শত কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় গড়েছেন বিআইএমের তানভীর

স্টাফ রিপোর্টার॥

প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট কে শক্তিশালীকরণ (২য় সংশোধিত) প্রকল্পের পরিচালক তানভীর হোসাইনের বিরুদ্ধে। বিআইএমের ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা তিনি। নিজের আর্থিক স্বার্থ সংশ্লিষ্টতাকে গুরুত্ব দিয়ে প্রকল্পের বাস্তবায়ন করছেন তিনি। প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়মের মধ্য দিয়ে ইতোমধ্যে তিনি মোটা অঙ্কের অর্থও তছরুপ করেছেন।

আওয়ামী দোসর এই কর্মকর্তা সে সময় সাবেক কৃষি মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের প্রভাব খাটিয়ে বাগিয়ে নেন প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব।

বিআইএমকে বানিয়েছেন অনিয়ম-দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য। পারিবারিক আবহে প্রকল্পের কাজ করে সরকারের মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন এই প্রকল্প পরিচালক। ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে প্রকল্প পরিচালক তানভীর হোসাইন আওয়ামী দোসর পরিচয় দিয়ে বাগিয়ে নিয়েছেন প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব। ৫ আগস্টের পর তার অবস্থা রহস্যময় থাকলেও মিষ্টি বিতরণ করে হয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অনুসারী। ২০১৮ সালের এপ্রিল শুরু হওয়া প্রকল্পটি ১ম সংশোধিত শেষ হয় ২০২৩ সালের জুলাই মাসে। প্রকল্পটির ২য় সংশোধিত মেয়াদ গত বছরের ডিসেম্বরে শেষ হলেও প্রকল্পটি সম্পন্ন বুঝিয়ে দিতে পারেনাই প্রকল্প পরিচালক তানভীর হোসাইন।

সূত্র জানায়, প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পেয়ে তিনি নিজেই ঠিকাদারির প্রতিষ্ঠান খুলে বসেছিলেন। যা নিয়মবর্হিভূত। হালিমা সিদ্দিকা ট্রেডার্স ও সরদার ট্রেডার্স নামক দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্টানের মাধ্যমে প্রকল্পের বিভিন্ন কাজ করছেন প্রকল্প পরিচালক তানভীর হোসাইন। হালিমা ট্রেডার্সের স্বত্তাধীকারী তার মা হালিমা সিদ্দিকা আর সরদার ট্রেডার্সের স্বত্তাধীকারীও তার ভাই। এছাড়া সিকো ইন্টারন্যাশনাল নামের আরও একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্টান কাজ করছে এই প্রকল্পে।

এই সিকো ইন্টারন্যাশনালের সাথেও রয়েছে প্রকল্প পরিচালকের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। প্রকল্প পরিচালক তানভীর হোসাইন সরকারি দায়িত্বের পাশাপাশি ব্যক্তিগত আরও চারটি কনস্ট্রাকশন প্রজেক্টের সাথে সরাসরি জড়িত রয়েছেন।হালিমা ট্রেডার্স ও সরদার ট্রেডার্স এবং সিকো ইন্টারন্যাশনাল এই তিন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি কোন রকম জবাবদিহি ছাড়াই প্রকল্পের অর্থ তছরুপ করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আর এই তছরুপকৃত কোটি কোটি টাকা নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গড়েছে বিলাসবহুল বাড়ি। যার প্রতিটি ৯ তলা থেকে ১৬ তলা বিশিষ্ট বিলাসবহুল ভবন।

বিআইএমের প্রশাসনিক ভবনের দ্বিতীয় তলার ইন্টেরিয়র ডিজাইনের কাজটি করেছেন প্রকল্প পরিচালক তানভীর হোসাইনের মায়ের নামে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্টান হালিমা সিদ্দিকা ট্রেডার্স। সেখানে ব্যাপক অনিয়ম করার অভিযোগ রয়েছে।

সূত্র জানায়, সিকো ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে করা একই ভবনের থাই-টাইলসের কাজেও করেছেন ব্যাপক অনিয়ম। ২২ হাজার স্কয়ার ফিট থাই লাগানোর কথা থাকলেও সবমিলিয়ে ৩ থেকে ৪ হাজার স্কয়ার ফিট থাইয়ের কাজ করেছেন। এছাড়াও ভবনটিতে টাইলস স্থাপনের কথা ছিল ১১ হাজার স্কয়ার ফিট। সেখানেও তিনি সবমিলিয়ে ৩ থেকে ৪ হাজার স্কয়ার ফিট টাইলস লাগিয়েছেন। প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ের কাজটি নামমাত্র কাজ দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ তছরুপ করেছেন প্রকল্প পরিচালক তানভীর হোসাইন।

এছাড়া তার ভাইয়ের নামে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সরদার ট্রেডার্সের মাধ্যমেও ব্যাপক অনিয়ম করেছেন তিনি। বিআইএমের অভ্যন্তরে রাস্তা ও উন্নয়ন কাজ করছে সরদার ট্রেডার্স। যার ইজিপি আইডি নম্বর ৮৮৩৬৯৭।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের আওতায় বিআইএমের বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণের কাজটিও পায় সিকো ইন্টারন্যাশনাল। যার ইজিপি আইডি নম্বর ৮৮৫৫৪৬। দেয়ালটি নতুন নির্মাণের কথা থাকলেও শুধুমাত্র প্লাস্টার করেই বিল পকেটে তুলেছেন প্রকল্প পরিচালক তানভীর হোসাইন।

এসব অনিয়মের মধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়ে তিনি রাজধানীর মিরপুরে পীরেরবাগে কিনেছেন ফ্ল্যাট। যার নম্বর ৩০৭/১/বি/২, ভবন-১, ফ্ল্যাট-৮/এইচ। এদিকে প্রকল্পের ব্যয় সাত কোটি টাকা বৃদ্ধি করেও করছেন অনিয়ম। বিআইএমের প্রকল্প থেকে তছরুপ করা অর্থ বিনিয়োগ করছেন প্রাইভেট প্রজেক্টে এর মধ্যে ড্রিম টাওয়ার, গার্ডেন টাওয়ার, লেক ভিউ ও রিলায়েন্স নিবাস নির্মাণের কাজ চলছে।

আদাবরের ১৭ নম্বর রোডের ১৭-১৮ কমফোর্ট হাউজিংয়ে ড্রিম টাওয়ারের একটি ফ্ল্যাটে থাকেন তিনি নিজেই। আদাবরের বায়তুল হাউজিং এলাকার ১৭ নম্বর রোডে সি ব্লকের গার্ডেন টাওয়ার, ১০৫২ নম্বর বাসা। একই রোড একই ব্লকের ১০৫০ বাসাটি তারই প্রজেক্টের যার নাম লেক ভিউ।

আদাবরের সুনিবিড় হাউজিংয়ের ১৬ নম্বর রোডের ১৬ নম্বর বাসাটিও তার নিয়ন্ত্রণে। যার নাম রিলায়েন্স নিবাস। চারটি প্রজেক্ট বাস্তবায়ন কাজই করছে সিকো ইন্টারন্যাশনাল। প্রকল্পের দায়িত্ব পেয়ে যেন আলাদ্বীনের চেরাগ হাতে পেয়েছেন তিনি।সূত্র জানায়, প্রকল্প পরিচালক তানভীর হোসাইন তড়িঘড়ি করে খাতা-কলমে প্রকল্প সম্পন্ন করলেও তা এখনো বুঝতে দিতে পারে নাই। মুলত প্রকল্পের আওতায় প্রশাসনিক ভবন মেরামত কাজেই করেছেন ব্যপক অনিয়ম। খাতা-কলমে প্রকল্পের কাজ শেষ হলেই হচ্ছে না শেষ। বিভিন্ন অনিয়মে নিমজ্জিত প্রকল্প বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টকে বুঝিয়ে দিয়ে চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে প্রকল্প পরিচালক তানভীর হোসাইন।

অবৈধ সম্পদ অর্জন ও প্রকল্পের বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে অস্বীকার করে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট কে শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের পরিচালক তানভীর হোসাইন বলেন, আমাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিব্রত করতেই কেউ এসব ভুল তথ্য সরবরাহ করেছে।

পিডি হাচানুজ্জামানের ঘুষ আর সীমাহীন দূর্নীতি

স্টাফ রিপোর্টার:

হাসিনা সরকারের পতন হলেও তার দেসরা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ স্খানে বসে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে করে যাচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম
স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ‘পানির গুণগতমান পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মুন্সী মো. হাচানুজ্জামান। এই প্রকল্পে পূর্ণকালীন পিডি হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন তিনি। কিন্তু পূর্ণকালীন পিডি হয়েও তিনি প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে পারেননি। তবে, নিজের উদ্দেশ্য ঠিকই বাস্তবায়ন করেছেন হাচানুজ্জামান!
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ‘পানির গুণগতমান পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পে সারাদেশে ৫২টি ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের জুনে শেষ হয়েছে। বাস্তবায়ন মেয়াদ শেষ হলেও প্রকল্পের আওতায় রাজস্ব খাতে ৩২২ জনের নিয়োগ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখনও কোনো লোক নিয়োগ দেওয়া যায়নি। ফলে প্রকল্পে আওতায় বিভিন্ন ল্যাবে স্থাপন করা যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে, প্রকল্পের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন না হলেও প্রকল্প পরিচালকের উদ্দেশ্য ঠিকই বাস্তবায়ন হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক বিভিন্ন টেন্ডারের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত আসা অভিযোগপত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সেখানে বলা হয়েছে, প্রকল্প পরিচালক হাচানুজ্জামানের দুই স্ত্রী। তাদের ভবিষ্যৎ গড়তে বিভিন্ন জায়গায় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি গড়েছেন। যার মূল্য কোটি কোটি টাকা।

স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবের কাছে পাঠানো অভিযোগপত্রে পিডি হাচানুজ্জামানকে সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলামের আস্থাভাজন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ডুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি পরিচয় দেওয়া পিডি হাচানুজ্জামানের অবৈধ সম্পত্তি এবং দপ্তরীয় নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ন্যূনতম শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এর সঠিক অনুসন্ধান ও তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবকে অনুরোধ জানানো হয়েছে চিঠিতে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ডিপিএইচই) এক ভুক্তভোগী ঠিকাদার হিসেবে পরিচয় দেওয়া ওই অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন, “বিবেকের তাড়নায় দেশের মঙ্গলের কথা চিন্তা করে স্ব-উদ্যোগে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ডিপিএইচই) ‘পানির গুণগতমান পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মুন্সী মো. হাচানুজ্জামানের দুর্নীতির মহোৎসবের কিছু চিত্র তুলে ধরছি।
স্থানীয় সরকার বিভাগে সাবেক সচিব, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী, সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের কথা বলে কাজ বাতিলের ভয়ভীতি দেখিয়ে এবং নিজের কথা বলে ৮৩ লাখ টাকা গ্রহণের স্বীকারোক্তিসহ আরও দুই কোটি টাকার জন্য আমার প্রতিষ্ঠানের জেনারেল ম্যানেজারকে চাপ প্রয়োগ করেন। প্রমাণস্বরূপ প্রকল্প পরিচালক মুন্সী মো. হাচানুজ্জামানের সঙ্গে আমার প্রতিষ্ঠানের জেনারেল ম্যানেজার রাকিবুল হাসানের কথোপকথনের মোবাইল রেকর্ড পেন ড্রাইভের মাধ্যমে এই দরখাস্তের সঙ্গে আপনার নিকট প্রদান করলাম।
টেন্ডার/পারসোনাল আইডি : ৯১৩০৪৭-এর গ্লাস ওয়্যারস অ্যান্ড কেমিক্যালস সরবরাহের জন্য সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের প্রতিনিধি কুমিল্লার কামালের সঙ্গে যোগসাজশে চলতি বছরের ১৫ মে মার্কস ট্রেডিং লিমিটেডকে প্রকল্প পরিচালক মুন্সী মো. হাচানুজ্জামান টেন্ডারের মাধ্যমে সাত কোটি ১২ লাখ টাকার কার্যাদেশ দেন। কোনো প্রকার মালামাল গ্রহণ না করে গত জুন মাসে দুই দফায় প্রকল্প পরিচালক মার্কস ট্রেডিং লিমিটেডকে পাঁচ কোটি ৮০ লাখ টাকার বিল পরিশোধ করেন। এই অগ্রিম বিল থেকে প্রকল্প পরিচালক মুন্সী মো. হাচানুজ্জামান নগদ দুই কোটি টাকা ঘুষ হিসেবে গ্রহণ করেন। মালামালগুলো বুঝে নেওয়ার জন্য পানির গুণগতমান পরিবীক্ষণ ও পর্যবেক্ষণ সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফিরোজ আলমচৌধুরীকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। মার্কস ট্রেডিং লিমিটেডকে পাঁচ কোটি ৮০ লাখ টাকার বিল দেওয়া হলেও মালামাল ও বিলের ব্যাপারে কমিটি কিছুই জানে না।

মুন্সী মো. হাচানুজ্জামান প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর অনিয়ম-দুর্নীতি করতে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। প্রকল্পের সব ধরনের কেনাকাটায় সিএস পাস করাতে হয় এবং এটির ক্ষেত্রে প্রত্যেক ঠিকাদারের কাছ থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কথা বলে তিনি পাঁচ থেকে ছয় পারসেন্ট নগদ টাকা হাতিয়ে নেন। তিনি প্রায়ই বলে থাকেন, মন্ত্রণালয়ের কেউ আমাকে কিছুই করতে পারবে না। মন্ত্রণালয়ের সবাইকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেই আমি প্রকল্প পরিচালক হয়েছি।
অভিযোগ আছে, এর আগে অনেকবার তার বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ এনে তদন্তের জন্য আবেদন করা হয়। কিন্তু তিনি টাকা খরচ করে প্রতিবারই পার পেয়ে যান। এভাবে পার পেতে পেতে তিনি এখন স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠেছেন।
বিভিন্নজনের নামে কোটেশন ও ভাউচার তৈরি করে প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা উত্তোলন করেছেন তিনি। নিজ আত্মীয়ের নামে রূপম ট্রেডার্স, নাদিম ইকবাল ও রাজ ট্রেডার্সের প্যাড ব্যবহার করে টেন্ডার না ডেকে প্রায় দুই কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। অফিসের সাবেক পিয়ন ইমন, সিসিটি নার্গিস ও অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত তার আপন চাচাতো ভাই সিমোনকে দিয়ে কোটেশন তৈরি করে জাল স্বাক্ষরের মাধ্যমে ওই টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি। এ জি অফিস থেকে প্রকল্পের হিসাব তদন্ত করলেই তার লুটপাটের সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে।
তিনি প্রকল্পের পিয়নকে বাদ দিয়ে আপন চাচাতো ভাই সিমোনকে মাস্টার রোলে পিয়ন হিসেবে নিয়োগ দেন। সিমোন হাচানুজ্জামানের বাসায় থাকেন এবং তার সঙ্গেই প্রকল্পের গাড়িতে অফিসে যাতায়াত করেন। সিমোনের মাধ্যমে প্রকল্প পরিচালক মুন্সী মো. হাচানুজ্জামান সব অবৈধ লেনদেন করেন। ফরিদপুর মধুখালীতে আত্মীয়-স্বজনের নামে-বেনামে শত শত বিঘা জমি (হাউজিং প্রকল্প ও চাষের জমি) ক্রয় করেছেন। তাদের নামে বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা রেখেছেন কোটি কোটি টাকা।
প্রকল্প পরিচালক হাচানুজ্জামানের গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের মধুখালীতে। সচিবের কাছে পাঠানো অভিযোগপত্রে পিডির চারতলা মার্কেট ও আলিশান বাড়ির ছবিও সংযুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া সেখানে তিনতলা একটি বাড়ির ছবিও সংযুক্ত করা হয়েছে।
ফরিদপুরের গোয়ালচামটে বড় বউ শাহানাজ বেগম ও শ্যালকের মালিকানায় পরিচালিত হচ্ছে পরিচর্যা হাসপাতাল লিমিটেড। এ ছাড়া ছোট বউ সুমাইয়া আক্তারের নামে পূর্বাচলের ডুপ্লেক্স সিটিতে রয়েছে পাঁচ কাঠার একটি প্লট। এর বাইরেও মিরপুরের ৬০ ফিট রোডে নয়তলা এবং নবীনগর ডিওএইচএসে সাড়ে নয়তলা ভবনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পাশের আরেকটি প্লটে ভবন নির্মাণাধীন।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে হলে সঠিক ও সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন এবং সেই অনুযায়ী সব কাজ বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রকল্প মেয়াদের মধ্যে সব কার্যক্রম সমাপ্তির লক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী প্রকল্পের কার্যক্রম বাস্তবায়নের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে মনিটর করা হয়। আইএমইডি থেকে প্রকল্পটির মাঠপর্যায়ে পরিদর্শন করে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ/মতামত দেওয়া হয়। কিন্তু আইএমইডির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, তার কোনো প্রতিবেদন আইএমইডিকে জানানো হয়নি।
প্রকল্পের অগ্রগতির বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রতি আইএমইডির সুপারিশে বলা হয়েছে, ডিপিপির সংস্থান অনুযায়ী বরাদ্দ এবং রাজস্ব খাত হতে ল্যাব পরিচালনার জন্য জনবল নিয়োগ দেওয়া না হলে প্রকল্পটি প্রস্তাবিত বর্ধিত সময়েও শেষ করা যাবে না। তাই এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও স্থানীয় সরকার বিভাগের বিশেষ উদ্যোগ প্রয়োজন। নির্মিত ল্যাবে রাজস্ব খাত থেকে জনবল নিয়োগপূর্বক ল্যাবের যন্ত্রপাতি/কেমিক্যাল ক্রয় সম্পন্ন করতে হবে। পদ সৃষ্টির প্রস্তাব অনুমোদনের পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদসমূহে (বর্তমানে নবম ও তদূর্ধ্ব) সরকারি কর্মকমিশনে প্রস্তাব প্রেরণ করে দ্রুত নিয়োগের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্টদের নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করা প্রয়োজন। অন্যদিকে, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর যেসব পদে লোক নিয়োগ দেবে সেগুলোর কার্যক্রম দ্রুত শুরু করা যেতে পারে।

বিষয়গুলো নিয়ে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মুন্সী মো. হাচানুজ্জামানের কাছে  জানতে চাওয়া হয়। পিডি বলেন, ‘এগুলো সব ভুয়া, মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ। এর বেশি আপনাকে আর কিছুই বলা যাবে না।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী তুষার মোহন সাধু খাঁ বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে নির্দেশনা পেলে অধিদপ্তর থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রকল্পের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রসঙ্গে ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটির ডেপুটি ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. এ কে এনামুল হক বলেন, প্রকল্পের টাকা তছরুপ অনেক ক্ষেত্রেই হচ্ছে। গত বছর প্রকল্পগুলোর ১৩ হাজার অডিট আপত্তি ছিল। এর আগের বছর অডিট আপত্তি ছিল ২২ হাজার। হয়তো প্রকল্পটা নিয়ে অডিট আপত্তিতে কিছু বলা আছে। কিন্তু কোনো অ্যাকশন হয়নি।

বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাজ করার কথা। অডিট আপত্তি থাকলে তাদের (দুদক) দায়িত্ব তদন্ত করা। কিন্তু তারা তাদের কাজটা ঠিক মতো কোনো দিন করেনি। তারা যেন বিরোধী দল দমনের নীতিতে বিশ্বাসী। তারা কেন বসে থাকবে? তারা বসে থাকলে তো এই লোকগুলো অনিয়ম করবেই।’

তার মতে, দুর্নীতি হয়ে থাকলে দুদককেই ব্যবস্থা নিতে হবে। তদের তো ফরমান দেওয়ার দরকার নেই। আইন অনুযায়ী সরকারের অনুমতি নিয়েই দুদক ওই কর্মকর্তার বিষয়ে কাজ শুরু করবে। তাদের তো বসে থাকার সুযোগ নেই। আবার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ওই পিডির অভিযোগ তদন্ত করবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় তদন্ত করে সর্বোচ্চ বদলি করতেপারে, তবে দুর্নীতির দায়ে এটা কোনো শাস্তি না। দুর্নীতি দমন কমিশনের কাজ হবে তার (পিডি) দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম
আওয়ামীলীগ ফিরলে হাসিনার পা ধরেও মাফ পাবেন না: রাশেদ খান বিমানবন্দর অগ্নিকান্ডে পুড়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম কুমিল্লায় গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার, পালিয়েছেন স্বামী ও তাঁর পরিবারের লোকজন ঢাকা এলজিইডিতে দুর্নীতির একচ্ছত্র অধিপতি বাচ্চু মিয়া বিমান বন্দরের সামনে এখোনো উৎসুক জনতার ভীড় নেভেনি আগুন বাড়িভাড়া ৫০০ টাকা বৃদ্ধি করে প্রজ্ঞাপন জারি শিক্ষকদের সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড মামলার পথেই হাঁটছে বকশীগঞ্জের সাংবাদিক নাদিম হত্যা মামলা রাজউকের ইমারত পরিদর্শক মনিরুজ্জামান ৭ বছরেই শত কোটি টাকার মালিক শাহজালাল বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ নতুন ইতিহাস গড়লেন দীপিকা পাড়ুকোন