বিপর্যয়ের মুখে চট্টগ্রাম বন সার্কেল-৫

স্টাফ রিপোর্টার:
গত ২৪ ফেব্রুয়ারী চট্টগ্রাম এর সিএফ মোল্যা রেজাউল করিম এর দুর্নীতি বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে চালানো অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ নথি জব্দ করার পাশাপাশি চাওয়া হয় সিএফ সহ ১১ জনের তথ্য। জানা যায় সেখানে সিএফ মোল্লার চাঁদা আদায়কারী বাহিনীর অন্যতম সদস্য হামিদ ও সাদেক ফরেস্টার এর তথ্য না চাওয়ায় সংশ্লিষ্ট মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

এদিকে সিএফ মোল্লা রেজাউল করিম দুদক চট্টগ্রাম অফিস ম্যানেজ করার জন্য দ্রুততার সাথে দুদকে আনিত অভিযোগের সাথে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে মিটিং করে প্রায় দেড় কোটি টাকা চাঁদা তোলেন। এই টাকা ব্যায়ে উথাপিত অভিযান প্রতিবেদন হতে মুক্ত হওয়ার জন্য সিএফ রেজাউল করিমের আস্থাভাজন সাদেকুর রহমান, আনিছুর রহমান ও আব্দুল হামিদ ফরেস্টারকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়।

এই ধারাবাহিকতায় গত ৬ মার্চ ২০২৫ মো: সাদেকুর রহমান দুর্নীতি দমন কমিশন, চট্টগ্রাম জেলা সমন্বয় উপ পরিচালকের কার্যালয়ে ঘোরাঘুরি করতে দেখা দিলে দুদুক অফিসের কিছু কর্মকর্তা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং এক পর্যায়ে জানা যায় সে মুলত সিএফ মোল্যা রেজাউল করিম এর বিষয়ে সমন্বয় করার জন্য এসেছে। বিষয়টি মোল্যা রেজাউলকে মোবাইলে দুদুক অফিস হতে জানানো হয় এবং দ্রুত তাকে চট্টগ্রাম এর বাহিরে বদলি করে জানাতে বলা হয়।

সিএফ মোল্লা রেজাউল করিম সেই মোতাবেক ৬ মার্চ ২০২৫ তারিখ সাদেকুর রহমানের বদলী অর্ডার করে দুদুক অফিসে অর্ডারের কপি প্রেরণ করেন। সাদেক ফরেস্টারকে কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগে বদলি করা হলেও এখনও চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগ এর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস এম কায়চার তাকে অব্যাহতি প্রদান করেন নি বলে জানা যায়। ডিএফও কায়চার কেন তাকে অব্যাহতি প্রদান করেন নাই তা নিয়েও রয়েছে নানান আলোচনা।

তবে দুদককে ম্যানেজ করতে এহেন চাঁদাবাজির বিষয়টি এখন এই সার্কেলে কর্মর দের মধ্যে আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিনত হয়েছে। অনেকেই বলছেন তাহলে কি দুদক ও ম্যানেজ হয়ে যাবে, পার পেয়ে যাবে চাঁদাবাজ চক্র।

অপরদিকে সিএফ’র প্রধান চাঁদা আদায়কারী আব্দুল হামিদ ফরেস্টার এর ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাব নাম্বারে সিএফ’র নামে আদায়কৃত দুর্নীতির লক্ষ লক্ষ টাকা লেনদেন হয়েছে বলেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন এসিএফ জানান। ফরেস্টার আব্দুল হামিদ এর বাড়ি লামা উপজেলা, বান্দরবনে। তার ওখানে থাকার মতো তেমন কিছু না থাকলেও চট্টগ্রাম অঞ্চলের চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগে চাকুরি করে ইছামতি রেঞ্জের সংরক্ষিত বনাঞ্চল ধবংস সহ প্লট আকারে সরকারি জমি বিক্রির অভিযোগ আছে।

এছাড়াও হাটহাজারী চেক স্টেশনে স্টেশন কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব পালন করে কাঠ পাচারের সাথে সরাসরি জড়িত হয়। এমনকি নিজেও কাভারভ্যান যোগে কাঠ পাচার করে সরকারি রির্জাভ ধবংস করেছে। জানা যায় হামিদ হাটহাজারী বালুছড়া এলাকায় বিশাল জায়গা ক্রয় করে টিনসেড এর ২৫ টি রুম করে বিশাল নিজের সম্রাজ্য তৈরি করেছে। যেখান থেকে তিনি মাসিক প্রায় ৩ লক্ষ টাকা ভাড়া আদায় করে থাকেন বলে কেয়ার টেকার জানান।

ফেনীতে ৯ জন ছাত্র  হত্যা ৫ মামলায় আসামি ১৬২৩, ধরাছোঁয়ার বাইরে মাস্টর মাইন্ড আলাউদ্দিন নাসিম

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ফেনী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগ আওয়ামী লীগের স্ব ঘোষিত অভিভাবক। তার ইশারায় চলতো বৃহত্তর নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের প্রশাসন। তিনি নিজেকে দাবি করতেন শেখ হাসিনার সবচেয়ে আপনজন। ২০০৯ সালের পর ফেনী ও নোয়াখালীতে তিনিই ছিলেন শেষ কথা। তার নির্দেশেই জুলাই ও আগস্ট মাসে ফেনী, কুমিল্লা ও নোয়াখালীতে চলে ছাত্র হত্যা। ফেনীর মহিপালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের নির্বিচারে গুলিতে ৯ জন ছাত্র হত্যার ঘটনায় এপর্যন্ত মোট ৫ মামলা হয়েছে। এতে আসামি করা হয় ১৬২৩ জনকে। কিন্তু অদৃশ্য ইশারায় ধরাছোঁয়ার বাইরে মাস্টর মাইন্ড আলাউদ্দিন নাসিম।

ফেনীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসনের এমপি ও গুলি করার নির্দেশদাতা আলাউদ্দিন নাসিমকে কেন মামলার আসামি করা হয়নি এ নিয়ে চলছে সর্বত্র জল্পনা-কল্পনা। ফেনীর ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করছেন আলাউদ্দিন নাসিম বিএনপি-জামায়াতের হাইকমান্ডের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে মামলা থেকে তার নাম বাদ দিয়েছে।

কে এই আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম? অনুসন্ধানে জানাযায়, ১৯৮৬ সালে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার সার্ভিসে যোগ দেন আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম। দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলা খেয়ে চাকরি থেকে পদত্যাগ করেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রভাব বিস্তার করে সেই মামলা থেকে তিনি খালাস পান। ২৩ বছরের চাকরি জীবনে ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে কামিয়েছেন হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক।

এক সময়ের শেখ হাসিনার প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দিন নাসিম ২০১৩ সালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার বাবা চিহ্নিত রাজাকার সালেহ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীকে মুক্তিযোদ্ধা বানিয়েছেন। বহিষ্কার হওয়ার ভয়ে প্রকাশ্যে কেউ মুখ না খুললেও বিষয়টি নিয়ে চরম বিব্রত হয় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। ২০২০ সালের ২৬ জুলাই মুক্তিযোদ্ধা নামধারী রাজাকার সালেহ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী মারা গেলে তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান দিয়ে দাফন করা হয়!

পজির উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর ছেলে সালেহ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর গ্রামের বাড়ি ফেনীর পশুরাম উপজেলা উত্তর গুথুমা গ্রামে। ১৯৭১ সালের ২০ আগস্ট ফেনী মহকুমা পিস কমিটির চেয়ারম্যান প্রকাশিত ০৯ সদস্য বিশিষ্ট পাকিস্তান বাহিনীর সহযোগীদের তালিকায় ০৭ নম্বর নামটি ছিলো আলাউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী নাসিমের বাবা সালেহ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর। কালের বিবর্তনে ৪২ বছরের ব্যবধানে এই রাজাকার ০৮/০৪/২০১৩ ইং তারিখে সরকারের গেজেট ভুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভুক্ত হয়ে যায়। যার গেজেট নং- ২৩৬১।

সালেহ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ দিতে ২০১৯ সালের ২০ জুলাই জাতীয় সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধা ফাউন্ডেশনের মহাসচিব জি কে বাবুল তৎকালিন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর কাছে আবেদন করেন। বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) মহাপরিচালককে নির্দেশ দেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক। এই তদন্তের নির্দেশ ধামাচাপা দেয়া হয়। যা এখনও আলোর মুখ দেখেনি।

অনুসন্ধানে জানাযায়, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে হলফনামায় নাসিম ও তার স্ত্রী ডা. জাহানারা আরজু বর্তমানে ১০৮ কোটি ৩৭ লাখ ৪১ হাজার ৮৪৫ টাকার সম্পদ দেখিয়েছেন। বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৩ কোটি ৫৭ হাজার ২৯৫ টাকা এবং তার স্ত্রীর ৬৯ লাখ ৪৬ হাজার ৬৫০ টাকা।

স্থানীয়দের মতে এমপি ও তার পরিবারের সদস্যদের দেশ-বিদেশে নামে-বেনামে রয়েছে হাজার কোটি টাকার অর্থ-সম্পদ। এ ছাড়াও কানাডায় রয়েছে বাড়ি-গাড়ি। মেয়ে রাকা চৌধুরী এখনও কানাডায় অবস্থান করছেন। এমপি হওয়ার আগেও তিনি পরিবার নিয়ে প্রায়ই কানাডায় থাকতেন।

গত ২৭ জুন অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান ও তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ করেছেন ফেনীর আবদুল হাই নামে এক ব্যক্তি। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ফেনী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম তার স্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. জাহানারা আরজু নির্বাচনের হলফনামায় ১০৮ কোটি ৩৭ লাখ ৪১ হাজার ৮৪৫ টাকার সম্পদের মালিক হিসেবে স্বীকার করলেও বাস্তবে তারা হাজার কোটি টাকার মালিক। নামে-বেনামে তাদের রয়েছে শত শত বিঘা জমি। ঢাকায় রয়েছে অসংখ্য ফ্লাট ও বিলাসবহুল গাড়ি। একজন সরকারি কর্মকর্তা থেকে বনে গেছেন বিলিয়নিয়ার।

অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, দুর্নীতি দমন কমিশন সন্দেহভাজনদের দুর্নীতির তালিকা প্রকাশের পরে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পদের চাকরি তিনি ছেড়ে দেন। তালিকা প্রকাশের পর সম্পদের হিসাব চেয়ে চিঠি দেয় দুদক। তারপর অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মতিঝিল থানায় মামলা করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার প্রভাব বিস্তার করে সেই মামলা থেকে অব্যাহতি নেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

অভিযোগে আরও বলা হয়, সরকারের বিভিন্ন দফতরে কাজ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ২০ পার্সেন্ট কমিশন নিয়ে থাকেন। এ ছাড়াও ফেনী বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের মানুষের কৃষিজমি জিম্মি করে কাউকে দিয়েছেন স্বল্পমূল্য আবার কেউ জমি লিখে দিতে না চাইলে সেই জমি তিনি দখল করে নিয়েছেন। স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০ বিঘার ওপরে গড়ে তোলা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পুকুর রয়েছে ৪টি।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ফেনীর পরশুরামে ৩০ একর জায়গায় ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত করা হয় আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম কলেজ। স্থানীয়দের অভিযোগ, জোরপূর্বক ও ভয় দেখিয়ে নামমাত্র মূল্য পরিশোধ করে কলেজের জন্য কৃষিজমির জায়গা দখল করে নেওয়া হয়। এবার ফেনী-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য হয়ে মনোনয়ন বাণিজ্য করে ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী ও পরশুরামে তার অনুসারীদের দিয়ে নানা কায়দাকৌশল করে নির্বাচনের মাধ্যমে উপজেলা চেয়ারম্যান বানান। এ ছাড়া নির্বাচনি এলাকার বাইরেও অন্যান্য উপজেলায়ও তার অনুসারীদের চেয়ারম্যান বানাতে ভূমিকা রাখার অভিযোগ রয়েছে।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম
শিক্ষার্থীরা রোডম্যাপের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিলেন শাকসু নির্বাচনের বিদেশ যেতে না পারায় মাইক ভাড়া করে এলাকাবাসিকে গালিগালাজ করলেন কিশোরগঞ্জের যুবক জুলাই সনদে স্বাক্ষর করল গণফোরাম অন্যদেরও সই করার আহ্বান কমিশনের সূচক সাড়ে ৩ মাস আগের অবস্থানে লেনদেন ৪ মাসে সর্বনিম্ন আওয়ামীলীগ ফিরলে হাসিনার পা ধরেও মাফ পাবেন না: রাশেদ খান বিমানবন্দর অগ্নিকান্ডে পুড়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম কুমিল্লায় গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার, পালিয়েছেন স্বামী ও তাঁর পরিবারের লোকজন ঢাকা এলজিইডিতে দুর্নীতির একচ্ছত্র অধিপতি বাচ্চু মিয়া বিমান বন্দরের সামনে এখোনো উৎসুক জনতার ভীড় নেভেনি আগুন বাড়িভাড়া ৫০০ টাকা বৃদ্ধি করে প্রজ্ঞাপন জারি শিক্ষকদের