সিনহা চাইলেন পানি, করলেন পা চেপে মৃত্যু নিশ্চিত

কক্সবাজার প্রতিনিধি ॥

সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানের চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলায় দ্বিতীয় দফায় সোমবার আরও একজন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে। এ মামলার ৯ নং ও চতুর্থ সাক্ষী হিসেবে কামাল হোসেন সাক্ষ্য প্রদান করেছেন।

বরখাস্ত ওসি প্রদীপ-লিয়াকতসহ এ মামলার ১৫ আসামিদের উপস্থিতিতে সোমবার সকাল সোয়া ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলে আদালতের কার্যক্রম।

এ সময় চাঞ্চল্যকর এই মামলার অন্যতম সাক্ষী কামাল হোসেন আদালতকে বলেন, ঘটনার সময় তারা কয়েকজন ঘটনাস্থলের আশপাশে ছিলেন। গুলি খেয়ে সিনহা মো. রাশেদ খান মাটিতে (রাস্তায়) লুটিয়ে পড়েন। তখনও তিনি জীবিত ছিলেন। তিনি (সিনহা) তখন পানি পানি বলে ছটফট করছিলেন। কিন্তু কেউ তাকে পানি দেয়নি। উল্টো টেকনাফের দিক থেকে ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ঘটনাস্থলে এসে সিনহার বুকে লাথি মারেন। গামবোট দিয়ে গলা চেপে সিনহার মৃত্যু নিশ্চিত করেন ওসি প্রদীপ।

এরপর বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও পরিদর্শক লিয়াকতসহ ১৫ জন আসামির পক্ষে আইনজীবীরা পৃথকভাবে কামাল হোসেনকে জেরা করেছেন।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম বলেন, সোমবার তিনজন সাক্ষী হাজির ছিলেন। কিন্তু একজনের সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরাতেই আদালতের সময় শেষ হয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, বিচার কাজের প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় পাঁচ দিনে মাত্র ৪জনের সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা শেষ করা সম্ভব হয়েছে।

মঙ্গলবার পঞ্চম সাক্ষীকে আদালতে উপস্থাপন করা হবে। এ সময় আসামি পক্ষ ‘অপ্রাসঙ্গিক’ জেরা করে সময় ক্ষেপণ করছেন বলে অভিযোগ করেন (পিপি) ফরিদুল আলম।

এদিকে বরখাস্ত ওসি প্রদীপ আইনজীবী রানা দাশ গুপ্ত আদালত চত্বরে সাংবাদিকদের বলেন, সাক্ষী কামাল হোসেন আদালতকে বলেছেন, খুব কাছ থেকে সেদিনের সংঘটিত ঘটনাটি তিনি দেখেছেন। অথচ তা ইতোপূর্বে তদন্ত কর্মকর্তাকে বলেননি। আর সাক্ষী নিজেকে সিএনজিচালক দাবি করলেও তার কোনো প্রমাণ নাই।আসামি পক্ষের আইনজীবী রানা দাশ গুপ্ত আরও দাবি করেন, একটি স্বার্থান্বেষী মহলের প্ররোচনায় এই মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাদেরই প্ররোচনায় সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিচ্ছেন।

এর আগে গত ২৩ আগস্ট থেকে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত টানা তিনদিনে মামলার বাদী মেজর সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস ও ঘটনার সময় সিনহার সঙ্গে থাকা সাহেদুল ইসলাম সিফাতের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছিল। রোববার আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন এই হত্যা মামলার ৩ নম্বর সাক্ষী মোহাম্মদ আলী।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।

এ ঘটনায় করা হত্যা মামলায় ওই বছরের ১৩ ডিসেম্বর ওসি প্রদীপ কুমার দাসসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা র্যা্ব-১৫-এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খায়রুল ইসলাম।

 

বনফুল-কিষোয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অবৈধ অর্থপাচারের অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার।
বাণিজ্য রপ্তানিতে বিশেষ অবদানর জন্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ হতে বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি) নির্বাচিত করা হয় প্রতি বছর। ২০২৪ সালে আওয়ামীলীগের আস্থাভাজন হওয়ায় লবিংয়ের মাধ্যমে এ তালিকায় স্থান করে নেন বনফুল-কিষোয়ান গ্রুপ অব কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. শহীদুল ইসলাম।

শহীদুল ইসলাম সিআইপি বনফুল-কিষোয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগের পাতানো নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১৫ আসন থেকে নির্বাচিত হওয়া সাবেক সংসদ সদস্য এমএ মোতালেব এমপির জ্যেষ্ঠ ছেলে। দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বনফুল-কিষোয়ান গ্রুপের এমডি ওয়াহিদুল ইসলাম ইসলামের।

প্রাইভেটাইজেশন অব স্টেট-এ ধারণা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করা হয়েছে, এমন অভিযোগ রয়েছে আওয়ামী মদদ-পুষ্ট নেতা ও শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ভাজন চট্টগ্রামের বনফুল ও কিষোয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ মোতালেবের বিরুদ্ধে। পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে চট্টগ্রামভিত্তিক খাদ্য প্রস্তুতকারী বনফুল ও কিষোয়ান স্ন্যাকস লিঃ এর বিরুদ্ধে ছিলো কোটি-কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকির নজির। তথ্যসূত্র বলছে, ২০২২ সালে কুমিল্লায় কোটি টাকার অধিক ও ২০১৯ সালে সাভারে ৬৮ লাখ টাকা কর ফাঁকির অভিযোগ ছিলো।

সে সময় এসব অভিযোগের সত্যতা পেয়ে ততকালীন ভ্যাট গোয়েন্দা বিভাগ অভিযান চালিয়ে বনফুলের বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির দায়ে পৃথক দুটি মামলাও দায়ের করে। অভিযোগ রয়েছে, ব্যবসায়ী থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া এম এ মোতালেবের প্রতিষ্ঠানটির সারাদেশের শাখাগুলো জুড়ে নিম্ন মানের মিষ্টি বিক্রি, মানহীন-মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার সরবরাহ সহ সরকারি ভ্যাট/ রাজস্ব ফাঁকির মতো নানান দুর্নীতির নজির ও রয়েছে। তবে এত সকল অভিযোগ থাকার পরেও আওয়ামী সরকারের ছায়াতলে থাকার কারনে সে সময় পেয়েছিলেন রাজকীয় সূযোগ সুবিধাদি। রপ্তানি বাণিজ্যের আড়ালে প্রতিষ্ঠান এর নাম ভাঙ্গিয়ে দেশের বাহিরে পাচার করেছেন বিপুল পরিমাণ অর্থ।

জানা যায়, এম এ মোতালেব কর্ম জীবনের শুরুতে শিক্ষকতায় নিয়োজিত ছিলেন। পরবর্তীতে ব্যবসা শুরু করেন নিজেই। ঢাকার বায়তুল মোকাররম গেটে দাঁড়িয়ে স্ন্যাকস বিক্রি করতেন। পরবর্তীতে ১৯৮৯ সালে মাত্র ২০ লাখ টাকা পুঁজি এবং ২০ জন কর্মচারীর নিয়ে বনফুল লিঃ গড়েন। সেসময় চট্টগ্রাম শহরে চারটি শোরুম চালু করেন পরবর্তীতে ২০১৩ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম ছাড়াও সিলেট ফেনী,ও খুলনায় ক্ষুদ্র পরিসরে ব্যবসা সম্পসারন করেন। ২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর এম এ মোতালেব ব্যবসায়ী থেকে রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠা শুরু করেন। অভিযোগ রয়েছে, সে সময় থেকে আওয়ামী সখ্যতা গড়ে তুলতে মরিয়া হয়ে ওঠেন মোতালেব।

একসময় আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারক পর্যায়ের সাথে আত্মিক সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে ব্যবসায়ী থেকে রাজনীতিবিদ বনে যান। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশীর্বাদ পুষ্ট হয়ে ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রথমবার চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে যান এমএ মোতালেব।

একই সময়ে সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে ও দায়িত্ব পালন করেছিলেন দীর্ঘ সময়। পরবর্তীতে ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেলেও নামে স্বতন্ত্র আওয়ামী ড্যামি প্রার্থী হিসেবে চট্টগ্রাম-১৫ আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এমপি বনে যাওয়ার পরপরই এমপি কোটায় শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করেন প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের বিলাসবহুল প্রাডো গাড়ি।

শুধু তা নয় ৪ আগস্ট দুপুরের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার একটি মিছিল চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সাতকানিয়া-কেরানীহাট গোলচত্বর এলাকায় পৌঁছালে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে মিছিলে গুলিবর্ষণ সহ নির্বিচারে হামলা চালায়। সে সময় অন্তত অর্ধশতাধিক গাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালায় লীগ সমর্থক কর্মীরা। মুলত এসব হামলার পিছনের অর্থ যোগানদাতা হিসেবে মোতালেবের হাত রয়েছে বলে জানান স্থানীয় সাধারণ ছাত্র ও বৈষম্য বিরোধীরা। পরবর্তীতে সে হামলার ঘটনায় সরকার পতনের পর। বনফুল মোতালেবের বিরুদ্ধে লোহাগাড়া ও সাতকানিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগীরা।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম