ইউক্রেনে যুদ্ধ সরঞ্জাম ক্রয়ে দুর্নীতি পার্লামেন্ট সদস্যসহ সরকারি কর্মকর্তা গ্রেপ্তার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

ইউক্রেনে ড্রোনসহ বিভিন্ন যুদ্ধ সরঞ্জাম কেনার সময় বড় ধরনের ঘুষ কেলেঙ্কারির ঘটনায় একজন পার্লামেন্ট সদস্য ও একাধিক সরকারি কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ইউক্রেনের দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাগুলো তদন্ত করে এই অনিয়মের তথ্য উদ্‌ঘাটন করে। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এক বিবৃতিতে জানান, এ দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন এক সংসদ সদস্য, জেলার ও শহরের প্রশাসনের কয়েকজন প্রধান এবং ন্যাশনাল গার্ডের কয়েকজন সদস্য।

তদন্তে জানা যায় সরকারি পক্ষ থেকে যুদ্ধ সরঞ্জাম সরবরাহের চুক্তি করতে গিয়ে অভিযুক্তরা সরঞ্জামের দাম প্রকৃত মূল্যের চেয়ে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি দেখিয়েছিলেন। এর মাধ্যমে তারা বিপুল অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে জেলেনস্কি আরও লেখেন ইউক্রেনে দুর্নীতি বরদাশত করা হবে না। তিনি দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাগুলোর কাজের জন্য তাদের ধন্যবাদ জানান।

দেশজুড়ে বিক্ষোভের পর গত বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাগুলোকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপরই ড্রোন ও ইলেকট্রনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম কেনায় দুর্নীতি কেলেঙ্কারির খবরটি প্রকাশ পেল। সম্প্রতি জেলেনস্কির সরকার পার্লামেন্টে একটি বিল উত্থাপন করলে তা ব্যাপক বিরোধিতার মুখে পড়ে। বিলটিতে ইউক্রেনের জাতীয় দুর্নীতিবিরোধী ব্যুরো ও বিশেষ দুর্নীতিবিরোধী কৌঁসুলির কার্যালয়ের স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছিল।

জেলেনস্কি অভিযোগ করেছিলেন এসব সংস্থার ওপর রাশিয়ার প্রভাব আছে এবং তা দূর করতে হবে। তিনি চাইছিলেন, উচ্চপর্যায়ের দুর্নীতির মামলায় কাকে অভিযুক্ত করা হবে, তা নির্ধারণের ক্ষমতা সাধারণ কৌঁসুলির হাতে দেওয়া হোক। ওই বিল দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে ইউক্রেনের জন্য এক ধাপ পিছিয়ে যাওয়ার মতো। বিলটি উত্থাপনের পর দেশে বিক্ষোভ শুরু হয়। ২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরু করার পর থেকে দেশটিতে হওয়া সবচেয়ে বড় সরকারবিরোধী বিক্ষোভের ঘটনা এটি।

জনগণের ক্ষোভ বুঝতে পেরে জেলেনস্কি নতুন একটি বিল উত্থাপন করেন। এতে ওই ব্যুরো ও কার্যালয়কে আগের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। আগের বিল পাস হওয়ার মাত্র ৯ দিনের মধ্যে নতুন বিল পার্লামেন্টে পাস হয়। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গোয়েন্দা শাখার (এইচইউআর) প্রধান কিরিলো বুদানভ জনগণের কথা শোনা ও দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাগুলোর ক্ষমতা নিয়ে ভুল সিদ্ধান্ত না নেওয়ার জন্য জেলেনস্কিকে ধন্যবাদ জানান।

ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) মিত্রদেশগুলোও জেলেনস্কির এ সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছে। আগের বিল নিয়ে তারাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। ইইউতে ইউক্রেনের যোগ দেওয়ার চেষ্টায় দুর্নীতিবিরোধী লড়াইয়ের বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৪ সালে ইউরোপীয় কমিশন ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া শর্ত অনুযায়ী ইউক্রেন দুর্নীতিবিরোধী ওই দুই স্বাধীন সংস্থা গঠন করে।

এ পদক্ষেপের আওতায় ২০২২ সালে ইউক্রেনকে ইইউর সদস্যপদের জন্য প্রার্থী হওয়ার মর্যাদা দেওয়া হয়। এর মধ্য দিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে আরেক ধাপ এগিয়ে যায় দেশটি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইউক্রেনের ওই দুটি সংস্থা বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও খাতে কোটি কোটি ডলারের দুর্নীতির ঘটনায় তদন্ত চালিয়েছে এবং ব্যাপক অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে।২০২৩ সালে এক যৌথ তদন্তের ভিত্তিতে ইউক্রেনের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান ভসেভোলোদ কনিয়াজিয়েভকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে ৩০ লাখ ডলারের ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা প্রক্রিয়া আপাতত স্থগিত

স্টাফ রিপোর্টার:

যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা কার্যক্রম আপাতত স্থগিত করেছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। একইসঙ্গে শিক্ষার্থী এবং এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের ভিসার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অতিরিক্ত যাচাই-বাছাইয়ের পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।

বুধবার (২৮ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, এক কূটনৈতিক বার্তায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বিশ্বজুড়ে মার্কিন দূতাবাসগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন, নতুন শিক্ষার্থী ভিসার জন্য আপয়েন্টমেন্ট কার্যক্রম বন্ধ রাখতে। বার্তায় বলা হয়েছে, এই স্থগিতাদেশ পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।

বার্তায় উল্লেখ করা হয়, সামাজিক মাধ্যমে স্ক্রিনিং বা নজরদারি জোরদার করা হবে, বিশেষ করে শিক্ষার্থী এবং এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম ভিসার ক্ষেত্রেই। এতে মার্কিন দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলোর ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে।

সিএসবি নিউজ অভ্যন্তরীণ এই নির্দেশনার যে কপি হাতে পেয়েছে, তাতে বলা হয়েছে—যেসব শিক্ষার্থী এখনও সাক্ষাৎকারের তারিখ পাননি, তাদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাতিল করতে হবে। তবে যাদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট আগে থেকেই নির্ধারিত, তারা সাক্ষাৎকার দিতে পারবেন।

এই পদক্ষেপ এমন সময়ে নেওয়া হলো, যখন ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক উত্তেজনাকর অবস্থায় রয়েছে। ট্রাম্প অভিযোগ করছেন, এসব বিশ্ববিদ্যালয় বামপন্থি চিন্তাধারায় প্রভাবিত এবং ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভের আড়ালে ইহুদিবিদ্বেষ ছড়াতে সাহায্য করছে।

হোয়াইট হাউস আরও অভিযোগ করেছে, কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ‘বৈষম্যমূলক ভর্তি নীতি’ বজায় রাখছে এবং অভিবাসন আইন লঙ্ঘন করছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন ‘মুক্ত মতপ্রকাশের অধিকার খর্বের’ চেষ্টা করছে।

বিশেষভাবে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়কে ট্রাম্প প্রশাসনের রোষানলে পড়তে হয়েছে। সম্প্রতি প্রশাসন হার্ভার্ডের বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি ও বিদেশি গবেষক রাখার অনুমোদন বাতিল করে। যদিও একটি ফেডারেল আদালত এই সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছে।

হার্ভার্ডে এক-চতুর্থাংশ শিক্ষার্থী বিদেশি। ফলে এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্য তা মারাত্মক আর্থিক ও শিক্ষাগত বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

মূলত অধিকাংশ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীকে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার জন্য নিজ নিজ দেশের মার্কিন দূতাবাসে সাক্ষাৎকার দিতে হয়। এ ধরনের ভিসার প্রক্রিয়ায় সামাজিক মাধ্যম যাচাইয়ের প্রসার তাদের আবেদন প্রক্রিয়াকে জটিল ও সময়সাপেক্ষ করে তুলবে।

যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশি শিক্ষার্থীদের উচ্চ টিউশন ফির ওপর নির্ভরশীল। ফলে এই নীতিমালার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর রাজস্বও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এক প্রশ্নের জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, “আমরা দেশের ভেতরে কে আসছে তা যাচাই করার বিষয়টিকে খুব গুরুত্ব সহকারে দেখি এবং সেটা অব্যাহত থাকবে।”

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম