বগুড়ায় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বাড়ছে কিশোর অপরাধ

বগুড়ায় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বাড়ছে কিশোর অপরাধ

জেলা প্রতিনিধি:

শিক্ষা, সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে সমৃদ্ধ শান্তির নগরী বগুড়া হঠাৎ যেন হারিয়ে ফেলতে শুরু করেছে তার চিরচেনা রূপ। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় জেলায় এখন সক্রিয় একাধিক কিশোর গ্যাং আর সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র। গেলো কয়েক বছরের তুলনায় বগুড়ায় বেড়েছে তুচ্ছ ঘটনায় হত্যাকাণ্ড, বিভিন্ন দল আর সংঘঠনের ব্যানারে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, সাইবার বুলিং থেকে শুরু করে সব ধরনের অপরাধ।

সম্প্রতি জেলায় সবচেয়ে আলোচিত হয়েছে রিক্সাচালক শাকিল হত্যাকাণ্ড। স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা জিতুর সঙ্গে মেয়ের বিয়েতে রাজি না হওয়ায় গত ১৪ জুন তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ঘটনার পর পরই জিতুসহ তার আরও দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তবে প্রশ্ন এই জিতু ও তার বাহিনী কি একদিনে গড়ে উঠেছে? গ্রেপ্তারের পর একে একে জিতুবাহিনীর নানা অপকর্ম সামনে আসলেও তার আগে তাকে থামাতে পারেনি কেউ বরং প্রতি সরকারের আমলেই রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ছিলো এই সন্ত্রাসী ও তার বাহিনী। নিহত শাকিলের পরিবারের অভিযোগ, ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হলেও এখনো ১৪ জনই ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। পলাতক আসামিরা প্রতিনিয়ত প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন তাদের। অন্যদিকে পরিবারের উপার্জনক্ষম একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন তারা। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়নি তেমন কেউ।

জেলা পুলিশের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৪ সাল থেকে ২০২৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত দেড় বছরে বগুড়ায় প্রায় ১১৬টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। যার মাঝে ২৪ এর জুলাই ও আগস্টে ৩০টি হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হলেও আগস্ট পরবর্তী সেপ্টেম্বর থেকে এ বছরের জুন পর্যন্ত গেলো ১০ মাসে এ জেলায় হত্যাকান্ড সংগঠিত হয়েছে আরো ৫২টি। এর আগে ২০২৩ সালে বগুড়ায় ৮৭টি আর ২০২২ সালে জেলায় হত্যাকাণ্ড হয়েছিলো ৮৯টি।

হত্যাকাণ্ড ছাড়াও এই সময়ে চোখে পরে একাধিক চাকু মারামারির ঘটনা, সাইবার অপরাধের বৃদ্ধি, কিশোর গ্যাং এর অপতৎপরতাসহ অন্যান্য অপরাধের চিত্রও। ৫ আগস্ট পরবর্তী জেলাজুড়ে সক্রিয় হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ার একাধিক ফেইক এ্যাকাউন্ট ও ফেসবুক পেইজ যেগুলোর অধিকাংশ থেকেই একদিকে যেমন ছড়ানো হচ্ছে গুজব অন্যদিকে অনেকে শুরু করেছেন ভার্চুয়াল চাঁদাবাজি। ভুক্তভোগীরা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেও পাচ্ছেন না কোন প্রতিকার কারণ জেলায় পুলিশের সাইবার ইউনিট থাকলেও তা না থাকার মতই অকার্যকর। সম্প্রতি আরো আলোচিত ছিলো এপ্রিলে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় দুই সাংবাদিক ও দুই পুলিশ কর্মকর্তার আহত হওয়ার ঘটনাও। তবে প্রতিটি ঘটনায় গ্রেপ্তার হয় অপরাধীরা। জেলা জুড়ে রয়েছে সেনাবাহিনীর একাধিক ক্যাম্প। তাহলে এই অপরাধপ্রবণতার কারণ কি হতে পারে জানতে চাইলে জেলার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দরা রাজনৈতিক অনুপ্রবেশ, অভ্যন্তরীন দ্বন্দ্ব, সচেতনতার অভাব, অপরাধের সুষ্ঠু বিচার না হওয়া, আধিপত্য ও মাদকের বিস্তার এবং প্রশাসনের কাজ করার পূর্ণ স্বাধীনতা ও মনোবল না থাকার বিষয়ে আলোকপাত করেন।

এ প্রসঙ্গে বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা বলেন, অপরাধীরা কোন দলের বা মতের তা বিবেচ্য নয় তাদের জন্য প্রয়োজন কঠোর আইনের প্রয়োগ। ৫ আগস্ট পরবর্তী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নতুন করে কাজ শুরু করেছেন তবে তাদের মনোবল বৃদ্ধিতে সকলকেই ভূমিকা রাখতে হবে। বগুড়াবাসি চাকু মারামারির ঘটনায় অত্যন্ত বিব্রত যা প্রতিরোধে তিনি পুলিশের গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধির বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেন। বাদশা বলেন, এই শহর আমাদের সকলের তাই এই শহরকে সুন্দর রাখার দায়িত্ব আমাদেরকেই নিতে হবে।

অন্যদিকে অপরাধ প্রবণতার হার বৃদ্ধির পেছনে রাজনৈতিক অনুপ্রবেশের ঘটনাকে দায়ী করছেন শহর জামায়াতে ইসলামীর আমীর অধ্যক্ষ আবিদুর রহমান সোহেল। তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট এর দোষরেরা নিজেদের ভোল পাল্টিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে অনুপ্রবেশ করে বিশৃঙ্খলা তৈরীর চেষ্টা করে যাচ্ছেন যাদের শক্ত হাতে রুখতে হবে। এছাড়াও সচেতন হতে হবে অভিভাবকদের। তাদের সন্তান কোথায় যাচ্ছে, কার সাথে মিশছে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সুন্দর ও নিরাপদ বগুড়া গড়তে তারা নিজেরাও সাংগঠনিকভাবে কাজ করছেন বলেও জানান সোহেল।

এছাড়াও এ প্রসঙ্গে বৈষম বিরোধী ছাত্র আন্দোলন বগুড়া জেলা শাখার সদস্য সচিব সাকিব খান বলেন, অপরাধের সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত না হওয়ার কারণে অপরাধীরা জামিনে বের হয়ে এসে আবারো অপরাধের পুনরাবৃত্তি করেন। ফ্যাসিস্টরা যে কাজগুলো করতো তারা পালিয়ে যাওয়ার পর সেই জায়গাগুলো দখল করেছে অন্য রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দরা। আসলে দেশের স্বার্থ কেউ বিবেচনা না করে বেশিরভাগ মানুষ তাদের ব্যক্তি স্বার্থ নিয়ে পড়ে আছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় পুলিশের কিছুই করার থাকেনা। তারপরেও পুলিশসহ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আভিযানিক দলকে আরো কার্যকরী ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান এই ছাত্র নেতা।

অপরাধীদের জামিনের হার সম্পর্কে জানতে চাইলে বগুড়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর এ্যাড. আব্দুল বাসেদ জানান, প্রাথমিক প্রমাণাদিতে যদি হত্যাকাণ্ডে কারো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় এমন কোনো অপরাধীর বগুড়ার আদালতে জামিন হয় না। এছাড়াও চাকুসহ কেউ গ্রেপ্তার হলে দুই মাসের আগে তার জামিন নয়। জেলার সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে তারা মাসিক সভায় প্রতিনিয়ত সমন্বয়ের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তারপরেও তিনি জেলা পুলিশ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থে দলমত নির্বিশেষে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী ব্যক্তি ও গোষ্ঠীদেরকে কঠোর হাতে দমনের আহ্বান জানান।

সার্বিক বিষয় নিয়ে পুলিশের ভূমিকা জানতে চাইলে বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা জানান, দেড় বছরে বগুড়ায় সংগঠিত ১১৬ টি হত্যাকাণ্ডের মাঝে জুলাই ও আগস্ট মাসেই সংগঠিত হয়েছে ৩০টি। এছাড়াও আগস্ট পরবর্তী অপরাধ প্রবণতা কিছুটা বাড়লেও তা বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বিগত যেকোনো সময়ের থেকে বর্তমানে বগুড়া জেলা পুলিশ অত্যন্ত সুসংগঠিত। প্রতিটি ঘটনার তদন্তের মাধ্যমে মূল অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। অপরাধ করে কেউ ছাড় পেয়েছে এমন কোন ঘটনার নজির বগুড়ায় নেই। এছাড়াও শহরজুড়ে বিভিন্ন পয়েন্টে বাড়ানো হয়েছে পুলিশের টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি। জেলা গোয়েন্দা পুলিশের বিশেষ অভিযানে সম্প্রতি গ্রেপ্তার করা হয়েছে চিহ্নিত সব মাদক ব্যবসায়ী, সন্ত্রাসী ও প্রতারকদেরও। যে অভিযান এখনো চলমান রয়েছে। তিনি বলেন, সকলের আন্তরিক সহযোগিতা পেলে অবশ্যই বগুড়া গড়ে উঠবে নিরাপদ নগরী হিসেবে।

সিএমপির সাবেক কমিশনার সাইফুল ইসলাম সাময়িক বরখাস্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক:

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) সাবেক কমিশনার ও রাজশাহীর সারদায় সংযুক্ত ডিআইজি মো. সাইফুল ইসলামকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের এক প্রজ্ঞাপন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।  প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, রাজশাহীর সারদায় সংযুক্ত ডিআইজি, সিএমপির সাবেক পুলিশ কমিশনার (বর্তমানে ওএসডির আদেশপ্রাপ্ত) মো. সাইফুল ইসলামকে সিএমপির চান্দগাঁও থানার মামলায় গত ১১ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে তিনি জেল হাজতে রয়েছেন।

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, সাইফুল ইসলামকে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর বিধান অনুযায়ী ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে সরকারি চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। সাময়িক বরখাস্তকালীন সময়ে তিনি খোরপোশ ভাতা প্রাপ্য হবেন।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ২০তম ব্যাচের কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের ৩২তম কমিশনার।

সিএমপি কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগে তিনি ঢাকার মেট্রোরেল (এমআরটি)-এর ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (ডিআইজি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। গত বছরের ৪ জুলাই তিনি সিএমপিতে যোগদান করেন। সরকার পতনের পর ২১ আগস্ট তাকে সারদা পুলিশ ট্রেনিং অ্যাকাডেমিতে বদলি করা হয়।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম
শিক্ষার্থীরা রোডম্যাপের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিলেন শাকসু নির্বাচনের বিদেশ যেতে না পারায় মাইক ভাড়া করে এলাকাবাসিকে গালিগালাজ করলেন কিশোরগঞ্জের যুবক জুলাই সনদে স্বাক্ষর করল গণফোরাম অন্যদেরও সই করার আহ্বান কমিশনের সূচক সাড়ে ৩ মাস আগের অবস্থানে লেনদেন ৪ মাসে সর্বনিম্ন আওয়ামীলীগ ফিরলে হাসিনার পা ধরেও মাফ পাবেন না: রাশেদ খান বিমানবন্দর অগ্নিকান্ডে পুড়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম কুমিল্লায় গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার, পালিয়েছেন স্বামী ও তাঁর পরিবারের লোকজন ঢাকা এলজিইডিতে দুর্নীতির একচ্ছত্র অধিপতি বাচ্চু মিয়া বিমান বন্দরের সামনে এখোনো উৎসুক জনতার ভীড় নেভেনি আগুন বাড়িভাড়া ৫০০ টাকা বৃদ্ধি করে প্রজ্ঞাপন জারি শিক্ষকদের