জুড়ীতে চা বাগান সর্দার হত্যা রহস্য উদঘাটন, আসামি গ্রেপ্তার

জুড়ীতে চা বাগান সর্দার হত্যা রহস্য উদঘাটন, আসামি গ্রেপ্তার

ইসমাইল মাহমুদ, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার জয়চন্ডি ইউনিয়নের ক্লিবডন চা বাগানের শ্রমিক সর্দার রামবচন গোয়ালা (৪০) হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন ও হত্যা মামলার মূল আসামি গোলাপ সতনামীকে (৩৩) আলামতসহ গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আসামির কাছ থেকে হত্যায় ব্যবহৃত লাঠি, নিহতের মোবাইল ফোন, জুতা, লাঠি বাঁধার গামছার টুকরো এবং আসামির মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে। শনিবার (৪ অক্টোবর) দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কুলাউড়া সার্কেল) মো. আজমল হোসেন। এসময় জুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মুরশেদুল আলম ভূঁইয়া ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) ফরহাদ মিয়া উপস্থিত ছিলেন।

পুলিশ সূত্র জানায়, গত ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রামবচন গোয়ালা তার বাগানের বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন। স্বজনরা খোঁজাখুঁজি করে ব্যর্থ হয়ে পরদিন ২৭ সেপ্টেম্বর কুলাউড়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। পরদিন সকালে জুড়ী উপজেলার সাগরনাল ইউনিয়নের কাপনাপাহাড় চা-বাগান এলাকায় রক্তের দাগ ও স্যান্ডেল দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ চা-বাগানের বাবুনালা ছড়া থেকে রামবচন গোয়ালার মরদেহ উদ্ধার করে।

মরদেহ উদ্ধারের পর জেলা পুলিশ সুপার এম. কে. এইচ জাহাঙ্গীর হোসেনের নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) নোবেল চাকমা ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কুলাউড়া সার্কেল) মো. আজমল হোসেনের তত্ত¡াবধানে জুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মুরশেদুল আলম ভূঁইয়ার নেতৃত্বে পুলিশের বিশেষ টিম তদন্ত শুরু করে। পরে গোপন তথ্য ও প্রযুুক্তির সহায়তায় শুক্রবার (৩ অক্টোবর) ভোরে জুড়ী উপজেলার কামিনীগঞ্জ বাজার থেকে হত্যা মামলার আসামি গোলাপ সতনামীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি গোলাপ সতনামী জানায় ২০১৭ সালে নিহত রামবচন গোয়ালার কারনে আসামি গোলাপ চা-বাগানে চাকরি হারিয়েছিল। এ নিয়ে তার দীর্ঘদিনের ক্ষোভ ছিল। ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় নিহত রামবচনকে মদ খাওয়ানো উদ্দেশ্যে মোটরসাইকেলে করে রত্না চা বাগানে যায়। সেখানে চন্দন নামের এক ব্যক্তিসহ তারা মদ পান করে। এসময় চাকরি ফেরত চাওয়ার প্রসঙ্গ নিয়ে বাকবিতন্ডা হয়। নিহত রামবচন আসামি গোলাপকে গালিগালাজ করলে ক্ষিপ্ত হয়ে সে হত্যার পরিকল্পনা করে। রাত আনুমানিক ১০টা ৪০ মিনিটে রত্না চা-বাগান থেকে ফেরার পথে কাপনা পাহাড় চা-বাগানের বাবুনালা ছড়ার কাছে গোলাপ সতনামী কোদালের হাতল দিয়ে রামবচনের মাথায় একাধিকবার আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। হত্যার পর গোলাপ সোনারূপা চা বাগানে গিয়ে এক ব্যক্তিকে বিষয়টি জানায়। পরে দু’জনে মিলে নিহত রামবচনের মরদেহ টেনে বাবুনালা ছড়ায় ফেলে দেয় এবং গাছপালা ও মাটি চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়।

মরদেহ গুম করতে সাহায্যকারী ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারে জোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কুলাউড়া সার্কেল) মো. আজমল হোসেন বলেন।

নোয়াখালীতে কিডনি ইউনিট বন্ধের ঘোষণায় রোগীদের বিক্ষোভ

নোয়াখালীতে কিডনি ইউনিট বন্ধের ঘোষণায় রোগীদের বিক্ষোভ

নোয়াখালী জেলা প্রতিনিধি:

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের কিডনি ডায়ালাইসিস ইউনিট হঠাৎ বন্ধের ঘোষণায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন রোগী ও স্বজনরা। সোমবার (৭ জুলাই) সকাল থেকে হাসপাতালের সামনে অক্সিজেন সিলিন্ডার, হুইলচেয়ার ও স্ট্রেচারে করে কয়েকজন রোগী ও স্বজনরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন। পরে জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি দেন তারা।

বিক্ষুব্ধদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে এখান থেকে স্বল্পমূল্যে ডায়ালাইসিস সেবা পাচ্ছিলেন তারা। ইউনিটটি বন্ধ হয়ে গেলে প্রাইভেট ক্লিনিকে অতিরিক্ত খরচ বহন করা অনেকের পক্ষে সম্ভব হবে না। নিয়মিত ডায়ালাইসিস না করালে অনেক রোগীর জীবন হুমকির মুখে পড়বে।

ডায়ালাইসিস সেন্টারের ইনচার্জ ডা. মামুন পারভেজ জানান, এখানে সরকারিভাবে কোনো বরাদ্দ আসে না। রোগীদের কাছ থেকে সামান্য অর্থ নিয়ে সেবা চালু ছিল। কিন্তু সাবেক ইনচার্জ ডা. শাহিদুল ইসলাম সাকিব বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দেওয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অভিযান চালায়। ফলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আপাতত ইউনিটটি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

তাসলিমা বেগম নামে এক রোগী বলেন, প্রতি সপ্তাহে দুইবার ডায়ালাইসিস করাতে হয়। মাত্র ৪০০ টাকায় এই হাসপাতাল থেকে সেই সেবা পেতাম। কিন্তু হঠাৎ দুপুর ১২টার মধ্যে হাসপাতাল ছাড়ার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। বন্ধ হয়ে গেলে আমাদের মতো রোগীদের কোথায় যাব?

রোগীর স্বজন আবদুল মোতালেব ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এখানে ক্যাথেটর আড়াই হাজার টাকায় আর ফিস্টুলা ৬ হাজার টাকায় হয়। বাইরে এর খরচ ১৫-৩০ হাজার টাকা। কিছু প্রাইভেট হাসপাতাল মালিকের চাপে ও ষড়যন্ত্রে এটি বন্ধ করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নার্স জানান, সাবেক ইনচার্জ ডা. শাহিদুল ইসলাম সাকিব রোগী ও নার্সদের সঙ্গে অসদাচরণ করেছেন। এমনকি রোগীদের প্রাইভেট হাসপাতালে যেতে বাধ্য করতেন, মৃত্যুকামনা করতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

জানা গেছে, ইনচার্জ থাকা অবস্থায় তিনিও রোগীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সেবা চালাতেন। তবে অসদাচরণ ও আচরণগত কারণে তাকে প্রত্যাহার করে ঠাকুরগাঁওয়ে বদলি করা হয়। এরপর থেকেই বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়ে ইউনিট বন্ধের চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে ডা. শাহিদুল ইসলাম সাকিব বলেন, আমি এখন এখানে নেই। ঠাকুরগাঁওয়ে বদলি হয়েছি। ডায়ালাইসিস সেন্টারের অনিয়ম তুলে ধরার কারণেই আমাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। আমার বিরুদ্ধে মানববন্ধনের কোনো যৌক্তিকতা নেই।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ৩ জুলাই দুদকের অভিযানের পর ইউনিটের চিকিৎসক ও কর্মচারীরা সম্মানহানির অভিযোগ করেছেন। এখনই ইউনিট বন্ধ করছি না, তবে সরকারি সহায়তা না পেলে চালিয়ে যাওয়া কঠিন হবে।

জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ গনমাধ্যমকে বলেন, বিষয়টি আমরা গুরুত্বসহকারে দেখছি। আপাতত বন্ধ হচ্ছে না। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ থেকে যন্ত্রপাতি সরবরাহের মাধ্যমে এই আধুনিক কিডনি ডায়ালাইসিস ইউনিট চালু হয়। এরপর থেকে নোয়াখালী ছাড়াও আশপাশের জেলা থেকে বহু রোগী এখানে স্বল্প খরচে সেবা নিচ্ছেন। জনগণের স্বার্থে ইউনিট চালু রাখার উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ বিশৃঙ্খলা করলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম