
ডেস্ক রিপোর্ট :
জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় গতকাল শুক্রবার ‘জুলাইযোদ্ধাদের’ সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দফায় দফায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। এ সময় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, খামারবাড়ি ও আসাদগেট এলাকায় পুলিশের গাড়িসহ বেশ কিছু যানবাহন ভাঙচুর করা হয়। ‘জুলাইযোদ্ধাদের’ সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দফায় দফায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। এ সময় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, খামারবাড়ি ও আসাদগেট এলাকায় পুলিশের গাড়িসহ বেশ কিছু যানবাহন ভাঙচুর করা হয়। পুলিশ ও র্যাবের দুটি অস্থায়ী নিয়ন্ত্রণ কক্ষে আগুন দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিপেটা, টিয়ার গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। পুলিশকে লক্ষ্য করে বিক্ষোভকারীরা ইটপাটকেল ছোড়ে। গতকাল দুপুর দেড়টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে সংসদ ভবন এলাকা। উভয়পক্ষে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। এদিকে পুলিশের হামলার প্রতিবাদসহ তিন দফা দাবিতে রোববার দুপুর ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত সব জেলায় মহাসড়কে অবরোধ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন জুলাইযোদ্ধারা। সন্ধ্যায় সংসদ ভবন এলাকায় সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তারা।
আইনি সুরক্ষা দেওয়ার দাবিতে বৃহস্পতিবার রাতে জুলাইযোদ্ধা ব্যানারে কিছু তরুণ মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। তাদের দাবি, জুলাই আন্দোলনে তাদের অবদানের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, আইনি সুরক্ষা ও পুনর্বাসন বাস্তবায়ন করতে হবে। পুলিশের বাধা ডিঙিয়ে গতকাল সংসদ ভবন এলাকার লোহার রেলিং টপকিয়ে কয়েকশ তরুণ সনদ স্বাক্ষর মঞ্চের সামনে চেয়ারে বসে পড়েন। তাদের অধিকাংশের পরনে ছিল একই রঙের টিশার্ট। এই পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়। দুপুরে পুলিশ কর্মকর্তা এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা তাদের সরে যাওয়ার অনুরোধ করেন। কমিশনের সহসভাপতি ড. আলী রীয়াজ মঞ্চে এসে তাদের দাবি পূরণে জুলাই সনদে সংশোধনী আনার ঘোষণা দেন। ওই ধারাটি নিয়ে আপত্তি ছিল জুলাইযোদ্ধাদের। প্রতিশ্রুতির পরও জুলাইযোদ্ধারা সেখান থেকে না সরলে পুলিশ জোর করে তুলে দিতে গেলে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়।
সরেজমিন দেখা যায়, দেড়টার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মঞ্চের সামনে অবস্থান নেওয়া জুলাইযোদ্ধাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। তারা সরতে না চাইলে একপর্যায়ে পুলিশ তাদের ধাওয়া দেয়। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউসংলগ্ন ফটক খুলে দেওয়া হয় তাদের বের হয়ে যাওয়ার জন্য। এ সময় পুলিশ ধাওয়া ও লাঠিপেটা করে সবাইকে বের করে দেয়। আন্দোলনকারীরা বের হয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের গাড়ি, বাস, মাইক্রোবাস, একটি বেসরকারি টেলিভিশনের গাড়ি এবং মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে সেচ ভবনের সামনে জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান উপলক্ষে তাঁবু দিয়ে ঘেরা পুলিশ ও র্যাবের দুটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষে আগুন ধরিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা। সেখানে থাকা ফ্যান, চেয়ার-টেবিলও পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া রাস্তায় কাঠ জড়ো করে আগুন জ্বালানো হয়। দফায় দফায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাধে। সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেলে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে খামারবাড়ি মোড় ও আসাদ গেটসংলগ্ন আড়ংয়ের সামনে অবস্থান নেন। পুলিশের ব্যারিকেডের জন্য ব্যবহৃত রোড ব্লকার নিয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের দুই প্রান্তের রাস্তা বন্ধ করে দেন আন্দোলনকারীরা। এতে ওই সড়কে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত দফায় দফায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে জুলাইযোদ্ধাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এ সময় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে আতিকুল গাজী নামে জুলাইযোদ্ধার একটি কৃত্রিম হাত খুলে রাস্তায় পড়ে যায়। এরপর আতিকুলসহ পুলিশের লাঠিপেটায় আহত কয়েকজনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। আতিকুল গাজী বলেন, ‘আমার একটা হাত নেই, ছিল আর্টিফিশিয়াল (কৃত্রিম) হাত; এটাও তারা (পুলিশ) বাড়ি মেরে ভেঙে ফেলছে। আমার কাছে কি পর্যাপ্ত পরিমাণে টাকা আছে যে, আরেকটা হাত কিনে নেব? এটা কি রাষ্ট্রের কোনো কার্যক্রম হতে পারে?’ তিনি বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনে আমার একটি হাত গেছে। সারাজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে থাকতে হবে। জুলাই সনদে আহতদের যদি স্বীকৃতি না দেওয়া হয়, যুক্ত করা না হয়; তাহলে সেই সনদের কোনো মূল্যও দেখছি না।’
নিজেকে জুলাইযোদ্ধা দাবি করে মো. শরিফুল নামে এক তরুণ বলেন, ‘চব্বিশের জুলাইয়ে আমি আহত হয়েছি। শরীরে রাবার বুলেট ঢুকেছিল। অনেক দিন অসুস্থ ছিলাম। পুলিশ আবার আমাদের ওপর হামলা করেছে।’
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার ইবনে মিজান সমকালকে বলেন, পুলিশের ওপর হামলা ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। পুলিশের পাঁচটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে দুজনকে আটক করা হয়েছে।
দুপুর ১টা ৫৩ মিনিটে ফার্মগেটের দিক থেকে পুলিশের একটি পিকআপ খামারবাড়ি মোড় হয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে যাচ্ছিল। এ সময় আন্দোলনকারীরা গাড়িটিতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে।
ট্রাফিক পুলিশের এক সদস্য ফার্মগেটের দিক থেকে একটি মোটরসাইকেলের পেছনে বসে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের দিকে যাচ্ছিলেন। দুপুর ২টার দিকে খামারবাড়ি মোড়ে পৌঁছলে আন্দোলনকারীরা মোটরসাইকেল থামিয়ে পুলিশ সদস্যকে মারধর শুরু করেন।দুপুরের পর সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। আড়াইটার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খামারবাড়ি ও আসাদগেট এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেয়। পরে জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের মঞ্চ ও এর আশপাশের এলাকায় তল্লাশি চালান তারা।