পাঁচ বিসিএস ক্যাডারের মা সুফিয়া আক্তার হক রত্নগর্ভা পদকে ভূষিত

স্টাফ  রিপোর্টার:

কুমিল্লা যুব সমিতি কর্তৃক পাঁচ বিসিএস ক্যাডারের মা মিসেস সুফিয়া আক্তার হক কে আজ এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে রত্নগর্ভা পদকে ভূষিত করা হয়েছে।উক্ত গুণীজন সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান রত্নগর্ভা মায়ের ছেলে মেয়েদের হাতে উক্ত সম্মাননা তুলে দেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি।

মিসেস সুফিয়া আক্তার হক কুমিল্লা জেলা মুরাদনগর থানার বাইরা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে ১৯৫৫ সালের ২৫শে ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করে। তার বাবা মৃত: তারিফুল ইসলাম সরকার ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক। তখনকার দিনে মেয়েদের বিভিন্ন কারণে লেখাপড়ায় অনগ্রসরতা ছিল। বাবা এবং মা মৃত: জোবেদা খাতুনের আন্তরিক প্রচেষ্টায় এবং শাসনে তিনি এইচএসসি পাশ করেন। পরবর্তীতে সাংসারিক কাজে ব্যস্ত হয়ে যাওয়ায় আর লেখাপড়ায় এগুতে পারেননি। তার স্বামী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো:শহীদুল হক পেশায় একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এবং সাংবাদিক। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের এক ছেলে এবং এক মেয়ে ছিল। তার স্বামী বঙ্গবন্ধুর ডাকে যখন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য বাড়ি থেকে পালিয়ে ভারতের মেলাঘরে প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য চলে গিয়েছিল তখন তিনি দুই সন্তানকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপন করেছিলেন। কারণ তখন রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের উপর চরম নির্যাতন করতো। দেশ স্বাধীন হবার পর তার স্বামী ফিরে আসলে নতুন করে তাদের জীবন শুরু হয়। একে একে তার চার ছেলে এবং তিন মেয়ে জন্মগ্রহণ করে। তার স্বামী শিক্ষকতা এবং সাংবাদিকতা নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও তিনি কিন্তু একাই তার সাত সন্তানকে লেখাপড়ায় ব্যস্ত রেখেছিলেন। নেপোলিয়ন যেরকম বলেছিলেন “তোমরা আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও আমি তোমাদের একটি শিক্ষিত জাতি দেব।” মিসেস সুফিয়া আক্তার হকের জীবনে নেপোলিয়নের সেই বাণীটি অক্ষরে অক্ষরে পালিত হয়েছে।

আজ মিসেস সুফিয়া আক্তার হকের ছেলেমেয়েরা সমাজে সম্মানজনক পেশায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিটি ছেলে-মেয়ে শিক্ষায় সর্বোচ্চ ডিগ্রী অর্জন করেছে। তার বড় ছেলে মোঃ নোমানুল হক সুপ্রিম কোর্টের একজন এডভোকেট। দ্বিতীয় ছেলে মোঃ নাজমুল হক বিসিএস পররাষ্ট্র ক্যাডারের একজন সদস্য। বর্তমানে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পরিচালক হিসেবে কর্মরত আছেন। তৃতীয় ছেলে মোঃ নাইমুল হক বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের একজন সদস্য। বর্তমানে তিনি টুরিস্ট পুলিশের ঢাকা রিজিয়নে পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত আছেন। চতুর্থ ছেলে মোঃ নাদিমুল হক বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের একজন সদস্য। তিনি বর্তমানে তিতুমীর সরকারি কলেজে কর্মরত আছেন। বড় মেয়ে রায়হানা কলি বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের একজন সদস্য। তিনি বর্তমানে সবুজবাগ সরকারি কলেজে কর্মরত আছেন। দ্বিতীয় মেয়ে রুমানা কান্তা পেশায় একজন ডাক্তার। তিনি বর্তমানে নিউইয়র্কে একটি হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত আছেন। তৃতীয় মেয়ে রোখসানা কনা বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের একজন সদস্য। তিনি বর্তমানে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তরে (মাউশি) গবেষণা অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন।

