
স্টাফ রিপোর্টারঃ
দেশের বর্তমান জ্বালানি সংকট অবস্থায়ও থেমে নেই বাপেক্সের চুক্তিভিত্তিক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলীর দুর্নীতি, রয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগও। এছাড়াও অন্যান্য বিভাগের ব্যবস্থাপকগণ খুব শীঘ্রই মোহাম্মদ আলীর অপসারণ চান।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ১১ই জানুয়ারি দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সে।ঠিক এমনই সময় একজন
দুর্নীতিবাজ বর্তমান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন এন্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড এর চুক্তিভিত্তিক এমডি মোহাম্মদ আলীর নামে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ রয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বাপেক্সর বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ডিপ্লোমা সার্টিফির্কেট নিয়ে পেট্রোবাংলার অনুসন্ধান উইং-এ সহকারি খননবিদ হিসেবে তার চাকরি জীবন শুরু করেন। সেখান থেকে তিনি বিভিন্ন তোষামদ করে এবং সুপারিশের মাধ্যমে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে বদলি হতে থাকেন।এবং এক পর্যায়ে ক্রয়বিভাগে উপব্যবস্থাপক (ক্রয়) হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন, চাকরি জীবনে তিনি বেসরকারি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় হতে ডিগ্রির সার্টিফিকেট সংগ্রহ করেন। বর্তমানে তিনি বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে চুক্তিভিত্তিকভাবে নিয়োজিত আছেন। যা জনাব মোহাম্মদ আলী নিজেও স্বীকার করেন, আমি চাকরি শুরুতে ডিপ্লোমাধারী ছিলাম।
ক্রয়বিভাগে থাকাকালীন সময় হতে তিনি সব ধরনের ক্রয়কার্যে দুর্নীতির কৌশল অবলম্বন করতে শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি বাপেক্সএর কোম্পানি সচিব এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদে কর্মরত অবস্থায় তার দুর্নীতির তালিকা, সাহস এবং পরিমাণ ব্যাপকভাবে বাড়তে থাকে বর্তমানে তা বিশাল আকার ধারণ করেছে। প্রায় ৪০০০-চার হাজার কোটি টাকার লোকসানি বোঝায় জর্জরিত বাপেক্স নামক কোম্পানিকে বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে পরিচালিত করেন। যা দেশের বিপুল পরিমাণ অর্থের অপচয় হচ্ছে।
বাপেক্স নামক কোম্পানির মূল কার্যক্রম হচ্ছে,তৈল,গ্যাস, অনুসন্ধানের লক্ষ্য কূপ খনন এবং গ্যাস প্রোডাকশন। বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকের এর কোনোটারই অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও। এবং তার চেয়ে অভিজ্ঞ লোক বাপেক্সে থাকা সত্ত্বেও,যাকে এসজিএফএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক করে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি পেয়েছেন বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদও। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধক্রমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মাধ্যমে হয়ে থাকে। কিন্তু সেই নিয়ম ভঙ্গ করে জ্বালানি মন্ত্রণালয় মাধ্যমে তিনি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ গ্রহণ করেছেন। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ক্ষেত্রে তার ফাইল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় গেলে দুর্নীতির কারণে এনএসআই রিপোর্টে তিনি বাদ পড়তেন। কিন্তু তিনি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন। এনএসআইয়ের রিপোর্টও দরকার হয় নাই তার।
অভিযোগে আরো রয়েছে, শ্রীকাইল নর্থ ১ (এক) প্রজেক্ট, উদ্বোধনের নামে প্রহসন করেন এই পরিচালক, গত ২৭-৬-২০২২ অনুসন্ধান কূপ খনন উদ্বোধনের নামে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণের তথা দেশের সাথে একটি বড় ধরনের প্রতারণা করেন মোহাম্মদ আলী। উক্ত কূপ উদ্বোধনে পেট্রো বাংলার পরিচালক মন্ডলীর বিশেষ করে পরিচালক(প্রশাসন) পরিচালক (পরিকল্পনা) যাবার কথা থাকলেও অনিয়মের আবাস পেয়ে উনারা যাননি। জনাব মোহাম্মদ আলী একাই উক্ত কূপ খনন উদ্বোধন করেন।
শ্রীকাইল নর্থ এ-১ অনুসন্ধান কূপ একটি ডিরেনকশনাল কূপ। যাহার টারগেট গভীরতা মূলকূপ হতে প্রায় ৭০০ (সাতশত) মিটার দূরে, উক্ত কূপ খননের জন্য বিশেষ ধরনের একটি টুল যন্ত্র (MWD প্রয়োজন যার সাহায্যে ডিরেকশন ঠিক রেখে কূপ খনন করা হয়। উক্ত যন্ত্রটিও ক্রয়য়ের এখনো চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি। চুক্তির পরে এলসি খোলা, এল সি খোলার পরে ডেলিভারির সম্ভাবনা ন্যূনতম (৯০দিন )অথবা তিন মাস পরে উক্ত যন্ত্রটি পাওয়া যাবে। অর্থাৎ আরো তিন থেকে চার মাস উক্ত যন্ত্রের জন্য,খনন কাজ শুরু করা যাবে না। কিন্তু কূপটি ইতিমধ্যে উদ্বোধন করায় সেখানে ব্যবহৃত রিগ বিজয়-১১ এর জেনারেটরের জন্য প্রতিদিনের ডিজেল অস্থায়ী শ্রমিকদের প্রতিদিনের বেতন ভাতাদি,স্থায়ী লোকবলের জন্য প্রতিদিনের ভোজনভাতাসহ দৈনন্দিন যানবাহন ব্যয় টিএ ডিএ ইত্যাদি বাবদ পূর্ণাঙ্গ খনন ফিল্ডের খরচ বহন করতে হবে। এতি স্পষ্ট হয় যে এটা বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সমন্বয়ের অভাব এবং এই জ্বালানি সংকটকালে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাথে প্রতারণার সামিল এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অভিযোগের বিষয়ে শ্রীকাইল নর্থ-এ-১ অনুসন্ধান প্রজেক্ট ডাইরেক্টর প্রিন্স আল হেলাল বলেন, টুল MWD যন্ত্রটির জন্য ইতিমধ্যে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে ইন্টারন্যাশনাল টেন্ডার কল করা হয়েছে, এ ছাড়াও ইতিমধ্যে এলসি করা হয়েছে, এখন আমরা আশাবাদী খুব শীঘ্রই থার্ড পার্টির মাধ্যমে MWD নামক যন্ত্রটি আমরা ডেলিভারি পাব। এছাড়াও বর্তমানে দুইশত মিটার বিল্ডিং এর কাজও কমপ্লিট করে রেখেছি।
এছাড়াও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব মোহাম্মদ আলীর একক সিদ্ধান্তে পদোন্নতি বাণিজ্য চলে বলে অভিযোগ রয়েছে,।গত ১০ই অক্টোবর ২০২১ তারিখে বাপেক্সের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়। উক্ত পদোন্নতিতে ও তিনি বাণিজ্য করেন বলে অভিযোগ উঠছে। যাদের সাথে মোহাম্মদ আলীর গোপনে আঁতাত ও লেনদেন হয়েছে তাদেরকে পদোন্নতি নিশ্চিত করার জন্য নিয়ম বহির্ভূতভাবে তিনি মূল্যায়ন কমিটির তিনটি সভায় সর্বক্ষণিক অবস্থান করেন। এবং কমিটির প্রতিনিধিদের উপর প্রভাব বিস্তার ও করেন বলে অভিযোগ আছে। জানা যায় এতে কমিটির সদস্যগণ খুবই ক্ষুব্ধ হন। বিশেষ করে আবুল কাশেম ও রোকনুজ্জামানকে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য প্রকৌশলী বিভাগের দুইজন মেধাবী ইঞ্জিনিয়ার যারা জোষ্ঠ তাদেরকে বাদ দেওয়ার জন্য কমিটির উপর চাপ সৃষ্টি করেন। পরিশেষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলীর চাপে , দুইটি পদ শূন্য রেখে পদোন্নতি প্রদান করেন কমিটি। এছাড়াও পেট্রোবাংলার প্রতিনিধি জোবায়ের হোসেন পদোন্নতিতে স্বাক্ষর না কর নোট অব ডিসেন্ট ও দেন সংশ্লিষ্ট ফাইলটিতে।
এছাড়া অনুসন্ধানে জানা যায়, নাম বলতে অনিচ্ছুক বাপেক্সেরএক মহাব্যবস্থাপক বলেন বাপেক্সের সকল বিভাগের ব্যবস্থাপকগণের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলীর উপর গণঅশন্তোষ প্রকাশ করেন। এ ছাড়াও তিনি বলেন, জনাব মোহাম্মদ আলী দুর্নীতি লোভ ও অবৈধ উপায়ে টাকা কামানোর লিপ্সা, বেআইনি। তৎপরতায় অতিষ্ঠ বাপেক্সের অন্যান্য বিভাগের কর্মরত মহাব্যবস্থাপকগনও। তার গৃহীত অসাধু কর্মকাণ্ডের জন্য বাপেক্স এর মত কারিগরি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান আজ ধ্বংসের মুখে। এমনিতেই বাপেক্স প্রায় চার হাজার কোটি টাকা লোকসানি বোঝায় জর্জরিত। একটি প্রতিষ্ঠানের প্রদানের এরূপ সীমাহীন দুর্নীতি বাপেক্সকে অচল অবস্থার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি আচ করতে পেরে অন্যান্য বিভাগের মহা ব্যবস্থাপকগণ সবাই ক্ষুব্ধ ও বিস্মিত। তারা সবাই এই দুর্নীতিবাজ ব্যবস্থাপনা পরিচালকের খুব শীঘ্রই অপসারণ চান।
এছাড়া অভিযোগ রয়েছে, অবৈধ মেডিকেল ভাতা গ্রহণ, ভ্রমন ভাতা গ্রহণ, ঠিকেদারী কাজে অংশীদারিত্ব, আউটসোর্সিং জনবল নিয়োগ বাণিজ্য, মেয়ের জামাইকে দাপ্তরিক ব্যবসায়িক কাজে নিয়োগ, ঠিকাদারদের কাছ থেকে অবৈধ আর্থিক সুবিধা গ্রহণ, মূল্যায়ন কমিটির উপর চাপ সৃষ্টি, খনন ফিল্টের ডিআইসি থেকে সাপ্তাহিক চাদাঁ গ্রহণ, কর্মকর্তা কর্মচারীদের কে নানাভাবে হয়রানি করা, অবৈধভাবে অনেক স্থাবর অস্থাবর সম্পদ অর্জন, সহ অন্যান্য অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, ভালো কাজ করতে গেলে পক্ষে-বিপক্ষে লোক থাকবে। আমাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও বিদ্যুৎ জ্বালানি খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী মহোদয় দুই বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছেন আশা করি সততার সাথে কাজ করার চেষ্টা করব। দুদকের অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন কিছু কুচক্র মহল আমার বিরুদ্ধে কাজ করছে হয়তো তারা মানুষের ভালো দেখতে পারেন না।
অথচ তার অভিযোগ পত্র থাকা সত্ত্বেও তিনি অস্বীকার করেন কিন্তু অভিযোগকারী উক্ত বিষয়ে তদন্ত করার জন্য জোর অনুরোধ জানান।