তারিখ লোড হচ্ছে...

রেলে অনিয়ম-দুর্নীতি সীমাহীন

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি॥
সর্ববৃহৎ রাষ্ট্রীয় পরিবহন খাত রেলওয়ে সূচনালগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত লাভের মুখ দেখেনি। প্রতি বছর হাজার কোটি টাকার উপর দিতে হচ্ছে গচ্ছা। কোনোভাবেই থামছে না রেলের দুর্নীতি। নিয়োগ, ইঞ্জিন, যন্ত্রাংশ, পর্দা, চেয়ার-টেবিল থেকে শুরু করে সেনিটাইজারসহ ওয়াশিং সামগ্রী কেনাকাটা, এমনকি চলমান প্রকল্পগুলোর কাজেও ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি চলছে।

ধারাবাহিক এ লোকসানের জন্য রেলের অনিয়ম-দুর্নীতিকে দায়ী করে খোদ রেলের কর্মকর্তারা বলছেন, দুর্নীতি বন্ধ করা গেলে রেল পরিচালনার ব্যয় ও আয়ের মধ্যে ব্যবধান অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব হতো। পাশাপাশি বিদ্যমান সম্পদগুলো সুষ্ঠু ব্যবহার করে রেলকে সহজেই লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা যেত।

বর্তমানে টিকেট বিক্রিতে হয়রানি, অনিয়ম চরমে উঠেছে। টিকেট বিক্রিতে ‘সহজ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান বারবার চুক্তিভঙ্গ করেও বহাল তবিয়তে আছে। প্রতিষ্ঠানটির খুঁটির জোর নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রেলপথ মন্ত্রণালয় ও রেলপথ বিভাগের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। রেলওয়ের একাধিক বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, টেন্ডারের নিয়ম ভেঙে ‘সহজ’কে ট্রেনের ই-টিকেটের দায়িত্ব দেয়া হয়।

রেলওয়ের বিরুদ্ধে সবচেয়ে আলোচিত ও ব্যাপক দুর্নীতি হয় নিয়োগের ক্ষেত্রে। এক একটি পদের বিপরীতে ৭-১০ লাখ টাকা ঘুষ নেয়ার তথ্য তদন্ত রিপোর্টে উঠে এসেছে, যা নিয়ে রেলওয়ের বিরুদ্ধে ২৮টি মামলা করেছে নিয়োগ বঞ্চিতরা। তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে- লিখিত পরীক্ষায় ১৩ পাওয়া প্রার্থীকে খাতায় নম্বর কেটে ৭৩ নম্বর লিখে দেয়া হয়, আবার ৯ পাওয়া প্রার্থীকে অর্থের বিনিময়ে ৮৯ নম্বর খাতায় লিখে দিয়ে চাকরিতে নিয়োগ করা হয়। এসবের বিরুদ্ধে চাকরি না পাওয়া প্রার্থীরা হাইকোর্টের শরণাপন্ন হন। সে কারণে ওই পদে নিয়োগ বন্ধ হয়ে আছে দীর্ঘদিন। এর ফলে লোকবল সমস্যায় জর্জরিত বাংলাদেশ রেলওয়ে। এছাড়া রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে একজন কম্পিউটার ডাটা অপারেটর ভুয়া নিয়োগ দিয়ে মাসের পর মাস বেতন ভাতা বাবদ ৭০-৭৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন, যা সবার জানা। বর্তমানে তিনি হাজতবাস করছেন। কোন বিষয় মনিটরিংয়ের কেউ নেই।

সম্প্রতি ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়ম ধরা পড়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের বহরে যুক্ত হওয়া ১০টি মিটারগেজ লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) কেনার বিষয়ে। এ অভিযোগ যাচাইয়ে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ৩০ জুন রেল ভবনে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক জেসমিন আক্তার ও উপসহকারী পরিচালক মো. কামিয়াব আফতাহি-উন-নবীর সমন্বয়ে গঠিত এনফোর্সমেন্ট টিম এ অভিযান চালায়।

দুদক সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ রেলওয়ের বহরে যুক্ত হওয়া ১০টি মিটার গেজ লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) কেনায় দুর্নীতি-অনিয়ম সংক্রান্ত অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযানকালে টিম সচিব ও মহাপরিচালকসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে। ট্রেনের ইঞ্জিন কেনার জন্য ২০১৫ সালে ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য লোকোমোটিভ রিলিফ ক্রেন ও লোকোমোটিভ সিমুলেটর সংগ্রহ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। এ প্রকল্পের মেয়াদ দুই দফায় বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়।

রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, ইঞ্জিনগুলোতে তিনটি ক্যাপিটাল কম্পোনেন্টের ভিন্নতা আছে, যা চুক্তিবহির্ভূত। চুক্তিতে তিন হাজার হর্স পাওয়ারের ইঞ্জিন দেয়ার কথা থাকলেও ২ হাজার হর্স পায়ারের ইঞ্জিন দেয়া হয়েছে, টিএ-১২ মডেলের অল্টারনেটরের পরিবর্তে টিএ-৯ মডেল যুক্ত করা হয়েছে, এছাড়া ২৯০৯-৯ মডেলের পরিবর্তে ২৯০৯ মডেল দেয়া হয়েছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে দুদক সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ রেলওয়েকে ইঞ্জিনগুলো সরবরাহ করে দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই রোটেম কোম্পানি। দাম ছিল ৩২২ কোটি ৬৮ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। এরই মধ্যে ৯০শতাংশ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। সরকারের একটি সংস্থার প্রতিবেদন সূত্রে ওই অনিয়মের বিষয়টি সামনে আসে।

অভিযোগের তীর রেলওয়ের তখনকার মহাপরিচালক মো. শামছুজ্জামান, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (আরএস) মো. মঞ্জুর-উল-আলম চৌধুরী এবং ঠিকাদার আফসার বিশ্বাসের দিকে আসে। ইঞ্জিনগুলো প্রাক-জাহাজীকরণের দায়িত্ব দেয়া হয় চায়না সার্টিফিকেট এন্ড ইন্সপেকশন কোম্পানিকে (সিসিআইসি)। ২০২০ সালের ২৫ জুলাই ইঞ্জিনগুলো প্রাক-জাহাজীকরণ সমীক্ষা (পিএসআই) সনদ ছাড়াই চট্টগ্রাম বন্দরে পাঠানো হয়। সিসিআইসি ওই বছরের ১২ আগস্ট নিয়ম ভেঙে একই দিনে দুটি পিএসআই সনদ দেয়। ওই বছরের ৩১ আগস্ট ইঞ্জিনগুলো চট্টগ্রাম বন্দরে এলে সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই খালাস করতে প্রকল্প পরিচালককে বাধ্য করা হয়। ইঞ্জিনগুলোতে নিম্নমানের ক্যাপিটাল কম্পোনেন্ট সংযোগ করার বিষয়টি সিসিআইসি ও হুন্দাই রোটেম গোপন রাখে। আবার কমিশনিং কমিটির প্রতিবেদনে ইঞ্জিনগুলোর বিভিন্ন ত্রæটির বিষয় তুলে ধরা হলেও ‘পারফরম্যান্স সন্তোষজনক’ বলে উল্লেখ করা হয়।

এছাড়া কমলাপুর ওয়ার্কশপে ইঞ্জিন মেরামতের যন্ত্রাংশ কেনা হয়েছে প্রচলিত বাজারমূল্যের চেয়ে ১০ থেকে ২০ গুণ পর্যন্ত বেশি দামে। বাংলাদেশ রেলওয়ের অডিটেই উঠে আসে অনিয়মের এমন চিত্র। সদ্য সমাপ্ত রেলওয়ের অডিট বলছে, ২০২১ সালে কমলাপুর ওয়ার্কশপের ডিজেল বিভাগের কর্ম ব্যবস্থাপক রাশেদুল ইসলাম ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ কিনেছেন ২০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি দামে। অডিটের কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, ট্রেনের জন্য ক্রয়কৃত গ্যাজব্রেক সিলিন্ডারের সর্বোচ্চ বাজারমূল্য ২ হাজার ৮৬০ টাকা, কিন্তু রেলওয়ে সেটির দাম ধরেছে ১৮ হাজার ৫০০ টাকা, গ্যাজ ভ্যাকুয়ামের সর্বোচ্চ বাজারমূল্য ১ হাজার ৮২০ টাকা, কিন্তু রেলওয়ে সেটির দাম দেখিয়েছে ২২ হাজার ৪৯০ টাকা। এ ছাড়া একটি সানবার রিংয়ের সর্বোচ্চ বাজারমূল্য ৫৮৫ টাকা, কিন্তু রেলওয়ে সেটির জন্য খরচ দেখিয়েছে দুই হাজার ৬৮৫ টাকা।

অন্যদিকে, একটি সানবার স্প্রিংয়ের দাম মাত্র ৪৫ টাকা অথচ রেলওয়ে এটি কিনতে খরচ দেখিয়েছে ৯১৮ টাকা। এভাবে ২০২০-২১ অর্থবছরে মাত্র দেড় লাখ টাকা মূল্যের মালামাল কিনতে দাম দেখানো হয়েছে ১২ লাখ টাকা! এ বিষয়ে কেনাকাটার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলামকে জিঞ্জেস করা হলে তিনি বলেন, আপনি এবিষয়ে আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জিঞ্জেস করেন। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত রাশেদুল ইসলাম এখন কর্ম ব্যবস্থাপক (প্রকল্প) হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন রেল ভবনে। ট্রেনের লোকমোটিভের ব্যাটারি সচল রাখতে এবং বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য প্রচুর সালফিউরিক অ্যাসিডের প্রয়োজন হয়। গত দুই বছরে ৮০০ লিটার সালফিউরিক অ্যাসিড কেনার দাবি করেছেন রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী রেজাউল করিম। প্রতি লিটার সালফিউরিক অ্যাসিড কেনা হয়েছে ১৯৯৭ টাকা দরে। বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সালফিউরিক অ্যাসিডের লিটার মাত্র ২০-২৫ টাকা। অর্থাৎ বাজার দরের চেয়ে প্রায় ৮০ গুণ বেশি দামে অ্যাসিড কিনেছে রেলওয়ে!

এদিকে, রেলের অনিয়ম-দুর্নীতির উৎস চিহিৃত করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ২০১৯ সালে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন জমা দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একই সঙ্গে ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধে সুনির্দিষ্ট বেশকিছু সুপারিশও প্রতিবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। কিন্তু এসব শুধু আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। বাস্তবে অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে কোনো পদক্ষেপ না নেয়ার পাশাপাশি আমলে নেয়া হয়নি দুদকের একটি সুপারিশও।

সম্প্রতি রেলে টিকিটের অনিয়মের প্রতিবাদে ৬ দফা দাবি নিয়ে কমলাপুর রেলস্টেশনে অবস্থান করে আলোচনায় আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মহিউদ্দিন রনি। তার এই একক প্রতিবাদে এই খাতের চিরাচরিত দুর্নীতির বিষয়টি আবারো সামনে আসে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষসহ সব মহলে তোলপাড় শুরু হলে বিষয়টি উচ্চ আদালতেরও দৃষ্টিগোচর হয় এবং আদালত তা আমলে নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের বিষয়টি খোঁজ নিতে বলেন।

এ প্রেক্ষিতে গত ২১ জুলাই রেলের তিন কর্মকর্তা হাইকোর্টে হাজির হলে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার এই খাতের অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি নিয়ে কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, রেলে এত অব্যবস্থাপনা থাকবে কেন? কেন টিকেট কালোবাজারি হবে? আপনারা কি রেলকে গ্রাস করতে চাইছেন? সবশেষ হাইকোর্ট রেলের অনিয়ম-দুর্নীতি রোধে পদক্ষেপ জানতে চেয়েছে কর্তৃপক্ষের কাছে। এরই আলোকে রেল কর্তৃপক্ষ ছাদে যাত্রী ওঠা বন্ধ ও টিকিট কালোবাজারি নিয়ন্ত্রণে একটি মনিটরিং সেল গঠন করে।

এর আগে দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে রেলে নিয়োগ, কেনাকাটা, টিকেট বিক্রি ও ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত কাজে দুর্নীতিসহ রেলের ১০টি খাতে অনিয়ম-দুর্নীতির উৎস চিহিৃত করে রেলমন্ত্রীর কাছে একটি প্রতিবেদন জমা দেয় দুদক। ২০১৯ সালের ওই প্রতিবেদনে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে রেলের বিজনেস প্রসেস রি-ইঞ্জিনিয়ারিংসহ সুনির্দিষ্ট ১৫টি সুপারিশও সংযুক্ত করা হয়।

দুদকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, রেলের (পূর্বাঞ্চল) চট্টগ্রাম এবং (পশ্চিমাঞ্চল) রাজশাহীর অধীনে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি হয়ে থাকে। রেলের অধীনে ওয়াগন, কোচ, লোকোমোটিভ ক্রয় ও সংগ্রহ ছাড়াও বিভিন্ন সেকশনের স্টেশন সিগনালিং ব্যবস্থা পুনর্বাসন ও আধুনিকায়নে দুর্নীতি হয় বলে দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ডাবল লাইন, সিঙ্গেল লাইন, ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ কাজে ও রেলওয়ের ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত কাজে দুর্নীতি হয়ে থাকে। বাংলাদেশ রেলওয়ের ডিএস সৈয়দপুর, নীলফামারী, বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল, পাকশী, বাংলাদেশ রেলওয়ে, লালমনিরহাট, পাহাড়তলী ও চট্টগ্রাম কর্তৃক বিজি ও এমজি যাত্রীবাহী ক্যারেজ পুনর্বাসন নিলামে যন্ত্রাংশ বিক্রয় প্রক্রিয়ায় ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়।

রেলের অধীনে ওয়ার্কশপগুলো ও স্লিপার ফ্যাক্টরি কার্যকর না করে আমদানির মাধ্যমে বিভিন্নভাবে অনিয়ম, রেলের টিকিট বিক্রির ক্ষেত্রে কালোবাজারি হয়ে থাকে এবং এ কালোবাজারিতে রেলওয়ের কর্মচারীরা অনিয়ম করে থাকেন। কতিপয় দালাল রেলওয়ের কর্মচারীদের সহযোগিতায় আন্তঃনগর ট্রেনের অধিক সংখ্যক টিকিট ক্রয়ের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। এর ফলে জনগণকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এছাড়া যাত্রীবাহী ট্রেন ইজারা দেয়া ও আন্তঃনগর ট্রেনসহ অন্যান্য ট্রেনে নিম্নমানের খাবার সরবরাহ করে রেলের এক শ্রেণির অসাধু কর্মচারী দুর্নীতি করছে বলেও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন সময় রেলে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পেয়ে বেশ কয়েকবার সরেজমিনে অভিযানও পরিচালনা করে দুদক।

দুদকের প্রতিবেদনে সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে- রেলের বিভিন্ন পদে লোক নিয়োগে বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের (আইবিএ, বুয়েট, বিএমসি) সহায়তা নেয়া, সব ধরনের কেনাকাটা দরপত্রের মাধ্যমে করতে অভিজ্ঞ কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্ব দেয়া, বেদখল হওয়া সম্পত্তি উদ্ধারে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন, দখলী জমি উদ্ধারে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সাঁড়াশি অভিযান চালানো। এছাড়া রেলওয়ের ওয়ার্কশপ সচল করা, কোচ আমদানি নিরুৎসাহিত করে নিজস্ব কারখানায় কোচ নির্মাণ করার সক্ষমতা সৃষ্টি করা, একচেটিয়া ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন (পিপিএ) অনুসরণ করা, বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন লাইন নির্মাণ ও সংস্কার কাজ তদারকি করা, অডিট কার্যক্রম জোরদার করা, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির মাধ্যমে রেলের পুরনো মালামাল বিক্রির ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া রেলের সব কার্যক্রম স্বয়ংক্রিয় (অটোমেশন) পদ্ধতির আওতায় আনা, টিকেট কালোবাজারি রোধে ডিজিটাল পদ্ধতির ব্যবহার, রেল কর্মীদের পদোন্নতি ও বদলির ক্ষেত্রে সততা, দক্ষতা ও নিষ্ঠাকে মানদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা, যাত্রীসেবা বৃদ্ধি এবং নির্দিষ্ট সময়সূচি অনুযায়ী ট্রেন চলাচল নিশ্চিত করারও সুপারিশ করা হয়েছে। সবশেষ রেলে সরবরাহ করা খাবারের মান নিশ্চিত করতে তদারকির ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি যৌক্তিক দামে খাবার বিক্রি করতে বলেছে দুদক।

রেলের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে দুর্নীতির উৎস চিহিৃত করে তা নিয়ন্ত্রণে দুদক অনেকগুলো সুপারিশ করেছে, এ সুপারিশ বাস্তবায়নের বিষয়ে কর্মকর্তারা বলেন, এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়টি আমাদের জানা নেই। অথচ জনপ্রিয় এই পরিবহনের উন্নতির জন্য কর্তাব্যক্তিরা দিনের পর দিন শুধু প্রতিশ্রুতিই দিয়ে এসেছেন। বর্তমান রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে নূরুল ইসলাম সুজনও হুংকার ছেড়ে বলেছিলেন, রেলের দুর্নীতি তিনি শূন্যে নামিয়ে আনবেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির কথা জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, এখানে দুর্নীতি করে কেউ টিকতে পারবে না। তবে দুর্নীতি থামেনি, কাক্সিক্ষত উন্নয়নও হচ্ছে না রেলের।

এ বিষয়ে রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন ও সচিব কে একাধিকবার ফোন দিলেও তারা রিসিভ করেননি। তবে, বেশ কিছুদিন আগে রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন রেলের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে বলেছিলেন, রেলের কয়েকটি ক্রয়সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে অনিয়মের তদন্ত করছে দুদক। ইতিমধ্যে আমাদেরকে তারা একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। সেখানে বেশ কিছু সুপারিশও করেছে। আমরা নিজেরাও এ বিষয়গুলো তদন্ত করছি। ইতোমধ্যে আমরা কিছু শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা রেলে কোনো ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি বরদাস্ত করব না।

আলাদিনের চেরাগ এমপি আলাউদ্দিনের হাতে!

স্টাফ রিপোর্টার:

আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার সার্ভিসে ১৯৮৬ সালে যোগ দেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের করা ঢাকার মতিঝিল থানায় মামলার পর ২০০৮ সালে উপসচিব হিসেবে তিনি প্রশাসন ক্যাডার থেকে পদত্যাগ করে অবসরে যান।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রভাব বিস্তার করে সেই মামলা থেকে তিনি খালাস পান। তবে ২৩ বছরের চাকরি জীবন থেকে সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা বেতন পেলেও বর্তমানে এমপি নাসিম ও তার স্বজনরা হাজার কোটি টাকার মালিক। এ নিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ভেতরে-ভেতরে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে হলফনামায় নাসিম ও তার স্ত্রী ডা. জাহানারা আরজু বর্তমানে ১০৮ কোটি ৩৭ লাখ ৪১ হাজার ৮৪৫ টাকার সম্পদ দেখিয়েছেন। বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৩ কোটি ৫৭ হাজার ২৯৫ টাকা এবং তার স্ত্রীর ৬৯ লাখ ৪৬ হাজার ৬৫০ টাকা।

স্থানীয়দের মতে এমপি ও তার পরিবারের সদস্যদের দেশ-বিদেশে নামে-বেনামে রয়েছে হাজার কোটি টাকার অর্থ-সম্পদ। এ ছাড়াও কানাডায় রয়েছে বাড়ি-গাড়ি। মেয়ে রাকা চৌধুরী এখনও কানাডায় অবস্থান করছেন। এমপি হওয়ার আগেও তিনি পরিবার নিয়ে প্রায়ই কানাডায় থাকতেন।

স্থানীয়দের প্রশ্ন-একজন সাবেক আমলা এত অর্থ-সম্পদ ও ব্যবসার মালিক হন কীভাবে? এসব অর্থ-সম্পদ অবৈধভাবে গড়ে তুলেছেন বলেও অভিযোগ তাদের অনেকের। অন্যদিকে প্রভাবশালী এই এমপির কারণে দলের অনেক প্রবীণ নেতাকর্মীও কোণঠাসা হয়ে আছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ফেনী আওয়ামী লীগেও রয়েছে চরম অসন্তোষ।

তবে অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য জানতে বুধবার নাসিমের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

গত ২৭ জুন অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান ও তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ করেছেন ফেনীর আবদুল হাই নামে এক ব্যক্তি।

সম্প্রতি জমা দেওয়া অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ফেনী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম তার স্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. জাহানারা আরজু নির্বাচনের হলফনামায় ১০৮ কোটি ৩৭ লাখ ৪১ হাজার ৮৪৫ টাকার সম্পদের মালিক হিসেবে স্বীকার করলেও বাস্তবে তারা হাজার কোটি টাকার মালিক। নামে-বেনামে তাদের রয়েছে শত শত বিঘা জমি। ঢাকায় রয়েছে অসংখ্য ফ্লাট ও বিলাসবহুল গাড়ি। একজন সরকারি কর্মকর্তা থেকে বনে গেছেন বিলিয়নিয়ার।

অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, দুর্নীতি দমন কমিশন সন্দেহভাজনদের দুর্নীতির তালিকা প্রকাশের পরে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পদের চাকরি তিনি ছেড়ে দেন। তালিকা প্রকাশের পর সম্পদের হিসাব চেয়ে চিঠি দেয় দুদক। তারপর অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মতিঝিল থানায় মামলা করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার প্রভাব বিস্তার করে সেই মামলা থেকে অব্যাহতি নেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

অভিযোগে আরও বলা হয়, সরকারের বিভিন্ন দফতরে কাজ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ২০ পার্সেন্ট কমিশন নিয়ে থাকেন। এ ছাড়াও ফেনী বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের মানুষের কৃষিজমি জিম্মি করে কাউকে দিয়েছেন স্বল্পমূল্য আবার কেউ জমি লিখে দিতে না চাইলে সেই জমি তিনি দখল করে নিয়েছেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০ বিঘার ওপরে গড়ে তোলা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পুকুর রয়েছে ৪টি।

আবদুল হাই নামে ওই ব্যক্তির অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমের বিরুদ্ধে রয়েছে পদ বাণিজ্যের অভিযোগ। চট্টগ্রাম বিভাগের যেখানেই আওয়ামী লীগ ও সহযোগী অঙ্গসংগঠনের কমিটি করা হয়, সেখানেই তিনি হস্তক্ষেপ করেন। নিজের পছন্দের ব্যক্তিকে পদে বসাতে শুরু করেন তার নানা অপপ্রচার। তাকে মাসোয়ারা না দিলে কাউকে তিনি শান্তিতে রাজনীতি করতে দেন না। নাসিমের শ্বশুর আবু তাহের চৌধুরীর বিরুদ্ধেও রয়েছে সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ।

নাসিমের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অনুসন্ধান করে তাকে আইনের আওতায় আনতে প্রধানমন্ত্রী ও দুদক চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপ কামনা করেন আবদুল হাই।

এ ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে মামলা করা হবে।

দুদকের একজন পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনে বিপুলসংখ্যক অভিযোগ জমা পড়ছে। সব অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে অনুসন্ধানের কাজ চলছে। ফেনী-১ আসনের এমপির বিরুদ্ধে করা অভিযোগটিরও যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ফেনীর পরশুরামে ৩০ একর জায়গায় ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত করা হয় আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম কলেজ। স্থানীয়দের অভিযোগ, জোরপূর্বক ও ভয় দেখিয়ে নামমাত্র মূল্য পরিশোধ করে কলেজের জন্য কৃষিজমির জায়গা দখল করে নেওয়া হয়। এবার ফেনী-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য হয়ে মনোনয়ন বাণিজ্য করে ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী ও পরশুরামে তার অনুসারীদের দিয়ে নানা কায়দাকৌশল করে নির্বাচনের মাধ্যমে উপজেলা চেয়ারম্যান বানান। এ ছাড়া নির্বাচনি এলাকার বাইরেও অন্যান্য উপজেলায়ও তার অনুসারীদের চেয়ারম্যান বানাতে ভূমিকা রাখার অভিযোগ রয়েছে।

নির্বাচনি হলফনামা : ফেনী-১ (পরশুরাম-ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া) আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আলাউদ্দিন নাসিমের হলফনামায় দেওয়া তথ্যানুযায়ী, আলাউদ্দিন নাসিমের বার্ষিক আয় ৩ কোটি ৫৭ হাজার ২৯৫ টাকা এবং তার স্ত্রীর ৬৯ লাখ ৪৬ হাজার ৬৫০ টাকা। আলাউদ্দিন নাসিমের বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, দোকান বা অন্যান্য ভাড়া হিসেবে আয় ৯০ লাখ ৭৪ হাজার ৯২৫, স্ত্রীর ১৫ লাখ ৮৭ হাজার ৭৯৪ টাকা। ব্যবসা থেকে আয় করেন ১১ লাখ টাকা ২৫ হাজার টাকা, স্ত্রীর ৭ লাখ ৫৭ হাজার ২৭৯ টাকা। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানত, ডিভিডেন্ডে রয়েছে ৯৫ লাখ ৯৭ হাজার ৩৭০ টাকা, স্ত্রীর ২৩ লাখ ২২ হাজার ৩০৪ টাকা। চাকরিতে তার ১ কোটি ২ লাখ ৬০ হাজার এবং স্ত্রীর ১৩ লাখ ৩ হাজার ৩৪৪ টাকা বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন। এ ছাড়া স্ত্রীর পেশাখাতে ৯ লাখ ৭৫ হাজার ৯২৯ টাকা আয় দেখানো হয়েছে।

হলফনামায় দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আলাউদ্দিন নাসিমের অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ টাকা রয়েছে ১ কোটি ৩৩ লাখ ১৪ হাজার ৪৬৩ টাকা, স্ত্রীর ৪২ লাখ ৩৩ হাজার ৭২৫ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ দেখানো হয়েছে ৪ কোটি ১৪ লাখ ১৫ হাজার ১১৯ টাকা, স্ত্রীর ৯৩ লাখ ৪৭ হাজার ৯৯৮ টাকা, বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জ তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির শেয়ার রয়েছে ৫২ কোটি ৬২ লাখ ৩৩ হাজার ৫৪৯ টাকার, স্ত্রীর ৩ কোটি ৫৭ লাখ ২৭ হাজার ২৬৮ টাকা।

পোস্টাল, সেভিংস সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র ও স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ রয়েছে ৫ কোটি ২০ লাখ ১৬ হাজার ৪৬২ টাকা, স্ত্রীর ১৫ লাখ টাকা। তার বাস-ট্রাক-মোটরগাড়ি ও মোটরসাইকেল যানের অর্জনকালীন মূল্য ২ কোটি ৩২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, স্ত্রীর ৯০ লাখ ১৫ হাজার টাকা, স্বর্ণ ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতু রয়েছে ২ লাখ টাকা, তার স্ত্রীর ২৪ লাখ ৬ হাজার টাকা। এ ছাড়া তাদের দুজনের ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী, আসবাবপত্র ও অন্যান্য সম্পদ রয়েছে ১৭ কোটি ৭৭ লাখ ১ হাজার ৭৩১ টাকা।

হলফনামায় দেখা গেছে, নাসিম চৌধুরীর স্থাবর সম্পদের মধ্যে কৃষিজমি রয়েছে ১০ কোটি ১৩ লাখ ৪৫ হাজার ১৪৭ টাকা, তার স্ত্রীর ৪৬ লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৬ টাকা, অকৃষি জমি ২৫ লাখ ৫২ হাজার টাকা, স্ত্রীর ৭৭ লাখ ৩২ হাজার টাকা।

এ ছাড়াও তার ৮ কোটি ৫২ লাখ ৯৩ হাজার ৪৬৬ টাকা মূল্যের তিনটি দালান (আবাসিক ও বাণিজ্যিক) রয়েছে। ১২ কোটি ৩১ লাখ ৪৬ হাজার ৯২০ টাকা মূল্যের ৬টি ও তার স্ত্রীর ২ কোটি ২৫ লাখ ৯৪ হাজার ২০১ টাকা মূল্যের ৪টি বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম