1. md.zihadrana@gmail.com : admin :
পরিবেশ অধিদপ্তরের অনিয়ম... ধামরাইয়ে ঘুষের বিনিময়ে ইটভাটার ছাড়পত্র, বাড়ছে পরিবেশের বিপর্যয় - দৈনিক সবুজ বাংলাদেশ

২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । দুপুর ২:০৮ ।। গভঃ রেজিঃ নং- ডিএ-৬৩৪৬ ।।

সংবাদ শিরোনামঃ
ভালুকায় ছেলের হাতে বাবা খুন গুলফাম বকাউলের গনজোয়ারের নেপথ্যের রহস্য ! গুলশানে স্পা অন্তরালে অপরাধ জগতের ডন বাহার ব্ল্যাকমেলই সহ মাদক বাণিজ্য নারী দিয়ে ফাঁদ তীব্র গরমের অতিষ্ঠ জনজীবনে একটি প্রশান্তিময় ও দৃষ্টি নন্দিত উদ্যোগ বিশ্বনাথে পৌর মেয়রের উপর  কাউন্সিলর রাসনা বেগমের মামলা:  মেয়রের বিরুদ্ধে ঝাড়ু– মিছিল, উত্তেজনা তিতাস গ্যাসের সিবিএ সভাপতি মরহুম কাজিম উদ্দিন প্রধানের স্মরনসভা সমবায় লুটে আগষ্টিন পিউরিফিকেশনের সম্পদের পাহাড়ের উৎস কোথায় ? গুলশানে স্পা অন্তরালে দিনে ও রাতে চলছে বাহারের ব্ল্যাকমেলই সহ মাদক বাণিজ্য  এনআরবি লাইফ-প্রতিভা প্রকাশ সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪’ পেলেন ৫ কৃতিমান লেখক বাণিজ্য জগতে বিশেষ অবদানের জন্য এশিয়া প্যাসিফিক এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২৪ পেলেন হোটেল রয়্যাল প্যালেসের কর্তা আশরাফুল সেখ
পরিবেশ অধিদপ্তরের অনিয়ম… ধামরাইয়ে ঘুষের বিনিময়ে ইটভাটার ছাড়পত্র, বাড়ছে পরিবেশের বিপর্যয়

পরিবেশ অধিদপ্তরের অনিয়ম… ধামরাইয়ে ঘুষের বিনিময়ে ইটভাটার ছাড়পত্র, বাড়ছে পরিবেশের বিপর্যয়

রাকিব হোসেন মিলন:

ঢাকার ধামরাইয়ে ইটভাটা তৈরিতে ঘুষ দিয়ে মিলছে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। এভাবে গত ৮ মাসে ধামরাইয়ে কথিত ‘বৈধ’ ইটভাটার সংখ্যা বেড়েছে ৩২। একাধিক ইটভাটার মালিক স্বীকার করেছেন, টাকার বিনিময়ে তাঁরা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পেয়েছেন। আবার একটি ইটভাটার অনুমোদন নিয়ে একাধিক ইটভাটা স্থাপন, ভেঙে দেওয়া ইটভাটা নতুন নামে এই এলাকায় চালু করা হচ্ছে। এতে বাড়ছে পরিবেশদূষণ।

অভিযোগ রয়েছে, ঘুষের বিনিময়ে এসব ইটভাটার বেশির ভাগ পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পাইয়ে দিতে কাজ করছেন অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) রেজাউল করিমের ভাতিজা রাকিবুল ইসলাম। যদিও তিনি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে পরিচয় গোপন করে ইটভাটার মালিকের আত্মীয় পরিচয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বললে ইটভাটার ছাড়পত্র আনিয়ে দেওয়ার কথা স্বীকার করেন তিনি।

ধামরাইয়ে ইটভাটার সংখ্যা যতঃ
তথ্য অধিকার আইনে ঢাকা জেলা প্রশাসন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ও পরিবেশ অধিদপ্তরে বিভিন্ন তথ্য চেয়ে আবেদন করা হয়। ওই সব আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে তথ্য সরবরাহ করা হয়। তথ্য অনুযায়ী ধামরাইয়ে বৈধ ইটভাটার সংখ্যা ৬০ আর অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা ৭৩।
এদিকে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ২০২৩ সালের ১৬ নভেম্বর সরবরাহ করা তথ্য অনুযায়ী, ধামরাইয়ে বৈধ ইটভাটা রয়েছে ১২৭টি, আর অবৈধ ইটভাটা ৩৮টি। অর্থাৎ তথ্য অনুযায়ী, গত ৮ মাসে ধামরাইয়ে অবৈধ ইটভাটা কমেছে ৩৫টি, আর বৈধ ইটভাটা বেড়েছে ৩২টি।

