ভয়ঙ্কর সাতক্ষীরা’য় আবারও সাংবাদিক নির্যাতন, আবারও বর্বরতা?

সাঈদুর রহমান রিমনঃ

দেশে সাংবাদিক নির্যাতনের ‘ভয়ঙ্কর স্থান’ খ্যাত সাতক্ষীরায় রঘুনাথ খা নামের এক সাংবাদিকের উপর ভয়ঙ্কর নীপিড়ন, নির্যাতন চালানোর অভিযোগ উঠেছে। রঘুনাথ বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল দীপ্ত টিভি এবং বাংলা ৭১ পত্রিকার সাতক্ষীরা প্রতিনিধি। তাকে আটকের পর প্রথম জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এবং পরে দেবহাটা থানায় নিয়ে ইলেকট্রিক শক দেয়াসহ নানা বর্বরতা চালানো হয়। আদালতে আনা সাংবাদিক রঘুনাথের উদ্বৃতি দিয়ে তার স্ত্রী সুপ্রিয়া রানী জানিয়েছেন, রঘুনাথের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালিয়েছে পুলিশ। তার কানে ইলেকট্রিক শক দেয়া হয়েছে, ঘাড়ে আঘাত করা হয়েছে। হাতের আঙুল ভেঙে দেয়া হয়েছে। হাতের তালু, পায়ের তালু মেরে ফাটিয়ে দেয়া হয়েছে। নির্যাতন বর্বরতায় গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় থানা হাজতের মেঝেতে ফেলে রাখা হলেও তার চিকিৎসার ব্যবস্থা পর্যন্ত করা হয়নি।
কিন্তু সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁ-র বিরুদ্ধে পুলিশ পাল্টা অভিযোগ তুলে বলেছে, তিনি সাতক্ষীরার ভয়ঙ্কর সাংবাদিক। দেবহাটা থানার ওসি শেখ ওবায়দুল্লাহ জানান, ‘সাপমারা খাল ব্রিজ এলাকায় নাশকতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সোমবার সকালে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটালে পুলিশ রঘুনাথ খাঁ-সহ তার অপর তিন সহযোগীকে আটক করে।’ একই ঘটনায় স্থানীয় এক ব্যক্তিও তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করেছেন বলে জানিয়েছেন ওসি। যদিও সোমবার সকালে সাতক্ষীরা শহরের ডে নাইট কলেজের সামনে থেকে সাদা পোশাকধারীরা তাকে মোটর সাইকেল থেকে নামিয়ে জোরপূর্বক অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। কিন্তু সন্ধ্যায় তাকে সাপমারা থেকে আটক দেখানো হয়।
সাংবাদিক রঘুনাথ খাকে আটক করে প্রথমত নিরুদ্দেশ রাখা এবং পরবর্তীতে বর্বর নির্যাতন চালানোসহ নানাকান্ডে পুলিশ রীতিমত ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে রেখেছে। যে কারণে তার সহায়তায় কোনো সাংবাদিকও এগিয়ে যাওয়ার সাহস পাচ্ছেন না। এমনকি আদালতে জামিন আবেদন জানাতে কোনো আইনজীবী পাওয়া নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সাংবাদিক স্ত্রী সুপ্রিয়া রাণী।
জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশসহ সরকারের বিভিন্ন সেক্টরের অতিউৎসাহী সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা সাংবাদিকদের সঙ্গে সংঘাতপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার পাঁয়তারায় লিপ্ত থাকছেন। এমন অনেক অনেক বিচ্ছিন্ন ঘটনা একত্রিত করলেই ‘পরিকল্পিত সাংবাদিক নিধন’ হিসেবে ছড়িয়ে বেড়াবে কেউ কেউ। জের হিসেবে কর্মকর্তাদের কিছু যায় আসে না, সব দায় আওয়ামীলীগ সরকারের উপর চাপাতেই ব্যস্ত তারা।

সাংবাদিক রঘু টার্গেট হলেন যে কারণে۔۔۔

সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার খলিশাখালী খালের বিপুল পরিমান জায়গা জমি হটাৎ করেই ক তফসিল ভুক্ত খাস খতিয়ান হিসেবে ঘোষিত হয়! এরপর থেকেই পুলিশের সহায়তায় ভূমিহীনদের হটিয়ে সে খাস জমি জোতদারদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছিলো দফায় দফায়! শুধু পুলিশ নয়, স্থানীয় রাজনীতিবিদ, জেলা প্রশাসন, দাপুটে সন্ত্রাসী বাহিনী থেকে শুরু করে এলাকার জনপ্রতিনিধিরা পর্যন্ত কাজ করতো জোতদারদের পক্ষে, ভূমিহীদের বিরুদ্ধে!
