ভূমিদস্যু নাজিমের বেপরোয়া কর্মকাণ্ড

স্টাফ রিপোর্টার।।

রাজধানীর ক্যান্টনমেন্টের মানিকদি এলাকার ভূমিদস্যু নাজিম উদ্দিনের অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। আবুল ফজল নামের এক ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের উপর দিয়ে জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভার ও ১৫০ ফুট চওড়া মিরপুর ডিওএইচএসগামী সড়ক নির্মাণের ফলে মাটিকাটা মানিকদি এলাকার রাস্তার দুপাশের জমির মূল্য বহুগুণ বেড়ে যাওয়ায় এ এলাকার জমির ওপর বহু মামলার আসামি ভূমিদস্যু নাজিমের দৃষ্টি পড়ে। জোয়ার সাহারা মৌজার সিএস ও এসএ-৬১০, ৬১১, ৬১২, ৬১৩, ৬১৪, আরএস-৫৬১, ৫৬২ ও ৫৬৫ এবং মহানগর-৩৪৩০১, ৩৩৯০৪, ৩৩৯১১, ৩২২৪৮ ও ৩২২৮৯ দাগের প্রায় ১০ বিঘা সম্পত্তির রেকর্ডিয় মালিক এ এলাকার প্রায় ১০০ নিরীহ ব্যক্তি। তাদের নেই কোনো শিক্ষা, নেই কোনো অর্থ, নেই কোনো শক্তি। তাদের এ দুর্বলতার সুযোগে নাজিম মানিকদি এলাকায় কিছু রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়ায় গড়ে তোলে এক বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী।

মানিকদি এলাকার ১০ বিঘা সম্পত্তি আত্মসাতের জন্য নাজিম উদ্দিন জাল জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার ভুয়া দলিল পর্চা দেখিয়ে মেজর জেনারেল থেকে শুরু করে প্রায় অর্ধশত অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য ও নানা প্রকার পেশাজীবীর কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে জমির শেয়ার ও ফ্ল্যাট দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে সংগ্রহ করে প্রায় ১০০ কোটি টাকা। জোর করে এসব জমি দখল করে নানা প্রকার নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ৩০টির অধিক মামলা রয়েছে। নিরীহ মানুষের জমিতে নিজ নামে মসজিদ ও কবরস্থান নির্মাণ করে ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে নিজ দখলে নেওয়া হয়। মানুষের জমি এলাকার চলাচলের একমাত্র রাস্তা বন্ধ করে মসজিদের সাইন বোর্ড লাগিয়ে শত শত পরিবারকে জিম্মি করে জমি বিক্রি করার জন্য চাপ দিতে থাকে। জমির মালিকরা নিরুপায় হয়ে নাজিম উদ্দিনসহ ৬৬ জনকে বিবাদী করে আদালতে মামলা করেন। বিচারক ওই জমিতে জোরপূর্বক প্রবেশ, বেদখল, হস্তান্তর, অবৈধভাবে নির্মাণ থেকে নাজিম গংকে বিরত থাকতে অন্তবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা দেন। এর পরও তিনি তার অবৈধ দখল কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

নাজিম বাহিনীর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কাছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অসহায় হয়ে পড়েছে। এলাকার কেউ এদের বিরুদ্ধে ভয়ে মুখ খুলতে চায় না। কোনো মামলা হলেও নিরপেক্ষ সাক্ষীর অভাবে জনগণ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

নাজিমের যতসব সম্পত্তি : অবৈধ উপায়ে ভূমিদস্যু নাজিম হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি গড়েছেন। এর মধ্যে জোয়ার সাহারা মৌজায় প্রায় ২০ বিঘা জমি যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা। বাউনিয়া মৌজায় ১০ বিঘা জমি যার বাজার মূল্য ১৫ কোটি টাকা। মিরপুর ডিওএইচএস-এ ৪০০০ বর্গফুটের দুটি ফ্ল্যাট আছে যাহার বর্তমান বাজার মূল্য তিন কোটি টাকা। মিরপুর ডিওএইচএস রোডে সিটি কাবাব-এর ৫ কাঠা জমি, যার বাজার মূল্য প্রায় ছয় কোটি টাকা। লাল মিয়ার টেক মানিকদি এলাকায় ৫ কাঠা জমির ওপর বহুতল ভবন, যার বাজার মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় তিনটি প্লট ও একটি ফ্ল্যাট রয়েছে, যার বাজার মূল্য প্রায় সাত কোটি টাকা। গ্রামের বাড়িতে প্রায় ৮০ বিঘা সম্পত্তি রয়েছে, যার বাজার মূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা। দুবাইতে তার স্বর্ণের দোকানে বিনিয়োগকৃত অর্থের পরিমাণ ১০ কোটি টাকা। মালয়েশিয়ায় রয়েছে তার দুটি দোকান ও একটি তেলের পাম্প, বিনিয়োগকৃত অর্থের পরিমাণ প্রায় পচিশ কোটি টাকা। পূর্বাচল পাতিরা মৌজায় তার রয়েছে ১০ বিঘা জমি, যার মূল্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা। নাজিমের এসব অবৈধ অর্থ লেনদেন হয় দেশের বিভিন্ন ব্যাংকের হিসাবে।

নাজিম তার কিশোর গ্যাংদের দিয়ে রাতের আঁধারে কাউসার ও ইয়াবা মনিরের মাধ্যমে অন্যের জমি দখল করে তা ভুয়া দলিল করে অন্যের কাছে বিক্রি করে দেন।

রাতের আঁধারে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে অন্যের জমিতে জোর করে বালু ভরাট করে নাজিমের সাইনবোর্ড লাগালেই মালিক পরিবর্তন হয়ে যায়। একদিকে সাধারণ শেয়ার ক্রেতাদের ঠকিয়ে নিজে অর্থের পাহাড় গড়ে চলেছেন, অন্যদিকে চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা ও ভূমিদস্যুতার একটা বড় অংশ টাকা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে বরাদ্দ দিয়ে নাজিম পুরো এলাকাকে ক্রমেই অস্থিতিশীল করে তুলছেন। ভাইসহ তার সন্ত্রাসী বাহিনীর নামে শুধু ক্যান্টনমেন্ট থানায় ২০টি সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি ও জোর করে জমি দখলের মামলা রয়েছে। সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেলসহ ১৫০ সেনাসদস্যের সমবায় সমিতির কেনা জমি নাজিম বাহিনী জোর করে দখল করে নিয়েছে। এ ছাড়া মানুষকে অত্যাচারের প্রতিবাদ করায় হত্যা, গুমসহ নানা ভয়ভীতি দেখালে ৫০টি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। নাজিম বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পেতে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন অনেকে।

মানিকদি এলাকার ভুক্তভোগী গার্মেন্ট ব্যবসায়ী রেজাউল ও ক্যাপ্টেন জহির বলেন, আমরা আমাদের পেনশনের টাকা নাজিমের কাছে দিয়ে বিপদে পড়েছি। তার অত্যাচারে আমরা এলাকাবাসী অতিষ্ঠ। নাজিম বাহিনীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে দাবি জানান তারা।

অভিযোগ প্রসঙ্গে নাজিম উদ্দিন বলেন, আনীত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমার ওপর তারা হামলা মামলা করেছে বহুবার। এখন নতুন করে আমাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে, তারই অংশ এগুলো।

 

আবারও নারীঘটিত কেলেঙ্কারিতে বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সানভীর

আবারও নারীঘটিত কেলেঙ্কারিতে বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সানভীর

নিজস্ব প্রতিবেদক:

জনপ্রিয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ আবারও নারী কেলেঙ্কারির ঘটনায় আলোচনায় এসেছে। এবার অভিযোগের তীর উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির ভাইস চেয়ারম্যান সাফিয়াত সোবহান সানভীরের দিকে। সম্প্রতি অভিনেত্রী ইশরাত জাহান রীতিকা এক ভিডিও বার্তায় সানভীরের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন। তিনি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের পাশাপাশি অব্যবস্থাপনা ও হুমকির শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

রীতিকার দাবি, তিনি এক বছরের বেশি সময় ধরে সানভীরের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে ছিলেন এবং বর্তমানে তিনি পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। সম্পর্কের শুরুতে সানভীর তাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কিন্তু এখন তিনি সেই প্রতিশ্রুতি থেকে সরে এসেছেন এবং রীতিকার খোঁজখবর না নিয়ে সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন।

ভিডিও বার্তায় রীতিকা আরও জানান যে, হঠাৎ একটি ভিডিও কলে তিনি সানভীরকে অন্য এক নারীর সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পান। এরপর তিনি সানভীরের বাসায় গেলে তার ওপর হামলা চালানো হয়। রীতিকা অভিযোগ করেন, “আমি অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় তার বাসায় গেলে তার বাবা, মা, বডিগার্ড, দারোয়ান ও গৃহকর্মীরা আমাকে মারধর করে, চুল ধরে টেনে বের করে দেয়, এমনকি পেটে লাথিও মারা হয়। আমার চালককেও তারা মারধর করে।”

তিনি আরও বলেন, ঘটনার ভিডিও ধারণ করে তাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে যেন তিনি মুখ না খোলেন। রীতিকা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, “আমার যদি কিছু হয়, তাহলে এর জন্য দায়ী থাকবে সাফিয়াত সোবহান সানভীর, তার বাবা-মা এবং বসুন্ধরা গ্রুপ।”

নির্যাতনের ঘটনা প্রসঙ্গে রীতিকা জানান, সানভীরের প্রতি রাতে দুজন মেয়ে প্রয়োজন হয় এবং এই মেয়েদের যোগান দেন ‘অনু’ নামের এক নারী। রীতিকা আরও উল্লেখ করেন যে, অনু যাত্রাবাড়ী থেকে ৩ হাজার টাকায় যৌনকর্মীও এনেছেন সানভীরের জন্য। পঞ্চম শ্রেণি পাশ করা এই অনু এখন সানভীরকে ব্যবহার করে ফ্ল্যাট ও গাড়ির মালিক হয়েছেন। তিনি এখন ২৪ লাখ টাকার প্রিমিও গাড়ি ব্যবহার করেন।

এদিকে, ২০২১ সালে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের অন্য ছেলে সায়েম সোবহান আনভীর কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়া হত্যা মামলার সূত্রে আলোচনায় আসেন। ২৬ এপ্রিল গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে মুনিয়ার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মুনিয়ার পরিবার অভিযোগ করে, আনভীর বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মুনিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং পরে হুমকি দিয়ে সম্পর্ক থেকে সরে আসেন, যা মুনিয়াকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করে। মুনিয়ার ফ্ল্যাট থেকে ছয়টি ডায়েরি ও মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করে পুলিশ। তদন্তে সিসিটিভি ফুটেজে আনভীরের উপস্থিতিও উঠে আসে।

বসুন্ধরা পরিবারের আরেক সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহান তাসভীরের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন সময় নারীঘটিত বিতর্কের অভিযোগ উঠেছে। একাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ রয়েছে। জানা গেছে, বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহানের সঙ্গে বিক্রমপুরের এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। এছাড়াও সূত্র জানিয়েছে, ইংরেজি মাধ্যমে পড়া শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও তার অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে।

২০২৩ সালের ৩০ এপ্রিল আরাফা প্রধান মিথিলা নামের এক কিশোরীকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাড়িতে ধর্ষণের পর মারধর করে আটকে রেখে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ উঠেছিল বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহান তাসভীরের বিরুদ্ধে। পরবর্তীতে পুলিশের সহায়তায় মেয়েটি উদ্ধার হলেও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। একটি নামমাত্র মামলা দায়ের করে এত বড় স্পর্শকাতর ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ আছে।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম
আজ থেকে আমরণ অনশন, প্রত্যাখ্যান শিক্ষকদের শিক্ষার্থীরা রোডম্যাপের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিলেন শাকসু নির্বাচনের বিদেশ যেতে না পারায় মাইক ভাড়া করে এলাকাবাসিকে গালিগালাজ করলেন কিশোরগঞ্জের যুবক জুলাই সনদে স্বাক্ষর করল গণফোরাম অন্যদেরও সই করার আহ্বান কমিশনের সূচক সাড়ে ৩ মাস আগের অবস্থানে লেনদেন ৪ মাসে সর্বনিম্ন আওয়ামীলীগ ফিরলে হাসিনার পা ধরেও মাফ পাবেন না: রাশেদ খান বিমানবন্দর অগ্নিকান্ডে পুড়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম কুমিল্লায় গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার, পালিয়েছেন স্বামী ও তাঁর পরিবারের লোকজন ঢাকা এলজিইডিতে দুর্নীতির একচ্ছত্র অধিপতি বাচ্চু মিয়া বিমান বন্দরের সামনে এখোনো উৎসুক জনতার ভীড় নেভেনি আগুন