নিয়ম যা বলেঃ
ইটভাটা স্থাপনে প্রথমে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে অবস্থানগত ও পরে পরিবেশগত ছাড়পত্র নিতে হয়। এই ছাড়পত্রের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসনের অনুমোদন নিতে হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ইটভাটার মালিক বলেন, ‘পরিবেশের ছাড়পত্র না থাকলে জেলা থেকে লাইসেন্স পাওয়া যায় না।
লাইসেন্স না থাকলে স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযানে বছরে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হয়। এ জন্যই ভাটার মালিকেরা ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা খরচ করে ছাড়পত্র সংগ্রহ করেন। এতে টানা তিন বছর কোনো ঝামেলা ছাড়াই ইট পোড়ানো যায়।’

এ প্রসঙ্গে ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকী বলেন, আইন অনুযায়ী ধামরাইয়ে একটি ইটভাটাও পরিবেশ, অবস্থানগত ছাড়পত্রসহ লাইসেন্স পাওয়ার উপযোগী নয়। এরপরেও নানা প্রেক্ষাপটে ভাটাগুলো ছাড়পত্র ও লাইসেন্স পেয়ে থাকে।

রাকিবুলের সন্ধান যেভাবে
আইন লঙ্ঘন করে ভাটায় ইট পোড়ানোর দায়ে সম্প্রতি এক মালিককে পরিবেশ অধিদপ্তরে তলব করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ইটভাটার মালিক বলেন, ‘আইন অমান্য করে ইট পোড়ানোর দায়ে আমাকে পরিবেশ অধিদপ্তরের মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট উইং ডেকেছিল। সেখানে গেলেই জরিমানা করা হতো। তাই বাধ্য হয়ে আমি পরিবেশ অধিদপ্তরের ডাইরেক্টর অ্যাডমিনের ভাতিজা রাকিবুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করে ১৪ লাখ টাকায় কন্ট্রাক্ট করেছি।’ রাকিবুলের সঙ্গে কীভাবে পরিচয় হয় জানতে চাইলে ওই ইটভাটার মালিক বলেন, ‘রাকিবুল এই এলাকার আরও কয়েকটি ইটভাটার ছাড়পত্র করিয়ে দিয়েছেন। সেই সূত্রে তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়।’

জানা যায় , ঢাকা ব্রিকস, হোসেন ব্রিক ও ধামরাই ব্রিকস নামের তিনটি ইটভাটার ছাড়পত্র এনে দিয়েছেন রাকিবুল। এ বিষয়ে জানতে পরিবেশ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, ‘রাকিবুলের কারণে আমরা খুব চাপে আছি।’

এরপরে পরিচয় গোপন করে কথা বললে টাকার বিনিময়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র এনে দেওয়ার কথা স্বীকার করেন রাকিবুল। তবে ছাড়পত্র এনে দেওয়ার বিষয়টি এ প্রতিবেদকের কাছে অস্বীকার করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘না ভাই, আমি এসব করি না।’ এ কথা বলে ফোন কেটে দেন তিনি। রাকিবুলের বিষয়ে কথা বলার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) রেজাউল করিমের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। পরে তাঁর মোবাইলে নম্বর ও হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।

একটির অনুমোদনে একাধিক ইটভাটাঃ
ধামরাইয়ে লামিয়া ব্রিকস নামের বিভিন্ন ইউনিয়নে সাতটি ইটভাটা রয়েছে। ডাউটিয়া, ভালুম, কাউলিপাড়া, গোয়ালদি, নান্নার, হাতকোড়া ও নান্দেশ্বরী এলাকায় এসব ভাটায় ইট পোড়ানো হচ্ছে। এই ইটভাটার মালিক আব্দুল লতিফ বলেন, তিনি পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র এবং জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই এসব ভাটা পরিচালনা করে যাচ্ছেন। তবে জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য থেকে জানা যায়, তাঁর চারটি ইটভাটার অনুমোদন রয়েছে।

নাম বদলে আবারও চালুঃ
ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ২০২৩ সালের ২০ জানুয়ারি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে মধুডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ঘনবসতির ১০০ গজের মধ্যে অবস্থিত খান ব্রিকস গুঁড়িয়ে ভাটার কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। এই ইটভাটার মালিক উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ খালেদ মাসুদ খান (লালটু)। তবে তাঁর ভাই সিরাজুল ইসলাম একই জায়গায় সাজেদা ব্রিকস নামে ইটভাটা করছেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়টির আশপাশে আরও ৬টি ইটভাটা রয়েছে। এসব ভাটারও কোনো অনুমোদন নেই। সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘অন্যরা যেভাবে করছেন, আমরাও সেভাবেই করছি।’

ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শুধু খান ব্রিকস নয়, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের আরও ৯টি ইটভাটা গুঁড়িয়ে দিয়ে ওই সব ভাটার কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছিল। প্রায় সব কটি ভাটা নতুন নির্মাণ করে এবার ইট পোড়ানো হচ্ছে। এভাবে বাড়ছে পরিবেশদূষণ।
এ প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক হাফিজুর রহমান বলেন, যত্রতত্র ইটভাটা গড়ে ওঠার কারণে বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। তাই আইন অনুযায়ী যাতে ইটভাটা স্থাপিত হয়, পরিবেশ অধিদপ্তরের তা নিশ্চিত করা উচিত।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © 2021
ভাষা পরিবর্তন করুন »