
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন:
রাজধানীর উত্তরা আব্দুল্লাহপুরে এভার গ্রীন সিকিউরিটি কোম্পানি নামক একটি ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠানে চাকরির নামে ছাত্রলীগ চক্রের মৃদুল, অরজু,গাউস, জিএম ইব্রাহিমের ভয়ংকর প্রতারণা ফাঁদ!মৃদুল হাসান সোহাগ ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক উত্তরা পূর্ব থানা ও বর্তমান উত্তরা পূর্ব থানার ১নং ওয়ার্ডের সভাপতি হিসাবে বেশ দাপটে সাথে উত্তরার অলিগলিতে চলাফেরা করতেন,এছাড়াও ছিলেন মাঠে আওয়ামীলীগের সমাবেশ ও বড় বড় মিছিলে নিয়ে উপস্থিত হতেন।সেই দাপটেই তিনি খুলে বসে ছিলেন চাকরির বানিজ্য,চাকরির দেওয়ার নামে শত শত চাকরিপ্রার্থীর থেকে নিয়েছেন মোটা অংকের টাকা এভাবেই মৃদুলের প্রতারণা চালিয়েছেন শুধু মাত্র স্থান পরিবর্তন করাই তার মূল লক্ষ্য,তার দীর্ঘদিনের প্রতারণার সঙ্গী হিসাবে খুব কাছের গাউস ইসলাম,অরজু খান,জিএম ইব্রাহিম এরকম আরো অনেকই রয়েছে। তবে ৫ আগষ্টে স্বৈরাচার সরকার পতনের পর থেকেই তিনি অন্যের পরিচয়ে প্রতারণার কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
উত্তরার আব্দুল্লাহপুরের ৩৮/মা ভবনের তৃতীয় তলায় এভার গ্রীন সিকিউরিটি কোম্পানি নামক একটি ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন অদৃশ্য ক্ষমতার দাপটে তবে বর্তমান তিনি খুব সাবধানতার সাথে অফিসে যাতায়াত করেন,কারন এর আগে এই চক্রের সদস্যরা প্রতারণার ও চাকরির নামে অর্থ আত্মসাৎ করার দায়ে জেল ও খেটেছেন।
জানা যায়,চাকুরী প্রার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে মোটা অংকের অর্থ। বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত সিকিউরিটি কোম্পানিতে লোভনীয় বেতনে চাকরির সুযোগ। অনেক সময় সরকারি লোগো ব্যবহার করেও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে। যা দেখে আকৃষ্ট হয় অল্প বয়সী তরুন-তরুনী আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে মোটা অংকের টাকা। মেসেজের মাধ্যমে কথা বলে কোন রকম অফিসে আনতে পারলে চাকুরি প্রার্থীদে কাছ থেকে আদায় করা হয় ৫ হাজার থেকে শুরু করে ৩০/৪০ হাজার টাকা। রেজিস্ট্রেশন, ফরম ফিলাম,মেসের খাবার খরচ, পোশাক বাবদ এভাবে বিভিন্ন অযুহাতে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। অর্থ আদায় হয়ে গেলে তারিখ জানিয়ে দেয়া হয়। নিয়োগের জন্য তারিখ অনুযায়ী আসলে আবার নতুন তারিখ দেয়া হয়। এভাবে ঘুরতে হয় পরে এক সময় তাদের জানিয়ে দেওয়া হয় অফিসিয়াল আকর্ষণীয় বেতনের চাকরি করলে আরো কিছু টাকা লাগবে , টাকা নেওয়া হয়ে গেলে তাদের কে একটি খামের উপর ঠিকানা ও মোবাইল নাম্বার লেখে বিভিন্ন জায়গায় পোষ্টিংয়ের নামে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তবে ঠিকানা অনুযায়ী গিয়ে ফোন করলে চাকরিপ্রার্থীকে রিসিভ করেন অন্য এক সিকিউরিটি কোম্পানির সুপারভাইজার অথবা ম্যানেজার তারপর চাকরি প্রার্থীকে নিয়ে যাওয়া হয় কোন কারাখানা অথবা এক হাউজে তারপর তার কাছ থেকে আবার নতুন করে থাকা খাওয়ার টাকা চাওয়া হয়।
