয়া নাম্বারে আজ শুক্রবার দুপুরে ফোন করে এসআই মাহবুব মোরশেদ দাবি করেন, ‘এক লাখ টাকার বিনিময়ে একুশে পত্রিকা এই নিউজ করেছে।’

 

তখন একুশে পত্রিকার পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের রিপোর্টার এই নিউজ করার জন্য টাকা নিয়েছেন, সেই প্রমাণ দিন। প্রমাণ ছাড়া এত বড় অপবাদ দেওয়া হলে আমরা মেনে নেব না, আইনগত ব্যবস্থা নেব।’

 

এরপর এসআই মাহবুব উচ্চবাচ্য করতে শুরু করেন; বলেন, ‘বেশি বাড়াবাড়ি করতেছেন, আমি মামলা করবো। আদালতে দেখা হবে। আমার কাছে রেকর্ড আছে।’

 

রেকর্ড থাকলে দিতে বললে তার সদুত্তর না দিয়ে এসআই মাহবুব বলেন, ‘আমি উপরে যাব, দেখে নেব।’

 

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সীতাকুণ্ড সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুল করিম একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘এসআই মাহবুব যদি কোনও হুমকি দিয়ে থাকে, এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মহোদয় বরাবর আপনারা অভিযোগ করতে পারেন। অথবা সংশ্লিষ্ট থানায় অভিযোগ করতে পারেন। এরপর নিশ্চয়ই তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার কারণেই এসআই মাহবুবকে থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তার ব্যাপারে আর কিছু বলার আগ্রহ নেই আমার।’

 

এর আগে গত ১৭ এপ্রিল সীতাকুণ্ড থানায় কর্মরত এসআই মাহবুব মোরশেদের বিরুদ্ধে লাথি মেরে আঘাত, অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ, অপমান, দরজা ভেঙে ঘরের ভেতরে প্রবেশ, মূল্যবান কাগজপত্র, ১ লক্ষ ৪২ হাজার টাকা, ৮ আনা স্বর্ণ ও ২ টি স্মার্টফোন লুটের অভিযোগ তুলে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন খালেদা আক্তার নামে এক নারী। ওই নারীর স্বামী নুরুল আলম ইরান একটি মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি।

 

অভিযোগে খালেদা আক্তার উল্লেখ করেন, গত ১৬ এপ্রিল শনিবার দুপুরে সঙ্গীয় ফোর্স ও একজন সোর্স নিয়ে সীতাকুণ্ডের মুরাদপুর ইউনিয়নের মধ্যম ভাটেরখীলস্থ নুর আহম্মদের নতুন বাড়িতে তার স্বামীভাই ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি মো. নুরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করতে যান এসআই মাহবুব মেরশেদ। কিন্তু তার স্বামীকে না পেয়ে এসআই মাহবুব মোরশেদ খালেদাকে তাদের প্রতিবেশীর সাথে চলা জমি সংক্রান্ত মামলার জামিন আছে কি না জানতে চান।

 

খালেদা আক্তার আদালত থেকে জামিনে আছেন জানালে এসআই মাহবুব মোরশেদ তাকে জামিনের কপি দিতে বলেন। এসময় খালেদা আক্তার জামিনের কপি তার দেবরের কাছে আছে এবং তিনি আসলে দেখাবেন বলে জানালে এসআই মাহবুব মোরশেদ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে এসআই মাহবুব মোরশেদ খালেদাকে তার ঘরের আলমারির চাবি দিতে চাপ প্রয়োগ করেন। এসময় খালেদা আক্তার চাবি দিতে অস্বীকৃতি জানালে এসআই মাহবুব মোরশেদ তাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং ২ বার তাকে লাথি দেন। পরে ভয়ে ও নির্যাতন থেকে বাঁচতে আলমারির চাবি দিয়ে দিলে মাহবুব মোরশেদ আলমারি খুলে নগদ ১ লক্ষ ৪২ হাজার টাকা, আট আনা স্বর্ণ, ২টি স্মার্টফোন ও বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র লুট করে নিয়ে যায়।

 

তিনি আরও উল্লেখ করেন, নগদ ১ লক্ষ ৪২ হাজার টাকা তাদের গরু বিক্রি টাকা যা বসতঘরে গচ্ছিত ছিল। তার ছেলে রিফত হোসেন জনি (১৭) এসআই মাহবুব মোরশেদ ও সোর্স নুরুজ্জামানকে বাধা দিলে তারা তাকেও মারধর করেন এবং মাথায় বন্দুক তাক করে পরিবারের সবাইকে প্রাণনাশের হুমকি দেয় এবং ব্যাংকের, জন্মনিবন্ধনসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র লুট করে নিয়ে যায়। অভিযোগে ৩ জন পুরুষ ও ৪ নারীসহ মোট ৭ জনকে স্বাক্ষী করেন খালেদা আক্তার।

 

গত ১৭ এপ্রিল পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ দেয়ার পরই অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়। একইসাথে ওইদিন রাতেই এসআই মাহবুব মোরশেদকে সীতাকুণ্ড থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।

 

অভিযোগের তদন্ত করে ১৮ এপ্রিল পুলিশ সুপারের কাছে প্রতিবেদন জমা দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুল করিম। পুলিশের সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসআই মাহবুব মোরশেদ আসামি নুরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে দরজা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করেন। পরে তাকে আধা কিলোমিটার ধাওয়া করে ধরতে ব্যর্থ হলে দরজা খুলতে দেরি হওয়ার বিষয় নিয়ে তার স্ত্রী খালেদা আক্তারের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। এসময় খালেদা আক্তারকে লাথি মারেন এসআই মাহবুব মোরশেদ এবং তার ও তার ছেলের সাথে অশোভন আচরণ করেন।

 

শুধু তাই নয়, ছেলের মাথায় বন্দুক তাক করে প্রাণনাশের হুমকি ও ভয় দেখিয়ে আলামরি থেকে কাগজপত্র লুট করেন এসআই মাহবুব মোরশেদ। এসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে মর্মে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। অন্যদিকে টাকা ও স্বর্ণালংকার লুটের অভিযোগের উপযুক্ত ও নির্ভরযোগ্য সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি এবং খালেদা আক্তার দুটি গরু বিক্রি করে পুনরায় দুটি গরু ক্রয় করেন বলে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অভিযানে এসআই মাহবুব মোরশেদের সঙ্গীয় অফিসার এএসআই হাবিবুর রহমান সম্পর্কে বাদী ও বাদীর মানিত স্বাক্ষীদের বক্তব্য পর্যালোচনায় বিরূপ কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।

 

উক্ত প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, পুলিশ বাহিনীর একজন প্রশিক্ষিত অফিসার হয়েও কর্তব্য-কর্মে স্বেচ্ছাচারিতা, অসদাচরণ ও শৃঙ্খলা পরিপন্থী পরিলক্ষিত হয়, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। প্রতিবেদনে অভিযুক্ত এসআই মাহবুব মোরশেদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।

কক্সবাজারে এনজিওকর্মী রোহিঙ্গা কোটিপতি

মোঃআলম কক্সবাজার প্রতিনিধ।
নানা অপকর্মে ব্যবহার হচ্ছে ইন্সপেক্টরের ৫ গাড়ি
বিলাসবহুল গাড়িতে পুলিশের লোগো ও স্টিকার লাগিয়ে ব্যবহার করছে অপরাধীরা পাজেরো।
কক্সবাজারে এক ট্রাফিক পরিদর্শকের (ইন্সপেক্টর) পাঁচ বিলাসবহুল গাড়িতে পুলিশের লোগো ও স্টিকার লাগিয়ে ব্যবহার করছে এনজিওকর্মী রোহিঙ্গা যুবকের নেতৃত্বে অপরাধী সিন্ডিকেট। গাড়িগুলো নিয়ে নিরাপদে নানা অপকর্ম করে দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে তারা। বিশেষ করে জায়গায়-জায়গায় পরিদর্শকের হস্তক্ষেপ থাকায় উখিয়া-টেকনাফ থেকে ওই এনজিওকর্মী চেকপোস্ট ফাঁকি দিয়ে যাতায়াত করছেন কক্সবাজার শহরসহ চট্টগ্রামেও।
অভিযোগ উঠেছে, এসব গাড়িতে ইয়াবা পাচারসহ নানা অপকর্ম করে যাচ্ছে এ সিন্ডিকেটটি। সম্প্রতি সিন্ডিকেটের প্রধান ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) আমিনুর রহমান ও তার প্রধান সহযোগী এনজিওকর্মী রোহিঙ্গা যুবক মনসুর, সেলিম ও আব্দুছ সালামের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের পর টিআই আমিন প্রতিবাদ নিয়ে তোড়জোড় শুরু করলেও অন্যরা গা ঢাকা দিয়েছেন।
সূত্রমতে, কক্সবাজার ট্রাফিক বিভাগের ইন্সপেক্টর আমিনুর রহমানের মালিকানাধীন ৫টি গাড়িতে পুলিশের লোগো ও স্টিকার লাগানো রয়েছে। আর এ গাড়িগুলো মাদকসেবন, বিক্রি, নারীদের নিয়ে জলসা, প্রতারণা, টার্গেট করে রাস্তা থেকে যানবাহন ধরে মোটা অঙ্কের বাণিজ্যসহ নানা অপরাধে ব্যবহার করছেন রোহিঙ্গা মনসুর। তিনি একটেড সিস্টার অর্গানাইজেশন রিচ নামের এনজিওতে ফ্লিড অফিসার হিসাবে কাজ করেন। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর গাড়ি থেকে স্টিকার ও পুলিশের লোগো তুলে ফেলেছেন সিন্ডিকেটের সদস্যরা। টিআই আমিনুর যুগান্তরকে জানান, তার একটি মোটরসাইকেল, একটি নোয়া, একটি পাজেরো, একটি ল্যান।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎতে যাচ্ছেন বিএনপির মহাসচিব ফকরুল বাংলাদেশে ইতিহাস গড়ল উইন্ডিজ দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন রাজউক ইমারত পরিদর্শক শামীম রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধে কে জিতবে, তা নিয়ে পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তুতি নিচেছ ট্রাম্প নাসার চন্দ্র মিশনে স্পেসএক্স জুলাই যোদ্ধা স্বীকৃতি পেতে নতুন করে দেড় হাজারের বেশি আবেদন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরাতে আপিল শুনানি শুরু প্রধান প্রকৌশলীর আস্থাভাজন ইএম ২ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কায়কোবাদ সম্পদের পাহাড় জানানো যাচ্ছে অভিযোগ, থানায় বসলেই ভিডিওকলে হাজির এসপি প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে কার্গো ভিলেজের অগ্নিকাণ্ডে