
ডেস্ক রিপোর্ট:
সিপিবি, বাসদ, বাসদ-মার্কসবাদী ও বাংলাদেশ জাসদ–এই চার বামপন্থি দল হুমকি দিয়েছে, বিদ্যমান মূলনীতিগুলো বাদ দিলে আলোচনা বয়কট করবে তারা।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মূলনীতি পরিবর্তনের প্রস্তাব নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।
সিপিবি, বাসদ, বাসদ-মার্কসবাদী ও বাংলাদেশ জাসদ–এই চার বামপন্থি দল হুমকি দিয়েছে, বিদ্যমান মূলনীতিগুলো বাদ দিলে আলোচনা বয়কট করবে তারা।
বর্তমান বাংলাদেশ সংবিধানে রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে ‘জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা’ রয়েছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এর বদলে পাঁচটি মূলনীতি সুপারিশ করছে। সেগুলো হল–সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, গণতন্ত্র, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি।
বামপন্থী দলগুলো বিদ্যমান মূলনীতির সঙ্গে কমিশন প্রস্তাবিত নতুন মূলনীতি যোগ করার পক্ষে, কোনো কিছু বাদ দেওয়ার পক্ষে তারা নয়।
আর বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে যুক্ত হওয়া ‘আল্লাহর উপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস’ রাখার কথা বলে আসছিল। তবে কমিশন এখন যে প্রস্তাব দিয়েছে, তাতে তাদের আপত্তি নেই।
জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি বলেছে, কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে তারা একমত।
রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ঊনবিংশতম দিনে রাষ্ট্রের মূলনীতি পরিবর্তনের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকের এক পর্যায়ে কিছুটা উত্তেজনা তৈরি হয়।
মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে বেরিয়ে এসে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স সাংবাদিকদের বলেন, “সংবিধানের মূলনীতির প্রশ্নে ঐকমত্য হওয়া সম্ভব না। কারণ এখানে বিভিন্ন আদর্শের মানুষ আছে। এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে জনগণ, রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের কাছে যাবে, তারা সিদ্ধান্ত দেবে।
“মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত আমাদের এই সংবিধান অনেক অসম্পূর্ণতা আছে। সেজন্য আমরা আলোচনা করছি, যাতে সম্পূর্ণ করা যায়। কিন্তু মূলনীতির প্রশ্নে ছাড় দেওয়া সম্ভব না।”
বিকল্প প্রস্তাব তুলে ধরে প্রিন্স বলেন, “রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি প্রসঙ্গে এইভাবে লেখা যেতে পারে। সংবিধানে রাষ্ট্রীয় পরিচালনার চার মূলনীতির সঙ্গে (৭২ এর সংবিধান অনুযায়ী- জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র,গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা) সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি যুক্ত করা যেতে পারে।”
প্রিন্সের ভাষ্য, “মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার মূলনীতি আছে, জোর করে শব্দের মারপ্যাঁচে সেটা পরিবর্তনের কোনো ইঙ্গিত যদি জাতির সামনে প্রকাশিত হয়, সেটার সঙ্গে আমরা একেবারেই নেই।
“এইরকম অবস্থা যদি চলতে থাকে, আমাদের পক্ষে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা নিয়মিত করা সম্ভব হবে না। একইসঙ্গে যে ঐকমত্য গঠনের জন্য দীর্ঘ সময় ধরে একমত হচ্ছি, সেটাও বাধাগ্রস্ত হবে। কমিশনের কাছে দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করি।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “কমিশনের প্রস্তাবিত রাষ্ট্রের মূলনীতি নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। বরং এটাই আমাদের প্রস্তাব।”
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, “এ বিষয়ে আমরা সংলাপে জোরালো বক্তব্য দিতে পারছি না। এটা নিয়ে আমাদের কর্মীসমর্থকদের কাছ থেকে প্রশ্ন শুনতে হয়। তাদের কথা, বামপন্থিরা শক্ত করে বলে, কিন্তু আমরা নীরব থাকি।
“আমরা শক্ত করে বললে এখানে বিষম ব্যাপার। তাই উনাদেরও সংযত হওয়া দরকার। একটা বিষয় হল, নির্বাচন হলে উনাদের বক্তব্য টিকবে না। তাই জোরালো বক্তব্য দিচ্ছি না।”
এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “আমাদের দলীয় অবস্থান হচ্ছে পূর্বের (মূলনীতি) সবকিছু বাতিল করা। কমিশনের দেওয়া প্রস্তাবের সঙ্গে আমরা আছি। আমরা পূর্বেকার তর্কে যেতে চাই না।”
গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়নকারী আবুল হাসান রুবেল বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতিগুলি—সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র ও ধর্মীয় স্বাধীনতা সংবিধানে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করা হয়েছে বিশেষ করে পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল হওয়ার সম্ভাবনার প্রেক্ষাপটে।
“সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদের মত বিতর্কিত ধারণার পরিবর্তে কমিশন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়ভিত্তিক সংবিধানের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছেন, যা বাংলাদেশের জনগণের স্বপ্ন পূরণ করবে।”
বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, “রাষ্ট্রের মূলনীতি নিয়ে আমরা গত চারদিন ধরে আলোচনা করছি। অধিকাংশ রাজনৈতিক দল মনে করে ৭২ এর সংবিধানে ফিরে যাওয়ার কোনো প্রশ্নেই আসে না। কারণ সমাজতন্ত্র আন্তর্জাতিকভাবে একটা পরিত্যক্ত বিষয় হয়ে গেছে।
“বিগত ৪ দিনের আলোচনার পর কমিশন আজকে যে প্রস্তাব দিয়েছে, তার প্রতি আমরা সমর্থন দিয়েছি। যদিও আমাদের অনেকের মনের মধ্যে ভিন্নমত আছে, সেটা হল আল্লাহর উপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস এই শব্দটা যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। তারপর কমিশনের প্রস্তাবে যেহেতু ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি কথা আছে, তাই আমরা ভিন্নমত থেকে সরে এসেছি। তবে, ভবিষ্যতে কোনো রাজনৈতিক দল যদি সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব করে এবং সেটা পাস হয়, হয়তো তখন আমরা তার বিরোধিতা করবে না।”