
গাজীপুর প্রতিনিধি:
গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বর্তমান আবাসিক দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. মোঃ মাসুম বিল্লাহ (মিলন)-এর বিরুদ্ধে একের পর এক গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠন, ভুক্তভোগী ও ক্ষতিগ্রস্তরা অভিযোগ করেছেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে সরকারি ঔষধ বিক্রি, নারী কেলেঙ্কারি, সরকারি বাসা ভাড়া দেয়া, ভূয়া মেডিকেল সনদ ব্যবসা, রোগী ও সহকর্মীদের সাথে দুর্ব্যবহারসহ নানা ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন।
সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক হিসেবে যোগদানের পর থেকেই ডা. মাছুম বিল্লাহ নানা অনিয়মে লিপ্ত হন। সরকারি ঔষধ বাইরে পাচার, প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়া, সরকারি আবাসিক কোয়ার্টার ভাড়া দিয়ে অর্থ উপার্জন—এসব কর্মকাণ্ডে স্থানীয় জনমনে ক্ষোভ বাড়তে থাকে এবং এই অনিয়মের পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ জনগণ তাঁকে হাসপাতাল কোয়ার্টার থেকে বের দিয়েছিল। ঐ সমস্ত অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে সরকারি বিধি অনুযায়ী শাস্তি স্বরূপ সিলেট সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্থানান্তর করা হয় এবং সেখান থেকে আরও কয়েক স্থানে পর্যায়ক্রমে শাস্তি স্বরূপ বদলি করা হয়।
সবচেয়ে আলোচিত অভিযোগ হলো ভূয়া মেডিকেল সনদ ব্যবসা। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে এবং ২০২৫ সালেও ডা. মাসুম বিল্লাহ বেশ কিছু ভূয়া মেডিকেল সনদ প্রদান করেন, যা আদালতে প্রমাণিত হয়। গাজীপুর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দায়ের করা মামলার (মামলা নং–২০৬/২৫) ভিত্তিতে আদালত ওইসব সনদ বাতিল ঘোষণা করেন। পরে বিষয়টি তদন্ত করে স্বাস্থ্য বিভাগের উচ্চ মহলেও অবহিত করা হয়।
এমন অনিয়মের প্রতিবাদে স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্তরা সম্প্রতি গাজীপুরে এক সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ডা. মাসুম বিল্লাহ সরকারি পদে থেকে দীর্ঘদিন ধরে অসৎ উপায়ে বিপুল অর্থ উপার্জন করেছেন। সরকারি ঔষধ বিক্রি করে রোগীদের বঞ্চিত করেছেন। এমনকি রোগী ও সহকর্মীদের সাথেও অমানবিক আচরণ করেছেন বলে অভিযোগ তোলা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও অভিযোগ করা হয়, রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে তিনি আইনের ফাঁকফোকর ব্যবহার করছেন। এ কারণে সাধারণ রোগীরা স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা বলেন—
“একজন চিকিৎসকের কাছে মানুষ সুস্থতা ও সেবার আশা করে। অথচ ডা. মাসুম বিল্লাহ নিজের দায়িত্ব ভুলে দুর্নীতি, অনিয়ম আর প্রতারণায় জড়িয়ে পড়েছেন। তার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া না হলে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা আরও বিপর্যস্ত হবে।”
তারা অবিলম্বে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।
ডা. মাসুম বিল্লাহর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলো ইতোমধ্যে এলাকায় তীব্র আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, যথাযথ কর্তৃপক্ষ যদি দ্রুত তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ না করে, তবে স্বাস্থ্যসেবার প্রতি মানুষের আস্থা ভেঙে পড়বে।