মিসেস সুফিয়া আক্তার হকের ছেলেমেয়েরা জানান, তাদের আজকের সফলতার পিছনে বাবা-মা দুজনেরই ভূমিকা রয়েছে। তবে মায়ের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। তিনি তাদের আদর যেমন করেছিলেন তার চেয়েও বেশি ছিল তার শাসন। কখনোই কোন খারাপ কাজে তিনি তাদের প্রশ্রয় দেননি। সব সময় তাদের মানুষের মত মানুষ হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর কথা বলতেন।

বই না কিনেও যে দোকানে বই পড়া যায়

সবুজ বাংলাদেশ ডেস্ক: 

রমজান আলীর বাবা ছিলেন দিনমজুর। টাকা দিতে না পারায় একবার তাঁর হাত থেকে ছেলের জন্য কেনা বই কেড়ে নিয়েছিলেন দোকানি। সেই রমজানই এখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটে অন্য ব্যবসার পাশাপাশি বিনা মূল্যে বই পড়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। ওঙ্কার নামের এই বইয়ের দোকানে বই না কিনেও পড়া যায়। শুধু তা–ই নয়, নিয়মিত পড়লে মেলে পুরস্কার। আগামী ফেব্রুয়ারিতেই যেমন পুরস্কার পাবেন ১২ জন পাঠক।

ওঙ্কারের স্লোগান ‘বইয়ের সঙ্গে সন্ধি’। ওঙ্কার চত্বরে বসে কেউ যদি মাসে অন্তত ২০ দিন কমপক্ষে এক ঘণ্টা বই পড়েন, তাঁর জন্য থাকে উপহার—একটি সৃজনশীল ও একটি মননশীল বই। রমজান আলীর এমন আহ্বানে সাড়া দিয়ে সত্যিই শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা এসে বসেন গাছের ছায়ায়। রাজশাহী বেড়াতে এসেও অনেকে ঘুরে যান। ৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় যেমন এসেছিলেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। পরিদর্শন বইয়ে লিখেছেন, ‘ওঙ্কার নামটিই প্রবল শক্তির ডাক দেয়। এই বইয়ের সম্ভার প্রাণশক্তি দিক। অনেক শুভেচ্ছা।’ রমজান আলীর এই প্রাণশক্তির উৎস জানতেই গত ৪ নভেম্বর দুপুরে ওঙ্কার চত্বরে গিয়েছিলাম, নিয়ে গিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক রহমান রাজু।

রমজান বলেন, ‘আব্বা দিনমজুর, কোনোমতে সংসার চলে, আমরা তিন ভাই। আমি সবার বড়। মনে আছে স্কুল থেকে এসে ইটভাটায় কাজ করেছি, কয়লা ভাঙার কাজ করেছি। এলাকার বুধপাড়া দাখিল মাদ্রাসায় ক্লাস সিক্সে ভর্তি করে দিলেন মা। এক বছর কোনোমতে পার হলেও ক্লাস সেভেনে ওঠার পর মূল সমস্যা শুরু—বইখাতা কেনার টাকা নেই। একদিন আব্বার সঙ্গে স্টেশনবাজারে বাংলা বই কিনতে গিয়েছি। বইয়ের দাম ১৭ টাকা। দোকানিকে ১০ টাকা দিয়ে আব্বা বলেছিলেন, বাকি টাকা পরে দেবেন। কিন্তু দোকানি শুনলেন না। আব্বার হাত থেকে বই কেড়ে নিলেন। আরেকবার খাতা–কলম না নিলে ক্লাসে স্যার মারবে, এই ভয়ে স্কুলে যাচ্ছি না। এদিকে মা মারছে, আমি কান্নাকাটি করছি—এই অবস্থা দেখে সেই ইটভাটার ম্যানেজার গোলাপ ভাই আমাকে দোকানে নিয়ে গিয়ে খাতা–কলম কিনে দিলে পরে স্কুলে গেলাম। এ রকম অনেক গল্প আছে।’

‘এলাকার এক ভাই একদিন বলল, শোন রঞ্জু, এভাবে পড়ালেখা হবে না। আমার সঙ্গে চল। ক্যাম্পাসে একটা দোকানে কাজে লাগিয়ে দিই। ১৪ বছর বয়সে ১৯৯৭ সালের জুন মাসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতিহার হলের উল্টো দিকে স্টেডিয়াম মার্কেটে স্টুডিও লিবার্টিতে কাজ আরম্ভ করলাম। প্রায় সাত বছর কাজ করেছি। এরপর নিজে সেখানে একটি দোকান করলাম, ছবি বাঁধাইয়ের কাজ। ২০০৩ সালে আব্বা মারা গেলে সংসারের দায়িত্ব আমার ঘাড়ে পড়ল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবনের পেছনে পরিবহন মার্কেটে দোকান করে আসলাম ২০০৬–এর শেষের দিকে। শুরু করলাম উপহারসামগ্রীর সঙ্গে বই বিক্রি, যে বইগুলো একটু কম দামে পাওয়া যায়। এই মার্কেট ক্যাম্পাসের প্রাণকেন্দ্র হওয়ায় অনেকের সঙ্গেই খুব ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠল।’

২০১০ সালের কথা, বাংলা বিভাগের তখনকার ছাত্র, বর্তমানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আবুল ফজলের সঙ্গে আমার বেশ ভালো সম্পর্ক। একদিন দুজন মিলে চায়ের দোকানে গল্প করছি। একপর্যায়ে ফজল ভাইয়ের পরামর্শে সিদ্ধান্ত হলো দোকানে ভালো বই বিক্রি করব। লোহার বেঞ্চে বসে ফজল ভাই তখনই ১৭০ থেকে ১৯০টি দেশি-বিদেশি লেখকের বইয়ের নাম লিখে দিল। একসঙ্গে এত বইয়ের নাম দেখে অবাক হয়েছিলাম, এখন নিজেই ৫০০ বইয়ের নাম লিখতে পারি। ঢাকায় বাংলাবাজারে একদিন গেলাম, উত্তরণ প্রকাশনীর ম্যানেজার অরূপ দত্ত ও ছোট ভাই সুজন সিকদারের সঙ্গে পরিচয় হলো। এই দুজন পথপ্রদর্শক, আমার বইয়ের জোগানদাতা। দেখতে দেখতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা আড়াই যুগ হতে যাচ্ছে, একটা কুরিয়ার সার্ভিসের আমতলা এজেন্সি পরিচালনা করছি প্রায় ৯ বছর, তা থেকে সংসার চলে।

‘অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল সুন্দর একটি বইয়ের দোকান করব। সহজলভ্য ইন্টারনেট, স্মার্টফোন, হলে হলে ওয়াই–ফাই ফ্রি—এসব কারণে ছেলেমেয়েরা বর্তমানে বই থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। শুভাকাঙ্ক্ষী বড় ভাই, শিক্ষক, বন্ধু—যাঁদের সঙ্গে আমার নিত্য চলাচল, তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করলাম। সবাই সাহস জোগাল। আহমদ ছফার উপন্যাস অবলম্বনে দোকানের নাম ঠিক করলাম  “ওঙ্কার”। স্বপ্ন দেখি, ক্যাম্পাস চত্বরে যেমন চা–সিগারেটের দোকানে একশ্রেণির শিক্ষার্থীরা সময় কাটান, এই ওঙ্কার চত্বরে শিক্ষার্থীরা বই নিয়ে আলোচনা করবেন, আড্ডা দেবেন। হবে সৃজনশীল আলোচনা, নিজেকে সুগঠিত করার আলোচনা। অনেক ছেলেমেয়ে আবার সেজেগুজে বইয়ের সঙ্গে ছবি তুলতে আসেন। আমি বলি আসুক, আসতে আসতেই বইয়ের সঙ্গে ওদের সন্ধি হবে।’

সেদিন রাত সাড়ে ৯টায় ওঙ্কারে গিয়ে ৭-৮ জন ছেলেমেয়েকে পাওয়া গেল, যাঁরা পড়ছেন। দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী রাবেয়া মুহিব বললেন, যদি জিজ্ঞাসা করেন, ক্যাম্পাসে আমার সব থেকে পছন্দের জায়গা কোনটি, এককথায় বলব, ওঙ্কার চত্বর। সিলেবাসের বাইরে সাহিত্য, দর্শন, কবিতা, ইতিহাস পড়তে ভালো লাগে, আবার এদিকে লাইব্রেরিতে আপডেট বই পাওয়া যায় না। রাজশাহীতে ভালো মানের বইয়ের দোকান হাতে গোনা। না কিনে যদি বই পড়া যায়, মন্দ তো হয় না। এর মধ্যে রঞ্জু ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয়। তিনি শিক্ষার্থীদের না কিনে বই পড়ার শুধু অনুমতিই দিলেন না, ঘোষণা দিলেন বই পড়লে পুরস্কার দেবেন। প্রতিদিন আমার মতো অনেক শিক্ষার্থী এখানে বই নিয়ে তর্ক করে, আড্ডা দেয়, কবিতা পড়ে আর ভালোবাসতে শেখে। ওঙ্কারের এই বই পড়া হয়ে উঠেছে আমার অর্ধেক ক্যাম্পাস। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু হুরায়রা বলেন, ‘ওঙ্কার–এ অনেক নতুন বইয়ের সংগ্রহ আছে, আর এখানে এত এত দামি বই আছে, যেগুলো অন্য কোনো দোকানে গেলে কিনতে অনেক টাকা লাগবে। সেই বইগুলো আমি এখানে খুব সহজেই শেলফ থেকে নামিয়ে পড়ে ফেলতে পারি। এই উচ্চমূল্যের বাজারে মাস পার করতেই যেখানে কষ্ট হয়ে যায়, সেখানে সাধারণ একজন ছাত্র হিসেবে নতুন নতুন বই কেনা কতটা কঠিন, যাঁরা বই কেনেন, তাঁরা বুঝতে পারবেন। আমি ২০২৩ সাল থেকে নিয়মিত আসি।’

 

সবা:স:জু- ৫৫৬/২৪

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম
জানানো যাচ্ছে অভিযোগ, থানায় বসলেই ভিডিওকলে হাজির এসপি প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে কার্গো ভিলেজের অগ্নিকাণ্ডে অত্যন্ত হতাশাজনক : মির্জা ফখরুল রাজনৈতিক দের মাঝে যে অনৈক্য কুমিরের দেখা মিলল রাজশাহীর পদ্মায় সরকার ও সেনাবাহিনী, গণতন্ত্রে উত্তরণ ও ন্যায়বিচার যেন ব্যাহত না হয় আজ থেকে আমরণ অনশন, প্রত্যাখ্যান শিক্ষকদের শিক্ষার্থীরা রোডম্যাপের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিলেন শাকসু নির্বাচনের জুলাই সনদে স্বাক্ষর করল গণফোরাম অন্যদেরও সই করার আহ্বান কমিশনের সূচক সাড়ে ৩ মাস আগের অবস্থানে লেনদেন ৪ মাসে সর্বনিম্ন আওয়ামীলীগ ফিরলে হাসিনার পা ধরেও মাফ পাবেন না: রাশেদ খান