ইমামকে দিগম্বর করে ভিডিও ধারণকারী গ্রেফতার গাজীপুরের সেই মাদ্রাসায় এখনো তালা ঝুলছে

মোসাঃহাফসা আক্তার।

গাজীপুরে জুমার বয়ানে মাদকের কুফল নিয়ে আলোচনার জেরে মসজিদের ইমামকে মারধর ও দিগম্বর করে ভিডিও ধারণ করার মামলার প্রধান আসামী মফিজুর রহমান টুটুলকে মঙ্গলবার দুপুরে গ্রেফতার করেছে মহানগর গাছা থানা পুলিশ। টুটুল গাছা থানার চান্দরা এলাকার একজন চিহ্নিত মাদক কারবারি। টুটুল ও তার সহযোগীদের অত্যাচারে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল। মঙ্গলবার বিকেলে গাছা থানায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জিএমপি দক্ষিণ বিভাগের কর্মকর্তারা এ তথ্য জানান।
এদিকে সরেজমিনে চান্দরা আল আকসা জামে মসজিদ ও মসজিদ সংলগ্ন দারুল হাবিব মাদ্রাসায় গিয়ে ভুক্তভোগী ইমাম মুফতি শফিকুল ইসলাম তালুকদারকে পাওয়া যায়নি। মাদ্রাসাটির প্রধান ফটকে তালা ঝুলতে দেখা গেছে। মুসল্লিরা জানান, আলোচিত ঘটনার পর তিনি দুই মাসের ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনায় চলে গেছেন। তার পরিচালিত দারুল হাবিব মাদ্রাসাটিও সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আসরের নামাজের সময় কথা হয় মুসল্লি শামসুল হকের সাথে। তিনি বলেন, ‘আমার বাড়ি অন্য মহল্লায়। আমাদের মহল্লার মসজিদের পরিবর্তে আমি এই মসজিদের ইমামের পেছনেই বেশি নামাজ পড়ি। এই ইমামের সূরা-কিরাত উচ্চারণ আমার খুব ভালো লাগে, তার বয়ান শুনলে হৃদয় কেঁপে উঠে।’
অপরদিকে মাদকের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানান, মাদক কারবারি টুটুল ও তার সহযোগীদের অত্যাচারে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। টুটুল ও তার বড় ভাই সরকারি দল আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পান না। তাছাড়া টুটুল গাজীপুর সিটি করপোরেশনের গাছা অঞ্চলের প্রভাবশালী একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলরের ঘনিষ্ট লোক হিসেবে এলাকায় পরিচিত এবং একসময় সাবেক গাছা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের একজন প্রভাবশালী নেতার সাথে ঝুট ব্যবসাও করতেন টুটুল। মসজিদের একজন মুসল্লি মাদকের বাস্তব চিত্র দেখানোর জন্য সংবাদকর্মীদেরকে মসজিদে যাওয়ার রাস্তায় নিয়ে যান। এসময় ওই রাস্তার পাশে বাউন্ডারি বেষ্টিত একটি খালি জায়গায় ফেনসিডিলের খালি বোতল ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
উল্লেখ্য, জুমার বয়ানে মাদকের কুফল নিয়ে আলোচনা করায় মসজিদের ইমামকে মারধর ও দিগম্বর করে ভিডিও ধারণ করার সংবাদ গত সোমবার বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশ হওয়ার পর প্রশাসনের টনক নড়ে। এ ঘটনায় সোমবার বিকেলে পুলিশের পক্ষ থেকে ওই এলাকায় মাদক বিরোধী সমাবেশ করা হয়। এ সমাবেশে একাধিক বক্তা পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘মাদক কারবারিদের কবল থেকে আমাদেরকে বাঁচান, আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে বাঁচতে চাই।’

৩ বছরে প্রায় শত কোটি টাকার অনিয়ম:বিআইডব্লিউটিএ’র

 

স্টাফ রিপোর্টারঃ

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ ( বিআইডব্লিউটিএ) এর নদী খনন ও নিয়মিত পলি অপসারণে ব্যবহৃত ড্রেজারগুলো সংরক্ষণ, পরিচালনা ও মেরামত খাতে গত ৩ বছরে প্রায় শত কোটি টাকা ভুয়া বিল ভাউচারে আত্মসা/ করা হয়েছে মর্মে অভিযোগ উঠেছে। এ ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন পেশার নাগরিকরা। রাষ্ট্রীয় অর্থের অপব্যবহার ও অপচয় বন্ধে এ খাতের গত তিন বছরের অনিয়ম,দুর্নীতির তথ্য উদ্ঘাটনে একটি স্বাধীন বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের দাবিও জানিয়েছেন তারা। বুধবার (২ নভেম্বর) এক যৌথ বিবৃতিতে বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের ২৩ জন প্রতিনিধি এ দাবি জানান।

বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) নৌযান চলাচলের উপযোগী নাব্যতা উন্নয়ন ও সংরক্ষণে নদী খনন ও নিয়মিত নৌপথের পলি অপসারণ করে থাকে। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এ কাজের জন্য সংস্থার বহরে ৪৫টি ড্রেজারসহ প্রয়োজনীয় সংখ্যক জলযান রয়েছে। এগুলো সংরক্ষণ, পরিচালনা ও মেরামতের জন্য বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগের অধীনে রয়েছে আলাদা কয়েকটি ‘ড্রেজারবেইজ’।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের বরাত দিয়ে যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ড্রেজার ও সহায়ক জলযানগুলো সংরক্ষণ, পরিচালনা ও মেরামত খাতে ব্যাপক আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে জলযানগুলোর মিটার টেম্পারিং করে জ্বালানি তেল আত্মসাৎ ও মেরামতের নামে সরকারি টাকা হরিলুট অন্যতম। বিবৃতিদাতারা এ খাতের গত তিন বছরের অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তের জন্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানান। এছাড়া স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে প্রতি মাসে খাতভিত্তিক খরচের তথ্য গণমাধ্যমে সরবরাহ ও সংস্থার ওয়েবসাইটে প্রকাশের দাবিও জানানো হয়।

বিবৃতিদাতারা হলেন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন, বিশিষ্ট শিশু সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুর রহমান সেলিম, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে, গ্রিন ক্লাব অব বাংলাদেশের (জিসিবি) কার্যকরী সভাপতি হাজী মোহাম্মদ শহীদ মিয়া, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ, নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র, নৌপ্রকৌশলী মো. আবদুল হামিদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহসভাপতি মানিক লাল ঘোষ, প্রভারটি ইমুলিনেশন অ্যাসিস্ট্যান্স সেন্টার ফর এভরিহোয়্যারের (পিস) নির্বাহী পরিচালক ইফমা হুসেইন, উন্নয়ন ধারা ট্রাস্টের সদস্যসচিব আমিনুর রসুল বাবুল, আলোকিত গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি বাপ্পিদেব বর্মণ, দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল আলম, মিডিয়া ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডেভেলপমেন্টের (মেড) নির্বাহী পরিচালক রফিকুল ইসলাম সবুজ, বাংলাদেশ হকার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার হায়াৎ, লেখক ও শিশুসংগঠক রাজন ভট্টাচার্য, জনলোকের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী রফিকুল ইসলাম সুজন, সচেতন সংস্থার আহ্বায়ক সাকিলা পারভীন, কমিটি টু প্রোটেক্ট রিভার অ্যান্ড কোস্টের (সিপিআরসি) সভাপতি কামরুজ্জামান নাছিম, ঢাকা উত্তর সিটি নাগরিক ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক মোস্তফা কামাল আকন্দ, পুরোনো ঢাকা নাগরিক উদ্যোগের সভাপতি নাজিম উদ্দিন ও মুক্তি শিখার আহ্বায়ক জিহাদ আরিফ।
এ ক্ষেত্রে প্রায় সকল বিবৃতিদাতাই বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেককে দায়ী করেছেন।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম