রাজউকের প্রকৌশলী হাফিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার॥

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা কর্মচারীদের ঘুষ, দুর্নীতি এবং অনিয়মের কারণে বার বার আলোচিত-সমালোচিত হচ্ছে। রাজউকের বিভিন্ন কার্যক্রম এবং উন্নয়ন প্রকল্পসমূহে অনিয়ম-দুর্নীতি এখন গেড়ে বসেছে। সংস্থাটির সেবার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি উভয় স্তরেই দুর্নীতি ও ভয়াবহ অনিয়ম রয়েছে। আর এসব দুর্নীতির ক্ষেত্রে রাজউক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একাংশ, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় আঁতাত স্পষ্ট। ফলে, রাজউক কর্তৃক সার্বিক জবাবদিহি কাঠামো কার্যকর করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নসহ অন্যান্য দায়িত্ব পালন ব্যহত হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় এবার পাওয়া গেল রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)’র নির্বাহী প্রকৌশলী (ডিজাইন-২) মো: হাফিজুল ইসলামকে।
জানা যায়, রাজউকের চাকরিতে যোগদানের পর হতে অল্প সময়ের ব্যবধানে বিশাল ধন সম্পদের মালিক বনে গেছেন তিনি।

হাফিজুলের অবৈধ সম্পদের অভিযোগঃ

উত্তরা রাজউক মার্কেটের পেছনে ৬ কাঠা জমির উপর ৬ তলা বাড়ি, যেখানে তিনি ৫ তলায় বসবাস করেন। আশুলিয়ায় একটি বাণিজ্যিক প্লট, যেখানে মার্কেট করে ভাড়া দিয়েছেন। উত্তরা দিয়াবাড়ীতে “মুন ভিলা” নামে ৩.৫ কাঠার একটি প্লট, যেখানে বাগানবাড়ি নির্মাণ করেছেন।সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ ধানগড়া এপেক্স হাসপাতালের পেছনে রয়েছে ২৭ কাঠার একটি বাগানবাড়ি। উচ্চ মূল্যের ব্যক্তিগত একটি প্রাইভেটকার রয়েছে(মেরুন রঙের প্রিমিও) এছাড়াও, রাজউক কর্মকর্তা প্রকৌশলী হাফিজুল ইসলামের নামে-বেনামে আরও অনেক সম্পত্তি থাকার অভিযোগ উঠেছে।

রাজউকে নির্বাহী প্রকৌশলী(ডিজাইন-২) মো: হাফিজুল ইসলামের বক্তব্য নিতে গেলে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে তিনি অসদাচরণ করেন। সাংবাদিক সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি তাদের এড়িয়ে যান। একপর্যায়ে উপরোক্ত অভিযোগের বিষয় নিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তেজিত হয়ে অশ্লিল ভাষায় গালাগালি করেন বলেওঅভিযোগ পাওয়া গেছে। এবং সেখানে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে রীতিমতো সন্ত্রাসীসূলভ আচরণ শুরু করেন। তিনি তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সামনে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনাদের মত সাংবাদিক আমি অনেক দেখেছি। পারলে আমার বিরুদ্ধে কিছু করেন। আমার সম্পদ আমার একান্ত ব্যক্তিগত। এসব দেখবে দুদক! আপনারা কে? কথার একপর্যায়ে তিনি কর্মচারীদের রুমের দরজা বন্ধ করে দিতে বলেন যেন সাংবাদিকরা না বের হতে পারে।

প্রশ্ন উঠেছে একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়ে কীভাবে এত সম্পদ গড়েছেন তিনি? একজন সরকারি প্রকৌশলী হিসেবে দীর্ঘদিন একই পদে থেকে বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়ে তোলার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে জনমনে। তিনি কি নিয়ম অনুযায়ী তার সম্পদের হিসাব দাখিল করেছেন? দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কি তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেবে? এ বিষয়ে প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের তদন্ত প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

অর্থপাচারে জড়িত ৭০ ভিআইপি শনাক্ত করল দুদক

স্টাফ রিপোর্টার:

বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করে দুবাইয়ে ‘গোল্ডেন ভিসা’ সুবিধার মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন ৪৫৯ জন বাংলাদেশি নাগরিক। আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ডিফেন্স স্টাডিজ (C4ADS)’ এবং ‘ইইউ ট্যাক্স অবজারভেটরি’-র তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সাল পর্যন্ত তারা দুবাইয়ে ৯৭২টি প্রপার্টি কিনেছেন, যার আনুমানিক মূল্য ৩১ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার।

চাঞ্চল্যকর এই তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধানে নেমে এরইমধ্যে ৭০ জন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে চিহ্নিত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নামও রয়েছে এ তালিকায়।

ইতোমধ্যে তাদের কর শনাক্তকরণ নম্বরসহ সংশ্লিষ্ট নথিপত্র চেয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে চিঠি পাঠিয়েছে দুদক। চিঠিতে এনবিআর চেয়ারম্যানকে তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের ই-টিআইএন, আয়কর রিটার্নসহ সব প্রাসঙ্গিক তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে।

সম্প্রতি দুদকের উপপরিচালক ও প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা রাম প্রসাদ মন্ডল স্বাক্ষরিত চিঠির সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, দুদকের অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় অনুসন্ধান কর্মকর্তা তার প্রয়োজনে যেকোনো নথিপত্র তলব করতে পারেন। সেটা সম্পূর্ণ তার এখতিয়ার। দালিলিক প্রমাণের ভিত্তিতেই পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেবে কমিশন।

চিঠিতে সুইস ব্যাংকসহ বিভিন্ন বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে পাচার করা অর্থের মাধ্যমে দুবাইয়ে সম্পত্তিগুলো কেনা হয়েছে বলে তথ্য যোগ করা হয়েছে। সন্দেহভাজন ৭০ বাংলাদেশির মধ্যে রয়েছেন– আহসানুল করীম, আনজুমান আরা শহীদ, হেফজুল বারী মোহাম্মদ ইকবাল, হুমায়রা সেলিম, জুরান চন্দ্র ভৌমিক, মো. রাব্বী খান, মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা, মোহাম্মদ অলিউর রহমান, এস এ খান ইখতেখারুজ্জামান, সাইফুজ্জামান চৌধুরী, সৈয়দ ফাহিম আহমেদ, সৈয়দ হাসনাইন, সৈয়দ মাহমুদুল হক, সৈয়দ রুহুল হক, গোলাম মোহাম্মদ ভূঁইয়া, হাজী মোস্তফা ভূঁইয়া, মনজ কান্তি পাল, মো. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী, মো. মাহবুবুল হক সরকার, মো. সেলিম রেজা, মোহাম্মদ ইলিয়াস বজলুর রহমান, এস ইউ আহমেদ, শেহতাজ মুন্সী খান, এ কে এম ফজলুর রহমান, আবু ইউসুফ মো. আবদুল্লাহ, চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, গুলজার আলম চৌধুরী, হাসান আশিক তাইমুর ইসলাম, হাসান রেজা মহিদুল ইসলাম, খালেদ মাহমুদ, এম সাজ্জাদ আলম, মোহাম্মদ ইয়াসিন আলী, মোস্তফা আমির ফয়সাল, রিফাত আলী ভূঁইয়া, সালিমুল হক ঈসা/হাকিম মোহাম্মদ ঈসা, সৈয়দ এ কে আনোয়ারুজ্জামান/সৈয়দ কামরুজ্জামান, সৈয়দ সালমান মাসুদ, সৈয়দ সাইমুল হক, আবদুল হাই সরকার, আহমেদ সামীর পাশা, ফাহমিদা শবনম চৈতি, মো. আবুল কালাম, ফাতেমা বেগম কামাল, মোহাম্মদ আল রুমান খান, মায়নুল হক সিদ্দিকী, মুনিয়া আওয়ান, সাদিক হোসেন মো. শাকিল, আবদুল্লাহ মামুন মারুফ, মোহাম্মদ আরমান হোসেন, মোহাম্মদ শওকত হোসেন সিদ্দিকী, মোস্তফা জামাল নাসের, আহমেদ ইমরান চৌধুরী, বিল্লাল হোসেন, এম এ হাশেম, মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন চৌধুরী, নাতাশা নূর মুমু, সৈয়দ মিজান মোহাম্মদ আবু হানিফ সিদ্দিকী, সায়েদা দুররাক সিনদা জারা, আহমেদ ইফজাল চৌধুরী, ফারহানা মোনেম, ফারজানা আনজুম খান, কে এইচ মশিউর রহমান, এম এ সালাম, মো. আলী হোসেন, মোহাম্মদ ইমদাদুল হক ভরসা, মোহাম্মদ ইমরান, মোহাম্মদ রোহেন কবীর, মনজিলা মোর্শেদ, মোহাম্মদ সানাউল্যাহ চৌধুরী, মোহাম্মদ সরফুল ইসলাম, সৈয়দ রফিকুল আলম ও আনিসুজ্জামান চৌধুরী।

এর আগে, ২০২৩ সালের ১৬ এপ্রিল দুবাইয়ে অর্থপাচার এবং এর সঙ্গে জড়িতদের তথ্য-উপাত্ত জানতে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিল দুদক। ওই বছরের ১০ এপ্রিল এ সংক্রান্ত অভিযোগ অনুসন্ধানে তিন সদস্যের একটি টিম গঠন করে দুদক। পরে গত বছরের ১৬ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট থেকে দুবাইয়ে অবস্থানরত ৪৫৯ বাংলাদেশি নাগরিকের সম্পদ কেনার অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করতে দুদকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।

অভিযোগের বিষয়ে দুদকসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রকাশ্যে-গোপনে বিপুল পরিমাণ মূলধন স্থানান্তরিত হচ্ছে দুবাইয়ে। এ অর্থ পুনর্বিনিয়োগে ফুলে ফেঁপে উঠছে দুবাইয়ের আর্থিক, ভূসম্পত্তি ও আবাসনসহ (রিয়েল এস্টেট) বিভিন্ন খাত। ২০২০ সাল পর্যন্ত ৪৫৯ জন বাংলাদেশির মালিকানায় সেখানে মোট ৯৭২টি প্রপার্টি কেনার তথ্য রয়েছে। কাগজে-কলমে যার মূল্য সাড়ে ৩১ কোটি ডলার। তবে প্রকৃতপক্ষে এসব সম্পত্তি কিনতে ক্রেতাদের ব্যয়ের পরিমাণ আরও অনেক বেশি হতে পারে।

সূত্র বলছে, গত দুই বছরে দুবাইয়ে বাংলাদেশিদের প্রপার্টি কেনার প্রবণতা ব্যাপক মাত্রায় বেড়েছে। এসময়ের মধ্যে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি কিনেছেন বাংলাদেশিরা, যার তথ্য তারা দেশে পুরোপুরি গোপন করেছেন। এমনকি বৈশ্বিক নেতিবাচক অর্থনীতির মধ্যেও দেশটির রিয়েল এস্টেট খাতের বিদেশি প্রপার্টি ক্রেতাদের মধ্যে শীর্ষে বাংলাদেশিরা। এদিক থেকে নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড, চীন ও জার্মানির মতো দেশগুলোর বাসিন্দাদেরও পেছনে ফেলেছেন তারা।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম