১৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । দুপুর ২:৩৫ ।। গভঃ রেজিঃ নং- ডিএ-৬৩৪৬ ।।
স্টাফ রিপোর্টারঃ
বিএনপি সরকারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রিয়াজ রহমানের এপিএস আলমগীর কবির এখন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর বাস্তবায়নাধীন ‘দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্যে ব্যাপক প্রযুক্তিনির্ভর সমন্বিত সম্পদ ব্যবস্থাপনা (৩য় পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক।
যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে আউটসোর্সিংয়ে প্রায় পাঁচশ’ জনবল নিয়োগে অবৈধ আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে প্রকল্প পরিচালক আলমগীর কবীরের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীরা অভিযোগ করেছেন সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে। সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এদিকে, এসব অভিযোগের তদন্তকে তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে জনবল নিয়োগের পাঁয়তারা করে যাচ্ছেন আলমগীর কবির। তবে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আজহারুল ইসলাম খান বলেন, অভিযোগের বিষয়ে প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে অবৈধভাবে লোক নিয়োগের কোনো সুযোগ নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আলমগীর কবির ছিলেন শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা। এক সময় পেশায় শিক্ষক থাকলেও শিক্ষকতা ছেড়ে লাভজনক পদে পদায়িত হন। যেসব পদে পোস্টিং নিলে ঘুষ বাণিজ্য করা যায় বেছে বেছে সেসব পদে পোস্টিং নিচ্ছেন তিনি। এরমধ্যে প্রকল্প পরিচালক পদটাকেই তিনি বেছে নিয়েছেন। আবার প্রকল্পের কেনাকাটা শেষ হলেই তিনি চলে যান অন্য প্রকল্পে। ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি সরকারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রিয়াজ রহমানের এপিএস ছিলেন তিনি।
২০২০-২০২২ সাল পর্যন্ত জাতীয় স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউটের উপ-পরিচালক ছিলেন। এ ছাড়াও তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ইংলিশ ইন এ্যাকশন শীর্ষক প্রকল্পের পরিচালক ছিলেন। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের উচ্চ শিক্ষা মানোন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের এআইএফ কোর্ডিনেটরের দায়িত্ব পালন করেন।
অভিযোগ রয়েছে, যেখানেই পদায়িত হয়েছেন সেখানেই তিনি দুর্নীতির জন্য আলোচিত সমালোচিত হয়েছেন। ঢাকা ও তার জন্মস্থান বাগেরহাটে তার রয়েছে বিশাল সম্পদ। ঢাকার উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরে বিলাসবহুল বাড়ি, বসুন্ধরার কে-ব্লক ও এম-ব্লকে ৫ কাঠার ৪টি প্লট, ইস্কাটনে ৩টি ফ্ল্যাট ও ধানমন্ডিতে একটি ফ্ল্যাট। বাগেরহাটে চিংড়ি ঘের ছাড়াও আছে প্রায় ৩০ একর জায়গা।
যুব উন্নয়ননের কর্মকর্তারা বলেন, অবৈধভাবে লোক নিয়োগের অভিযোগে নিয়োগ বাতিল হলেও আবার দরপত্রের মাধ্যমে জনবল নিয়োগের জন্য কোম্পানি নির্বাচন করা হলেও কোম্পানিকে বাদ দিয়ে তিনি নিজেই জনবল নিয়োগ দিয়ে দিচ্ছেন। আলমগীর কবিরের এই নিয়োগ বাণিজ্যে আরও দুজনের সম্পৃক্ততা রয়েছেন। এ ছাড়া তাকে সহযোগিতা করছেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের আরও কয়েকজন কর্মকর্তা।
কর্মকর্তারা অভিযোগ করে আরও বলেন, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর বাস্তবায়নাধীন আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে জনবল নিয়োগে পুরনো অভিজ্ঞ জনবল বাদ দেওয়ার ফন্দি করেছেন প্রকল্প পরিচালক। এতে প্রায় দুই শতাধিক জনবল বেকার হয়ে যাচ্ছে।
ভুক্তভোগীরা বলেন, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে প্রায় পাঁচ বছর ধরে চাকরি করছি কিন্তু আমাদের পরিকল্পিতভাবে বাদ দেওয়ার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। সিন্ডিকেটের সঙ্গে সমঝোতা ছাড়া কেউ নিয়োগ পাচ্ছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগীরা আরও জানান, আমরা দীর্ঘদিন এই প্রকল্পের ১ম ও ২য় পর্যায়ে নিরলসভাবে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেছি। পরবর্তীতে কাজ পাওয়ার আশায় গত ২-৩ বছর যাবত অপেক্ষা করে আছি। এখন আমাদের বাদ দেওয়ার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। পুরনোদের মধ্যে যারা প্রকল্প পরিচালকের লোক তাদের প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।
এসব বিষয়ে কথা বলতে প্রকল্পে পরিচালক আলমগীর কবিরের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, “আউটসোর্সিংয়ে জনবল নিয়োগ করা হচ্ছে কোম্পানির মাধ্যমে এখানে আমার কোন সম্পৃক্ততা নাই। আমার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ মিথ্যা”। আলাপচারিতার এক পযার্য়ে উত্তেজিত হয়ে বলেন, “আপনার যা ইচ্ছা হয় তাই পত্রিকায় লেখেন আমার কোন সমস্যা নাই”
যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর মহাপরিচালক আজহারুল ইসলাম খান বলেন, ঘুষ নিয়ে চাকরি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে যেসব পুরানো লোকবল আছে তাদের বাদ দিয়ে নতুন লোকবল নেওয়ারও কোনো সুযোগ নেই। তারপরও ঘুষ নিয়ে চাকরি দেওয়া ও পুরনো লোকবল বাদ দেওয়ার বিষয়ে কেউ যদি অভিযোগ করে তাহলে বিধিগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। (চলবে)
Leave a Reply