১৩ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । সকাল ৮:৪৭ ।। গভঃ রেজিঃ নং- ডিএ-৬৩৪৬ ।।
নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানীর মিরপুর ১৪ নম্বরে ভাষানটেক থানার আওতাধীন ১৫০ বিঘা জমির উপর অবস্থিত ভাষানটেক পুনর্বাসন প্রকল্প এবং ঢাকার বিজয় সরণিস্থ কলমিলতা বাজারের ক্ষতিপূরণ প্রদানে অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের বিরুদ্ধে ৬ দফা কর্মসূচী ঘোষণা করেছে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদির এর পরিবার। আজ মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে “উই ওয়ান্ট জাস্টিস ফর ফ্রিডম ফাইটার্স ফ্যামিলি” শীর্ষক আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে তারা এ কর্মসূচী ঘোষণা করেন। এসময় তারা ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম ও ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর পদত্যাগ দাবি করেন। সমাবেশে এসময় বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতিক, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, নৈতিক সমাজের সভাপতি ও সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল আমসা আমীন, এবি পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক ব্যারিস্টার ফুয়াদ, এনডিএম এর সাংগঠনিক সম্পাদক লায়ন নুরুজ্জামান হীরা, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল ইসলাম মিলন, মানবাধিকার সংগঠনের নেতা আলহাজ ড. শরিফ শাকী, স্বাধীনতা অধিকার আন্দোলনের সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনির, দেশ প্রেমিক নাগরিক পার্টির চেয়ারম্যান আহসান উল্লাহ শামীম, ভাষানটেক ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সদস্য জাহানারা বেগম প্রমুখ।
৬ দফা কর্মসূচীগুলো হলো- ১। ভাষানটেক পুনর্বাসন প্রকল্প বাস্তবায়নের বাঁধাসমূহ দূর করা এবং কলমিলতা বাজারের ক্ষতিপূরণ প্রদানে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করা। ২। ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক নর্থ-সাউথ প্রপার্টির চুক্তি বাতিল আদেশ অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার করার ব্যবস্থা করা। ৩। ভাষানটেক পুনর্বাসন প্রকল্প ব্যর্থ করার ষড়যন্ত্রের দায়ে ভূমি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য হাইকোর্টের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা । ৪। ভূমি মন্ত্রণালয় ও নর্থ-সাউথ প্রপার্টির মধ্যে যাবতীয় বিরোধ সালিশি বোর্ডের মাধ্যমে সমাধান করা। ৫। ভাষানটেক পুনর্বাসন প্রকল্প সংক্রান্তে দুর্নীতি দমন কমিশনের বন্ধ হওয়া তদন্ত কার্যক্রম পুনরায় চালু করা। সেইসঙ্গে মেয়র আতিকের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অভিযোগটি তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন জাতির সামনে তুলে ধরা। এবং ৬। শহীদ পরিবার হিসেবে আলহাজ্ব আব্দুর রহিম সাহেবের পরিবারবর্গের জানমাল ও সম্পদের সুরক্ষা প্রদান করা।
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতিক বলেন, ভাষানটেক পুনর্বাসন প্রকল্প এবং কলমিলতা বাজার নিয়ে যে অনিয়ম চলছে তা এই স্বাধীন দেশে কাম্য নয়। জেলা প্রশাসক বারবার সমাধানের আহ্বান জানালেও সিটি কর্পোরেশন সমাধান করছে না, যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আমি সিটি কর্পোরেশনসহ যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করবো অতি দ্রুত বিষয় দুটির সমাধান করুন। তানাহলে একদিন এর জন্য আপনাদের জবাদিহিতা করতে হবে।
লিখিত বক্তব্যে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য নুরতাজ আরা ঐশী বলেন, ভাষানটেক পুনর্বাসন প্রকল্প একটি পাইলট পরীক্ষামূলক প্রকল্প। এই প্রকল্পে সরকারের একটি টাকাও বিনিয়োগ করা হয়নি। পুরো প্রকল্পটি আমার বাবা তার নিজের সম্পদ বিক্রি করে গড়ে তুলেছেন। নর্থ-সাউথ প্রপার্টি একটি বিনিয়োগ ও বাস্তবায়নকারী সংস্থা। এটি একটি পিপিপি অর্থাৎ সরকারি বেসরকারি অংশীদার প্রজেক্ট। সরকারের সাথে ২০০৩ সালে করা চুক্তি বাতিলের কোনো শর্ত নেই। সরকার চাইলেও কোন শর্ত কিংবা চুক্তি বাতিল করতে পারবে না। ২০১০ সালে প্রকল্প থেকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সন্ত্রাসী কায়দায় এক কাপড়ে নর্থ-সাউথ প্রপার্টি লিমিটেডের চেয়ারম্যান তথা আমার বাবার পরিবার এবং তার কর্মচারীদেরকে প্রকল্প থেকে অন্যায়ভাবে বের করে দেওয়া হয়। অতঃপর আমার বাবা তথা নর্থ সাউথ প্রপার্টি লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুর রহিমের রেখে যাওয়া বিশাল মালামাল ও অর্থ-সম্পদ আজও লুটপাট করে যাচ্ছে। এর পিছনে রয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয় ও প্রকল্প বিরোধী একটি চক্র। নর্থ-সাউথ প্রপার্টির চেয়ারম্যান তথা আমাদের পরিবারকে ২০১০ সালে দেশ ছাড়া করা হয়। এমনকি ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান আমার বাবা আব্দুর রহিম দেশে আসলে, সঙ্গে সঙ্গেই তাকে র্যাব দিয়ে গুম করা হয়। পাশাাপাশি ভাষানটেক পুনর্বাসন প্রকল্পের পাবলিক রিলেশন অফিসার ইসমাইল হোসেন বাতেনকে ২০১৭ সালে গুম করা হয়। এরপর থেকে এখনো তাকে আর ফিরে পাওয়া যায়নি। তার পরিবার ইসমাইল হোসেন বাতেনকে ফিরে পেতে এখনো পথপানে চেয়ে থাকে। এই গুমের পিছনে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ও সাবেক বানিজ্যমন্ত্রী কর্ণেল ফারুক ও প্রকল্প বিরোধী একটি চক্র জড়িত। এই গুমের পিছনে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ও সাবেক বানিজ্যমন্ত্রী কর্ণেল ফারুক ও প্রকল্প বিরোধী একটি চক্র জড়িত।
নুরতাজ আরা ঐশি বলেন, ঢাকার বিজয় সরণিস্থ কলমিলতা বাজারটির প্রকৃত মালিক আমার বাবা। আজ অবধি ডিএনসিসি ও তার পূর্বসূরিগণ পরস্পর পরস্পরের যোগসাজশে আইনের অপপ্রয়োগ করে জবরদখল করে রেখেছে। যদিও হাইকোর্ট ও সুপ্রিমকোর্ট আমাদেরকে দুই মাসের মধ্যে ক্ষতিপূরণ প্রদানের নির্দেশ দিয়েছে। এক পর্যায়ে তৎকালীন প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক কোর্টের আদেশ মেনে উক্ত সম্পত্তির ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক অনুমোদন নিয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ডিসি ঢাকাকে লিখিত প্রস্তাব পাঠান। হঠাৎ, মেয়র আনিস পরলোকগমন করেন। এই সুযোগকে ডিএনসিসির কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম দুর্নীতির মানসিকতায় ডিসি ঢাকাকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের চাহিদাপত্র না দিয়ে বছরের পর বছর সময়ক্ষেপণ করছেন। এদিকে, ঢাকার জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম গত ২৩ অক্টোবর পুনরায় কমলিলতা মার্কেটের ভূমি অধিগ্রহণ প্রসঙ্গে ডিএনসিসি বরাবর একটি তাগিদ পত্র প্রদান করেছেন। এর আগেও এমন তাগিদপত্র দেয়া হয়েছে। এরপরও ডিএনসিসি কোনো সমাধান করছে না।
আমরা প্রধানমন্ত্রীকে আজকের এই সমাবেশের মাধ্যমে জানাতে চাই, আপনি দয়াকরে এই শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের দুইটি বিষয়ে জরুরী ভিত্তিতে সমাধানের জন্য নির্দেশ দিবেন বলে আমরা আশা ব্যক্ত করছি।
Leave a Reply