নারায়ণগন্জের ফতুল্লায় স্ত্রীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করলেন স্বামী, নেপথ্যে পরকীয়ার অভিসাপ

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি।।

আমাদের সমাজের অনেক বড় এক ব্যাধির নাম পরকীয়া।নারী-পুরুষ নির্বিশেষে জড়িয়ে পড়ছেন এই অনৈতিক সম্পর্কে।যাঁর মাশুল গুনতে হয় কখনো বিচ্ছেদ,কখনও এমনকি সন্তান হন্তারক হওয়া,খুনী হিসেবে আজীবনের জন্য জীবনের সাথে দাগ লাগিয়ে
বন্দীশালা বা মুক্ত পৃথিবীতে জীবন্ত লাশ হয়ে জীবনকে
টেনে নেওয়া সহ আরও করুণ পরিণতির শিকার হচ্ছেন
ভয়ানক ঐ ব্যাধি পরকীয়ায় আক্রান্ত মানুষ।
প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও পরকীয়ার
বলি হচ্ছেন কেউ না কেউ।এবার পরকীয়ার বলি হলেন
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানাধীন ফাজিলপুর এলাকার এক নারী।নিজের স্বামীর ছুরির আঘাতে খুন হলেন তিনি।হত্যার শিকার নারীর নাম নাজমা(৪০)।হত্যাকারী
স্বামীর নাম কাউসার আলম তুহিন(৪৫) বলে জানিয়েছেন তাঁদের বড় ছেলে নাজমুল।কাউসার নামেই পরিচিত সে।নাজমুল গণমাধ্যমকে জানায়,বাবা-মা
আজ ২৮ সেপ্টেম্বর বুধবার সকালে নিত্যদিনের মতো
ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়েন।বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে তাঁর
বাবা কাউসার মায়ের বুকের নীচের দিকে ছুরিকাঘাত করে বাসা থেকে বেড়িয়ে যান।মাকে রক্তাক্ত অবস্থায়
পড়ে থাকতে দেখে তাৎক্ষণিক ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালে আনা হলে জরুরী বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক তাঁর মাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
খুনের নেপথ্য কারণ জানতে ঘটনাস্থল ফাজিলপুর গিয়ে
জানা যায়,নিহত নাজমা স্বামী সন্তানদের নিয়ে স্থানীয় রকি মিয়ার বাড়ীতে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন।সেই বাড়ীতে গিয়ে দেখা যায় স্থানীয় উৎসুক মানুষের ভীড়।
একই বাসায় অন্য ভাড়াটিয়া ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,কাউসার সবসময় তাঁর স্ত্রীকে পরকীয়ায় আসক্ত বলে সন্দেহ করতেন।আর এনিয়ে দুজনের মধ্যে প্রায় রোজই ঝগড়া হতো।অন্য কোন কারণ বা কাউসার মাদকাসক্ত কিনা জানতে চাইলে তাঁরা নাকচ করে দিয়ে বলেন,পরকীয়ার সন্দেহের কারনেই এই খুনের ঘটনা ঘটেছে।পুলিশও একই কথা বলেছে খুনের নেপথ্যের কারন হিসেবে।
ফতু্ল্লা মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোস্তফা কামাল এই প্রতিবেদককে বলেন, পরকীয়া নিয়ে কাউছার তার স্ত্রী নাজমাকে সন্দেহ করতো। এ নিয়ে তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল।এসআই আরও বলেন, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সদর জেনারেল হাসপাতালে রাখা হয়েছে।প্রতিবেদন পেলে বিস্তারিত জানাতে পারবো।খুনের ঘটনায় মামলা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা মামলার অপেক্ষায় বসে নেই।খুন যেহেতু হয়েছে মামলা তো হবেই।পরিবারের সদস্যরা মানসিক ভাবে এই মূহুর্তে সেই অবস্থায় নেই।খুনী পলাতক আছে,ইতিমধ্যে তাঁকে আটক করতে আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি।আশা করছি শীঘ্রই আমরা তাঁকে আটক করতে সক্ষম হবো।

রংধনু‘র রফিকসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের

স্টাফ রিপোর্টার:

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়নের নাওড়ায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত শিক্ষার্থী দ্বীন ইসলামের মা ঝর্ণা বেগমের আহাজারি

স্কুল শিক্ষার্থী দ্বীন ইসলাম নিহত হওয়ার ঘটনায় জসু মেম্বারকে প্রধান আসামি করে রফিকুল ইসলাম, মিজানুর রহমান, শফিক, আলাল, সেলিম, নাপিত দুলালসহ ৩১ জনকে আসামি করে রূপগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাতে নিহতের পিতা বিল্লাত হোসেন বাদী হয়ে এ অভিযোগ দায়ের করেন।

অভিযোগের এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রফিক, তাঁর ভাই মিজানুর রহমান ও শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে অস্ত্রধারীরা নাওড়া এলাকার সাবেক মেম্বার মোশারফ ভূঁইয়ার বাড়ি জবরদখল করতে যায়। এ সময় দ্বীন ইসলাম ও মোশারফ মেম্বারের লোকজন তাদের বাধা দেয়। এক পর্যায়ে রফিকের নির্দেশে জসু মেম্বার শটগান দিয়ে গুলি ছোড়েন। গুলি দ্বীন ইসলামের পেটে ও বুকে বিদ্ধ হয়। দ্বীন ইসলাম মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরে জসু মেম্বারের কাছ থেকে মিজান শটগান ছিনিয়ে নিয়ে দ্বীন ইসলামের বুকে গুলি করেন।

মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

দ্বীন ইসলামের স্বপ্ন উড়ে গেল মিজানের গুলিতে :

‘আমার চানডার কি দোষ আছিল গো! আমার পুতে (ছেলে) কইত, মা আমি বড় অইয়া মানুষ অইমু। তোমগো দুঃখ শেষ করমু। বাবার আর কষ্ট কইরা মাছ বেচবার লাগব না। আমার পুতের আশা খান খান কইরা দিল মিজানে। রফিকের নির্দেশে মিজান নিজে গুলি কইরা আমরার পোলাডারে মাইরা ফালাইছে।’ বুক চাপড়ে ডুকরে কাঁদছিলেন আর কথাগুলো বলছিলেন নাওড়ায় নিহত সদ্য এসএসসি পাস করা শিক্ষার্থী দ্বীন ইসলামের মা ঝর্ণা বেগম।
কায়েতপাড়া ইউনিয়নের নাওড়া মধ্যপাড়া হাজিবাড়ি মসজিদের পেছনের বাড়িটি বিল্লাত হোসেনের। গতকাল শুক্রবার বিকেলে সরেজমিনে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়িটির ভেতরে নারী-পুরুষের জটলা। নিহত দ্বীন ইসলামের মা ঝর্ণা বেগম, বোন শিলা আক্তারের বুকফাটা কান্নায় সেখানকার পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। তাদের পাশে থাকা নারীরাও অভিশাপ দিচ্ছিল। খানিক পর ঘরে প্রবেশ করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে জ্ঞান হারান দ্বীন ইসলামের বাবা বিল্লাত হোসেন। পরে কয়েকজন তাঁর মুখে পানির ঝাপটা দিলে জ্ঞান ফিরে আসে তাঁর। এর পরই হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করেন তিনি। বিল্লাত হোসেন বলেন, ‘আমার পোলায় তো কোনো দোষ করে নাই। আমার পোলারে ক্যান মিজানে গুলি করল? পোলাডায় কইত, বাবা আমাগো অভাবের দিন শেষ অইব। আমি লেহাপড়া কইরা বড় অমু। আর লেহাপড়া করতে না পারলে বিদেশ যামুগা।
পোলাডায় লেহাপড়ার ফাহে (ফাঁকে) ফাহে কাম করত। আমি কইতাম, বাবা তোর কাম করার দরকার নাইগা। লেহাপড়া কর। আমার কতা হুনত না। কইত, তুমি একলা কষ্ট করবা ক্যান, বাবা! আমার হেই সোনার টুকরারে আমি এহন কই পামু?’

দ্বীন ইসলামের বোন শিলা আক্তারের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমার ভাইডা শান্তশিষ্ট আছিল। কেউর লগে কাইজা-ঝগড়া করত না। বাবার পাশাপাশি ও কাম করত। আমি আমার জামাইর বাড়ি থেইক্যা বাপের বাড়িত আইলে কইত, মা পিঠা বানাও, আমার বোইনে খাইব। অহন আর কেডা কইব এই কতা। আমার ভাইরে তো ওরা মাইরা ফালাইছে।’

পাশ থেকে মা ঝর্ণা বেগম বলেন, ‘পুতের স্বপ্ন আছিল লেহাপড়া শিখা (শিখে) পুলিশ অইব। পুতে মেট্রিক পাস করছে। অভাবের লেইগ্যা কইছিলাম ঈদের পর মালয়েশিয়া পাডাইয়া দিমু। কাগজপত্রও করছি। কোনোডাই ওর কপালে জুটল না। মাইয়া দেখছিলাম বিয়া করামু। আমার একটা মাত্র পোলা। চাইছিলাম, বিয়া করাইয়া নায়-নাতকুরের মুখ দেখমু। কিছুই অইল না। আমার বংশে বাত্তি (আলো) দেওয়ার আর কেউ রইল না। আল্লাহ তুমি রফিফ, মিজানের বিচার কইরো।’ ওই বাড়িতে আসা কয়েকজন নারী-পুরুষ বলেন, ‘দ্বীন ইসলাম পোলা হিসেবে ভালা আছিল। লেহাপড়া করত। কাম করত। কারো লগে কোনো সময় কাইজা-ঝগড়া করে নাই। এ রহম একটা পোলারে মাইরা ফালাইছে, এইডার বিচার আল্লায় করব।’

এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলে, ‘আমরা সাধারণভাবে জীবন যাপন করতে চাই। নাওড়া একটা সুন্দর গ্রাম হয়ে উঠুক, এটা চাই। আমরা রফিক-মিজান হায়েনার কাছ থেকে মুক্তি চাই। ওরা বাঘের চেয়ে হিংস্র। ওরা মানুষের রক্ত নিয়ে হোলি খেলে। নাওড়ায় এ পর্যন্ত কয়েকটা খুন করেছে ওরা। দ্বীন ইসলামের আগে স্বাধীন নামে এক ছেলেকে খুন করেছে রফিক-মিজান গং।’

স্থানীয়রা অভিযোগ করে, ‘রফিক-মিজান বলে বেড়াচ্ছে, একটা খুন ওগো লেইগা বিষয় না। ওগো নাকি টাকা-পয়সার অভাব নাই। তিন কোটি টাকা রাখছে খুন থেকে বাঁচার লাইগা। আর পুলিশ নাকি হেগো পকেটে। আরো বড় বড় মন্ত্রী-এমপি নাকি হেগো লগে আছে। আল্লায় জানে আবার কারে খুন করে।’ স্থানীয়রা আরো অভিযোগ করে বলে, ‘আমাগো ভরসা আল্লাহ। হের পরে শেখ হাসিনা। তিনি সাধারণ মানুষের দুঃখ দেখেন। তিনি বিচার করব। এই হায়েনাগো বিচার আল্লায় করব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি আমাগো বাঁচান।’

এদিকে নাওড়া এলাকায় এখনো থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এলাকার মোড়ে মোড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। গতকাল বিকেল ৫টা পর্যন্ত এ ঘটনায় থানায় কোনো মামলা করা হয়নি।

রূপগঞ্জ থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, ‘এখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এলাকার বিভিন্ন স্পটে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। থানায় এখনো কেউ মামলা করেনি। আমরা অভিযোগও পাইনি। হয়তো লাশ দাফনের পর অভিযোগ আসবে।’
##

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম
বিদেশ যেতে না পারায় মাইক ভাড়া করে এলাকাবাসিকে গালিগালাজ করলেন কিশোরগঞ্জের যুবক জুলাই সনদে স্বাক্ষর করল গণফোরাম অন্যদেরও সই করার আহ্বান কমিশনের সূচক সাড়ে ৩ মাস আগের অবস্থানে লেনদেন ৪ মাসে সর্বনিম্ন আওয়ামীলীগ ফিরলে হাসিনার পা ধরেও মাফ পাবেন না: রাশেদ খান বিমানবন্দর অগ্নিকান্ডে পুড়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম কুমিল্লায় গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার, পালিয়েছেন স্বামী ও তাঁর পরিবারের লোকজন ঢাকা এলজিইডিতে দুর্নীতির একচ্ছত্র অধিপতি বাচ্চু মিয়া বিমান বন্দরের সামনে এখোনো উৎসুক জনতার ভীড় নেভেনি আগুন বাড়িভাড়া ৫০০ টাকা বৃদ্ধি করে প্রজ্ঞাপন জারি শিক্ষকদের সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড মামলার পথেই হাঁটছে বকশীগঞ্জের সাংবাদিক নাদিম হত্যা মামলা