এমনকি স্থানীয় সাংবাদিকগণও জোতদারদের অনুকূলে থাকা কাগজপত্রের আলোকেই প্রতিবেদন ছাপাতেন! সেখানেই ব্যতিক্রম ছিলেন সাংবাদিক রঘুনাথ খা! তিনিই শুধু ভূমিহীনদের পক্ষে কলম ধরতেন, লিখতেন জোতদার ও পুলিশের বিরুদ্ধে! দেবহাটা থানা থেকে শুরু করে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ কর্তার জন্য তা চরম অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়! আটক হওয়ার দিনও রঘুনাথ দেবহাটার খলিশাখালী এলাকায় যান সরেজমিন তথ্য উপাত্ত ও ফুটেজ সংগ্রহের কাজে! তার এ অনুসন্ধান থামাতেই পুলিশ ও জোতদার গোপন বৈঠকে বসে এবং এক জোতদারকে বাদী বানিয়ে রঘুনাথের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে চাঁদাবাজির! বাকি কাজও চলতে থাকে নীলনকশা ও পরিকল্পনা মাফিকই!
সাংবাদিক রঘুনাথকে ‘সাইজ’ করতে সাতক্ষীরার পুলিশ এমনই ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি করে চলছে যে, সাংবাদিকরা পর্যন্ত টু শব্দটি করতেও সাহস পাচ্ছেন না! আর কথিত কয়েকজন সাংবাদিক তো সরাসরি পুলিশি মুখপত্র’র ন্যাক্কারজনক ভূমিকায় নেমেছে! ছি: সৌহার্দপূর্ণ সাংবাদিকতা, ছি: জোতদারদের গোলামী করা!

ভেজাল কোম্পানীর ভেজাল বাণিজ্যে স্বাস্থ্যসেবায় হুমকি 

মোহাম্মদ মাসুদ:
সাভারের হেমায়েতপুরের রয়েল ল্যাবরেটরিজ আয়ু। প্রতিষ্ঠানটির আমলকি-প্লাস, এ্যাপেল-প্লাস ও পুদিনা-প্লাস বাণিজ্য এখন ওপেন সিক্রেট। তাছাড়া মোটাতাজাকরণ ক্ষতিকারক উপাদানে তৈরি রয়েল-গোল্ড, ফেরাপ্লেক্স, ইরেকটন, কার্ডিওলেক্স, টাসফিট, হাইরেক্স, ডাইজাভিট, রয়েলভিট, রুচিরাজ, কারমোজিন, লিভারেক্স, মিকোভাস, গ্যাসরিলিফ, সিভিটন, ওরেঞ্জ-ই, সেপোভাক্স ও বেবিসিড স্বাস্থ্যসেবায় চরম হুমকি হলেও সাভারের ড্রাগ সুপারের নজরদারি শুন্যের কোটায়। ফলে হার্টব্লক, মেদভুড়ি ও ডায়াবেটিস নিরাময়ের শ্লোগান দিয়ে বিক্রি করছে ডিউরেটন নামের সিরাপ। বিগত দিনে আমলকি-প্লাস তৈরি ও বাজারজাত নিষিদ্ধ হওয়ার পরই ডিউরেটন সিরাপ বিক্রি শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটি আমলকি-প্লাস বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার সময় ড্রাগ প্রশাসন কর্তৃক পরিক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয় যে আমলকি-প্লাস সিরাপে আমলকি নেই। শুধুমাত্র ক্ষতিকারক কেমিক্যাল আর ফ্লেভার দিয়ে তৈরি। বিষয়টি নিয়ে পত্রিকায় শিরোনাম হওয়ার পরই ড্রাগ প্রশাসন ১৯/১১/২০১৫ইং তারিখ ভেজাল সিরাপটির উৎপাদন ও বাজারজাত নিষিদ্ধ করে। প্রাপ্ত ইনভয়েসের তথ্য মতে, ড্রাগ নীতিমালা পরিপন্থী সেই নিষিদ্ধ হওয়া আমলকি-প্লাস এখন মিটফোর্ড, সাভারের তমা ফার্মেসী, গাজীপুর, টাংগাইলের মধুপুর ফার্মেসী ও নোয়াখালীসহ সারাদেশে বিক্রি করছে। বিতর্কিত কোম্পানীর মালিক নিজেকে সাংবাদিক ও আওয়ামী কর্মী পরিচয়ে ড্রাগ প্রশাসনকে জিম্মি করে জেলা ড্রাগ সুপারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে অবাধে আমলকি-প্লাস বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদিত কারমোজিন নিয়ে দেশ ল্যাবঃ আয়ু এবং রুচিরাজ নিয়ে দিলেটের ইস্টার্ন ল্যাবঃ ইউনানীর সাথে দ্বন্ধ হয়। বর্তমানে আমলকি-প্লাস নিয়ে গোপালগঞ্জের একটিভ ল্যাবঃ ইউনানীর সাথে দ্বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ প্রতিষ্ঠানটির অনুকুলে আমলকি-প্লাস অনুমোদিত প্রডাক্ট। তথ্য মতে, সুচতুর ব্যবসায়ী তার গাড়িতে সাংবাদিক স্টিকার লাগিয়ে দাপটের সাথে ড্রাগ প্রশাসনকে বিভ্রান্ত করে সব ক্ষেত্রেই পাড় পেয়ে যাচ্ছে। সেহেতু মানুষের জীবন নিয়ে কারসাজী ও প্রতারণার অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির আমলকি-প্লাস ও ডিউরেটন পরিক্ষা করলেই নীরব ঘাতক বাণিজ্যের মুখোশ উন্মোচিত হবে।
এদিকে সাভারের একরাম ল্যাবঃ আয়ুর বিরুদ্ধে অনলাইনে বিজ্ঞাপন প্রচার করে প্রডাক্ট বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। এক সময় আমলকি-প্লাস নিয়ে বিতর্কিত হলেও এখন এমিটন-প্লাস নিয়ে বিতর্ক চলছে। রাস্তাঘাটের ফুটপাতে হকার সমিতির নেতৃত্বে অবাধে বিক্রি হচ্ছে গরু মোটাতাজাকরণ উপাদানে তৈরি এমিটন-প্লাস।কোম্পানীর মালিক নিজ নামের আইডি দিয়ে অনলাইনে বিজ্ঞাপন প্রচার করে বিক্রি করছে একরোফেন, একরোপ্লেক্স, হেলফিট, একরোভিট, কামিনী গোল্ড, একরোভাস, সাসটাজিম, এলভাসিম, ভেজিনেক্স, এমোনিড, এ-পাইলস, গনোনিল, লিকোফেন, মিমোটন, ডাইয়াবি কেয়ার, আরটি-ট্যাব, স্লিম-এ, রিউমিন, এরিটনা, ভিগো-৩০, এ্যামি-২০, এমআর-২৮, এ- কার্ড, এ-ডাইজেষ্ট, পেডিকেয়ার, স্কীনিটোন ও সুপ্রাডাইন নামের ঔষধ। তিনি শিল্প সমিতির প্রভাবশালী নেতার পরিচয়ে ড্রাগ প্রশাসনে ক্ষমতা প্রদর্শন করে নিজ স্বার্থ উদ্ধারে বরাবরই তৎপর । অথচ তার কোম্পানীর বিরুদ্ধে অনুমোদনহীন ভেজাল প্রডাক্ট বিক্রির অভিযোগ উঠলেই সংশ্লিষ্ট থানায় নকল হওয়ার অভিযোগ করে রক্ষা পাবার সিস্টেমে একজন অন্যতম কৌশলী। জনস্বার্থে কোম্পানীর শুধুমাত্র এমিটন-প্লাস পরিক্ষা করলেই নীরব ঘাতক বাণিজ্য বন্ধ হবে। বিপরীতে সাধারণ মানুষ লিভার ও কিডনি ড্যামেজের কবল থেকে রক্ষা পাবে।
উল্লেখ্য, বরিশালের জি.এস ল্যাবরেটরিজ আয়ুর নবায়ন এবং মালিকানা পরিবর্তন ছাড়াই লেবেল কার্টন পরিবর্তন করে প্রডাক্ট বিক্রির প্রকাশিত অভিযোগ ধামাচাপা দিতে কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহজাহান দৌড়ঝাঁপ শুরু করে ড্রাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করছেন। যদি অর্থের বিনিময়ে অভিযোগ থেকে পাড় পেয়ে যায় তাহলে ধরে নিতে হবে সর্ষে ক্ষেতে ভূতের রামরাজত্ব। আর প্রশাসনের ছত্রছায়ায় অসাধু ব্যবসায়ীরা নকল-ভেজাল ঔষধ ব্যবসায় উৎসাহী হচ্ছে। এদিকে মুন্সিগঞ্জের এমপেক্স ল্যাবরেটরিজ ইউনানীর নব্য মালিক মিটফোর্ডের বিতর্কিত ব্যবসায়ী ফয়সাল ও তার পার্টনার দ্বীন আমিন ড্রাগ প্রশাসনের ফাইলিং কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে অনলাইনে সাসটোক্যাপ বিক্রির অভিযোগ থেকে রক্ষা পাবার কৌশল নিয়েছে। প্রশ্ন হলো অনলাইনে সাসটোক্যাপ বিক্রির বিজ্ঞাপন প্রচারের প্রাপ্ত স্কীন শর্ট তারা কিভাবে অস্বীকার করবে? এদের মতোই মানুষের সাথে প্রতারণা করে রাতারাতি কোটিপতি হচ্ছে ঢাকার এপসিস ইউনানী ল্যাবঃ, আশুলিয়ার চিত্রা ল্যাবঃ ইউনানী, সাভারের ফেমাস ল্যাবঃ ইউনানী, ঢাকা অর্গানিক ল্যাবঃ ইউনানী ও প্যাট্রন ল্যাবঃ ইউনানী, গাজীপুরের শান ল্যাবঃ আয়ু ও জেবিএল ল্যাবঃ ইউনানী, কেরানীগঞ্জের এডরন ফার্মাঃ ইউনানী, নারায়ণগঞ্জের রেনিক্স ল্যাবঃ ইউনানী ও সেফটি হেলথ ল্যাবঃ ইউনানী, বগুড়ার প্রিভেন্টিজ ল্যাবঃ ইউনানী, পাবনার সাফিয়া ল্যাবঃ ইউনানী, এ্যাপেক্স ল্যাবঃ ইউনানী ও ইউনিফিল ল্যাবঃ ইউনানী, নাটোরের গোপালপুরের আল-রাজী ল্যাবঃ ইউনানী, রাজশাহীর এস.এমজি ল্যাবঃ ইউনানী, রংপুরের এস.আর ল্যাবঃ আয়ু ও ইকো ল্যাবঃ ইউনানী, সিলেটের মাইসান ল্যাবঃ ইউনানী, যশোরের বায়োলাইফ ল্যাবঃ ইউনানী, নোয়াখালীর এমসিআই ল্যাবঃ ইউনানী। মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় বিষফোড়া ঔষধ কোম্পানীর বিরুদ্ধে ড্রাগ প্রশাসনের ব্যবস্থা উচিৎ।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম