বিয়ানীবাজারে চিনি ছিনতাই কান্ডে ছাত্রলীগকে ‘কলংকিত’ করার দায় কার

 

হাসান জুলহাস, সিলেট::

# ১১জনের নামে মামলা
# গ্রেফতার ২ জনের রিমান্ড আবেদন হয়নি
# ব্যবহৃত মোটর সাইকেল ও কার জব্দে তৎপর পুলিশ
# ভিডিও ফুটেজ উদ্ধার হলেও প্রকৃতরা আড়ালে
# ভোর ৪টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত ছিনতাই হয় বেশী

বিয়ানীবাজারের চাঞ্চল্যকর ২৪ লাখ টাকার চিনি ছিনতাই কান্ডে প্রশাসন ও জনমনে তোলপাড় চলছে। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের পদবীধারী একাধিক নেতা এবং এই সংগঠনের রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় থাকা বহিরাগতরা জড়িত থাকায় সর্বত্র বইছে সমালোচনার ঝড়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও এ নিয়ে ট্রল করছেন সমালোচকরা। ছিনতাই কান্ড নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি এড়াতে মঙ্গলবার রাতে সংবাদ সম্মেলন করেছে থানা পুলিশ। এতে ঘটনার নানা বিষয় তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (জকিগঞ্জ সার্কেল) ইয়াহিয়া আল মামুন ও অফিসার ইনচার্জ দেবদুলাল ধর।

 

পুলিশ জানায়, ছিনতাই ঘটনার পর অভিযান চালিয়ে ৮০ বস্তা চিনি, একটি পিকআপ (ঢাকামেট্রো-ঠ ১১০৭০৯) উদ্ধার ও এজাহারনামীয় দুই আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে গ্রেফতারকৃত আসামীদের রিমান্ড আবেদন করেননি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শাহজাদা ফয়সল। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন থানার হোসাইনপুর গ্রামের (বর্তমানে পৌরশহরের দাসগ্রাম লিচুটিলা ছাত্তার মিয়ার বাড়ীর ভাড়াটিয়া) মো: খলিল মিয়ার ছেলে মো: লিটন মিয়া (২৬) ও মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা শাহবাজপুর এলাকার বোবারতল গ্রামের (বর্তমানে সুপাতলা) মোস্তফা উদ্দিনের ছেলে হাসান (২১)। এরমধ্যে লিটন পেশাদার অপরাধী। তার বিরুদ্ধে বিয়ানীবাজার থানায় ডাকাতির আরো মামলা আছে।

 

যেভাবে চিনি ছিনতাই: যথাযথ প্রক্রিয়ায় সরকারিভাবে নিলামে কেনা বিপুল পরিমাণ চিনি অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার সময় বিয়ানীবাজার থেকে লুট করে নিয়েছে একদল ছিনতাইকারী। শনিবার সকালে সিলেট-বিয়ানীবাজার সড়কের চারখাই পুলিশ ক্যাম্পের অদূর থেকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে চিনি বোঝাই ট্রাক নিয়ে পৌরশহরে চলে আসে ছিনতাইকারী ওই চক্র। বিয়ানীবাজারে আসার পর ট্রাকের অর্ধেক চিনি পৌরশহরের পৃথক দু’টি গ্রামে নিয়ে নামিয়ে ফেলা হয়। চিনির মালিকের মৌখিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে ছিনতাই হওয়া চিনি উদ্ধারে অভিযান শুরু করে পুলিশ। চিনির মালিক বদরুল ইসলাম বলেন, চারখাই বাজারে তার ব্যবসা প্রতিষ্টান রয়েছে। গত কয়েকদিনে তিনি সরকারের বিধি অনুযায়ী বিভিন্ন স্থান থেকে ১৪৭৭ বস্তা চিনি নিলামের মাধ্যমে ক্রয় করেন। ওই চিনি থেকে ৪শ’ বস্তা চিনি তিনি জনৈক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করেন। শনিবার দুপুরে একটি ট্রাক বোঝাই করে বিক্রিত চিনি অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার সময় ঘটনাস্থলে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে। তিনি অভিযোগ করেন, ১৫-১৬ জনের ছিনতাইকারী চক্র একটি প্রাইভেট কার, ৪টি মোটর সাইকেল এবং একটি পিকআপ নিয়ে চিনি বোঝাই ট্রাকের গতিরোধ করে। ছিনতাই হওয়া চিনির বাজার মূল্য প্রায় ২৪ লাখ টাকা।

