৩ হাজার টাকা বেতনের হিসাবরক্ষক এখন ২৫ কোটি টাকার মালিক!

স্টাফ রিপোর্টার:

আকরাম মিয়া। রাজধানীর ডেমরা এলাকার ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে মাসিক তিন হাজার টাকা বেতনে হিসাবরক্ষক পদে যোগদান করেন ২০১০ সালে। এখন তিনি সেই কলেজের প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা। আছে কোটি কোটি টাকা। আছে অর্থপাচারের অভিযোগও। তবে তার এ অর্থের বৈধ কোনো উৎস নেই বলে উঠে এসেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে। ইতোমধ্যেই তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক।
অনুসন্ধানেও আকরাম মিয়ার দুর্নীতির বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। তার বেসিক ব্যাংকের মাতুয়াইল শাখায় পাঁচটি স্থায়ী হিসাবে জমা আছে ২৪ কোটি ২৯ লাখ ৮৯ হাজার ৫২৪ টাকা।

ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লার কলেজ থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, চাকরিতে যোগদান থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আকরাম কলেজ থেকে চাকরি বাবদ সর্বসাকুল্যে আয় করেন ৪২ লাখ ৭৩ হাজার ৩৪৩ টাকা। তাহলে কীভাবে তার ব্যক্তিগত হিসাবে ২৪ কোটি টাকা এলো, সেই হিসাব এখন পর্যন্ত আকরাম মিয়া এবং কলেজ কর্তৃপক্ষ দিতে পারেননি দুদককে।

আকরাম মিয়ার এমন আয়ের উৎসের খোঁজে অনুসন্ধানে নেমে দুদক বেসিক ব্যাংক মাতুয়াইল শাখায় হিসাব নং-৬১১৮-০১-০০১০৬৩৭, ৬১১৮-০১-০০১০৬৪২, ৬১১৮-০১-০০১০৬৫৮, ৬১১৮-০১- ০০১০৬৬৩ এবং ৬১১৮-০১-০০১০৬৭৯ এ ২৪ কোটি টাকার বেশি জমা থাকার প্রমাণ পেয়েছে।

এ বিষয়ে দুদক আকরাম মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি ব্যাংকে রাখা টাকা ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের বলে দাবি করেন। এ বিষয়ে আকরাম মিয়ার নামে কলেজের কোনো অর্থ জমা করা হয়েছে কি না দুদক জানতে চাইলে কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনো তথ্য দিতে পারেনি।

এরপর সোমবার দুর্নীতি দমন কমিশনের উপপরিচালক শারিকা ইসলাম বাদী হয়ে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন আকরাম মিয়ার বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কমিশনের উপপরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলাম।

মামলা সূত্রে জানতে পেরেছে, আকরাম মিয়া ২০১৭ সালের ৩ ডিসেম্বর আইএফআইসি ব্যাংকের কোনাপাড়া শাখায় ১৪ কোটি টাকার একটি এফডিআর হিসাব খোলেন। তবে ২০১৭ সাল থেকে কলেজের অর্থ আকরাম মিয়ার ব্যাংক একাউন্টে রাখার বিষয়ে কলেজের গভর্নিং বর্ডির কোনো অনুমোদন বা রেকর্ডপত্র প্রদান করতে পারেনি। কলেজের আয়-ব্যয় খাতওয়ারী হিসাবভুক্ত করে কলেজের নিজস্ব ব্যাংক একাউন্টে রাখার বিধান রয়েছে, তা কোনো কর্মচারীর ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে রাখার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে দুদক।

দুদক সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ১৪ জুন একই ব্যাংকের একই শাখায় অপর দুটি স্থায়ী ফিক্সড ডিপোজিট হিসাব খুলে ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং ৩৩ লাখ ৩০ হাজার ৫৩০ টাকা জমা রাখেন। পরবর্তীতে দুটো পে-অর্ডারের মাধ্যমে আইএফআইসি ব্যাংকের কোনাপাড়া শাখা থেকে মোট ১৯ কোটি ৪৮ লাখ ৯৩ হাজার টাকা স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের মাতুয়াইল শাখায় দুইটি হিসাব নম্বরে স্থানান্তর করেন। এই ব্যাংকের দুইটি হিসাবই আকরাম মিয়া তার নিজের নামে খোলেন।

এরপর ওই অর্থ চতুর আকরাম মিয়া ২০২২ সালের ২২ ডিসেম্বর স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের মাতুয়াইল শাখা থেকে পাঁচটি পে-অর্ডারের মাধ্যমে বেসিক ব্যাংকের মাতুয়াইল শাখায় স্থানান্তর করেন এবং একই মাসের ২৭ তারিখে তার নামে বেসিক ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট একাউন্ট খুলে টাকাগুলো জমা রাখেন।

দুদকের তথ্য বলছে, আকরাম মিয়া এই টাকাগুলো অসাধু উপায়ে অর্জন করেছেন এবং দখলে রেখেছেন। যার বৈধ কোনো উৎস নেই।

এ বিষয়ে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের প্রধান হিসাবরক্ষক আকরাম মিয়ার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

দুর্নীতি দমন কমিশনের উপপরিচালক শারিকা ইসলাম বলেন, প্রধান হিসাবরক্ষক আকরাম মিয়ার মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়ে মামলা হয়েছে। তবে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এখনও নিয়োগ হয়নি। তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্তপূর্বক এ আসামিকে আইনের আওতায় আনবেন বলেও জানান দুদক কর্মকর্তা শারিকা ইসলাম।

সংস্কারের নামে জনগণের চোখে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করা যাবে না: রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সংস্কারের নামে জনগণের চোখে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করা যাবে না।

আজ মঙ্গলবার (৪ ফেব্রয়ারি) দুপুরে মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আফরোজা খান রিতা, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইদুল আলম বাবুলসহ অর্থ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন, এস এ জিন্নাহ কবিরসহ নেতাকর্মীরা।

রিজভী বলেন, বিএনপি’র পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে আপনারা সংস্কার করলে করুন কিন্তু সংস্কারের নামে গণতন্ত্রকে মজবুত শক্তিশালী করার জন্য যে কাজগুলো রয়েছে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে গণতন্ত্র মানেই হচ্ছে জনগণের শক্তি জনগণের ক্ষমতা। সেই ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তার জন্যে নির্বাচনের তারিখ ঠিক করতে হবে।

তিনি বলেন, জবাবদিহিতা নাই বলেই সরকার গ্যাসের দাম বাড়াচ্ছে। এই সরকারের জবাবদিহিতা থাকলে ১২ কেজি গ্যাস সিলিন্ডারে ১৯ টাকা বাড়িয়েছে, এটা তো হতে পারে না। যারা সীমিত আয়ের মানুষ। নিম্নআয়ের মানুষ সিএনজি, রিকশাচালক, যারা দিনমজুরি করে খায় তাদের ওপর ভয়ংকর চাপ পড়বে। এই যে প্রতি সিলিন্ডারে ১৯ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে এটা অযৌক্তিক। এটা গণবিরোধী। নির্বাচিত সরকার থাকলে এ ধরনের পরিস্থিতি হবে না।

রিজভী বলেন, আমরা গণতান্ত্রিক দল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সাপোর্ট দেই। কিন্তু আপনাদের (সরকারকে) মনে রাখতে হবে আপনাদের সিদ্ধান্ত যেন গণবিরোধী না হয়, গরিব মানুষ মারার সিদ্ধান্ত যেন না হয়। এমনিতে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য প্রতিদিন বাড়ছে। চালের দাম কমাতে পারেননি। তার মধ্যে যদি গ্যাসের দাম বাড়ানো হয় তাহলে ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ ছাড়া কিছুই নয়।

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, শেখ হাসিনা দেশের জনগণের ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছিল। সেই ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। এই দেশে কে সরকার গঠন করবে তা নির্ধারণ করবে দেশের জনগণ। কিন্তু শেখ হাসিনা সেটা করতে দেয়নি। ছাত্র-জনতার রক্ত ঝরা গণআন্দোলনে সেই ভয়ংকর ফ্যাসিবাদ শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে গিয়েছে এবং দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য জনগণের আসা জাগানোর জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অনেক কিছু করার আছে। দেশের জনগণ গত ১৬-১৭ বছর ধরে ভোট কেন্দ্রে যেতে পারে নাই। ভোট দিতে পারে নাই। জনগণের চাওয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেই পরিবেশটা তৈরি করবে দেশের জনগণ যাতে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারে ভোট দিতে পারে।

তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম এবং প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। কে সংগঠন তৈরি করবে। কে দল তৈরি করবে সেই দায়িত্ব হচ্ছে সেই ব্যক্তির এই দায়িত্ব প্রধান উপদেষ্টার নয়। একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা আপনাকে (প্রধান উপদেষ্টা) করতে হবে তা না হলে জনগণের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি হবে যে শেখ হাসিনার কোন প্রেতাত্মা আবার জন্ম নেয় কিনা একটা সংশয় দেখা দিবে। ’

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, গণতান্ত্রিক সরকার নাই বলে আজ ইনভেস্টমেন্ট হচ্ছে না। বিনিয়োগ করতে কেউ সাহস পাচ্ছে না। কারণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হচ্ছেস সাময়িক সময়ের সরকার। সুতরাং মানুষ অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে। মানুষ একটা ধোঁয়াশার মধ্যে আছে। এই অনিশ্চয়তা কাটানোর জন্যই রাজনৈতিক সরকার দরকার। জনগণের ক্ষমতা জনগণকে ফিরিয়ে দেবে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন যাতে ঘটাতে পারে সেই ধরনের সরকার দরকার। জনগণের জবাবদিহিমূলক সরকার হবে সেটা হবে নির্বাচিত সরকার। তাহলে আমাদের অর্থনীতির যে সংকট। বৈদেশিক ঋণের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। আমাদের জাতীয় রিজার্ভ আবার কমতে শুরু করেছে দিগন্ত রেখায় কালো মেঘ দেখা দিচ্ছে। এগুলো দূরীভূত করতে হলে অবশ্যই আমাদেরকে নির্বাচিত সরকারের পথে হাঁটতে হবে।

 

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম