
রাকিব হাসান :
ঢাকার জোন-৩ এর ওয়াসার ইন্সপেক্টর হারুনুর রশিদ রানা সাম্প্রতিক সময়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কর্তৃক দু’বার এনওসি (নো অবজেকশন সার্টিফিকেট) পেয়েছেন। তবে সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন উঠেছে, কেন দুদক এ ধরনের অভিযোগের মুখে থাকা এক কর্মকর্তাকে এনওসি দিয়েছে এবং এর মাধ্যমে কি কোনো অবৈধ প্রভাব বা সুবিধা গ্রহণ করা হয়েছে কি না।
সাম্প্রতিক এক আলোচনায় রানা দাবি করেছেন, “দুদক যদি চায়, আবারও তাদের সামনে হাজির হবো। আমার কোনো সমস্যা নেই।” তার এমন আত্মবিশ্বাস কৌতূহল সৃষ্টি করেছে। ওয়াসার একজন ইন্সপেক্টর হিসেবে তার আয়-ব্যয়ের বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে, “ওয়াসার কাজ থেকে চাইলে একজন কমকর্তা ভালোই আয় পারে। ধরুন, কোনো কাজের জন্য ৫০ হাজার টাকার কন্ট্রাক্ট নিলাম, এর মধ্যে ২০ হাজার টাকা খরচ হলো। তাতেই ৩০ হাজার টাকা লাভ হলো।”
ইন্সপেক্টর রানার আরো দাবি, তার তিনটি বাড়ি রয়েছে—যার একটি নুরজাহান রোডে, অন্য দুটি টিক্কাপারা ও ঢাকা উদ্যান এলাকায়। এছাড়া ঢাকায় তার আর কোনো সম্পদ নেই বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। তবে গ্রামে তার সম্পদ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, “টিউশনি করে টাকা জমিয়ে এই সম্পদ করেছি।”
তবে এই বক্তব্য অনেকের মধ্যে সন্দেহের জন্ম দিয়েছে। ঢাকা ওয়াসার একজন ইন্সপেক্টর হিসেবে তার আয় কীভাবে এই পরিমাণ সম্পদের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হতে পারে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। তাছাড়া, রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের এক নেতার সাথে ঘনিষ্ঠতা থাকার বিষয়টিও উঠে এসেছে, যা তার প্রভাব এবং ক্ষমতার প্রশ্নকে আরো ঘনীভূত করছছে।
দুদকের এক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তা বলেন, “দুদক সবসময় নিরপেক্ষ এবং তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে কাজ করে। কোনো অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শেষ হলে এনওসি দেয়া হয়। তবে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ বা নতুন কোনো তথ্য পাওয়া গেলে আবারো তদন্ত হতে পারে।”
এই ঘটনাটি জনগণের মধ্যে দুদকের কার্যক্রম সম্পর্কে এক ধরনের প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। সাধারণ জনগণ দাবি করেছে, দুদককে আরও সতর্কতার সাথে এনওসি প্রদান করতে হবে যেন ভবিষ্যতে দুর্নীতিবাজ কোনো কর্মকর্তা অবাধে তার অপকর্ম চালাতে না পারে।
ওয়াসার ইন্সপেক্টরের দাবি করা সম্পদের বৈধতা এবং আয়ের সাথে তা সঙ্গতিপূর্ণ কিনা তা নিয়ে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত প্রয়োজন। তার আয়ের উৎস হিসেবে টিউশনি দাবি করলেও, সরকারি একজন কর্মচারীর এমন আয়ের বিষয়টি স্বচ্ছতার দাবি রাখে।
এই ঘটনাটি এখন সবার নজর কেড়েছে। যেকোনো সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ক্ষেত্রে তাদের সম্পদের বৈধতা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির অধীনে, দুদকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলির উচিত এ জাতীয় তদন্তকে আরো বেশি স্বচ্ছ ও কঠোর করে তোলা। এমনটিই দাবি সাধারণ মানুষের। ((দ্বিতীয় পর্ব)