সড়কের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীমের ৪ ঠিকাদারি সিন্ডিকেট

স্টাফ রিপোর্টারঃ

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সংগ্রহ ও সংরক্ষণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীমুল হক ও তার সিন্ডিকেট অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ চারটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো হলো, জননী ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, মেসার্স আশা এন্টারপ্রাইস, মিলন অ্যান্ড বাদ্রার্স, ইকন ইঞ্জিনিয়ারিং। ক্ষমতার অপব্যবহার করে নানাভাবে হুমকি দেখিয়ে এই নির্দিষ্ট চার ঠিকাদারের ভয়ে সাধারণ ঠিকাদারদের টেন্ডার দাখিলেরও সুযোগ দেওয়া হয় না।

আমাদের হাতে আসা একাধিক তথ্য দেখা যায়, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) নিয়ম না মেনে নির্দিষ্ট ঠিকাদারের মাধ্যমে বেশ কিছু নিরাপত্তা সামগ্রী (সিকিউরিটি মেটেরিয়াল) ক্রয় করে অনৈতিকভাবে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন তেজগাঁও সংগ্রহ ও সংরক্ষণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীমুল হক ও একই দপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. সাইদুল ইসলাম। ক্রয় সংক্রান্ত কাগজে লক্ষ্য করা যায় যে, ৫০০ টাকা মূল্যের ২০ টি আন্ডার চেকিং মিরর ক্রয় করেছেন ১০ লাখ ৮ হাজার টাকায়। অর্থাৎ ২০ টি চেকিং মিররের প্রকৃত বাজার মূল্য মাত্র ১০ হাজার টাকা হলেও কিনেছে ১০০ গুণ বেশি দামে। ঢাকার বিভিন্ন মার্কেটে ঘুরে দেখা গেছে, এসব যন্ত্রাংশ বাজারমূল্যের চেয়ে ২ থেকে ২০ গুণ দামে কেনা হয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিষয়টি নিয়ে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হলেও অজানা কারণে বর্তমানে তার কোন অগ্রগতি নেই।

অবৈধভাবে টেন্ডার আবেদনের মাধ্যমে প্রকৌশলী শামীমুল হক তার নির্দিষ্ট চারটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিয়েছেন একাধিকবার। ক্রয়কৃত পণ্যের মূল্য বেশি দেখিয়ে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। যার লিখিত প্রমাণ আজকের সাংবাদের হাতে এসেছে। প্রাপ্ততথ্য মতে, গত ২০২১ সালের ১০ মে’ চারটি টেন্ডারের মাধ্যমে ব্যাপক অনিয়ম ও বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন সওজ এর প্রকৌশলী শামীমুল হক ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী সাইদুল ইসলাম। টেন্ডার নাম্বারগুলো হলো- ৪৪৯০৮১, ৪৪৯০৮২, ৪৪৯০৮৩, ৪৪৯০৮৪। অর্থনৈতিক কোড নং- ৪১২১১০১।

আমাদের হাতে আসা তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মাত্র প্রায় ১৫০ টাকার একেকটি ট্রাফিক বাটনের বাজার মূল্য দেখানো হয় ৭ হাজার টাকা। অর্থাৎ ২০ টি রির্চারজেবল ট্রাফিক বাটন ক্রয় হয়েছে এক লাখ ৪০ হাজার টাকায়। ৫০০ টাকা মূল্যর ২০ টি আন্ডার চেকিং মিরর ক্রয় মূল্য দেখানো হয় ১০ লাখ ৮ হাজার টাকা। অর্থাৎ ২০ টি চেকিং মিররের প্রকৃত বাজার মূল্য মাত্র ১০ হাজার টাকা। ডাবল হুকের ২২ টি সেফটি বেল এর মূল্য দেখানো হয় ছয় লাখ ১৬ হাজার টাকা। যদিও প্রতিটি ডাবল হুকের প্রকৃত বাজার মূল্য দেড় হাজার টাকা। ৩ হাজার ৬০০ টাকা মূল্যর ১০ কয়িল নেটওয়ার্ক কেবলের মূল্য ধরা হয়েছে ছয় লাখ ৯৭ হাজার টাকা। যার প্রকৃত বাজার মূল্য মাত্র ৩৬ হাজার টাকা। ৪০০ টাকা মূল্যের সেফটি হেলমেট ক্রয় করা হয়েছে ৩৬ হাজার টাকায়। যদিও প্রতিটি হেলমেটের বাজার মূল্য ৪০০ টাকা।

দুইটি এনভিআর (নেটওর্য়াক ভিডিও রেকর্ডার) ক্রয় মূল্য দেখানো হয় এক লাখ ৬৪ হাজার টাকা। যার প্রকৃত বাজার মূল্য ১২ থেকে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার টাকা। ১৪ হাজার টাকার ২টি ৪টিবি স্টোরেজ হার্ড ডিস্ক ক্রয় মূল্য দেখানো হয় ১ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। চার পোর্টের দুইটি সুইচের ক্রয় মূল্য দেখানো হয় এক লাখ ২৪ হাজার টাকা। যার প্রকৃত বাজার মূল্য ছয় থেকে আট হাজার টাকা। আট পোর্টের দুইটি সুইচের ক্রয় মূল্য দেখানো হয় এক লাখ ২৪ হাজার টাকায়। যার প্রকৃত বাজার মূল্য সাত থেকে দশ হাজার টাকা। ১৫ কয়িল নেটওর্য়াক কেবলের ক্রয় মূল্য দেখানো হয় ৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। প্রতি কয়িল কেবলের প্রকৃত বাজার মূল্য চার হাজার টাকা। ২৭ ইঞ্চি দুইটি এলইডি মনিটরের ক্রয় মূল্য দেখানো হয় ১ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। যার একটির বাজার মূল্য আট হাজার টাকা। ৫ হাজার টাকা মূল্যর একটি টু হোয়েল ট্রলির ক্রয় মুল্য দেখানো হয় ২৭ হাজার ৯৯ টাকা। তিন হাজার টাকা মূল্যের ৪৩টি স্ক্যানারের ক্রয় মূল্য দেখানো হয় সাত লাখ ৭৪ হাজার টাকা। আরো বেশ কিছু পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে একই ভাবে অতিরিক্ত বিল দেখিয়ে অর্থ আত্মসাত করেছেন নির্বাহী প্রকৌশলী শামীমুল হক এবং ২০২১ সালে এক কোটি টাকার একটি টেন্ডার হতে প্রায় ৮৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন সওজ এর নির্বাহী প্রকৌশলী ও তার সিন্ডিকেট।

নির্বাহী প্রকৌশলী শামীমুল হকের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে বদলি অথবা পুনরায় বদলি (সাবেক কর্মস্থলে ফিরিয়ে আনা) বাণিজ্যের সাথেও যুক্ত থাকার বিষয়টি। আজকের সংবাদের হাতে আসা সওজের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আবদুস সবুর স্বাক্ষরিত বদলি আদেশে নজর দিলে লক্ষ্য করা যায় যে, ২০২১ নভেম্বর মাসের ২ ও ৯ তারিখে বদলি আদেশ পাওয়া যান্ত্রিক বিভাগের চার উপ-সহকারী প্রকৌশলী আকশ আলী, হাবিবুর রহমান, মোহাম্মদ রায়হান ও সাইদুল ইসলামকে ২১ নভেম্বর পুনরায় বদলি করে আনা হয়েছে সাবেক কর্মস্থলে। যার জন্য তদবির করেন নির্বাহী প্রকৌশলী শামীমুল হক। এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন একাধিক উপ-প্রকৌশলী। নাম না প্রকাশের শর্তে পটুয়াখালীর শূণ্য পদে বদলি হয়ে যাওয়া একজন উপ-সহকারী প্রকৌশলী বলেন, ২০২১ সালে পটুয়াখালী ফেরি বিভাগের শূন্য পদে আমার বদলি হলে সাবেক কর্মস্থলে বদলি হতে চাই কি না এ বিষয়ে জানতে চান নির্বাহী প্রকৌশলী শামীমুল হক। তিনি আমাকে বলেন, বদলির জন্য ১৮ লক্ষ থেকে ২০ লক্ষ টাকা খরচ করতে হবে।

প্রসঙ্গত, সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীমুল হকের বদলি বাণিজ্যে ও চার ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে কমিশন গ্রহণের মাধ্যমে কাজ দেওয়ার তথ্য-প্রমাণ সহ সংবাদ প্রকাশিত হয় একটি পত্রিকায় ‘চলছে দুদকের তদন্ত, থেমে নেই শামীম’শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হলে নির্বাহী প্রকৌশলী শামীমুল হক পক্ষ থেকে প্রতিবেদক’কে মামলা ও জীবননাশের হুমকি দেওয়া হয়। এছাড়াও ২৩জন ব্যক্তি দিয়ে সংবাদটি অনলাইন থেকে মুছে ফেলার জন্য অফিসে তদবির চালান শামীমুল হক। এদের মধ্যে কুলসুম নামের এক নারী সম্পাদককে বারবার ফোন দিয়ে নিজেকে সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীমুল হকের মেয়ে বন্ধু দাবি করে জানতে চায় কেন সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে এবং শামীমুল হকের দূর্নীতির বিষয়ে সংবাদ না প্রকাশের জন্য অনুরোধ জানান।

উল্লেখিত, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সংগ্রহ ও সংরক্ষণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীমুল হক কর্মজীবনের শুরুতে পটুয়াখালী ফেরি বিভাগে কর্মরত ছিলেন। সে সময় ফেরির যন্ত্রাংশ সংস্কার ও উন্নয়নের নামে অতিরিক্ত বিল উত্তোলন, ফেরি ঘাট ইজারাদার হতে সাপ্তাহিক ভিত্তিতে অর্থ আদায়, ফেরির জ্বালানী তেল ও লুব্রিকেন্ট অয়েল ক্রয়ের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বিল উত্তোলনের অভিযোগ ছিল নির্বাহী প্রকৌশলী শামীমের বিরুদ্ধে।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সংগ্রহ ও সংরক্ষণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীমুল হক এর সাথে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য একাধিক বার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি। ওয়াটসাপ এসএমএস দেওয়া হলে তিনি সিন করে কোনো উত্তর দেননি।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম মনির হোসেন পাঠানের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি এবং পরবর্তীতে মুঠোফোনে খুদে বার্তা দেওয়া হলেও তার উত্তর পাওয়া যায়নি।

 

শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে এলো শিবচরের ঘন কুয়াশা।

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকৃতিতে এখন ঋতুবদলের আয়োজন। শরৎ শেষে হেমন্ত নামছে। এরপর শীতকাল। কিন্তু এখনই প্রকৃতি যেন জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। মাদারীপুর জেলা শিবচর উপজেলায় এরই মধ্যে শুরু হয়েছে শীতের আমেজ।

শিশির ভেজা সবুজ ঘাসের ওপর ভোরের সূর্যের আলো হালকা লালচে রঙয়ের ঝিলিক দেখা গেছে। দূর থেকে দেখলে মনে হয় ঘাসের মাথায় যেন মুক্তোর মতো শিশির কণা জমে আছে।

সারদিনের তীব্র গরম শেষে গভীর রাত থেকে শুরু হচ্ছে হালকা হিমেল হাওয়া, সঙ্গে নামছে হালকা কুয়াশা। শীতকে ঘিরে সক্রিয় হচ্ছে গ্রাম অঞ্চলের পিঠাপুলির দোকানগুলো।

স্থানীয়রা বলছেন, এ বছর আগাম শীত অনুভব হচ্ছে। দিনের বেলা কিছুটা গরম থাকলেও সন্ধ্যা নামার পর থেকেই কুয়াশা পড়তে শুরু করে। রাতভর টিনের চলে হালকা বৃষ্টির মতো টিপটিপ শব্দে ঝড়তে থাকে কুয়াশা। বিশেষ করে গাছ গাছালি ও ধানের শীষে জমতে দেখা যায় শিশির।

গ্রামগুলোতে দেখা গেছে, পুরনো কাঁথা নতুন করে সেলাই করতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন নারীরা। আবার অনেকে বাড়ির উঠানে বা গাছের নিচে বসে রঙ-বেরঙের সুতো দিয়ে তৈরি করছেন নতুন কাঁথা।

উপশহর এলাকায় হাঁটতে বের হওয়া বাবুল সরদার নামের একজন চাকুরীজীবি বলেন, প্রতিদিন সকালে হাঁটতে বের হই। তবে এ বছরের মধ্যে আজকের সকালটাকে একটু অন্য রকম মনে হলো। চারদিকের সাদা কুয়াশা দেখে মনে হচ্ছে শীতের দিন চলে এসেছে। অথচ অর্ধেক রাত পর্যন্ত ঘরে ফ্যান চালাতে হয়েছে।

আসফর সাধারণ সম্পাদক মো. সেলিম মোল্লা বলেন, ঘাসের ওপর শিশির কণা রৌদ্রে ঝলমল করে, হাঁটাচলা করলে শীতে পা ভিজে যায়। আমাদের এলাকায় শীতের আগমন ঘটে গেছে। শীত এলাকার মানুষের জন্য কষ্টের সঙ্গে আনন্দেরও।

গ্রামের হাট-বাজারগুলোতে উঠতে শুরু করেছে শীতকালীন সবজি, বাজারে চোখে পড়ার মতো ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, বেগুন, ওলকপি, গাজর, টমেটো, শিমসহ ধনিয়া পাতার মতো শাকসবজি। অনেক কৃষক ব্যস্ত শীতের সবজি চাষে।

সবজি চাষি  বলেন, অন্য সময়ের তুলনায় ঠান্ডা আগে পড়ায় ফসলে বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দিচ্ছে পাতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। উপায় না পেয়ে ফসলে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হচ্ছে। তাতে উৎপাদন খরচও বেড়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে শিবচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা কৃষকদের সব সময় কারিগরি সহযোগিতাসহ বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, কৃষকদের সহায়তায় উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া হবে।

 

সবা:স:সু-০৯/১১/২৪

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম
প্রধান প্রকৌশলীর আস্থাভাজন ইএম ২ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কায়কোবাদ সম্পদের পাহাড় জানানো যাচ্ছে অভিযোগ, থানায় বসলেই ভিডিওকলে হাজির এসপি প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে কার্গো ভিলেজের অগ্নিকাণ্ডে অত্যন্ত হতাশাজনক : মির্জা ফখরুল রাজনৈতিক দের মাঝে যে অনৈক্য কুমিরের দেখা মিলল রাজশাহীর পদ্মায় সরকার ও সেনাবাহিনী, গণতন্ত্রে উত্তরণ ও ন্যায়বিচার যেন ব্যাহত না হয় আজ থেকে আমরণ অনশন, প্রত্যাখ্যান শিক্ষকদের শিক্ষার্থীরা রোডম্যাপের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিলেন শাকসু নির্বাচনের জুলাই সনদে স্বাক্ষর করল গণফোরাম অন্যদেরও সই করার আহ্বান কমিশনের সূচক সাড়ে ৩ মাস আগের অবস্থানে লেনদেন ৪ মাসে সর্বনিম্ন