 

নেপথ্যের ঘটনা: শুক্রবার রাতে ছাত্রলীগের পদবীধারী বেশ কয়েকজন নেতা দক্ষিণ বিয়ানীবাজারের একটি ফাস্টফুডের দোকানে পরামর্শ সভা করেন। সভা থেকে দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া দেয়া হয় ‘অপারেশন সুগার’র। পরদিন পরিকল্পনা অনুযায়ী চিনি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটান ছাত্রলীগের পদবীধারী ও বহিরাগতরা। ওই পরিকল্পনা সভায় কারা ছিলেন তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।

 

বদরুল ইসলামের অভিযোগ: ছিনতাই মামলায় প্রকৃত আসামীদের বাদ দেয়া হয়েছে। ফরমায়েসি এজাহারের বিষয়ে পুলিশ সুপারকে অবহিত করা হবে। তিনি অভিযোগ করেন, শ্রীধরার জনৈক ব্যক্তির লাগানো সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। তবে ফুটেজে প্রমাণ থাকার পরও অনেককে মামলায় আসামী করা হয়নি। ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত মোটর সাইকেল ও কার জব্দে পুলিশী তৎপরতা কম। নাম্বারপ্লেট বিহীন সাদা রঙের ওই কারটি একজন ছাত্রলীগ নেতা ব্যবহার করেন বলেও দাবী করেন তিনি। কারটি তার বাড়িতে রাখা আছে মর্মে ভিডিও ক্লিপ দেখান বদরুল।

 

ছিনতাই ও চোরাচালান সময়: সর্বশেষ আলোচিত চিনি ছিনতাই হয় ভোর ৬.৩০ ঘটিকায়। অনুসন্ধানে জানা যায়, ভোর ৪ টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত চিনি ছিনতাই ও চোরাচালানের সময়টা বেছে নেয় দূর্বৃত্তরা। এই সময়ে পুলিশ ও জনমানুষের উপস্থিতি থাকে কম। এই সময়ের মধ্যে চারখাই থেকে বারইগ্রাম পর্যন্ত রাজনৈতিক ও প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা একাধিক গ্রæপ সশস্ত্র ওৎ পেতে থাকে। তারা বৈধ ও অবৈধ চিনি পরিবহনের ক্ষেত্রে গাড়ি প্রতি চাঁদা আদায় করে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে চিনি ছিনতাই করে তারা।

মামলার আসামী যারা: ছোটদেশ ছুটিয়াংয়ের ইসলাম উদ্দিনের ছেলে তারেক আহমদ (২৩, ছাত্রলীগ কর্মী), খাসাড়িপাড়ার নুরুল ইসলামের ছেলে রাসেল আহমদ (২৪, ছাত্রলীগ কর্মী), শ্রীধরার মুজিবুর রহমানের ছেলে বক্কর (২৫, স্যানেটারী মিস্ত্রী), একই গ্রামের আনছার আলীর ছেলে আনু (২৩, দিনমজুর) ও আজির উদ্দিনের ছেলে ছাদিক আহমদ (৩০, সবজি ব্যবসায়ী), কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন থানার হোসাইনপুর গ্রামের (বর্তমানে পৌরশহরের দাসগ্রাম লিচুটিলা ছাত্তার মিয়ার বাড়ীর ভাড়াটিয়া) মো: খলিল মিয়ার ছেলে মো: লিটন মিয়া (বহিরাগত ছাত্রলীগ ক্যাডার), মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা শাহবাজপুর এলাকার বোবারতল গ্রামের (বর্তমানে সুপাতলা) মোস্তফা উদ্দিনের ছেলে হাসান (২১, বহিরাগত ছাত্রলীগ ক্যাডার), নবাং গ্রামের শরফ উদ্দিনের ছেলে জিবান (২২, বখাটে ছাত্রলীগ কর্মী), চট্রগামের বাসিন্দা বর্তমানে সুপাতলার নছরুল্লাহর ছেলে শফিউল্লাহ সাগর (২৮, উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি), খাসাড়িপাড়া গ্রামের ফারুক আহমদের ছেলে ফাহাদ আহমদ (২৩, ছাত্রলীগ কর্মী) ও চারখাই জালালনগরের হেলাল মিয়ার ছেলে হাসান আহমদ (২৪, মহানগর ছাত্রলীগ কর্মী)সহ অজ্ঞাতনামা আরো ৭-৮জন।

 

ছাত্রনেতাদের প্রতিক্রিয়া: বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের নেতা তরিকুল ইসলাম ও ফারহান মহি বলেন, ছাত্রলীগের চিনি সিন্ডিকেটকে আমরা বয়কট করি। যারা সংগঠনকে এই বদনামে জড়িয়েছে কিংবা পরিকল্পনায় ছিল, তাদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্থি দাবী করেন তারা। উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল হক তাহমিদ বলেন, কারো ব্যক্তিগত অপরাধের দায় ছাত্রলীগ নিবেনা। যারা এইসব ঘটনায় জড়িত আছেন, তাদের দৃষ্টানমুলক বিচার হোক। উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল আহমদ শিপু বলেন,আমরা এমন ঘটনার নিন্দা জানাই। ছাত্রলীগের কেউ এমন ঘটনায় জড়িত থাকলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গোয়াইনঘাটে নৌকা ডুবে বিজিবি সদস্য নিখোঁজ

গোয়াইনঘাটে নৌকা ডুবে বিজিবি সদস্য নিখোঁজ

সিলেট সংবাদদাতা:

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার সদর ও পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের মধ্যবর্তী পিয়াইন নদীতে ভারতীয় (সুপারি) পণ্যবাহী একটি নৌকার ধাক্কায় বিজিবির নৌকা ডুবে গিয়ে মাসুম বিল্ল্যাহ (৩৫) নামে এক বিজিবি সদস্য নিখোঁজ রয়েছেন। শনিবার (৯ আগস্ট) বিকেল ৪টার দিকে পিয়াইন নদীর পন্নগ্রাম নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিখোঁজ বিজিবি সদস্য মাসুম বিল্ল্যাহ ৪৮ বিজিবি’র আওতায় গোয়াইনঘাটের সোনারহাট ক্যাম্পের একজন সিপাহী।

জানা যায় পিয়াইন নদীতে নৌকা যোগে দুইজন বিজিবি সদস্য নৌকা নিয়ে ভারতীয় পণ্যবাহী নৌকা থামাতে যান। এ সময় পণ্যবাহী নৌকার ধাক্কায় উভয় নৌকা ডুবে যায়। নৌকায় থাকা এক বিজিবি সদস্য ও নৌকার মাঝি কোনোভাবে কিনারে উঠলেও মাসুম বিল্ল্যাহ উঠতে পারেননি। তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের লোকজন অনেক খোঁজাখুঁজি করলেও তাতে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, খবর শুনার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ঘটনাস্থলে এসে উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছি। এখনও নিখোঁজ বিজিবি সদস্য মাসুম বিল্ল্যাহকে খোঁজে পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রতন কুমার অধিকারী বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে আমরা ফায়ার সার্ভিসকে জানিয়েছি। ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার তৎপরতা চালাবে।

৪৮ ব্যাটালিয়নর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. হাফিজুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ভারতীয় নৌকার ধাক্কায় আমাদের নৌকা ডুবে গিয়ে এক সিপাহী নিখোঁজ রয়েছেন। ডুবুরি দল নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার তৎপরতা চালানো হবে ।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম
সূচক সাড়ে ৩ মাস আগের অবস্থানে লেনদেন ৪ মাসে সর্বনিম্ন আওয়ামীলীগ ফিরলে হাসিনার পা ধরেও মাফ পাবেন না: রাশেদ খান বিমানবন্দর অগ্নিকান্ডে পুড়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম কুমিল্লায় গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার, পালিয়েছেন স্বামী ও তাঁর পরিবারের লোকজন ঢাকা এলজিইডিতে দুর্নীতির একচ্ছত্র অধিপতি বাচ্চু মিয়া বিমান বন্দরের সামনে এখোনো উৎসুক জনতার ভীড় নেভেনি আগুন বাড়িভাড়া ৫০০ টাকা বৃদ্ধি করে প্রজ্ঞাপন জারি শিক্ষকদের সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড মামলার পথেই হাঁটছে বকশীগঞ্জের সাংবাদিক নাদিম হত্যা মামলা রাজউকের ইমারত পরিদর্শক মনিরুজ্জামান ৭ বছরেই শত কোটি টাকার মালিক শাহজালাল বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