তিন মাসের ব্যবধানে মাংসের ভোগ কমেছে প্রায় অর্ধেক

সবুজ বাংলাদেশ ডেস্ক: 

সরকারি একটি ব্যাংকের প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা আবুল কালাম। আগে প্রতি সপ্তাহে মাংস কিনলেও এখন মাসে কেনেন দুবার। বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেশি থাকায় কমেছে ক্রয়ক্ষমতা। ভোগপ্রবণতায় তাকে বেশ সতর্ক হতে হয়েছে।

সরকারি একটি ব্যাংকের প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা আবুল কালাম। আগে প্রতি সপ্তাহে মাংস কিনলেও এখন মাসে কেনেন দুবার। বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেশি থাকায় কমেছে ক্রয়ক্ষমতা। ভোগপ্রবণতায় তাকে বেশ সতর্ক হতে হয়েছে। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনায় অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে প্রায় অর্ধেক কমিয়েছেন মাংস খাওয়া।

ক্রেতাদের এমন হিসাবি পদক্ষেপে বিক্রেতাদের বিক্রিও কমেছে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের জনপ্রিয় মাংস বিতানে আগে দৈনিক ১৫-২০টি খাসি বিক্রি হলেও এখন তা নেমেছে ৮-১০টিতে। বিক্রেতা সুমন মিয়া জানান, এখন কাস্টমার কম, তাই বেচাবিক্রিও কম। পাশের ‘মা-বাবার দোয়া মাংস বিতান’-এ আগে দিনে তিন-চার মণ মাংস বিক্রি হতো। এখন তা আড়াই-তিন মণে নেমে এসেছে। বিক্রেতা এনামুল জানালেন, আগে মানুষের কাজকাম ছিল তাই মাংস কিনত। এখন হয়তো কাজ-আয় কমেছে, তাই মাংস বিক্রিও কমেছে।

সরকারি হিসাবেও মাংস উৎপাদনের তথ্যে ব্যাপক নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে তিন মাসের ব্যবধানে মাংস উৎপাদন বা ভোগ কমেছে প্রায় ৫০ শতাংশ। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত জুলাইয়ে দেশে মাংস উৎপাদন ছিল ১২ লাখ ২৫ হাজার টন। কিন্তু আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলন ও নতুন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পটভূমিতে মাংস উৎপাদন নেমে এসেছিল ৬ লাখ ৪১ হাজার টনে। সেপ্টেম্বরে নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত ছিল। সে মাসে মাংস উৎপাদন হয়েছিল ৬ লাখ ৩৯ হাজার টন। সর্বশেষ অক্টোবরেও মাংস উৎপাদন হয়েছিল মাত্র ছয় লাখ টন। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে দেশে মোট মাংস উৎপাদন বা ভোগ অর্ধেকে নেমে এসেছে।

খোলাবাজারে মাংস বিক্রি কমার পাশাপাশি বিভিন্ন ব্র্যান্ড শপ বা মাংস প্রক্রিয়াকরণ প্রতিষ্ঠানের বিক্রিও কমেছে। পশু খাতসংশ্লিষ্টরা অবশ্য বলছেন, বন্যার প্রভাবে এতটা উৎপাদন কমার কথা না। কিছুটা ক্ষতি হলেও সেটার প্রভাব এখনই পড়ার কথা না, বরং পরে সেটার প্রভাব আরো পড়ার কথা।

রাজধানীতে এখন গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা কেজি দরে। খাসির মাংস পাওয়া যাচ্ছে ১ হাজার ১০০ টাকায়। আর মহিষের মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়। তবে ভারত থেকে মহিষের চালান কম আসায় মহিষের মাংস সরবরাহ কিছুটা কমেছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।

মাংস উৎপাদনের এমন পতনের তথ্যে সন্দেহ প্রকাশ করে বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি শাহ ইমরান শাহ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘তারা কীসের ওপর ভিত্তি করে কীভাবে ডাটা তৈরি করেছে তা আমার জানা নেই। তবে বন্যায় কিছুটা ক্ষতি হলেও এখনই এটার প্রভাবে এত বেশি উৎপাদন কমার কথা না। কারণ বাছুর দুই বছর পর বিক্রি উপযোগী হয়। তাছাড়া বন্যার পর অনেকে ছোট গরুও বিক্রি করে দিয়েছে। সেক্ষেত্রে বাজারে গরু বেশি আসার কথা।’

খুচরা বাজারে বিক্রি কমার পাশাপাশি মাংস প্রক্রিয়াকরণের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর বিক্রিও কমেছে। বেঙ্গল মিটের সাপ্লাই চেইন ও রফতানি বিভাগের এজিএম একেএম সায়েদুল হক ভূঁইয়া বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌আমরা মূলত ফাইভ স্টার ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন হোটেলে মাংস সরবরাহ করি। সেখানে বিদেশীদের পদচারণ এখন কিছুটা কম। তাছাড়া এসব হোটেলে বড় পার্টিগুলো এখনো সেভাবে শুরু হয়নি। তাই আমাদের বিক্রিও প্রত্যাশা অনুযায়ী হচ্ছে না। তাছাড়া মূল্যস্ফীতির প্রভাবে আমাদের রিটেইল শপেও মাংস বিক্রি কিছুটা কমেছে।’

সরকারি কর্মকর্তারা অবশ্য মাংস উৎপাদন কমার পেছনে বন্যার কারণে সৃষ্ট ক্ষতির কথা বলছেন। এছাড়া বিগত সময়ের অতিরঞ্জিত তথ্য দেখানোর কথাও বলছেন তারা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (সম্প্রসারণ) ডা. শামছুননাহার আহম্মদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম পশু উৎপাদনের একটি বড় কেন্দ্র। সাম্প্রতিক বন্যায় সেখানে ও ময়মনসিংহ এলাকায় অনেক পশু মারা গেছে। তাই মাংস উৎপাদন কমে গেছে। তাছাড়া বিগত সময়ে অতিরঞ্জিত উৎপাদন দেখানো হতো। এখন আমরা মাঠ থেকে প্রকৃত তথ্য আনার চেষ্টা করছি।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘পশু জবাই না হওয়া পর্যন্ত উৎপাদন দেখানো যায় না। কয়েক মাস আগের বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে মাংস প্রক্রিয়াকরণ করা যায়নি। তাই উৎপাদন কমে এসেছিল।’

টানা ছয় মাস ধরে দেশে ১০ শতাংশের ওপরে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার। সর্বশেষ গত মাসেও তা ছিল ১২ শতাংশের বেশি। মুরগি, ডিম, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচসহ সব ধরনের সবজির মূল্যবৃদ্ধি প্রয়োজনীয় খাদ্য গ্রহণের ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছে। আর চালের মূল্যবৃদ্ধিকে সাম্প্রতিক উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রধান প্রভাবক হিসেবে মনে করা হচ্ছে।

ডব্লিউএফপির সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, জীবনধারণের জন্য ন্যূনতম ২ হাজার ১০০ ক্যালরি গ্রহণের নির্ধারিত ফুড বাস্কেটের প্রতিটি উপাদানের মূল্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এজন্য মাথাপিছু প্রতি মাসে ৩ হাজার ৫১ টাকা ব্যয় হচ্ছে। জাতিসংঘের এ খাদ্য সংস্থার সাম্প্রতিক আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে ২০ শতাংশ মানুষ। আর প্রয়োজনীয় খাদ্যসংস্থান করতে পারছে না প্রতি ১০ জনের মধ্যে তিনজন বা ৩০ শতাংশ। নিম্ন আয়ের মানুষের ক্ষেত্রে এ হার প্রায় ৩৬ শতাংশ। খাদ্যে ব্যয় সংকোচনমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে ২৯ শতাংশ মানুষ। আর সার্বিক জীবন-জীবিকায় ব্যয় সমন্বয়ের মাধ্যমে পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে ৭১ শতাংশ মানুষ।

সবা:স:জু-১৭১/২৪

বেসিক ব্যাংক নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ

বেসিক নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত ‘বেসিক ব্যাংকে টেন্ডার সিন্ডিকেট বাণিজ্যে গোপালগঞ্জের ভূত সক্রিয়, হাইকোর্টের নির্দেশনা মানছে না!’ শিরোনামে সংবাদটির প্রতিবাদ জানিয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ব্যাংকটির জনসংযোগ কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ স্বাক্ষরিত এক প্রতিবাদে সংবাদটি ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর দাবি করা হয়।

প্রতিবাদ পত্রে ব্যাংকের বক্তব্যে বলা হয়, “উল্লেখিত সম্পত্তি নিলামে বিক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে নিলামে সর্বোচ্চ দরদাতাকে প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা লংঘনের বিষয়ে উদ্ধৃত বক্তব্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর। প্রকৃত সত্য হলো এই যে, উক্ত রীট পিটিশনে আলোচ্য সম্পত্তি বিক্রয়ের কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। এই ধরনের বিভ্রান্তিকর সংবাদ ব্যাংকের মতো একটি সংবেদনশীল প্রতিষ্ঠানের সুনামের ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ক্ষতিকরে থাকে।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম