
গোপালগঞ্জ সংবাদদাতা:
গোপালগঞ্জের সহিংসতার ঘটনায় বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি ঘুরে দেখে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক দল ও সুশিল সমাজের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, প্রাণহানী যেখানেই হোক না কেন, মানুষের জীবনের চেয়ে বড় কিছু হতে পারে না। এ কারণেই ঘটনাটি জানার জন্য প্রধান উপদেষ্টা আমদেরকে পাঠিয়েছেন। গোপালগঞ্জের যে অনভিপ্রেত ঘটনা এটা যাতে ভবিষ্যতে আর না হয় সেজন্য তিনি প্রশাসনকে নির্দেশ দেবেন। আজ আমরা এখানে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করার জন্য এসেছি। এ ঘটনার গভীরে সরকার যাবে। এটা থেকে আমাদের ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষা নিতে হবে। কারণ এটা আর একবার হতে দেওয়া যাবে না। এ জন্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে একজন বিচারপতির নেতৃত্বে বিচার বিভাগী তদন্ত কমিশন গঠন করা হবে।
আগামী জাতীয় নির্বাচন এই সরকারের কাছে অগ্নিপরীক্ষা উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, আমরা একটি সুন্দর ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করবো। যেখানে মানুষ নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে যেতে পারেন। যেখানে প্রকাশ্যে ভোট গণনা এবং ঘোষণা হবে। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলো মধ্যে পারষ্পরিক সহনশীলতা প্রয়োজন। আর যেই নির্বাচিত হন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাকেই সহযোগিতা করবে। কিন্তু এই নির্বচন প্রক্রিয়া যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়। এটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে কাছে একটা অগ্নিপরীক্ষা। নির্বাচন প্রক্রিয়া যদি প্রশ্নবিদ্ধ হয় তাহলে আমাদের সমস্যা আরও বাড়বে।
তিনি আরও বলেন, এনসিপির কর্মসূচিকে ঘিরে কিছু একটা ঘটবে এমন আশঙ্কা প্রশাসনের ছিল। কিন্তু এর ব্যাপকতা কেউ অনুমান করতে পারেন নাই। এই পরিস্থিতে সিমিত সম্পদ দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই পরিস্থিতির মোকাবেলা করেছেন। এখানে আশঙ্কার কিছু নাই উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, এটা একটা দল নিরপেক্ষ সরকার। এটা শহীদদের রক্তের উপরে প্রতিষ্ঠিত সরকার। ২০/৩০ হাজার আহতদের আত্মত্যাগের সরকার। সুতরাং গোপালগঞ্জও আমাদের কাছে যা, প্রত্যেকের জেলাও তাই। প্রধান উপদেষ্টা সেই বার্তাটাই দিয়েছেন।
ফাওজুল কবির খান বলেন, যারা পুলিশের গাড়িতে আগুন দিয়েছে, যারা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা করেছে তারা অবশ্যই আইন অনুযায়ী শাস্তি পাবে। এছাড়া যাতে অন্য কেউ যেন হয়রানি না হয়। ব্যবসা-বাণিজ্য, সাধারণ জীবন যাতে ব্যাহত না হয় সেজন্য আমরা চেষ্টা করবো। অভ্যুত্থান পরবর্তী সরকার চেষ্টা করছে, একটা গণতন্ত্রের চর্চা করা। আগে তো গণতন্ত্রের চর্চা হয় নাই। বিরোধ মত হলেই তাকে দমন করা হয়েছে। আয়না ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, নানান রকম শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এখন আমরা চাচ্ছি সেই পরিস্থিতিটাকে পরিবর্তন করতে। এমন একটা পরিবেশ আমরা সৃষ্টি করতে চাই যেখানে সবাই নির্ভয়ে তাদের মত প্রকাশ করতে পারবেন। আবার দ্বায়িত্বশীলতার সাথে মতামত পেশ করবেন। এমন কোনো মতামত দিবেন না যেন তাদের নিজেদের জন্যই নিজেদের দল বা মতাদর্শের জন্য ক্ষতিকর।
এর আগে সকলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ও সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রথমে ভাঙচুর হওয়া জেলা কারাগার পরিদর্শনে যান। এরপর পরিদর্শন করেন ভাঙচুর করা জুলাই শহীদদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভের ভিত্তিপ্রস্তর নির্মাণ এলাকা। সেখান থেকে শহরের মূল সড়ক দিয়ে হেঁটে পৌর পার্ক এলাকায় এনসিপির সভাস্থল পরদর্শন করেন। এ সময় তাদের সাথে ছিলেন- প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অবসরপ্রাপ্ত লে. জেনারেল আ. হাফিজ, মন্ত্রী পরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ, বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দীন আহমেদ চৌধুরী, ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিকসহ স্থানীয় প্রশাসনের ব্যক্তিবর্গ। পরে তারা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলার সরকারি কর্মকর্তা এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সাথে এক মতবিনিময়ে মিলিত হয়।