এভাবেই প্রতারণার শিকার হচ্ছে অসংখ্য গ্রাম-গঞ্জে থেকে আশা তরুন-তরুনীরা। এছাড়া অনেকে চলে আসে প্রতারক চক্রের অফিসে বলে আমাকে কেনো সিকিউরিটির চাকরিতে পাঠালেন? তখন প্রতারক চক্রের সদস্য আবার নতুন করে বলে, আপনি কিছুদিন সিকিউরিটি গার্ডের ডিউটি করে অভিজ্ঞতা অর্জন করে তারপর আমাদের অফিসে সহকারী ম্যানেজার হিসাবে কাজ করতে পারবেন তবে সে-সময় আরো টাকা দিতে হবে তারপর অফিসিয়াল কাজ করতে পারবেন। অনেকেই আবার সেই প্রতারনার ফাঁদে পা দেন,এরপর তাকে বলে হয় ফেসবুকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মেসেঞ্জারের মেসেজের রিপ্লাই দিতে হবে এবং চাকরি প্রার্থীর সাথে কথা বলে তাকে মেনেজ করে অফিসে নিয়ে আসতে হবে তারপর তার থেকে যে টাকা নেওয়া হবে তার ৫০% আপনি পাবে এবং বাকি ৫০% অফিস পাবে এভাবেই তাদের প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে। লোক নিয়ে আসলে কমিশন দেয়া হবে নয়তো কোন বেতন দেয়া বা কাজ দেয়া হবে না। অবশেষে তাদের কিছুই করার থাকে না কারন কাছ থেকে আগেই স্ট্যাম্পের মাধ্যমে চুক্তি স্বাক্ষর নেয়া হয়। এরকমই একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে রাজধানীর আব্দুল্লাহপুরের ৩৮/ মা ভবনের তৃতীয় তলায় এভার গ্রীন সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেড নামক তথা কথিত এক প্রতিষ্ঠানের। সরেজমিনে অফিসটি গেলে চোখে পড়ে কয়েকজন বসে ফেসবুকের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন নিয়ে কাজ করছে,আবার কেউবা ফোনে চাকরি প্রার্থীকে অফিসে নিয়ে আসবে বলে ফোনের মাধ্যমে নতুন চাকরি প্রার্থীদের ব্রেনওয়াশ করতেছে।এদের বাহিরে কোন সাইন বোর্ড না থাকলেও কয়েকজন তরুন তরুনী নিয়েই চলছে প্রতিষ্ঠানটি। সেখানে অবস্থানরত আরিফুল ইসলাম নামের এক হুজুরের সাথে কথা হলে তিনি জানান, এমনিতেই অফিস করছেন।কোন বেতন ভাতা নাই। তাহলে বিনা বেতনে কাজ করছেন নাকি? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন,বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে লোক নিয়ে আসলে যে টাকা চাকরি প্রার্থী দিবে সেটার ৫০% আমার বাকি ৫০% অফিসের।
এবিষয়ে কোম্পানি সব চেয়ে ক্ষমতাবান ব্যক্তি হিসাবে নিজেকে পরিচয় দেন এবং পরিচালনার দায়িত্ব থাকা গাউস ইসলাম জানান,এলাকার বিএনপির বড় ভাইয়েরা আছে তাঁরাই দেখা শুনা করেন আমাদের অফিস, অর্থাৎ শেল্টার দেয় তাঁরা। তবে গাউস ইসলাম কি এলাকার বিএনপির বড় ভাইদের কে কি মাসিক হাতিয়া দেয় অর্থাৎ কোন মাসোহারা দিতে হয়? এমন প্রশ্ন করলে,গাউস ইসলাম জানান,আপনি কি কিছুই বুঝেন না?এত কিছু বলতে হয় নাকি? গাউস ইসলামের কথায় বুঝা গেলো সে এলাকার বিএনপির বড় ভাইদের মাসোহারা দিয়েই ভয়ংকর প্রতারণা ফাঁদ তৈরী করেছে। কথা বলতে বলতে গাউস ইসলাম হঠাৎ করেই রেগে উঠে বলে আপনি কেন এত প্রশ্ন করছেন? আমাকে আপনি প্রশ্ন করার কে?এভাবে কথা কাটাকাটি করেন এবং উচ্চ স্বরে চিল্লাচিল্লি শুরু করেন প্রতিবেদকের সাথে গাউস ইসলাম প্রতিবেদককে জানান,আমরা চাকরি প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা নিচ্ছি সেটা আমাদের কোম্পানির নিয়ম!আর আমরা কোন বড় ভাইদের কে মাসিক মাসোহারা দিবো সেটা আমাদের বিষয়,এটা নিয়ে আপনাদের এত মাথা ঘামাতে হবে কেন?যা-ই হোক গাউস ইসলামের সাথে কথা বলে বুঝাতে পারলাম তিনি একজন বড় মাপের প্রতারক চক্রের সদস্য।
এই বিষয়ে কয়েকজন ভুক্তভোগীর সাথে কথা হয়,সাইদুর নামের একজন বলেন আমার কাছ থেকে ৪ হাজার টাকা নিয়েছে মেসের খাবারের দিবে বলে এখন যেখানে আমাকে পাঠিয়েছে সেখানেও খাবারের টাকা চায়।পরে একজন সব বুঝিয়ে বললো আমাকে তখন জানতে পারলাম আমি প্রতারণার শিকার হয়েছি।আবু বক্কর নামের এক ভুক্তভোগী জানান,একই কথা বলে তার কাছ থেকে নিয়েছেন ৩৫ শত টাকা,সাগর নামের এক ভুক্তভোগী জানান,আমাকে ম্যানেজারের চাকরি দিবে বলে ৭ হাজার টাকা নিয়েছে। আওলাদ নামের এক ভুক্তভোগী জানান, তার কাছ থাকেও নেওয়া হয়েছে ৪২ শত টাকা।ওসামা চাকমা নামের একজনের কাছ থেকেও নিয়েছে ৪৫ শত টাকা।আবুল হাসান নামের এক ভুক্তভোগী জানান,তার কাছ থাকেও নিয়েছে ৪২ শত টাকা।রাজিনা নামের এক মহিলা জানান, তাকে কল সেন্টারে চাকরি দিবে বলে ৭ হাজার টাকা নিয়েছে।এরকম অসংখ্য ভুক্তভোগী রয়েছে যা লিখে শেষ করা যাবে না।এভাবে চাকুরি প্রত্যাশিদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে,ছাত্রলীগ নেতা মৃদুল, অরজু খান,গাউস ইসলাম, জিএম ইব্রাহিমসহ আরে অনেকেই রয়েছে এদের সকলে ছাত্রলীগের রাজনীতি করতো সেই সুবাদে গড়ে তুলে এক ভয়ংকর প্রতারক চক্র।এরা বেপরোয়া হয়ে ওঠায় সাধারন মানুষকে এক প্রকারে জিম্মি করেই মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে এই চক্রটি এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
এই বিষয়ে আব্দুল্লাহপুর ৩৮ মা ভবনের সামনে কিছু দোকানদারদের সাথে কথা বলে জানা যায়,প্রতিদিন এই বিল্ডিংয়ের উপরে সকাল থেকে রাত ৮/৯ টা পর্যন্ত অসংখ্য লোকের আশা যাওয়া আবার অনেক কে অফিসের গেটের সামনে বসে থাকতে দেখা যায়,স্হায়ীরা তাদের জিজ্ঞেস করলে তারা জানায়,আমাকে সহকারী ম্যানেজারের চাকরি দেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়েছে এই অফিসে।তবে আমাকে পাঠিয়েছে যাত্রাবাড়ী সিকিউরিটি গার্ডের পোশাক পড়ে ডিউটি করতে।তাও আবার অন্য এক কোম্পানির কাছে তাদের দালালীর মাধ্যমে ওখানে পাঠায়,তাহলে তাঁরা আমার সাথে ১০০% প্রতারণা করেছে। শুধু আমি নই আমার মত শত শত বেকারত্বের অবসান ঘটে চাকরি করতে এসে এঁদের মত ভয়ংকর প্রতারনা ফাঁদে পড়তে হচ্ছে। জানা যায়,প্রতিদিন এরকম অসংখ্য ভুক্তভোগী আশা যাওয়া রয়েছে এবং এই অফিসের মাধ্যমে দেশের অসংখ্য সহজ সরল বেকার ছেলে-মেয়েরা চাকরি করতে এসে প্রতারণার শিকার হচ্ছে।তাঁরা আরো জানান,এখান থেকে এই প্রতারক চক্র সরিয়ে না দিলে ভবিষ্যতে আরো অসংখ্য বেকার ছেলে-মেয়ে এই চক্রে ভয়ংকর প্রতারণার শিকার হবে বলে জানান।
এ বিষয়ে জানার জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশের(ডিএমপির) উত্তরা পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ এর মুঠোফোনে একাধিকবার বার ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।