সাবেক নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার আর নেই

আয়েশা আক্তার॥
সাবেক নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তার মেয়ে আইরিন মাহবুব এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আইরিন মাহবুব বলেন, বুধবার দুপুর ১২টার দিকে মাহবুব তালুকদার অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা জানান, মাহবুব তালুকদার ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়েছেন। বেলা ১টার দিকে তিনি মারা যান।

আইরিন মাহবুব বলেন, ‘বাবা আর নেই। দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সার আক্রান্ত ছিলেন। অন্য আরও রোগেও ভুগছিলেন। আজ সকালে উনার শারীরিক অবস্থার খুব অবনতি হয়। ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক হয়। দুপুর ১টার দিকে উনি মারা যান।’

২০১৭-২০২২ মেয়াদে কেএম নুরুল হুদার কমিশনে নির্বাচন কমিশন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মাহবুব তালুদকার। তিনি ইসির কাজের সমালোচনা করে খবরের শিরোনাম হয়েছেন বারবার।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময় সহকারী প্রেস সচিবের (উপসচিব) দায়িত্ব পালন করেন মাহবুব তালুদকার। একসময় তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকও ছিলেন।

তার তিন সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে ঢাকায় বাবা-মায়ের সঙ্গেই থাকেন। বাকি দুজন থাকেন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায়।

আইরীন মাহবুব জানান, তার বাবার জানাজা হবে গুলশানের আজাদ মসজিদে। দাফনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে পারিবারিকভাবে।

সমাজচ্যুতির মজার সাংবাদিকতা

সাইদুর রহমান রিমন :

বিশেষ ব্যক্তিত্ব, প্রবীণ সাংবাদিক যারা আছেন এই অখণ্ড সময়ে আমাদের একটা বিষয় হেল্প করতে পারেন। ৭৬-৭৬ সালে এবং ৯০-৯১ এর দিকে তৎকালীন দেশের টালমাটাল অবস্থায় শ্রদ্ধাভাজন সাংবাদিক ইউনিয়ন নেতারা কি ধরনের বক্তব্য বিবৃতি দিতেন? প্রখ্যাত সাংবাদিক প্রয়াত গোলাম সারোয়ার বিশেষ সম্পাদকীয় হিসেবে প্রথম পাতায় কি আকুতি লিখতেন- যা সকল মহলের কাছে সমাদৃত হয়ে উঠতো- সেগুলো আজ খুব জানতে ইচ্ছা করছে।
তারা কি আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পরিনত হওয়া সারি সারি লাশকে ডাস্টবিনে পাঠিয়ে সরকারকে আরো গুলি চালানোর পরামর্শ দিতেন? নাকি সরকারকে বারবার সহনশীল হয়ে দাবি দাওয়ার নিয়ে সমঝোতার উদ্যোগ নিতে গুরুত্বারোপ করতেন? নাকি বলতেন সরকার ভালো করতেছে, আরো দমন পীড়ন চালান?
সেসব লেখা পাঠ করে সবাই সাংবাদিকতার প্রকৃত ভূমিকা কি হওয়া উচিত তা শিক্ষার চেষ্টা করতাম, পাশাপাশি চলমান দালালি কর্মকাকান্ডের পরিমাপ করতে পারতাম। আজও কেউ কেউ কলাম লিখি, বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করি কিন্তু কেন যেন সেসব লেখা কেবলই সরকারকে তুষ্ট করে, তারই মোসাহেদরা শুধু বাহবা জানায়। কিন্তু আপামর জনতা, আন্দোলনরত শিক্ষার্থী কিংবা নিরব থাকা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে সে লেখনিগুলো মোটেও আন্দোলিত করতে পারছে না। কারণ একতরফা লেখালেখিতে শত শত লাশের কথা তোলা হয় না, তোলা হয় সরকারের ক্ষয়ক্ষতির কথা। একাত্তরে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীতো অরাজকতার ধোয়া তুলেই বাঙ্গালিদের পর জঘণ্য বর্বরতা চালানোর যুক্তি খুঁজে নিয়েছিল। আজও এসব লেখনি তেমনই যুক্তি প্রমাণ হিসেবে দাড়িয়েছে বলেই সাধারণ মানুষের কাছে এহেন সাংবাদিকতা পাত্তাও পায় না।
আন্দোলনকে ঢাল বানিয়ে সর্বত্র সাংবাদিক হতাহত করা ছাড়াও পেশাদার সাংবাদিকদের ধরে নিয়ে দফায় দফায় রিমান্ডে নেয়া হচ্ছে। কই সেই সহকর্মির জন্য আমাদের সাংবাদিক সমাজের অভিভাবকরা তো মৃদু প্রতিবাদ করতেও সাহস পান না? নির্যাতিত সাংবাদিকদের ব্যাপারে সাংবাদিক সমাজের একাংশ প্রতিবাদ করলে আরেকপক্ষ দ্রুতই তা বিএনপি জামাতিদের কান্ড বলে ছড়িয়ে দেন। আহা, একজন সাংবাদিককে নিয়েও দলবাজির চাপা গলির মাঝে ছুড়ে ফেলে দিতে একটুও কষ্ট পান না? আসলে দলবাজ পেশাজীবীদের কাছে এগুলো যে গৌণ বিষয়। এসব কারণে স্পষ্ট ভাবে পুলিশের গুলিতে নিহত সাংবাদিকদের ব্যাপারেও আমিরা লিখে চলছি- সংঘর্ষে সাংবাদিক নিহত। হতভাগ্য সাংবাদিক কী কোনো পক্ষের হয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিলেন? কে বা কার গুলি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন? আহা….
তবে চট্টগ্রামে সাংবাদিক পরিচয়ে পুলিশের কেনা গোলামের মতো সোর্স হয়ে যে দুই সাংবাদিক আন্দোলনকারীদের ধরে ধরে পুলিশের কাছে সোপর্দ্দ করলেন-কি বুঝালেন তারা? সরাসরি আন্দোলনের বিরুদ্ধে মাঠ ভুমিকায় নেমে গেছেন তারা? তাহলে পক্ষপাতদুষ্ট সাংবাদিকদের যদি অন্যরা প্রতিপক্ষ ভাবে তাতে দোষের কী? সারাদেশে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে এটাই এখন সাংবাদিকদের পরিচয় ফুটে ওঠেছে- যা বদলাতে অনেক অনেক ত্যাগ আর বহু বছর সময় লেগে যাবে।
বাংলাদেশ অভ্যূদয়ের পর কোনো আন্দোলনে সর্বোচ্চ সংখ্যক সাংবাদিক হতাহত, গলিবিদ্ধ এবং নির্যাতিত হলেও সে বিষয়ে কোনো সংগঠনই জোড়ালো ভাষায় কিছু বলতে সাহস পায় না। তারা পায় অরজকতার মাধ্যমে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার বিষয়ে চড়া গলায় বক্তব্য দেয়ার সাহস। নিজ পেশার গুটিকয়েক মানুষকে যারা সুরক্ষা করতে পারে না, যোগ্যতা রাখে না- তারাই যায় সরকারকে রক্ষা করার বিশালতম কর্মযজ্ঞে।
পনের দিনেরও বেশি সময় ধরে দেশজুড়ে ভয়াল পরিস্থিতি সৃষ্টি চলতে থাকলেও সাংবাদিক সমাজের কোনো অভিভাবক সরাসরি বলতে পারলেন না, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি মায়ের মমতা নিয়ে এগিয়ে আসুন, শান্তি সমঝোতায় আপনিই উদ্যোগ নিন। আপনি তো শান্তিবাহিনীর মতো আন্ত:দেশিয় সহিংসতাকেও একক উদ্যোগে সমাপ্তির রেখা টেনে দিতে পেরেছিলেন, বারুদের গন্ধ সরিয়ে সেখানে শান্তির সুবাতাস বইয়ে দিতে পেরেছিলেন। সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের ন্যূনতম দাবি দাওয়ার বিষয়টি তো আপনার কাছে নস্যি। কিন্তু ন্যায্য কথাটুকু বলার জন্য একজন অভিভাবক সাংবাদিকের শক্ত হাতে কোমলতা মিশিয়ে পরামর্শসূচক এক লাইনও লিখতে দেখলাম না। কেন? ভয়ে? বিরাগভাজন হতে পারেন- তাতে গোপন ধান্দাবাজি বন্ধ হয়ে যেতে পারে সেই আশঙ্কায়?
মুরুব্বি সাংবাদিকদের সিংহভাগই তো আর এখন সাংবাদিকতাকে মূখ্য পেশা হিসেবে ভাবেন না, কেবলই সাইনোর্ড হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। তারা এখন সরকার প্রদত্ত নানারকম প্রকল্প পরিচালনা করে থাকেন সংগোপনে। অতএব পেশাটির চেয়ে তাদের কাছে সরকার সংশ্লিষ্টতাই অধিকমাত্রায় আপন হয়ে উঠবে এটাই সাভাবিক। মোটা গদির সোফায় বসে বসে নিজেদের শারিরিক মেরুদন্ড যেমন বক্র বানিয়ে ফেলেছেন, মানসিক মেরুদন্ড তো আরো আগেই বিকিয়ে দিয়েছেন।
“রিপোর্টিংয়ের শুরুই যখন হয় আদালতের রায়ে নির্দ্দিষ্ট হওয়া কোটা বিষয়ে আন্দোলনের চেষ্টা চালিয়ে একদল ছাত্র পরিবেশ পরিস্থিতি ঘোলাটে করার পায়তারা শুরু করেছে। তারা জনবহুল রাস্তাঘাট দখল করে লাখ লাখ মানুষের ভোগান্তির মধ্য দিয়ে তথাকথিত আন্দোলন করতে চায়।“ মূলধারার মিডিয়ায় পক্ষপাতদুষ্ট অভিমত জড়িয়ে এ ধরনের সংবাদ তৈরির জঘন্যতা কেন জন্ম দেওয়া হলো? তারাই সাধারন মানুষের কাছে মিডিয়াকে সরাসরি প্রতিপক্ষ মাধ্যমে পরিনত করে দিয়েছেন। তারাই সাংবাদিকদের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে ‘সমাজচ্যুত পেশা‘ বানিয়ে দিয়েছেন।
নিজেদের আত্মসমালোচনা করা পাপ নয়, তাতে কেউ ছোটও হয় না। নিজেদের ভুলগুলো উল্লেখ করুন আমরা তা থেকে শিক্ষা নিয়ে সার্বজনীন সাংবাদিকতার ঐতিহ্য ধরে রাখার প্রাণপন চেষ্টা চালাতে থাকি। এটুকু সুযোগ তো আমরা পেতেই পারি। আজ পুলিশ সাংবাদিক দের গুলি করে নির্বিচারে হত্যা করার পর আমরা নিজেরাই যখন তা নিহত বা দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেই তখন সরকার হাসে, প্রেসনোট দেয়ারও প্রয়োজনবোধ করে না।
কারণ, একশ্রেণীর সাংবাদিক সরকারের হয়ে আগেই প্রেসনোট মার্কা রিপোর্ট প্রকাশ করে চলেছে। অতএব সাংবাদিকের রিপোর্ট এখন সরকারি প্রেসনোটের আড়ালেই হারিয়ে গেছে। আগে আন্দোলন, হরতালকালীন রিপোর্টগুলোর ভিড়ে প্রেসনোট নামক অলীক গল্পটুকু খুঁজে খুঁজে বের করতাম আর এখন সাধারন পাঠকরা প্রেসনোট মার্কা পুরো পত্রিকা উল্টেপাল্টে রিপোর্টারের প্রকৃত রিপোর্ট খুঁজে খুঁজে হতাশ হন।
আমার নিজস্ব অভিমত হচ্ছে-হাজারো বাধা আর রক্তচক্ষুর কারণে যদি বাস্তব, সত্যি তথ্যটি তুলে ধরার সুযোগ না ই থাকে, তাহলে মিথ্যা কিছু না রটিয়ে সরারসরি লিখতে পারেন। আজ নিউমার্কেটে দিনভর চলা সংঘর্ষস্থলে দায়িত্বরত ছিলাম, সব নৃশংসতা দেখেছি-কিন্তিু কোনকিছুই লিখতে পারছি না, পাঠক আমাকে মাফ করে দিবেন। তাহলে একবিন্দু আস্থা তবু টিকে থাকতে পারে।

– সাঈদুর রহমান রিমন, সিনিয়র সাংবাদিক

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম
শিক্ষার্থীরা রোডম্যাপের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিলেন শাকসু নির্বাচনের বিদেশ যেতে না পারায় মাইক ভাড়া করে এলাকাবাসিকে গালিগালাজ করলেন কিশোরগঞ্জের যুবক জুলাই সনদে স্বাক্ষর করল গণফোরাম অন্যদেরও সই করার আহ্বান কমিশনের সূচক সাড়ে ৩ মাস আগের অবস্থানে লেনদেন ৪ মাসে সর্বনিম্ন আওয়ামীলীগ ফিরলে হাসিনার পা ধরেও মাফ পাবেন না: রাশেদ খান বিমানবন্দর অগ্নিকান্ডে পুড়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম কুমিল্লায় গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার, পালিয়েছেন স্বামী ও তাঁর পরিবারের লোকজন ঢাকা এলজিইডিতে দুর্নীতির একচ্ছত্র অধিপতি বাচ্চু মিয়া বিমান বন্দরের সামনে এখোনো উৎসুক জনতার ভীড় নেভেনি আগুন বাড়িভাড়া ৫০০ টাকা বৃদ্ধি করে প্রজ্ঞাপন জারি শিক্ষকদের