পুষ্পধারার ‘স্বপ্নবাজি’: ১০ বছরের প্রতারণা বাণিজ্য

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

স্বপ্ন সত্যি হবেই’—এমন লোভনীয় স্লোগানকে হাতিয়ার বানিয়ে গতএক দশক ধরে চলছেপুষ্পধারা প্রপার্টিজ লিমিটেড এর প্রতারণারব্যবসা সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাকর্মচারীদেরআঁতাত, চটকদার প্রচার মনোমুগ্ধকর মার্কেটিং কৌশলে সাধারণমানুষকে প্রলুব্ধ করে তারা প্লট, ফ্ল্যাট, ডুপ্লেক্স, ট্রিপ্লেক্স কন্ডোমিনিয়ামের স্বপ্ন দেখায় লক্ষ্য গ্রাহকের পকেট খালি করারাজধানীর মালিবাগের জেমকন টাওয়ারে করপোরেট অফিস এবংবিদেশে শাখা খুলে প্রবাসীদের কাছ থেকেও অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেপ্রতিষ্ঠানটি

* বুকিং বাণিজ্যের ফাঁদ

২০১৪ সালে যাত্রা শুরু করে পুষ্পধারা ঢাকামাওয়া মহাসড়কের পদ্মাসেতুর কাছাকাছি এলাকায়পদ্মা ভ্যালিপদ্মা ইকোসিটিনামে দুটিপ্রকল্প চালু করে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ভূতাপেক্ষ অনুমোদন দেখিয়ে বিক্রিকরে হাজার হাজার প্লট পদ্মা ইকো সিটির প্রচারিত লেআউট অনুযায়ীকয়েক হাজার বিঘা কৃষিজমি, প্রাকৃতিক জলাভূমি খাস জমিকেপ্রকল্পভুক্ত দেখানো হয় গুগল ম্যাপ কাগুজে নকশা দেখিয়ে নেয়া হয়বুকিং মানি বাস্তবে জমির দলিল কোম্পানির নামে না করে কোম্পানিরচেয়ারম্যান, পরিচালক বা এমডির ব্যক্তিগত নামে আমমোক্তার বাবায়না চুক্তি করা হয় ফলে প্রতারণার শিকার গ্রাহক আইনের আশ্রয়নিলেও টাকা আদায়ের আইনি পথ প্রায় বন্ধ

* শর্তের ফাঁদে গ্রাহক

কোম্পানি নিজের মতো করেপ্লট বরাদ্দের নীতিমালাতৈরি করেছে, যাআপাতদৃষ্টিতে গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষার কথা বললেও ভেতরে ভেতরে রয়েছেশুভঙ্করের ফাঁকিগ্রাহকের আপত্তি অগ্রাহ্য করার বিধানসহ প্রকল্পডিজাইন লেআউট পরিবর্তনের পূর্ণ ক্ষমতা কোম্পানির হাতেবুকিংবাতিল বা কিস্তি বন্ধ হলে টাকা ফেরতের নিয়ম অস্পষ্ট বুকিং মানি কেটেবাকিটা চার কিস্তিতে ফেরত দেয়ার কথা বলা হলেও সময়সীমা উল্লেখনেই

* আইন ভেঙে বাণিজ্য

রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা আইন২০১০ অনুযায়ী আবাসনপ্রকল্পে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক হলেওপুষ্পধারার নিবন্ধনের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে মাস আগেপদ্মা ইকোসিটিবাপদ্মা ভ্যালি’- কোনোটিই অনুমোদিত প্রকল্প নয় তবুও তারাবাংলাদেশ ল্যান্ড ডেভলপার্স অ্যাসোসিয়েশন’ (বিএলডিএ) সদস্যপরিচয়ে প্লট বিক্রি করছে, যদিও বিএলডিএ কোনো অনুমোদন সংস্থানয়

* প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়া

প্রতারণা আড়াল বাজার বাড়াতে পুষ্পধারা প্রভাবশালী অবসরপ্রাপ্তসামরিক কর্মকর্তা, পুলিশ, আমলা, ব্যাংকার, এনবিআরকাস্টমসকর্মকর্তা, সাংবাদিক, এমনকি রাজনীতিকদের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবেব্যবহার করে কারো সঙ্গে ব্যবসায়িক অংশীদারিত্ব, কারো মাসোহারা, কারো অনঅ্যারাইভাল পেমেন্টের ব্যবস্থা করে তারা সাম্প্রতিকরাজনৈতিক পরিবর্তনের পর বিএনপি ঘনিষ্ঠ একাধিক ডিরেক্টরওনিয়োগ দেওয়া হয়েছে

* ভুক্তভোগীদের বক্তব্যঃ

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ভুক্তভোগী আমাদের সাথে কথাবলেছেন, তারা বলেন আমরা আমাদের অভিযোগ নিয়ে প্রশাসন সহবিভিন্ন জনের কাছে একাধিকবার গিয়েছে আর এর ফলে আমরা কোনসমাধান পাইনি পেয়েছি হুমকি আপনারা সংবাদ প্রকাশ করলে তাতেযদি আমাদের নাম থাকে তবে আমরা লাশ হয়ে যেতে পারি, আপনারআমাদের ভালো করতে গিয়ে আমাদের লাশ বানাবেন না তারা আরোবলেন এরা আমাদের সাথে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিয়েপ্রভাবশালীদের সাথে ভাগাভাগি করে তাই তাদেরকে কেউ কিছু করতেপারবে না, আপনারা শুধু লিখতেই পারবেন কিন্তু তাদের কিছুই হবে না

* পুষ্পধারার দাবি

পুষ্পধারা আইন মেনে ব্যবসা চালিয়ে আসছে কোম্পানির জাতীয়গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের নিবন্ধন ২০১৫/৬২। নবায়নের পর এটির নম্বর২০২৪/১২। নবায়নকৃত নিবন্ধনের মেয়াদ ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত বলবআছে

এছাড়া ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে৩১.০০.০০০০.০৪০.৪১.০৫১.২৩.২৬০/() নং স্মারক মূলে ভূমিমন্ত্রণালয় এবং নভেম্বর ২০২৪ তারিখে, ০৫.৩০.৫৯০০.৩০৩.২৪.০২৭.১৭৮৮০ নং স্মারক মূলে মুন্সীগঞ্জ জেলাপ্রশাসন পুষ্পধারা প্রপার্টিজ লি. এর নামে আবাসিক প্রকল্পের ক্রয়কৃতজমি অকৃষি কাজে ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দেয় ব্যবসায়িক স্বচ্ছতাবজায় রাখতে পুষ্পধারা ২০২৩ সালের ২১ নভেম্বর রাজধানী উন্নয়নকর্তৃপক্ষের নিবন্ধন পেতে আবেদন করে আবেদনটি এখনপর্যবেক্ষণাধীন

* প্রশাসনের ভূমিকা

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে থানা পুলিশ, আইনশৃঙ্খলাবাহিনী, ভূমি অফিস, রাজউক, এনবিআর, দুদক, পরিবেশ অধিদপ্তরসবখানেই পুষ্পধারার প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ রয়েছেএই বিষয়েসিরাজদিখানের ভুমি কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তামুন্সীগঞ্জজেলা প্রশাসকের সাথে একাধিকবার এই বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করেওকথা বলা যায়নিতারা এই পুষ্পধারার কথা শুনলেই দেখা বা কথাবলতে চাননা

* জাগৃকের অবস্থান

জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাজধানী আশপাশেঅনুমোদনহীন প্রকল্পের বিরুদ্ধে শিগগিরই অভিযান চালানো হবে

কাতারে এসএম সাগরের জমজমাট মাদক ব্যবসা, ঝুঁকিতে অভিবাসন খাত

নিজস্ব প্রতিবেদক॥
ঢাকা থেকে কর্মস্থলে ফেরার পথে কাতার বিমানবন্দরে গ্রেফতার হন বেশ কয়জন বাংলাদেশি। কাতারে প্রায় ৬০০ অধিক বাংলাদেশি বিভন্ন অপরাধে আটক হয়েছেন তার মধ্য মাদক ব্যবসায় সম্পৃক্ততার দায়ে আছে অনেক প্রবাসী। কাতার প্রবাসী বাংলাদেশিদের থেকে মাদক পরিবহনের তথ্য পাওয়া গেছে।

সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যে থাকা বাংলাদেশের কাতার বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে মাদক ব্যবসায় প্রবাসীদের সম্পৃক্ততার বিষয় উল্লেখ করে ঢাকায় প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। দূতাবাস সূত্র জানায়, যে কোনো ধরনের মাদক গ্রহণ, পরিবহন ও বিক্রি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে খুনের চেয়েও ভয়ঙ্কর অপরাধ বলে গণ্য করা হয়। কিন্তু একশ্রেণির বাংলাদেশি কর্মী মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছেন।

মাহফুজ আলম পিয়ার নামে এক মাদক ব্যবসায়ী সহ অনেক ক্ষেত্রে পাকিস্তানীদের সঙ্গে সংঘবদ্ধ হয়ে মাদক সিন্ডিকেট পরিচালনা করা হচ্ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাংলাদেশি প্রবাসীদের মধ্যেই মাদক বিক্রি করা হচ্ছে। তবে কেউ কেউ বাইরেও বিক্রি করছেন। ঢাকা থেকেই হাতে বা কার্গোতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে গাঁজা বা ইয়াবা। মধ্যপ্রাচ্যে এ ধরনের খুচরা ব্যবসায়ীর সংখ্যা অনেক। ধরনের গুটিকয়েক অপরাধীর জন্য ৩ লাখেরও বেশি বাংলাদেশির কর্মস্থল কাতার আরেক দফায় ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।

কাতার থেকে আসা বাংলাদেশিদের হাতে ঢাকা থেকেই ওষুধের প্যাকেটের বাহরাইনে বাজারজাত করে এক শ্রেনির অসাধু প্রবাসীরা । এ ধরনের ঘটনা ‘খুবই অপরিচিত’ মন্তব্য করেন কাতার বাংলাদেশ দূতাবাসের লেবার কাউসিলর শ্রম সচিব শেখ মোহাম্মদ তৌহিদুর ইসলাম। এতে বাংলাদেশের সুনাম বহুলাংশে ক্ষুন্ন হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা হওয়া এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রবাসীদের সহায়তায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে মাদক ব্যবসা করা এক ব্যক্তি আটক হন। তার কাছ থেকে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া যায়। তার তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে সৌদি আরব, আমিরাত, কুয়েত, ওমানে ইয়াবা ব্যবহার ও চাহিদা বেড়েছে। তবে সেখানে মাদক পাওয়া এত সহজ নয়, কারণ এসব দেশ ইসলামিক নিয়মে চলে। ফলে প্রবাসীদের মধ্যে দেশ থেকে মাদক নিয়ে যাওয়ার প্রবণতা শুরু হয়। আগে বেশি পরিমাণে গাঁজা পাঠানো হলেও এখন সবচেয়ে বেশি যায় ইয়াবা। কারণ পরিবহনে সুবিধা। প্রবাসী পরিচিত কেউ ছুটিতে দেশে এলে ফিরে যাওয়ার সময় তাদের কাছে না জানিয়ে বা জানিয়ে বিভিন্ন ঠিকানার ব্যক্তিদের কাছে মাদক পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়।

বিশেষত পিঠা, বিভিন্ন শুকনা খাদ্য ও আচারের ভিতর মাদক ঢুকিয়ে দিয়ে দেন এসব চক্রের লোকেরা। সব থেকে আচারের ভিতর ইয়াবা ঢুকিয়ে দিলে বিমানবন্দরে চেকিংয়ের সময় ধরা পড়ে না বলেও ওই পাচারকারী জানিয়েছেন। বাহরাইনে এসব বিক্রির সঙ্গে জড়িয়ে আছেন বেশ কিছু ‘ফ্রি ভিসা’র প্রবাসী। তারা কাজ না করে বেশি অর্থ উপার্জনের জন্য গোপনে প্রবাসেই ব্যবসা করছেন। প্রতি পিস ইয়াবা বাংলাদেশ থেকে সংগ্রহ করে চার থেকে পাঁচগুণ দামে এক-দেড় হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। আর এগুলো বাংলাদেশ তার এজেন্ট হিসেবে কাজ করে মাহফুজ আলম পিয়ার নামে আরেক মাদক ব্যবসায়ী।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ‘৩০ জুন পর্যন্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জানামতে ৮ হাজার ৮৪৮ জন বাংলাদেশি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের জেলে বা ডিটেনশন সেন্টারে আটক রয়েছেন।’ তিনি জানান, কূটনৈতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে বিদেশি কারাগারে আটক বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অন্যতম দায়িত্ব। এটা দূতাবাসের সাহায্যে রুটিন মাফিক করে আসছে মন্ত্রণালয়। অতি সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়া, তিউনিশিয়া, লিবিয়া ও ভানুয়াতু থেকে আটকে পড়া অনেক বাংলাদেশি দূতাবাসের সার্বিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে ফিরে এসেছে এবং দেশে ফিরে আসার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর তথ্যানুযায়ী, বিশ্বের ৪৪টি দেশে এসব বাংলাদেশি আটক রয়েছেন। এর মধ্যে সব থেকে বেশি আটক ভারতে। দেশটিতে আটক আছেন ২ হাজার ৪৯ জন। এরমধ্যে ২ হাজার ৩১ জন কলকাতায় বাকি ১৮ জন আগরতলায়। এ ছাড়া অন্যান্য দেশের মধ্যে আবুধাবিতে ১ হাজার ১৫৬ জন, বাহারাইনে ৬৯৩, মালয়েশিয়ায় ৫৭২, সৌদি আরবে ৭৬৮, ওমানে ৪৪২, কুয়েতে ৩১৬ এবং তুরস্কে ৩২৭ জন আটক আছেন।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম
প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে কার্গো ভিলেজের অগ্নিকাণ্ডে অত্যন্ত হতাশাজনক : মির্জা ফখরুল রাজনৈতিক দের মাঝে যে অনৈক্য কুমিরের দেখা মিলল রাজশাহীর পদ্মায় সরকার ও সেনাবাহিনী, গণতন্ত্রে উত্তরণ ও ন্যায়বিচার যেন ব্যাহত না হয় আজ থেকে আমরণ অনশন, প্রত্যাখ্যান শিক্ষকদের শিক্ষার্থীরা রোডম্যাপের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিলেন শাকসু নির্বাচনের জুলাই সনদে স্বাক্ষর করল গণফোরাম অন্যদেরও সই করার আহ্বান কমিশনের সূচক সাড়ে ৩ মাস আগের অবস্থানে লেনদেন ৪ মাসে সর্বনিম্ন আওয়ামীলীগ ফিরলে হাসিনার পা ধরেও মাফ পাবেন না: রাশেদ খান বিমানবন্দর অগ্নিকান্ডে পুড়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম