শেরপুরে বন্যহাতির তাণ্ডবে তছনছ আমন ধান!

মিজানুর রহমান, শেরপুর জেলা প্রতিনিধিঃ

শেরপুর গারো পাহাড় চষে বেড়াচ্ছে বন্যহাতির পাল! খেয়ে সাবার করছে কৃষকের ক্ষেতের কাঁচা-পাকা আমন ধান। মশাল জ্বালিয়ে রক্ষা করতে পারছেন না কৃষক ক্ষেতের ফসল।

ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ীর ৩ টি উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলে এমন কোন রাত নেই যে, বন্যহাতি তান্ডব না চালাচ্ছে। আজ এই উপজেলা তো কাল অন্য উপজেলায় আমন ধানক্ষেতে তান্ডব চালিয়ে খেয়ে ও পায়ে মুড়িয়ে ধ্বংস করে চলেছে। অপরদিকে বনবিভাগ কেউ হাতির আক্রমণে মরলে ৩ লাখ, বাঁচলে ১ লাখ ও ফসলের ক্ষতি হলে ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে। শেরপুরের গারো পাহাড়ি অঞ্চলে ১৯৯৫ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত ৩০ বছর যাবত চলছে হাতি-মানুষের যুদ্ধ। প্রায় ৫০-৬০ কিলোমিটার এলাকায় বছরের পর বছর চলছে বন্য হাতির তান্ডব। বেঘোরে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। ফি-বছর বন্য হাতি খেয়ে ও পায়ে পিষে সাবাড় করছে কোটি কোটি টাকার বিপুল পরিমাণ জমির ফসল। ধ্বংস করছে বসতবাড়ি। খেয়ে সাবাড় করছে বাড়ির গোলার ধান। বন্যহাতির পাল পাহাড়ি অঞ্চলের হতদরিদ্র মানুষের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করছে। ভেঙে তছনছ করে, মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিচ্ছে খেতের ফসল, বসতবাড়ি।

দীর্ঘ ৩০ বছর চলে আসছে এই অবস্থা। জানা যায়, এতে হাতির পায়ে পৃষ্ঠ হয়ে মারা গেছে ৫৮ জন পাহাড়ি মানুষ! আহত হয়েছে ৫ শতাধিক। পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন শতাধিক মানুষ।

হাতি ও মরেছে ৩২ টি! প্রসঙ্গত. প্রতিবছর ধান পাকার মৌসুমে ধান ও সবজি এবং আম-কাঁঠালের মৌসুমে আম-কাঁঠাল খাওয়ার নেশায় হাতির পাল নেমে আসে লোকালয়ে। চালায় তাণ্ডবলীলা। পাহাড়ী মানুষ ফসল ও বাড়ীঘর রক্ষার্থে হাতি তাড়াতে মরিয়া হয়ে উঠে। শুরু হয় হাতি-মানুষ যুদ্ধ! যুদ্ধে কখনো মানুষ প্রাণ হারায় কখনোবা হাতি! অপর দিকে বন্যহাতির তান্ডব থামাতে ইতোপূর্বে স্থাপন করা হয়েছে সৌরবিদ্যুৎচালিত তারের বেষ্টনী (ফেন্সিং), হাতির জন্য খাদ্যের বাগান তৈরিসহ হাতি ও মানুষের সহাবস্থান নিশ্চিত করতে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়।

পাহাড়ি অঞ্চলে মাঝে-মধ্যে বন বিভাগ জনসচেতনামূলক সভাও করে। কিন্তু বন্যহাতির তান্ডব প্রতিরোধ করা যাচ্ছেনা। শেরপুরের সীমান্তবর্তী বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে গারো পাহাড়ে হাতির আবাসস্থল। কিন্তু তৎকালীন অসাধু বন কর্মকর্তা কর্মচারীদের যোগসাজশে নগত নারায়ণের বিনিময়েই দরিদ্র লোকজন দখলে নিয়েছে এবং বসতবাড়ি গড়ে তুলেছে।

 

তাদের সাথে টাকার বিনিময়ে অলিখিত চুক্তিতে বাড়িঘর নির্মাণ, গাছপালা নিধন ও পাহাড় কেটে বন্ধ করে দিয়েছে বন্যহাতি ও জীব-জন্তু, জানোয়ারের অবাধ বিচরণের ক্ষেত্র। এককালে পাহাড়ের চারপাশ ঘিরে ঝোপ-ঝাড়, ঘন-গহীন বন জঙ্গল সমৃদ্ধ ছিল। তখন শুধু হাতি নয় কোন বন্য জীব-জন্তু, জানোয়ারই লোকালয়ে আসেনি।

এখন পাহাড়ের সমতল ভূমিতে আবাদ করা আমন-বোরো, শাক-সবজি ও ফলমূলের খেতে নিয়মিতই নেমে আসছে হাতির পাল। সবই ধ্বংস করছে। খেয়ে সাবাড় করছে বাড়ির গোলার ধান। এজন্য অনেকেই আবাদ ছেড়ে দেয়ায় পতিত পড়ে রয়েছে বহু রেকর্ডিং আবাদি জমি দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে।

হাতি ঝর্ণা, নদীর পাড় বেয়ে এবং ব্রিজের নিচ দিয়ে পাকা ফসলের মাঠে নেমে আসছে। কখনো বা ভারত থেকে তাড়া দিয়ে এ পাড়ে ঠেলে দেয়া হয় হাতির পাল। আশির দশক থেকে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধনে পাহাড়ের প্রাকৃতিক ভারসাম্যও বিনষ্ট হয়। হারিয়ে যায় বন্যপ্রাণী। থাকে শুধু বন্যহাতির তান্ডব। বন বিভাগ ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ঝিনাইগাতীর তাওয়াকুচা থেকে ছোট গজনী, হালচাটি এলাকা পর্যন্ত স্থাপন করে ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ফেন্সিং। তাওয়াকুচা ও কর্ণঝোরা এলাকার ৫০ হেক্টর জমিতে করা হয় হাতির খাদ্যের বাগান। রাংটিয়া, গোপালপুর বিটে রোপণ করা হয় কাঁটাযুক্ত বেতগাছ গাছ। এতে ও কোন সুফল মেলেনি। সব কিছুই ভেস্তে গেছে।

এদিকে ক’দিন যেতে না যেতেই সোলার ফেন্সিং অকার্যকর হয়ে পড়ে। হাতির জন্য খাদ্যের বাগানও এখন নেই। ফলে হাতি খাদ্যের সন্ধাণে লোকালয়ে ঢ়ুকে চালাচ্ছে তান্ডব। হাতি ধান -কাঁঠালের প্রতি হাতি ব্যাপক দুর্বল। বন্যহাতি এক জায়গায় থাকতে পছন্দ করে না। আজ এখানেতো কালই অন্য খানে ছুটে যায়। এভাবেই চষে বেড়ায় গোটা গারো পাহাড়। প্রবীণ ব্যক্তিত্ব শতবর্ষী ডা. আব্দুল বারী, আলহাজ, সরোয়ারর্দী দুদু মন্ডল বলেন, একটি হাতির প্রতিদিন গড়ে ২০০ কেজি খাবার প্রয়োজন। পাহাড়ের ফলমূল, লতাগুল্ম, কলাগাছ ইত্যাদি হাতির প্রধান খাদ্য। কিন্তু পাহাড়ে এসব খাদ্যের অভাবে খাদ্যের সন্ধানে হাতির পাল লোকালয়ে নেমে আসছে। খেতের ফসল খেয়ে সাবাড় করছে। ভাংছে বাড়িঘর। খাচ্ছে গোলার ধান ও চালাচ্ছে তান্ডব। খেতের ফসল ও বাড়িঘর রক্ষার্থে লোকজন হাতি তাড়াতে গিয়ে বিঘোরে প্রাণ হারাচ্ছে। কিন্তু বন্ধ হচ্ছে না হাতির তান্ডব। রক্ষা পাচ্ছেনা পাহাড়ি হতদরিদ্র জনগোষ্ঠী।

ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ ফরহাদ হোসেন সবুজ বাংলাদেশকে বলেন, পাহাড়ের মানুষ এমনিতেই দরিদ্র। তাদের কষ্টার্জিত ফসল হাতি খেয়ে সাবাড় করায় কৃষকরা কষ্টে আছে।

ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আশরাফুল আলম রাসেল  বলেন, সরকার ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী গারো পাহাড়ে হাতি চলাচলের জন্য অভয়াশ্রম করার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এতে হাতির উপদ্রব কমে যাবে। তবে সতর্ক থাকতে হবে মানুষ ও যাতে না মরে, হাতিও যাতে না মরে সে জন্য।

শেরপুরের মেধাবী ও কৃতি সন্তান মো: রিফাত আহমেদ এখন বিসিএস ক্যাডার

শেরপুরের মেধাবী ও কৃতি সন্তান মো: রিফাত আহমেদ এখন বিসিএস ক্যাডার

মিজানুর রহমান, শেরপুর জেলা প্রতিনিধি:

গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার কাকিলাকুড়া ইউনিয়নের মলামারী গ্রামে জনাব রিফাত আহমেদ ১৯৯০ সনে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছেন। তারা তিন ভাইয়ের মধ্যে রিফাত আহমেদ দ্বিতীয় সন্তান। তাদের পরিবারকে শিক্ষক পরিবার বলা যায়। তারা একই পরিবারের ৫ জন শিক্ষক। পিতা মো. রুহুল আমিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে ২০২৩ সনে অবসর গ্রহণ করেন। তার স্ত্রী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা, বড় ভাই বেসরকারি কলেজের শিক্ষক এবং বড় ভাইয়ের স্ত্রী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। তার ছোট ভাই একটি বেসরকারি চাকরিরত।

বর্তমানে জনাব রিফাত আহমেদ সহকারী অধ্যাপক, (রসায়ন) হিসেবে শ্রীবরদী সরকারি কলেজে কর্মরত রয়েছেন। তিনি ৩৩ তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ২০১৪ সনের ৭ আগষ্ট অত্র কলেজে যোগদান করেন।

শৈশবের সোনালী দিনগুলো কেটেছে তার গ্রামেই। মাঝে মাঝেই নানার বাড়ি পলাশতলায়ও কেটেছে অনেকটা সময়। ছোট থেকেই সে খুব দুরন্ত এবং জেদী ছিল। তার মা সন্তানদেরকে যথা সম্ভব খেয়াল রাখতেন, যত্ন নিতেন এবং পরিপাটি রাখতেন।

আর তার বাবা সকালে প্রায় ১৪ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে চাকরিতে যেতেন এবং ফিরতেন একেবারে বিকেলে। এত পরিশ্রমের পরেও বিকেলে এসে পরদিন সকাল পর্যন্ত সন্তানদের পড়াশোনার যত্ন নিতেন, নিজেই পড়াতেন এবং খুব সুন্দর করে বাবা বলে ডেকে কোলে তুলে নিতেন। এভাবে আদর করে করে সন্তানদের তিনি প্রকৃত শিক্ষা দিতে চেয়েছেন যার প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী।

একবার তো এক মিস্ত্রি রিফাত আহমেদের ছোট বেলার জেদী আচরণ দেখে বলেছিল যে, বাবুল (রিফাতের বাবার ডাক নাম) দেখো এ ছেলে তোমার জরিমাণা লাগাবে। তার বাবা এ বিষয়টিকে সেভাবে না ভেবে ইতিবাচক ভেবেছিলেন। উনি ছেলের জেদটাকে মেধা হিসেবে ভেবে এটাকে নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন এবং সফলও হয়েছিলেন।

জনাব রিফাত আহমেদের বড় ভাইয়ের সাথে বয়সের পার্থক্য প্রায় পাঁচ বছর এবং ছোট ভাইয়ের সাথে প্রায় দশ বছর। তাদের ভাইয়ে ভাইয়ে কখনো মারামারি বা ঝগড়া গ্রামের কারোর চোখে পড়ে নি। গ্রামে একত্রিত হলে এখনো বড় ভাই-ছোট ভাইসহ একসাথে গ্রামে হাঁটেন যা দেখে প্রতিবেশিরা বলেন যে তোদেরকে দেখে ভাই নয়, বন্ধুর মতো লাগে।

ছোট বেলা থেকেই তার পড়া শেখার প্রতি প্রচন্ড আগ্রহ ছিল। বিদ্যালয় থেকে ফিরে না খেয়েই খুব দ্রুত পড়া কভার করে তড়িঘড়ি করে খেয়ে দৌড় দিতেন খেলতে যাবার জন্য। খেলা বলতে ছিল আঞ্চলিক ভাষায় ছি-ছাত্তা, গোলাপ পাড়ি, পাতা কুড়ানো, রেডি-রেডি (দাড়িয়াবান্ধা), জাম্বুরাকে ফুটবল বানিয়ে খেলা, গাছে উঠে বন্ধুরা মিলে বসে থাকা বা শুয়ে থাকা ইত্যাদি। ঠিক সন্ধ্যা পর্যন্ত খেলা শেষে বাড়ি ফিরে হারিকেন পরিষ্কার করে হাত-মুখ ধুয়ে এসে হারিকেনের আলোয় পড়তে বসতেন। রাত ৯ টার মধ্যে তার বাবা সন্তানদেরকে ঘুমানোর নির্দেশ দিতেন। যেহেতু শৈশবটা কেটেছে খেলাধুলার পাগলামো নিয়ে তাই মাঝে মাঝেই রাতকে তার অনেক বড় মনে হতো! ঘুম ভেঙে যেতো ভোর ৩টা-৪টার দিকে! কখন আসবে সকাল, কখন ফুটবে দিনের আলো যেন আবারো বিদ্যালয়ে যাওয়া যায়, খেলাধুলা শুরু করা যায়। এভাবেই কেটেছে তার সুন্দর শৈশব।তার গ্রামে কাকিলাকুড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ার সময় প্রায় সময়ই তিনি পুরো বিদ্যালয়ে প্রথম হতেন। ২০০৫ সালে এস এস সি পরীক্ষায় অংশ নেন এবং সে বছর তিনি একাই পুরো থানায় জিপিএ ৫ পেয়েছিলেন।

এরপর ভর্তির সুযোগ পান ঢাকার তেজগাঁওয়ে বি এ এফ শাহীন কলেজে। ক্লাস করাও শুরু করেছিলেন সেখানে। কিন্তু কয়েকদিন যেতে না যেতেই কেন যেন তিনি শহরের জীবনের প্রতি অনাগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন। তার মনের অবস্থাটা শেয়ার করলে তার বাবা তাকে বরাবরের মতোই নিজের সিদ্ধান্ত নিজেকে নিতে বলেন। অর্থাৎ তার বাবা কখনো তার সন্তানদের কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত জোর করে চাপিয়ে দিতেন না বরং পাশে থাকতেন সব সময়। তার ফুফাতো ভাই তখন গণিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তরে ছিলেন। তিনি কিছুদিন তাকে তার ফজলুল হক হলে নিয়ে রাখলেন। বন্ধুদেরকে দিয়ে বুঝালেন মন ভাল করে দেয়ার জন্য। কিন্তু কিছুতেই তার মন টিকল না। ফলে সে তার ভাইয়ের সহযোগিতায় ভর্তি বাতিল করে চলে আসেন গ্রামে এবং নিজ উপজেলার কলেজ যেটাতে বর্তমানে তিনি কর্মরত সেখানে ভর্তি হতে গিয়ে জানতে পারেন যে সে সময় মাত্র একজন শিক্ষার্থী বিজ্ঞান বিভাগে ছিল। কেন যেন তার এবং তার পিতার মনে হলো, এখানে যেহেতু শিক্ষার্থী নেই বললেই চলে ফলে ক্লাস না হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকতে পারে। তাই পাশের থানা বকশীগঞ্জে সরকারি কলেজে ভর্তি হলেন। সেখানে বিজ্ঞানে ২৭ জন শিক্ষার্থী ছিল।

বকশীগঞ্জ সরকারি কিয়ামত উল্লাহ কলেজে সে সময় সম্প্রতি সম্পন্ন হওয়া বিসিএস থেকে এক ঝাঁক তরুণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেছিলেন। তাদের যত্ন মাখা ক্লাস, প্রতি মুহূর্তের আন্তরিক পরিবেশ, সহজ সরল জীবন যাপন এবং সবকিছু জনাব রিফাত আহমেদকে মুগ্ধ করেছিল। মনে মনে তিনি ভেবেছিলেন ইশ যদি স্যারদের মতো হওয়া যেতো! মহান আল্লাহর অশেষ কৃপায় তিনি জীবনে প্রথম চান্সেই তা হতে পেরেছেন।

এইচ এস সি পাশ করে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়নে স্নাতকে ভর্তি হন। সেখানে তিনি সাফল্যের সাথে পড়াশোনা সম্পন্ন করেন। তিনি স্নাতকোত্তরে গবেষণার সুযোগ পান এবং তার গবেষণা আমেরিকান কেমিকেল সোসাইটি কর্তৃক জার্নালে প্রকাশিত হয় যা গুগলে ‘Rifat Ahmed Research’ লিখে সার্চ দিলেই ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ গেইট থেকে পাওয়া যায়।

চতুর্থ বর্ষ স্নাতক ফাইনাল পরীক্ষার তাত্ত্বিক পরীক্ষা চলাকালীন ৩৩ তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয় যেটাতে তিনি এপেয়ার্ড সার্টিফিকেট দিয়ে আবেদন করার সুযোগ পান। জীবনের প্রথম বিসিএসেই স্বপ্নের মতো করে তিনি মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে স্বপ্নের সে শিক্ষা ক্যাডার প্রাপ্ত হন এবং চূড়ান্তভাবে সুপারিশকৃত হয়ে স্নাতকোত্তর শেষ করার আগেই নিজ উপজেলার শ্রীবরদী সরকারি কলেজে প্রভাষক, রসায়ন হিসেবে যোগদান করেন।

অদ্যাবধি তিনি এ কলেজেই কর্মরত রয়েছেন। ইতোমধ্যে একটি পদোন্নতি পেয়ে বর্তমানে তিনি সহকারী অধ্যাপক হয়েছেন।

বিসিএস সংক্রান্ত মেডিকেল টেস্ট ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে সম্পন্ন করার সময় সেখানকার স্টাফ তার জন্ম তারিখ ও বয়স দেখে বলেছিলেন যে তাদের প্রাপ্ত তথ্য মতে তিনিই সর্ব কনিষ্ঠ বিসিএস ক্যাডার। ৩৩ তম বিসিএসে তার যোগদানের পর ৪৩ তম বিসিএস পর্যন্ত আরো ১০ টি বিসিএসে অংশ নেয়ার সুযোগ থাকলেও তিনি তা না করে তিনি তার স্বপ্নের শিক্ষা ক্যাডারেই স্থির হয়েছিলেন শুরু থেকেই।

নিজ উপজেলায় এতদিন চাকরির বিষয়ে বলতে গিয়ে তিনি আবেগাপ্লুত হন। তিনি অকপটে স্বীকার করেন যে এখানকার ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ এতটা বিনয়ী, তাদের অভিভাবক, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, খেটে খাওয়া মানুষগুলো, অটোচালক, রিক্সাচালক সবাই তাকে এত এত ভালোবাসা দিয়ে যাচ্ছেন এতটা সম্মান দিয়ে যাচ্ছেন যে তিনি আজীবনের জন্য তাদের কাছে ঋণী হয়েছেন। তিনি তার নিবেদন দ্বারা এ ঋণের বোঝা কিছুটা হলেও কমাতে বদ্ধপরিকর। তিনি বড় কলেজে চাকরির অনেক সুযোগ ও আহবান আসা সত্ত্বেও নিঃসংকোচে তা নাকচ করে দেন এবং এলাকাতেই সেবা দেয়ার দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করেন।

তিনি দীর্ঘদিন থেকে কলেজের শিক্ষক-কর্মকর্তাবৃন্দের ভালোবাসায় শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়ে আসছেন এবং শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের সার্বিক বিষয়ে কাজ করতে নিজেকে অব্যাহতভাবে নিবেদিত রেখেছেন। কলেজের সকল সেক্টরের উন্নয়নে সর্বোপরি শিক্ষার উন্নয়নে তিনি আন্তরিকভাবে কাজ করে চলেছেন।

তিনি চাকরির পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নিবিড় পরিচর্যার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। মোবাইলের নেতিবাচক দিক তুলে ধরে তাদের অনেককে মোবাইল আসক্তি থেকে দূরে রেখে পড়ায় ফিরিয়ে আনতে প্রতিনিয়ত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করছেন। তিনি সরাসরি এবং অনলাইন বিভিন্ন গ্রুপের মাধ্যমেও শিক্ষার্থীদের মনিটরিং এর আওতায় রেখেছেন তাদের পড়াশোনা ও ধর্মীয় কাজের খোঁজ-খবর রাখছেন।

তিনি চাকরিতে সফলতা আনয়নে শিক্ষার্থীদের ‘Bcs preparation’ নামে একটি গ্রুপ খুলে বিভিন্ন পাবলিক, প্রাইভেট, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মনিটরিং করেন এবং সেখানে চাকরি সংক্রান্ত পড়াশোনা ও পরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

তার ইচ্ছা পুরোটা জীবন জন কল্যাণে ব্যয় করা। নিজের পরিবারের সবাইকে নিয়ে ন্যায় ও সত্যের পথে অবিচল থাকা, স্ত্রী ও সন্তানদেরকে নিয়ে পরিপূর্ণ ধর্মীয় আদর্শে চলে নিজেদের জীবনকে নেকভাবে গড়ে তুলা। পিতা-মাতার সেবা শেষ পর্যন্ত করে যেতে পারা। পরিবারের সকল সদস্য মিলে একসাথে একান্নবর্তী পরিবার হয়েই বাকি জীবনটাও কাটিয়ে দেয়া। তিনি সকলের নিকট আন্তরিক দোয়া প্রার্থী।

স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, জনাব রিফাত আহমেদ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাথে যুক্ত থেকে অসহায় পরিবারের মাঝে সাহায্য ও সহযোগিতা করেন।

৭ অক্টোবর ২০২৪ সালের ভয়াবহ বন্যায় ও সংকটকালে তার সাধ্যমতো ও কলেজের অর্থায়নে শিক্ষকদের নিয়ে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ান।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম