
ডেস্ক রিপোর্ট:
পরিবারের অমতে বিয়ে করায় পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে এক দম্পতিকে গুলি করে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে জড়িত সন্দেহে ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে স্থানীয় পুলিশ। স্থানীয় উপজাতি কাউন্সিলের আদেশে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষ। ঘটনাটি ‘অনার কিলিং’ বা তথাকথিত পারিবারিক সম্মান রক্ষার নামে হত্যাকাণ্ড হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।এক বিবৃতিতে বেলুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী সরফরাজ বাগটি জানান, ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পরপরই তদন্ত শুরু করে পুলি ভিডিও বিশ্লেষণের মাধ্যমে কিছু অভিযুক্তকে শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হয়েছে। একইসঙ্গে বাকি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, মরুভূমিতে কিছু ব্যক্তি পিকআপ ও এসইউভি গাড়ি নিয়ে জড়ো হয়েছেন। এরপর সেখানে উপস্থিত দম্পতিকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। ঘটনার আগে এক হৃদয়বিদারক মুহূর্তে ওই নারীকে ইসলামি ধর্মগ্রন্থ কুরআনের একটি কপি দেওয়া হয়। পরে তিনি পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক ব্যক্তিকে বলেন, আমার সঙ্গে সাত কদম হাঁটো, তারপর তুমি আমাকে গুলি করতে পারো। পুলিশের বরাতে জানা যায়, ওই নারী দৃঢ়চেতা ছিলেন, কান্না করেননি এবং কারো কাছে প্রাণভিক্ষাও চাননি। বরং তিনি বলেন, ‘তোমার শুধু আমাকে গুলি করার অধিকার আছে, এর চেয়ে বেশি কিছু নয়।’ পরে কাছ থেকে ওই নারীকে দুইবার গুলি করা হয়। এরপর আরও একটি গুলি ছোড়া হলে তিনি মাটিতে পড়ে যান। কিছুক্ষণ পর ওই পুরুষকেও গুলি করে হত্যা করা হয়।
এ ঘটনায় দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় বইছে। পাকিস্তানের মানবাধিকার কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে এখন পর্যন্ত দেশটিতে অন্তত ৪০৫টি ‘অনার কিলিং’-এর ঘটনা ঘটেছে। কমিশন বলছে, এ ধরনের হত্যাকাণ্ড রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হওয়ায় তারা সরকারের তীব্র সমালোচনা করছে। হত্যাকাণ্ডের শিকার ওই দম্পতির নাম পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। গত মাসে পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিম বেলুচিস্তান প্রদেশে স্থানীয় উপজাতি পরিষদের নির্দেশে এই দম্পতিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর তদন্তকারী প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টি জানিয়েছে।
সোমবার এক বিবৃতিতে প্রাদেশিক মুখ্যমন্ত্রী সরফরাজ বুগতি বলেন, ভিডিওতে থাকা স্থান এবং ব্যক্তিদের শনাক্ত করার ঘোষণা দেয়ার কয়েক ঘন্টা পর এগারো সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করা হয়। জড়িত সকলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে বুগতি জানান। এরপর তাদের বিচার করা হবে বলেও নিশ্চিত করেন তিনি।ভিডিওটিতে মরুভূমিতে কয়েকজন লোক এবং কয়েকটি পিকআপ ট্রাক দেখা গেছে। এছাড়া ভিডিওতে আরও দেখা যায়, নারীটিকে মুসলিমদের পবিত্র গ্রন্থ কোরানের একটি কপি দেয়া হয়। তারপর সে একজন পুরুষকে বলে, ‘আমার সাথে সাত কদম হেঁটে এসো, তারপর তুমি আমাকে গুলি করতে পারো। লোকটি তারপর কয়েক কদম তার পিছু পিছু চলে। স্থানীয় একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নারীটি এ সময় কাঁদেননি বা জীবন ভিক্ষা চাননি।
ওই নারী আরও বলেন, ‘তোমাকে কেবল আমাকে গুলি করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। এর বেশি কিছু নয়। আঞ্চলিক ব্রাহ্মণী ভাষায় এ কথাগুলো বলেন তিনি। তবে ‘এর বেশি কিছু নয়’ বলতে তিনি কী বোঝাতে চেয়েছিলেন তা স্পষ্ট ছিল না। এরপর যে লোকটি তাকে অনুসরণ করেছিল, সে তার দিকে পিস্তল তাক করে। তার দিকে পেছন ফিরে নারীটি দাঁড়ান। গুলি চালানোর সময় শাল জড়িয়ে থাকা নারীটি দাঁড়িয়ে ছিলেন। খুব কাছ থেকে দুটি গুলি চালানোর পরেও তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন, তৃতীয় গুলির পরে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
এরপর ধারাবাহিকভাবে গুলিবর্ষণ করা হয়। ফুটেজে দেখা যায়, রক্তাক্ত এক পুরুষ মাটিতে পড়ে আছেন, নারীটির মৃতদেহের কাছে। তারপর ওখানে থাকা পুরুষরা দুটি মৃতদেহ লক্ষ্য করে আবার গুলি ছোড়ে। তবে, রয়টার্স স্বাধীনভাবে ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি। আরও পড়ুন:থাইল্যান্ড রাজকীয় মানহানির মামলায় থাকসিনের ১৫ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে এদিকে, পাকিস্তানের মানবাধিকার কমিশন জানিয়েছে, ২০২৪ সালে কমপক্ষে ৪০৫টি ‘অনার কিলিং’ ( পরিবারের সম্মান রক্ষায় হত্যা) ঘটেছে।