কুমিল্লায় চাঁদাবাজিকালে হাতেনাতে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশনের ৩কর্মচারী সহ আটক-৪

মাহফুজ বাবু ;

কুমিল্লার বুড়িচং সহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির কিছু কর্মকর্তা কর্মচারী পরিচয়ে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র দীর্ঘদিন ধরেই মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে অবৈধ গ্যাস সংযোগ প্রদান ও অবৈধ গ্রাহকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদাবাজি করে আসছিলো। ঘটনার সত্যতায় অবশেষে হাতেনাতেই আটক হলো বাখরাবাদের ৩কর্মচারী ও প্রাইভেটকার চালক সহ ৪জন। তবে অবস্থা বেগতিক দেখে ঘটনাস্থল থেকে সটকে পরে আরো ২জন অজ্ঞাত ব্যক্তি।

শনিবার (২০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় উপজেলার মোকাম ইউনিয়নের মনিপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। শনিবার মধ্যরাতে তাদের বিরুদ্ধে বুড়িচং থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী প্রবাসী তাজুল ইসলাম।
আটক ব্যক্তিরা হলেন- বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের টেকনিশিয়ান শাহ আলম (৫৫), অফিস সহায়ক রবিউল হোসেন (২৮), প্লান্ট অপারেটর শফিকুর রহমান (৫০) ও গাড়িচালক আইয়ুব আলী (২৫)।
জানা যায়, শনিবার বিকেল ৪টায় উল্লেখিত চার আসামিসহ অজ্ঞত দুই ব্যক্তি মনিপুর গ্রামে প্রবাসী তাজুল ইসলামের বাড়িতে যান। এসময় তারা বাড়ির গ্যাস লাইন অবৈধ বলে রাইজার খুলে নেওয়ার হুমকি দেয়।
পরে তারা পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করলে, তাজুল ইসলামের মা তাদের তিন হাজার টাকা দেন। ঘটনার সময় তাজুল ইসলাম বারির বাইরে ছিলেন।
বিকেল সাড়ে ৪টায় ঘরে এসে ঘটনার বিস্তারিত জানেন তিনি। এসময় পাশের বাড়িতে শোরগোল শুনতে পান তিনি। সেসময় সেখান থেকেও চাঁদা আদায় করছিলেন তারা। বিষয়টি কৌশলে বুড়িচং থানা পুলিশকে জানায় স্থানীয়রা। খবর পেয়ে অল্প সময়ের মধ্যে দেবপুর ফাঁড়ি পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং অভিযোগের সত্যতা পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে গাড়ি চালক সহ ৪জনকে আটক করে।

দেবপুর ফাঁড়ি পুলিশের এসআই রুহুল আমিন জানান স্থানীয়রা ফোন করে জানায় একটি প্রাইভেটকারে কিছু লোক এসে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিছিন্ন করার ভয় দেখিয়ে টাকা পায়সা দাবি করছেন। তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে গিয়ে সত্যতা পেয়ে চাঁদাবাজির সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা, চারটি মোবাইল ও একটি পরিচয়পত্র জব্দ করা হয়। এবিষয়ে বাখরাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা এসব বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান। পরে সেখান থেকে তাদের থানায় পাঠানো হয়।
রোববার সকালে বুড়িচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন জানান, আটক আসামিদের বিরুদ্ধে শনিবার রাতে চাঁদাবাজি অভিযোগে নিয়মিত মামলা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সচিব খোরশেদ আলম বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। এটা অ্যাডমিনের লোকজন বলতে পারেন। এ বিষয়ে জানতে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শংকর মজুমদারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

কাতারে এসএম সাগরের জমজমাট মাদক ব্যবসা, ঝুঁকিতে অভিবাসন খাত

নিজস্ব প্রতিবেদক॥
ঢাকা থেকে কর্মস্থলে ফেরার পথে কাতার বিমানবন্দরে গ্রেফতার হন বেশ কয়জন বাংলাদেশি। কাতারে প্রায় ৬০০ অধিক বাংলাদেশি বিভন্ন অপরাধে আটক হয়েছেন তার মধ্য মাদক ব্যবসায় সম্পৃক্ততার দায়ে আছে অনেক প্রবাসী। কাতার প্রবাসী বাংলাদেশিদের থেকে মাদক পরিবহনের তথ্য পাওয়া গেছে।

সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যে থাকা বাংলাদেশের কাতার বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে মাদক ব্যবসায় প্রবাসীদের সম্পৃক্ততার বিষয় উল্লেখ করে ঢাকায় প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। দূতাবাস সূত্র জানায়, যে কোনো ধরনের মাদক গ্রহণ, পরিবহন ও বিক্রি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে খুনের চেয়েও ভয়ঙ্কর অপরাধ বলে গণ্য করা হয়। কিন্তু একশ্রেণির বাংলাদেশি কর্মী মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছেন।

মাহফুজ আলম পিয়ার নামে এক মাদক ব্যবসায়ী সহ অনেক ক্ষেত্রে পাকিস্তানীদের সঙ্গে সংঘবদ্ধ হয়ে মাদক সিন্ডিকেট পরিচালনা করা হচ্ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাংলাদেশি প্রবাসীদের মধ্যেই মাদক বিক্রি করা হচ্ছে। তবে কেউ কেউ বাইরেও বিক্রি করছেন। ঢাকা থেকেই হাতে বা কার্গোতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে গাঁজা বা ইয়াবা। মধ্যপ্রাচ্যে এ ধরনের খুচরা ব্যবসায়ীর সংখ্যা অনেক। ধরনের গুটিকয়েক অপরাধীর জন্য ৩ লাখেরও বেশি বাংলাদেশির কর্মস্থল কাতার আরেক দফায় ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।

কাতার থেকে আসা বাংলাদেশিদের হাতে ঢাকা থেকেই ওষুধের প্যাকেটের বাহরাইনে বাজারজাত করে এক শ্রেনির অসাধু প্রবাসীরা । এ ধরনের ঘটনা ‘খুবই অপরিচিত’ মন্তব্য করেন কাতার বাংলাদেশ দূতাবাসের লেবার কাউসিলর শ্রম সচিব শেখ মোহাম্মদ তৌহিদুর ইসলাম। এতে বাংলাদেশের সুনাম বহুলাংশে ক্ষুন্ন হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা হওয়া এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রবাসীদের সহায়তায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে মাদক ব্যবসা করা এক ব্যক্তি আটক হন। তার কাছ থেকে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া যায়। তার তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে সৌদি আরব, আমিরাত, কুয়েত, ওমানে ইয়াবা ব্যবহার ও চাহিদা বেড়েছে। তবে সেখানে মাদক পাওয়া এত সহজ নয়, কারণ এসব দেশ ইসলামিক নিয়মে চলে। ফলে প্রবাসীদের মধ্যে দেশ থেকে মাদক নিয়ে যাওয়ার প্রবণতা শুরু হয়। আগে বেশি পরিমাণে গাঁজা পাঠানো হলেও এখন সবচেয়ে বেশি যায় ইয়াবা। কারণ পরিবহনে সুবিধা। প্রবাসী পরিচিত কেউ ছুটিতে দেশে এলে ফিরে যাওয়ার সময় তাদের কাছে না জানিয়ে বা জানিয়ে বিভিন্ন ঠিকানার ব্যক্তিদের কাছে মাদক পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়।

বিশেষত পিঠা, বিভিন্ন শুকনা খাদ্য ও আচারের ভিতর মাদক ঢুকিয়ে দিয়ে দেন এসব চক্রের লোকেরা। সব থেকে আচারের ভিতর ইয়াবা ঢুকিয়ে দিলে বিমানবন্দরে চেকিংয়ের সময় ধরা পড়ে না বলেও ওই পাচারকারী জানিয়েছেন। বাহরাইনে এসব বিক্রির সঙ্গে জড়িয়ে আছেন বেশ কিছু ‘ফ্রি ভিসা’র প্রবাসী। তারা কাজ না করে বেশি অর্থ উপার্জনের জন্য গোপনে প্রবাসেই ব্যবসা করছেন। প্রতি পিস ইয়াবা বাংলাদেশ থেকে সংগ্রহ করে চার থেকে পাঁচগুণ দামে এক-দেড় হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। আর এগুলো বাংলাদেশ তার এজেন্ট হিসেবে কাজ করে মাহফুজ আলম পিয়ার নামে আরেক মাদক ব্যবসায়ী।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ‘৩০ জুন পর্যন্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জানামতে ৮ হাজার ৮৪৮ জন বাংলাদেশি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের জেলে বা ডিটেনশন সেন্টারে আটক রয়েছেন।’ তিনি জানান, কূটনৈতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে বিদেশি কারাগারে আটক বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অন্যতম দায়িত্ব। এটা দূতাবাসের সাহায্যে রুটিন মাফিক করে আসছে মন্ত্রণালয়। অতি সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়া, তিউনিশিয়া, লিবিয়া ও ভানুয়াতু থেকে আটকে পড়া অনেক বাংলাদেশি দূতাবাসের সার্বিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে ফিরে এসেছে এবং দেশে ফিরে আসার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর তথ্যানুযায়ী, বিশ্বের ৪৪টি দেশে এসব বাংলাদেশি আটক রয়েছেন। এর মধ্যে সব থেকে বেশি আটক ভারতে। দেশটিতে আটক আছেন ২ হাজার ৪৯ জন। এরমধ্যে ২ হাজার ৩১ জন কলকাতায় বাকি ১৮ জন আগরতলায়। এ ছাড়া অন্যান্য দেশের মধ্যে আবুধাবিতে ১ হাজার ১৫৬ জন, বাহারাইনে ৬৯৩, মালয়েশিয়ায় ৫৭২, সৌদি আরবে ৭৬৮, ওমানে ৪৪২, কুয়েতে ৩১৬ এবং তুরস্কে ৩২৭ জন আটক আছেন।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম