
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সংবাদদাতা:
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজে স্নাতক চতুর্থ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে ১৪৪ ধারা অমান্য করে জেলা বিএনপির কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এতে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন অনেকে। বুধবার (০৬ জুলাই) বিকেলে স্নাতক চতুর্থ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা চলাকালীন কলেজে প্রবেশ করে জনসমাগম ও কর্মসূচি পালন করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম ওরফে রফিক চাইনিজের গ্রুপ। এসময় উচ্চস্বরে মাইক বাজিয়ে বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পতন ও ছাত্র-জনতার বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বিজয় র্যালী আয়োজন করে বিএনপি। এতে জেলা বিএনপির দুই গ্রুপ তাদের নেতাকর্মীদের নিয়ে আলাদা আলাদাভাবে এই বিজয় র্যালী ও সমাবেশের আয়োজন করে। জেলা বিএনপির ব্যানারে সদস্য সচিব আলহাজ্ব রফিকুল ইসলামের নেতৃত্ব বুধবার বিকেলে জেলা শহরের নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালী বের হয়। বিজয় র্যালীটি শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে শান্তিমোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
এর আগে জেলার বিভিন্ন উপজেলা পৌরসভা, ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা দলে দলে এসে নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে জমায়েত হতে থাকে। বিকেল প্রায় সোয়া ৪ টার দিক থেকে কয়েক হাজার নেতাকর্মী সেখানে উপস্থিত হয়। পরে ৫টা ০৭ মিনিটের পর থেকে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল ইসলামসহ নেতাকর্মীরা বক্তব্য দেন। তারা ৫টা ২০ মিনিটের দিকে কলেজ ক্যাম্পাস থেকে ব্র্যান্ড পার্টিসহ বর্ণাঢ্য বিজয় র্যালী বের করে। কলেজ সূত্রে জানা যায় স্নাতক চতুর্থ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি কেন্দ্র নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ। সেখানে বুধবার (০৬ জুলাই) সকাল ১০ টা থেকে বেলা ১ টা এবং দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত পরীক্ষা চলছিল। কিন্তু পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন থেকে আগত নেতাকর্মীরা স্লোগান ও মিছিল করছিলো এবং এ সময় ব্যান্ড পার্টি বাজাতেও দেখা যায়। আর এই মুহু মুহু স্লোগান ও উচ্চস্বরে মাইকিংয়ের মধ্যেই পরীক্ষা চলছিল কলেজে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন পরীক্ষার হলে শেষ সময়টুকু খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরীক্ষার শেষ মুহুর্তে হঠাৎ করে বাইরে থেকে উচ্চ স্বরে মাইকের শব্দ আসতে থাকে। এতে খুবই বিরক্ত মনে হচ্ছিল। এভাবে পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে মাইকিং বাজিয়ে সমাবেশ ঠিক নয়। তারা তো শহরের অনান্য ফাঁকা স্থানে সমাবেশ করতে পারে
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল আওয়াল বলেন, আমাদের কলেজে আজ (বুধবার) সকাল ১০ টা থেকে বেলা ১ টা ও দুপুর ২ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত পরিক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে একটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা কলেজে প্রবেশ করে। পরীক্ষা প্রায় শেষের দিকে তাই কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এছাড়া কোন রাজনৈতিক দল থেকে সমাবেশ বা কর্মসূচি পালনের জন্য আমাদের সাথে আগে যোগাযোগও করেনি। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলহাজ্ব রফিকুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, আমি বিকেল পাঁচটার পর কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়েছি এবং তারপরই প্রোগাম শুরু করেছি। আগে হয়ত কেউ মিছিল বা স্লোগান নিয়ে যেতে পারে। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ থেকে তাদের কোন অসুবিধা হচ্ছে এমন কিছু আমাদের জানায়নি। এছড়া কলেজ মাঠে অনেকে খেলাধুলা করছিলো আর ১৪৪ ধারা জারি থাকলে তো ক্যাম্পাসে কারও প্রবেশ করার সুযোগ থাকতো না।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. আনিসুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান কলেজের মধ্যে পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে সমাবেশ করা বেআইনী। কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে অবহিত করলে আইন অমান্যকারীদের গ্রেপ্তার করা হতো। বিষয়টি কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে এখনো জানায়নি।