অপকর্মের হোতা ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলে জ্যোতি

স্টাফ রিপোর্টার॥
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের ছেলে সাফি মুদ্দাসির খান জ্যোতিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঢাকার আশুলিয়া থানার একটি মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজধানী থেকে তাকে গ্রেফতার করে ঢাকা জেলা পুলিশ। বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা জেলার এসপি আহম্মদ মুঈদ। শেখ হাসিনার পতনের পর তার সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী ও এমপিদের একের পর এক দুর্নীতি সামনে আসছে। আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের ছেলে বাবার ক্ষমতার অপব্যবহার করে শত শত কোটি টাকা লুটপাট করেছেন।

জানা যায়, সাফি মুদ্দাসিরকে মেসার্স তিতাস বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নামে একটি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বানিয়ে রাখেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এই প্রতিষ্ঠানের নামেই চলত বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি। টেকনাফের মিঠাপানির ছড়া ১নং প্লটে ৫ দশমিক ৫০৬৪ একর জমি কেনা হয়। তাছাড়া লেঙ্গুরবিল মৌজায় একই কোম্পানির নামে লম্বরি ২নং পর্টে কোম্পানির নামে কেনা জমির মূল্য প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা।

দুর্নীতিগ্রস্ত আসাদুজ্জামান খান কামাল ও তার ছেলে সাফি মুদ্দাসিরের লুটপাট হাসিনা সরকারের আমলে চরম পর্যায়ে পৌঁছায়। যার বড় উদাহরণ নির্বাচন কমিশনের অমুছনীয় কালি কেনার দুর্নীতির সঙ্গে তার নাম থাকায়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শুধু অমুছনীয় কালি কিনতেই ১ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয় করে সাফি মুদ্দাসির সিন্ডিকেট। এছাড়া আরও ৬ কোটি টাকার অমুছনীয় কালি কেনে নির্বাচন কমিশন। যার টেন্ডার বাগিয়ে নেয় সাফি ও নির্বাচন কমিশনের সচিব জাহাঙ্গির আলমের আত্মীয়ের যৌথ সিন্ডিকেট।

শুধু এসবই না, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাফি মুদ্দাসিরের দুর্নীতির ফিরিস্তি যেন শেষ হবার নয়। জানা যায়, রাজধানীর পুরো ধানমন্ডি এলাকায় ছিল তার একচ্ছত্র আধিপত্য। ধানমন্ডি এলাকা বিভিন্ন রেস্টুরেন্টের জন্য বিখ্যাত। আর এসব রেস্টুরেন্ট দেওয়ার জন্য সাফি মুদ্দাসিরকে দিতে হতো ১ থেকে ২ কোটি টাকা। টাকা দিলে কোনো রকম যাচা-বাছাই ছাড়াই মিলত লাইসেন্স। আর লাইসেন্স করতে বাবার প্রভাব খাটাতেন তিনি। শুধু তাই না এসব রেস্টুরেন্ট থেকে যেসব চাঁদা নেওয়া হতো তাও একহাতে সামলাতেন সাফি মুদ্দাসির।

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নামে শুধু রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকেই প্রতিদিন দেড় কোটি টাকার চাঁদা তোলা হত। ফুটপাতে ব্যবসা, বাজার, মাদক ব্যবসায়ী ও আবাসিক হোটেল থেকে উঠানো হতো এসব চাঁদা। এ টাকা মন্ত্রীর হাতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল মন্ত্রীর এপিএস মনির হোসেনসহ আরও দুইজনকে। এই টাকার মোটা অংশ পেতেন আসাদুজ্জামান খান কামাল। পাশাপাশি এই টাকার একটা ভাগ পেতেন তার ছেলে।

এছাড়াও, আইনশৃঙ্খলাবাহিনীতে যেসব নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য হতো তার মোটা অংকের ভাগ পেতেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। আর এসব একহাতে নিয়ন্ত্রণ করতেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এপিএস মনির। তিনি একটা অংশ সাবেক মন্ত্রী ছেলে সাফি মুদ্দাসিরকেও দিতেন।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পিডি ডা: মো: আনিছুর রহমানের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ!

স্টাফ রিপোর্টার:

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সক্ষমতা জোরদারকরণ প্রকল্পের পিডি ডা: মো: আনিছুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা আত্ম্সাতের অভিযোগ জমা পড়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে। অভিযোগটি বর্তমানে দুদকের যাচাই বাছাই সেলে রয়েছে। অচিরেই এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে দুদকের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
দুদকের অভিযোগের বর্ণনায় জানাগেছে, সক্ষমতা জোরদারকরণ প্রকল্পের পিডি ডা: মো: আনিছুর রহমান দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে নানা কৌশলে প্রকল্পের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। বর্তমান প্রকল্পের স্টেমিটেড কস্ট ২২০ কোটি টাকা। মেয়াদ ৩০/০৬/২০২৩ ইং পর্যন্ত। অদ্যাবধি প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ২০-২৫% । তিনি মুল কাজ না করে কেবল ডিপিপি সংশোধন ও কেনাকাটায় ব্যস্ত। অথচ: কাজগুলো করার কথা ছিলো প্রকল্পের অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ শেষ করার পর। তিনি অনুমোদিদ এপিপি অনুযায়ী ৪০ কোটি টাকার দরপত্র আহবান করেছেন। যেমন: ভবিষ্যতে নির্মিত হবে ভবনের জন্য আসবাবপত্র ক্রয় বাবদ ০৪ কোটি টাকা। ৬৫ টি জেলায় ট্রেনিং রুম মাটি ভরাট ,ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ বাবদ ২৫ কোটি টাকা। বিভিন্ন দপ্তরে ফ্রিজ সরবরাহের জন্য ৩ কোটি ৪০ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। বিভিন্ন দপ্তরে আসবাবপত্র সরবরাহের জন্য ৪ কোটি ০৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। ২৬ জেলায় ক্লোডরুম স্থাপন বাবদ ৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। বিভিন্ন দপ্তরে ডেক্সটপ কম্পিউটর সরবরাহের জন্য ১ কোটি ৫৯ লাখ ২০ হাজার টাকা, এসি ,ফটোকপিয়ার, ল্যাপটপ,বইপত্র ক্রয়ের জন্য ৫০ লাখ টাকা। এবং অন্যান্য মোট ৪০ কোটি টাকা খরচ করেছেন।
এসব খাতে নানা প্রকার কৌশল প্রযোগ করে তিনি সিংহভাগ টাকা আত্মসাত করেছেন। আর সেসব টাকা দিয়ে বসুন্ধরা ডি ব্লকে ২২০০ বর্গ ফুটের এবং ই-ব্লকে ১৬৫০ বর্গ ফুটের ২ টি ফ্ল্যাট কিনেছেন । মিরপুর-৬ শিয়াল বাড়ী এলাকায় ১৩৩৮ বর্গ ফুটের একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন। পুর্ব রাজাবাজার ফার্মগেট এলাকায় ২২০০ বর্গ ফুটের একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন। টাঙ্গাইল শহরের আকুরটাকুর পাড়ায় ১০ কাঠা জায়গার ওপর বিশাল বাড়ী নির্মাণ করেছেন। নিজের ও পরিবারের ব্যবহারের জন্য ২ খানা লেটেষ্ট মডেলের গাড়ি ক্রয় করেছেন। তার নামে বেনামে ব্যাংক ও পোষ্ট অফিসে কোটি কোটি টাকা, এফডিআর ও সঞ্চয়পত্র রয়েছে। যা তার চাকুরী জীবনের আয়ের সাথে সংগতিপূর্ণ নয়। দুদক সঠিকভাবে অনুসন্ধান করলেই তার থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়বে।
উল্লেখ যে, এর আগে ৩ টি প্রকল্পে কর্মকালীন সময়ে তিনি ব্যাপক দুর্নীতি করায় কর্তৃপক্ষ তাকে অপসারণ করে দুরবর্তী উপজেলায় বদলী করেন। ফলে অদ্যাবধি তার কোন প্রমোশন হয়নি। বর্তমানে তিনি নিজেকে সরকার সমর্থিত একজন কর্মকর্তা হিসাবে পরিচয় দিচ্ছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিডি ডা: মো: আনিছুর রহমান বলেন, অভিযোগগুলো কাল্পনিক এবং মনগড়া। সক্ষমতা জোরদারকরণ প্রকল্পে কোন প্রকার অনিয়ম-দুর্নীতি হয়নি । শতভাগ সচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আওতায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দুদকে যে ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন তিনিও ভুয়া। আপনারা প্রয়োজনে অভিযোগকারীর মোবাইল ফোনে (কল) করে দেখতে পারেন।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম