
সবুজ বাংলাদেশ ডেস্ক:
ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী মিশেল বার্নিয়ের অনাস্থা ভোটে হেরে যাওয়ায় দেশটির সরকার ভেঙে পড়েছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রঁ মি. বার্নিয়েরকে নিয়োগ দেওয়ার মাত্র তিন মাস পর তাকে এই পদ থেকে সরে যেতে হচ্ছে। কারণ সংসদ সদস্যরা তার বিরুদ্ধে বিপুল ভোট দিয়েছেন।
তার বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার এই প্রস্তাব প্রতিপক্ষ দলগুলো এনেছিলো। কারণ মি. বার্নিয়ের বিতর্কিতভাবে বিশেষ ক্ষমতা ব্যবহার করে সংসদে বিনা ভোটে বাজেট পাশ করিয়েছিলেন।
ফ্রান্সের ইতিহাসে সংসদে অনাস্থা ভোটে হেরে সরকার পতনের ঘটনা সর্বশেষ ঘটেছিল ১৯৬২ সালে। কয়েক দশক পরে দেশটিতে ফের এই পরিস্থিতি তৈরি হলো।
কিন্তু এই ঘটনায় দেশটিতে বিদ্যমান রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়লো। কারণ গ্রীষ্মের আগাম নির্বাচনের পর সেখানে কোনও দলই সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি।
স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার দেশটির সংসদের নিম্নকক্ষে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। মি. বার্নিয়েরকে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রস্তাবটি পাশ করতে ২৮৮ ভোটের প্রয়োজন ছিল।
কিন্তু ৩৩১ জন সংসদ সদস্য মি. বার্নিয়েরের বিষয়ে অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন।
এখন মি. বার্নিয়ের তার সরকারকে পদত্যাগ করাতে বাধ্য। আর যে বাজেটের জন্য এত কিছু হয়ে গেল, এই ঘটনার কারণে সেটিও বাতিল হয়ে গেছে।
তবে প্রেসিডেন্ট মি. ম্যাক্রঁ নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ না করা পর্যন্ত অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন তিনি।
বাম এবং কট্টর ডানপন্থী দলগুলো এই অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করে। এর আগে গত সোমবার মি. বার্নিয়ের রাষ্ট্রপতির ডিক্রি ব্যবহার করে সামাজিক সুরক্ষার সংস্কার পাশ করান।
যদিও দেশটির সংসদে তা যথেষ্ট সমর্থন পায়নি।
সর্বাধিক আসন পাওয়া বামপন্থী জোট নিউ পপুলার ফ্রন্ট (এনএফপি) আগেই মি. ম্যাক্রঁর কর্তৃক বার্নিয়েরকে প্রধানমন্ত্রীর পদে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছিল।
অন্যদিকে, কট্টর ডানপন্থী ন্যাশনাল র্যালি (আরএন) দলও বার্নিয়েরের বাজেটকে “অগ্রহণযোগ্য” বলে অভিহিত করেছে। বাজেটে ৬০ বিলিয়ন ইউরো (৪৯ বিলিয়ন পাউন্ড) ঘাটতি কমানোর পরিকল্পনা ছিল।
ন্যাশনাল র্যালির নেতা মারি লা পেন এই বাজেটকে “ফরাসিদের জন্য ক্ষতিকর” বলে মন্তব্য করেছেন।
ভোটের আগে মি. বার্নিয়ের সংসদে বলেছিলেন, “আমাকে সরানো দেশের আর্থিক সমস্যার সমাধান নয়।”
এরপর তিনি আরও বলেন, “আমাদের ঋণের বাস্তবতা মেনে নেওয়া দরকার।”
টেলিভিশনে এক সাক্ষাৎকারে লা পেন বলেন, বার্নিয়েরকে সরানো ছাড়া আর কোনও বিকল্প নেই।
তবে তিনি যোগ করেন, “আমি রাষ্ট্রপতি ম্যাক্রঁর পদত্যাগ চাই না। তবে যদি জনগণের মতামত উপেক্ষা করা হয়, তাহলে ম্যাক্রঁর উপর চাপ আরও বাড়বে।”
রাষ্ট্রপতি এমানুয়েল ম্যাক্রঁ সৌদি আরব সফর শেষে দেশে ফিরেছেন। তিনি আজ বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন।
তবে এক্ষেত্রে এই ভোটের ফলাফল সরাসরি মি. ম্যাক্রঁর ওপর কোনও প্রভাব ফেলবে না। কারণ ফ্রান্সে প্রেসিডেন্ট এবং সরকারের নির্বাচন আলাদা।
মি. ম্যাক্রঁ আগেই জানিয়েছিলেন যে ভোটের ফলাফল যাই হোক, তিনি পদত্যাগ করবেন না।
স্বভাবতই তিনি এখন খুব দ্রুত নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিতে চাইবেন। এদিকে নব নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই সপ্তাহে প্যারিসে নটরডেম ক্যাথেড্রালের উদ্বোধনে যোগ দিতে আসছেন।
তবে নতুন সংসদীয় নির্বাচন জুলাই মাসের আগে সম্ভব নয়, তাই বর্তমান অচলাবস্থা চলতেই থাকবে।
সবা:স:জু- ২০৩/২৪